সালমাকে ছাপিয়ে নায়িকা খাদিজা by কামরুল হাসান
মঞ্চটা নিজের জন্য সাজিয়ে রেখেছিলেন সালমা খাতুন। অথচ সেখানে নায়িকা হয়ে গেলেন খাদিজাতুল কুবরা!
ভাববেন না সালমার তাতে মন খারাপ। বরং বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ১১৪ রানে যখন আয়ারল্যান্ডের শেষ উইকেটটা পড়ল তখন অধিনায়ক গিয়ে সবার আগে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁর সতীর্থ অফস্পিনারকেই। এ যে তাঁর নিজেরও জয়! জয় বাংলাদেশের!
ভাববেন না সালমার তাতে মন খারাপ। বরং বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ১১৪ রানে যখন আয়ারল্যান্ডের শেষ উইকেটটা পড়ল তখন অধিনায়ক গিয়ে সবার আগে জড়িয়ে ধরেছেন তাঁর সতীর্থ অফস্পিনারকেই। এ যে তাঁর নিজেরও জয়! জয় বাংলাদেশের!
মাস আটেক আগে ছেলেদের বিশ্বকাপে আমাদের মুশফিক-তামিম-সাকিবরা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক জয় দিয়ে আনন্দে ভাসিয়েছিলেন পুরো দেশকে। এবার সালমা-খাদিজারা মেয়েদের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে আয়ারল্যান্ডকে ৯৫ রানে হারিয়ে প্রমাণ করলেন তারাও কম যান না মুশফিক-তামিমদের চেয়ে!
এ ম্যাচ নিয়ে নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফরম্যাটটা এত গোলমেলে যে ম্যাচ শুরুর আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্ট এমনকি মিডিয়ার কারো কারো ধারণা ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারলেই সেরা ছয়ে থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আসলে কিন্তু তা নয়। ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত করতে গ্রুপে তৃতীয় হওয়ার পরেও বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে প্লে-অফ ম্যাচ পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে এ সত্য জেনে যে ভয়টা ঢুকেছিল সেটা অবশ্য অনেকটাই দূর হয়ে গেছে গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর। বাংলাদেশের করা ২০৯ রান তাড়া করতে গিয়ে পান্না ঘোষের প্রথম বলেই আইরিশ ওপেনার শিলিংটন আউট! বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠের দর্শকদের এর পরের ঘণ্টা দুয়েক এমন আরো উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ এসেছে। এবং এর সবই এনে দিয়েছেন বাংলাদেশি অফস্পিনার খাদিজাতুল কুবরা। মাত্র ১৬ বছর বয়সী বগুড়ার এই কিশোরীর ঘূর্ণি বিষে একের পর এক কুপোকাত হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ছয় ছয়জন ব্যাটার! ওপেনার সেসেইলা জয়েস (৪৪) ছাড়া বলার মতো স্কোর করতে পারেননি আর কোনো আইরিশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেট পেয়েও চেয়ে চেয়ে দলের হার দেখা খাদিজা এদিন শুধু তাঁর দলকেই জেতাননি, নিজের করে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটাও।
এর আগে সকালে দুই ওপেনার আয়েশা আকতার আর শুকতারা রহমান যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামছেন তখনও কিন্তু হেমন্তের কুয়াশায় মাঠের চারপাশ কিছুটা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এবং সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন আয়েশা। চতুর্থ ওভারে, মাত্র ২ রান করেই আইরিশ পেসার কেনিলির বলে ক্যাচ তুলে দিলেন কাভারে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পথে বাংলাদেশের মেয়েদের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নিজ চোখে দেখবেন