শ্রীলঙ্কার পাশে হাসিনা তফাতে মনমোহন by অমিত বসু
শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তামিলরা নির্মম অত্যাচারের শিকার। ১৯৮৭তে ভারতের ভূমিকা ছিল ঠিক উল্টো। তামিল জঙ্গিদের জব্দ করতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিল। ভেবেছিল, জঙ্গি আন্দোলন নিকেষ করতে পারবে। পারেনি। তামিল গেরিলা হামলায় নাজেহাল হয়ে প্রত্যাবর্তনের পথ খুঁজে নেয়।
১৯৮৭-র জুলাইয়ে মুখ বাঁচাতে ভারত-শ্রীলঙ্কা সরকার যৌথভাবে শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির ডাক দেওয়া হয় এবং তালিম অধ্যুষিত অঞ্চলে স্থানীয় প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। উদারপন্থী জঙ্গিরা সেটা মানলেও উগ্রপন্থীরা কর্ণপাত না করে হামলা চালাতেই থাকে। তারপর জঙ্গি দমনে শ্রীলঙ্কা ভারতের কাছে আর কোনো সাহায্য চায়নি।
১৯৮৯-এ ফের যুদ্ধবিরোধী চুক্তি। তখন জাতীয়তাবাদী সিংহলিরা খেপে ওঠে। তারা বহু সরকারি কর্মচারী ও সমর্থককে হত্যা করে। ২০০২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে নরওয়ের মধ্যস্থতায় তামিল টাইগার্স আর সরকারের মধ্যে আবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি। চার বছর কিছুটা শান্ত থেকে ২০০৬ থেকে পূর্ণ সংঘাত। ২০০৮-এ যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করে সরকার সরাসরি জঙ্গি দমনে নামে। ২০০৯-এ জাফনায় তামিল টাইগার্স ঘাঁটিতে বিমান অভিযান চালায়। তাতে নিহত হন টাইগার্সপ্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। ২০০৯-এর ১৯ মে রাষ্ট্রপতি রাজাপাকসে তামিল টাইগার্স শেষ বলে ঘোষণা করেন।
শেষ বললেই তো হলো না! আগুন নিভলেও ভেতরে ভেতরে মরেও বেঁচে থাকে। নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণের মৃত্যুতে কি বলা যাচ্ছে, তাদের আন্দোলন শেষ। যৌথবাহিনী জঙ্গলমহল থেকে সরে যেতে পারছে? শ্রীলঙ্কাই বা অস্ত্র ত্যাগ করবে কোন সাহসে? তারা তামিলদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। প্রভাকরণের কিশোর পুত্রকেও হত্যা করা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অমানবিক। শত্রু ধরতে নিরীহদের প্রাণ সংহার মর্মান্তিক। তবু করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা নিরুপায়। যেকোনোভাবে দেশটা যাতে দুই টুকরো না হয় তার চেষ্টা করছে।
ভারতেও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কম নেই। তাদের শান্তির ললিত বাণী শুনিয়ে কী লাভ? পরিহাসের মতো শোনাবে। বাধ্য হয়ে কড়া হাতে দমন করতে গেলে যদি আমেরিকা বাধা দেয়, ভারত শুনবে? শ্রীলঙ্কাকে শুনতে হবে, কারণ তারা ছোট দেশ। জনসংখ্যা কলকাতার চেয়ে একটু বেশি। দুই কোটির নিচে। আশির দশকেও তাদের সেনাবাহিনী বলতে তেমন কিছু ছিল না। জোর কম, অস্ত্র নামমাত্র। সে তুলনায় তামিল বাহিনী ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। শ্রীলঙ্কা বাহিনীকে কোণঠাসা করতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ভেবেছিল, এভাবেই শ্রীলঙ্কার দুর্বল সেনাবাহিনীকে মাটিতে মিশিয়ে বিজয় পতাকা তুলবে। কিন্তু ইতিহাস ফের প্রমাণ করল, সশস্ত্র আন্দোলনে মুক্তির পথ নেই।
শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে যে অবিচার হয়েছে, তাতে কোনো সংশয় নেই। ১৯৪৮-এ স্বাধীন হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার নাম ছিল সিলোন। ১৯৭২-এ নাম পাল্টে শ্রীলঙ্কা হয়। জন্মলগ্নে পাকিস্তান যেমন একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানের হৃদয়ে আগুন ঢেলে দেয়, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সলোমান বন্দরনায়েক একই ভুল করে। তামিলদের মাতৃভাষা কেড়ে সিংহলি ভাষাকে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ১৯৭৮-এ সেটা সংশোধন করে তামিল ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন। সেই সঙ্গে তামিলদের বেশকিছু প্রাথমিক দাবি মেনে নেন। তবুও তামিলদের মন ভোলানো যায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারি চাকরিতে তামিলদের বঞ্চনা কমেনি। তারা শ্রীলঙ্কায় নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতে থাকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত তখনই। তাতে ভারতের তামিলনাড়ুর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে পরম আন্তরিকতায়। জাত্যাভিমানে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের জয় কামনা করেছে। স্বপ্ন দেখেছে তামিল রাষ্ট্রের। সেটা বাস্তবে রূপ না পাওয়ায় কাতর। আমেরিকা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা খুশি। ভারত পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণে রেখে দূরে থাকতে চেয়েছিল। সে সুযোগ দেননি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি। তাঁর দল ডিএমকে ইউপিএ-টু সরকারের শরিক। সরে গেলে সরকার পড়বে। সরকার বাঁচানোর গরজে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমেরিকাকে সমর্থন করেছেন।
জাতিসংঘে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমেরিকার আনা যুদ্ধ অপরাধের প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে ভারত। ২৪টি দেশ পক্ষে, ১৫টি দেশ বিপক্ষে গেছে। আটটি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে। আমেরিকার পাশে কিন্তু ভারত ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশ নেই। সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেক সাধারণতন্ত্র, ইতালি, স্পেনের মতো দেশগুলোই রয়েছে। বরং বিপক্ষের দেশগুলো শক্তিশালী। চীন, রাশিয়া, সৌদি আরবের মতো দেশ। আছে সার্ক সদস্য দুটি দেশ- বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বেশি কাছের মানুষ মনে করেছেন। অভিযুক্ত শ্রীলঙ্কাও সার্কভুক্ত। তারা পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপকে। ভারত আমেরিকাকে সমর্থন করায় তারা ক্ষুব্ধ। শ্রীলঙ্কার সব থেকে বেশি বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে। তার ওপর ছায়া পড়ার শঙ্কা। তার চেয়ে বড় জটিলতা সার্কে। বিভেদের প্রাচীর। দরকার ছিল না। ভারত নিরপেক্ষ থাকলেও ক্ষতি ছিল না। মনমোহন সেটা বুঝেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়াতালি দিতে ব্যস্ত। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতেও শরিকদের চাপে পিছু হটতে হয়েছে তাঁকে। তার ছায়াও পড়েছে সার্ক সম্পর্কে। এ দুটি কাজই মনমোহন করেছেন স্ববিরোধিতায়। এবং দেশের মুখ পুড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্ষমতা আছে মনেই হচ্ছে না। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি শরিক-মায়ায় আচ্ছন্ন। ঘরে-বাইরে বিপর্যস্ত। এক পা এগোতে গেলেই পিছুটান। পথহারা নদীর মতো কেবল শ্যাওলা জমছে। আর এখনো দুই বছর। এই স্থবিরতা নিয়ে বেঁচে কী লাভ! সমাজবাদী পার্টি উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় এসেই অন্তর্বর্তী নির্বাচনের স্লোগান তুলেছে। বাকিরাও ভাবছে। তবে এটা সবাই মানছে, এই অথর্ব সরকারের আর বেঁচে লাভ নেই। ভালোয় ভালোয় গেলেই হয়।
