গ্রামীণ ব্যাংক-চেয়ারম্যানের কাজে পরিচালনা পর্ষদের বাধা!

গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মধ্য থেকে থাকা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কারণে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। পর্ষদের ওই সদস্যদের বিরোধিতার কারণে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বাছাইয়ে কমিটিও করতে পারছেন না তিনি।


ব্যাংকের স্বার্থে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলেও ওই সদস্যদের বিরোধিতার কারণে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে তা অনুমোদন করা সম্ভব হচ্ছে না।

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ঋণগ্রহীতাদের মধ্য থেকে ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরা এমডি বাছাই কমিটির প্রধান হিসেবে চান ব্যাংকটির সাবেক এমডি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। তবে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনে করেন, ড. ইউনূস গ্রামীণের ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাছাই কমিটির প্রধান হলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে তিনি তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকেই এমডি নিয়োগের জন্য বাছাই করতে পারেন। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে না। আর ড. ইউনূস ছাড়া অন্যদের বাছাই কমিটির প্রধান হিসেবে নাম প্রস্তাব করলে পরিচালনা পর্ষদের ঋণগ্রহীতা নারী সদস্যরা সমর্থন দিচ্ছেন না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাম্মেল হক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্যের কারণে বাছাই কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নতুন এমডি বাছাই ও নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শিগগিরই বিষয়টি আমি লিখিতভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাব।'
এর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছেন, ড. ইউনূসকে ভবিষ্যৎ এমডি বাছাইয়ে গঠিত কমিটির প্রধান করতে সরকার মোটেই রাজি নয়। এ ছাড়া সাবেক এমডি ভবিষ্যৎ এমডি নির্ধারণ করবেন এটাও শোভনীয় নয়।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, 'এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ড. ইউনূসের দাবি অনুযায়ী গ্রামীণের ৫৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রামীণ ব্যাংকের নয়। অথচ গ্রামীণ টেলিকমসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের পর, এ ব্যাংক থেকেই অর্থ নিয়ে। তাই ড. ইউনূস বাছাই কমিটির প্রধান হলে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থ দেখার বদলে তাঁর নিজের স্বার্থ দেখতেই বেশি তৎপর হবেন এমন লোককেও বাছাই করতে পারেন। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের স্বার্থকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।'
নির্ধারিত বয়সসীমা পার হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বহাল থাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গত বছরের ২ মার্চ অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গিয়ে তাতেও হারেন ইউনূস। পরে এক সংবাদ সম্মেলন করে ১২ মে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এর পর থেকে ওই ব্যাংকেরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তাঁর মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.