বলে সাত সকালে ঢাকা থেকে ঘুম ঘুম চোখে বিকেএসপিতে চলে এসেছিলেন যে কজন সাংবাদিক, উৎসাহ দিতে আসা কয়েক শ দর্শক_সবাই যেন আকস্মিক দমে গেলেন। সেই ধাক্কাটা ভালো করে সামলে ওঠার আগেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা ফারজানা হক পিংকিও (১৪) হাঁটলেন একই পথে। ৩৮ রানে ২ উইকেট নেই, ১২তম ওভারের খেলা চলছে। বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা শুরু হলো এখান থেকেই। এবং এই গল্পের দুই প্রধান চরিত্র বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুন ও শুকতারা। রানরেট হয়তো কিছুটা কম ছিল, কিন্তু সেদিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে তখন বেশি জরুরি ছিল শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেওয়া। ক্রিজে থাকা দুই বাংলাদেশি ব্যাটার সেটাই করেছেন, ৮৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরিয়েছেন বাংলাদেশকে। মাত্র ৩ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরিটা পাননি শুকতারা, যদিও ৮৭ বলে ৪৭ রান করে তাঁর রান আউট হয়ে যাওয়ার ধরনটা ছিল দৃষ্টিকটু। শুধু শুকতারাই নন, এরপর বাকি যে কয়টা উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের সবাই রান আউট হয়েছেন এবং হয়েছেন অনর্থক ঝুঁকি নিতে গিয়ে! তবে ব্যাট হাতে দর্শকদের সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছেন লতা মণ্ডল। ২৮ বলে খেলা তাঁর ৩১ রানের ইনিংসে কমে থাকা রান রেটটাও বেড়েছে বাংলাদেশের। আর সেই সঙ্গে ব্যাট করতে নামার পর থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত এক প্রান্ত আগলে রাখা সালমার অধিনায়োকোচিত ইনিংস! সাদা চোখে মনে হবে ৭৩ রান করতে গিয়ে ১২১টি বল লেগেছে আমাদের অধিনায়কের। কিন্তু সেই ইনিংসে ভর করেই তো জয়ের স্বপ্নটা দেখা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন 'ইসোবেল জয়েস অ্যান্ড কোং' কিন্তু সেটা হতে দেননি খাদিজাতুল কুবরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২০৯ (আয়েশা ২, শুকতারা ৪৭, ফারজানা ১৪, সালমা ৭৩, লতা ৩১, পান্না ১, চামেলী ১৩*, রোমানা ৫; কেনিলি ২/৪৬)।
আয়ারল্যান্ড : ৩৬.৫ ওভারে অলআউট ১১৪ (জয়েস ৪৪, হোয়েলান ২০, ডিলানি ১১, গ্রাথ ১০*; খাদিজা ৬/৩২, পান্না ১/১৪, রোমানা ১/১৪)
ফল : বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : খাদিজাতুল কুবরা।
এ ম্যাচ নিয়ে নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছিল। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফরম্যাটটা এত গোলমেলে যে ম্যাচ শুরুর আগেও বাংলাদেশের ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্ট এমনকি মিডিয়ার কারো কারো ধারণা ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারলেই সেরা ছয়ে থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। আসলে কিন্তু তা নয়। ওয়ানডে স্ট্যাটাস নিশ্চিত করতে গ্রুপে তৃতীয় হওয়ার পরেও বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে প্লে-অফ ম্যাচ পর্যন্ত। শেষ মুহূর্তে এ সত্য জেনে যে ভয়টা ঢুকেছিল সেটা অবশ্য অনেকটাই দূর হয়ে গেছে গতকাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পর। বাংলাদেশের করা ২০৯ রান তাড়া করতে গিয়ে পান্না ঘোষের প্রথম বলেই আইরিশ ওপেনার শিলিংটন আউট! বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠের দর্শকদের এর পরের ঘণ্টা দুয়েক এমন আরো উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ এসেছে। এবং এর সবই এনে দিয়েছেন বাংলাদেশি অফস্পিনার খাদিজাতুল কুবরা। মাত্র ১৬ বছর বয়সী বগুড়ার এই কিশোরীর ঘূর্ণি বিষে একের পর এক কুপোকাত হয়েছেন আয়ারল্যান্ডের ছয় ছয়জন ব্যাটার! ওপেনার সেসেইলা জয়েস (৪৪) ছাড়া বলার মতো স্কোর করতে পারেননি আর কোনো আইরিশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেট পেয়েও চেয়ে চেয়ে দলের হার দেখা খাদিজা এদিন শুধু তাঁর দলকেই জেতাননি, নিজের করে নিয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটাও।
এর আগে সকালে দুই ওপেনার আয়েশা আকতার আর শুকতারা রহমান যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামছেন তখনও কিন্তু হেমন্তের কুয়াশায় মাঠের চারপাশ কিছুটা অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এবং সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন আয়েশা। চতুর্থ ওভারে, মাত্র ২ রান করেই আইরিশ পেসার কেনিলির বলে ক্যাচ তুলে দিলেন কাভারে। ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পথে বাংলাদেশের মেয়েদের এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নিজ চোখে দেখবেন বলে সাত সকালে ঢাকা থেকে ঘুম ঘুম চোখে বিকেএসপিতে চলে এসেছিলেন যে কজন সাংবাদিক, উৎসাহ দিতে আসা কয়েক শ দর্শক_সবাই যেন আকস্মিক দমে গেলেন। সেই ধাক্কাটা ভালো করে সামলে ওঠার আগেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা ফারজানা হক পিংকিও (১৪) হাঁটলেন একই পথে। ৩৮ রানে ২ উইকেট নেই, ১২তম ওভারের খেলা চলছে। বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা শুরু হলো এখান থেকেই। এবং এই গল্পের দুই প্রধান চরিত্র বাংলাদেশের অধিনায়ক সালমা খাতুন ও শুকতারা। রানরেট হয়তো কিছুটা কম ছিল, কিন্তু সেদিকে বেশি মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে তখন বেশি জরুরি ছিল শুরুর ধাক্কাটা সামাল দেওয়া। ক্রিজে থাকা দুই বাংলাদেশি ব্যাটার সেটাই করেছেন, ৮৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরিয়েছেন বাংলাদেশকে। মাত্র ৩ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরিটা পাননি শুকতারা, যদিও ৮৭ বলে ৪৭ রান করে তাঁর রান আউট হয়ে যাওয়ার ধরনটা ছিল দৃষ্টিকটু। শুধু শুকতারাই নন, এরপর বাকি যে কয়টা উইকেট পড়েছে বাংলাদেশের সবাই রান আউট হয়েছেন এবং হয়েছেন অনর্থক ঝুঁকি নিতে গিয়ে! তবে ব্যাট হাতে দর্শকদের সবচেয়ে আনন্দ দিয়েছেন লতা মণ্ডল। ২৮ বলে খেলা তাঁর ৩১ রানের ইনিংসে কমে থাকা রান রেটটাও বেড়েছে বাংলাদেশের। আর সেই সঙ্গে ব্যাট করতে নামার পর থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত এক প্রান্ত আগলে রাখা সালমার অধিনায়োকোচিত ইনিংস! সাদা চোখে মনে হবে ৭৩ রান করতে গিয়ে ১২১টি বল লেগেছে আমাদের অধিনায়কের। কিন্তু সেই ইনিংসে ভর করেই তো জয়ের স্বপ্নটা দেখা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন 'ইসোবেল জয়েস অ্যান্ড কোং' কিন্তু সেটা হতে দেননি খাদিজাতুল কুবরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২০৯ (আয়েশা ২, শুকতারা ৪৭, ফারজানা ১৪, সালমা ৭৩, লতা ৩১, পান্না ১, চামেলী ১৩*, রোমানা ৫; কেনিলি ২/৪৬)।
আয়ারল্যান্ড : ৩৬.৫ ওভারে অলআউট ১১৪ (জয়েস ৪৪, হোয়েলান ২০, ডিলানি ১১, গ্রাথ ১০*; খাদিজা ৬/৩২, পান্না ১/১৪, রোমানা ১/১৪)
ফল : বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : খাদিজাতুল কুবরা।
No comments