সরকারের প্রধান শরিক কংগ্রেস পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ঝড় তুলে পুনরুজ্জীবনের স্বাদ নিতে চেয়েছিল। হয়নি। রাহুল গান্ধী নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসতে চেয়েছিলেন। পারেননি। বাকি দুই বছরে কংগ্রেস আরো অনেক কিছু করে দেখাবে বলে যদি মনে করে, তা হলে অবশ্য আলাদা কথা।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
১৯৮৯-এ ফের যুদ্ধবিরোধী চুক্তি। তখন জাতীয়তাবাদী সিংহলিরা খেপে ওঠে। তারা বহু সরকারি কর্মচারী ও সমর্থককে হত্যা করে। ২০০২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে নরওয়ের মধ্যস্থতায় তামিল টাইগার্স আর সরকারের মধ্যে আবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি। চার বছর কিছুটা শান্ত থেকে ২০০৬ থেকে পূর্ণ সংঘাত। ২০০৮-এ যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহার করে সরকার সরাসরি জঙ্গি দমনে নামে। ২০০৯-এ জাফনায় তামিল টাইগার্স ঘাঁটিতে বিমান অভিযান চালায়। তাতে নিহত হন টাইগার্সপ্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। ২০০৯-এর ১৯ মে রাষ্ট্রপতি রাজাপাকসে তামিল টাইগার্স শেষ বলে ঘোষণা করেন।
শেষ বললেই তো হলো না! আগুন নিভলেও ভেতরে ভেতরে মরেও বেঁচে থাকে। নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী শীর্ষ নেতা কিষেণের মৃত্যুতে কি বলা যাচ্ছে, তাদের আন্দোলন শেষ। যৌথবাহিনী জঙ্গলমহল থেকে সরে যেতে পারছে? শ্রীলঙ্কাই বা অস্ত্র ত্যাগ করবে কোন সাহসে? তারা তামিলদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। প্রভাকরণের কিশোর পুত্রকেও হত্যা করা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অমানবিক। শত্রু ধরতে নিরীহদের প্রাণ সংহার মর্মান্তিক। তবু করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা নিরুপায়। যেকোনোভাবে দেশটা যাতে দুই টুকরো না হয় তার চেষ্টা করছে।
ভারতেও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কম নেই। তাদের শান্তির ললিত বাণী শুনিয়ে কী লাভ? পরিহাসের মতো শোনাবে। বাধ্য হয়ে কড়া হাতে দমন করতে গেলে যদি আমেরিকা বাধা দেয়, ভারত শুনবে? শ্রীলঙ্কাকে শুনতে হবে, কারণ তারা ছোট দেশ। জনসংখ্যা কলকাতার চেয়ে একটু বেশি। দুই কোটির নিচে। আশির দশকেও তাদের সেনাবাহিনী বলতে তেমন কিছু ছিল না। জোর কম, অস্ত্র নামমাত্র। সে তুলনায় তামিল বাহিনী ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। শ্রীলঙ্কা বাহিনীকে কোণঠাসা করতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ভেবেছিল, এভাবেই শ্রীলঙ্কার দুর্বল সেনাবাহিনীকে মাটিতে মিশিয়ে বিজয় পতাকা তুলবে। কিন্তু ইতিহাস ফের প্রমাণ করল, সশস্ত্র আন্দোলনে মুক্তির পথ নেই।
শ্রীলঙ্কায় তামিলদের বিরুদ্ধে যে অবিচার হয়েছে, তাতে কোনো সংশয় নেই। ১৯৪৮-এ স্বাধীন হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার নাম ছিল সিলোন। ১৯৭২-এ নাম পাল্টে শ্রীলঙ্কা হয়। জন্মলগ্নে পাকিস্তান যেমন একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানের হৃদয়ে আগুন ঢেলে দেয়, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সলোমান বন্দরনায়েক একই ভুল করে। তামিলদের মাতৃভাষা কেড়ে সিংহলি ভাষাকে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। ১৯৭৮-এ সেটা সংশোধন করে তামিল ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হন। সেই সঙ্গে তামিলদের বেশকিছু প্রাথমিক দাবি মেনে নেন। তবুও তামিলদের মন ভোলানো যায়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সরকারি চাকরিতে তামিলদের বঞ্চনা কমেনি। তারা শ্রীলঙ্কায় নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করতে থাকে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত তখনই। তাতে ভারতের তামিলনাড়ুর প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে পরম আন্তরিকতায়। জাত্যাভিমানে শ্রীলঙ্কায় তামিলদের জয় কামনা করেছে। স্বপ্ন দেখেছে তামিল রাষ্ট্রের। সেটা বাস্তবে রূপ না পাওয়ায় কাতর। আমেরিকা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তে তারা খুশি। ভারত পূর্ব অভিজ্ঞতার কথা স্মরণে রেখে দূরে থাকতে চেয়েছিল। সে সুযোগ দেননি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি। তাঁর দল ডিএমকে ইউপিএ-টু সরকারের শরিক। সরে গেলে সরকার পড়বে। সরকার বাঁচানোর গরজে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমেরিকাকে সমর্থন করেছেন।
জাতিসংঘে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আমেরিকার আনা যুদ্ধ অপরাধের প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে ভারত। ২৪টি দেশ পক্ষে, ১৫টি দেশ বিপক্ষে গেছে। আটটি দেশ ভোটদানে বিরত থেকেছে। আমেরিকার পাশে কিন্তু ভারত ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশ নেই। সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, চেক সাধারণতন্ত্র, ইতালি, স্পেনের মতো দেশগুলোই রয়েছে। বরং বিপক্ষের দেশগুলো শক্তিশালী। চীন, রাশিয়া, সৌদি আরবের মতো দেশ। আছে সার্ক সদস্য দুটি দেশ- বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে বেশি কাছের মানুষ মনে করেছেন। অভিযুক্ত শ্রীলঙ্কাও সার্কভুক্ত। তারা পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপকে। ভারত আমেরিকাকে সমর্থন করায় তারা ক্ষুব্ধ। শ্রীলঙ্কার সব থেকে বেশি বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে। তার ওপর ছায়া পড়ার শঙ্কা। তার চেয়ে বড় জটিলতা সার্কে। বিভেদের প্রাচীর। দরকার ছিল না। ভারত নিরপেক্ষ থাকলেও ক্ষতি ছিল না। মনমোহন সেটা বুঝেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক জোড়াতালি দিতে ব্যস্ত। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতেও শরিকদের চাপে পিছু হটতে হয়েছে তাঁকে। তার ছায়াও পড়েছে সার্ক সম্পর্কে। এ দুটি কাজই মনমোহন করেছেন স্ববিরোধিতায়। এবং দেশের মুখ পুড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কোনো ক্ষমতা আছে মনেই হচ্ছে না। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি শরিক-মায়ায় আচ্ছন্ন। ঘরে-বাইরে বিপর্যস্ত। এক পা এগোতে গেলেই পিছুটান। পথহারা নদীর মতো কেবল শ্যাওলা জমছে। আর এখনো দুই বছর। এই স্থবিরতা নিয়ে বেঁচে কী লাভ! সমাজবাদী পার্টি উত্তর প্রদেশে ক্ষমতায় এসেই অন্তর্বর্তী নির্বাচনের স্লোগান তুলেছে। বাকিরাও ভাবছে। তবে এটা সবাই মানছে, এই অথর্ব সরকারের আর বেঁচে লাভ নেই। ভালোয় ভালোয় গেলেই হয়।
সরকারের প্রধান শরিক কংগ্রেস পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ঝড় তুলে পুনরুজ্জীবনের স্বাদ নিতে চেয়েছিল। হয়নি। রাহুল গান্ধী নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উঠে আসতে চেয়েছিলেন। পারেননি। বাকি দুই বছরে কংগ্রেস আরো অনেক কিছু করে দেখাবে বলে যদি মনে করে, তা হলে অবশ্য আলাদা কথা।
লেখক : কলকাতার সাংবাদিক
No comments