পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষের উচিত অতীত সভ্যতার পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া
৯৭. আফাআমিনা আহ্লুল ক্বুরা আন ইয়্যা'তিইয়াহুম বা'ছুনা বাইয়া-তান ওয়া হুম নায়িমূন। ৯৮. আওয়া আমিনা আহ্লুল ক্বুরা আন ইয়্যা'তিইয়াহুম বা'ছুনা দ্বুহান ওয়া হুম ইয়ালআ'বূন। ৯৯. আফাআমিনূ মাক্রাল্লা-হি ফালা ইয়া'মানু মাক্রাল্লা-হি ইল্লাল ক্বাওমুল খা-ছিরূন। ১০০. আওয়া লাম ইয়াহ্দি লিল্লাযীনা ইয়ারিছূনাল আরদ্বা মিম্ বা'দি আহ্লিহা- আন লাও নাশা-উ আসাব্না-হুম বিযূনূবিহিম; ওয়া নাত্ববাউ' আ'লা ক্বুলূবিহিম ফাহুম লা-ইয়াছমাঊ'ন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৯৭-১০০]
অনুবাদ : ৯৭. জনপদের মানুষ কি এতটাই আশঙ্কামুক্ত হয়ে গেছে যে গভীর রাতে তাদের ওপর আমার শাস্তি এ অবস্থায় নেমে আসবে না, যখন তারা থাকবে ঘুমন্ত অবস্থায়? ৯৮. অথবা জনপদের মানুষ কি আশঙ্কামুক্ত হয়ে ধরে নিয়েছে যে আমার শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসবে না, মধ্যদিনে যখন তারা থাকবে খেল-তামাশায় মত্ত? ৯৯. অথবা তারা কি আল্লাহর কাছে ধরা পড়ার ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত হয়ে গেছে? অথচ নিশ্চিন্ত বিপদগ্রস্তরা ছাড়া কেউ আল্লাহর কাছে ধরা পড়া থেকে আশঙ্কামুক্ত হতে পারে না। ১০০. যারা কোনো জনপদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার পর সেই সভ্যতার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি শিক্ষা লাভ করেনি যে আমি চাইলে তাদেরও (তাদের পূর্বপুরুষদের মতো) পাপাচারের কারণে পাকড়াও করতে পারি? যারা এ শিক্ষা নেয় না আমি তাদের অন্তরে মোহর করে দিই। তারা সত্যের আহ্বান শুনতে পায় না।
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে প্রাচীন মানবসভ্যতায় বিভিন্ন জনপদের বাসিন্দাদের হেদায়াতের জন্য যেসব নবী-রাসুলকে পাঠিয়েছেন তাঁদের সংগ্রামের কাহিনী বলতে গিয়ে সেসব গোত্রের আল্লাহর অবাধ্য ও পাপাচারী লোকদের চরম শাস্তি দেওয়ার অনেক ঘটনা বর্ণনার পর এর উপসংহার বিবৃত হচ্ছে। পূর্ব যুগের কাফিররা যেসব পাপাচার ও অপরাধের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, বর্তমান যুগের কাফিররাও সেসব পাপাচারেই লিপ্ত। সুতরাং এরা নিজেদের কী করে নিরাপদ মনে করে? আসলে প্রাচীন যুগের সেসব কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ঘটনা থেকে সবারই শিক্ষা নেওয়া উচিত। অতীতের অত্যাচারীদের শাস্তির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার এসব ঘটনার বরাত দিয়ে মক্কার কাফিরদের সতর্ক করা হচ্ছে যে অন্যায়-অত্যাচারে লিপ্ত থেকে আল্লাহর গজব ও ক্রোধ থেকে নিস্তার পাওয়ার ব্যাপারে কারোরই নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়। আসলে এটা কেবল মক্কার কাফিরদের জন্যই নয়, বরং সর্বকালে সর্বত্র যেকোনো ব্যক্তিই কোনো রকম মন্দ কাজ, গুনাহ ও অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত হতে গেলে তাদের উচিত ইতিহাসের এসব ঘটনার প্রতি নজর দেওয়া এবং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
৯৯ নম্বর আয়াতে 'মাকারুল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এর অর্থ হচ্ছে অপরাধীকে পাকড়াও করার বা অবকাশ দেওয়ার আল্লাহর প্রাকৃতিক কৌশল। যার উদ্দেশ্যে বা যার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা হয় সে সাধারণত এটা বুঝতে পারে না। এর তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ মানুষকে তার পাপাচার সত্ত্বেও দুনিয়ায় বাহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকেন, যার উদ্দেশ্য হয় ঢিলে দেওয়া বা অবকাশ দেওয়া। তারা যখন সেই অবকাশের ভেতর উপর্যুপরি পাপাচার করেই যেতে থাকে তখন একপর্যায়ে আকস্মিকভাবে তাদের পাকড়াও করা হয়; অর্থাৎ তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসে। কখনো কখনো আবার সে রকম দৃশ্যমান গজব নেমে না-ও আসতে পারে। সুতরাং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ও মানুষকে দায়িত্বনিষ্ঠ ও সজাগ থাকা উচিত। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে বরং মানুষকে বেশি আত্মসচেতন ও আত্মসংশোধনে যত্নবান থাকা চাই। সব মানুষের অন্তরেই এই সতর্কতা জাগরূক থাকা উচিত যে এই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত ঢিলে দেওয়া বা অবকাশ প্রদান হতে পারে। সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হলে আল্লাহ তায়ালা ইহকালে হোক বা পরকালে হোক আমাদের অবশ্যই পাকড়াও করবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
ব্যাখ্যা : এ আয়াতগুলোতে প্রাচীন মানবসভ্যতায় বিভিন্ন জনপদের বাসিন্দাদের হেদায়াতের জন্য যেসব নবী-রাসুলকে পাঠিয়েছেন তাঁদের সংগ্রামের কাহিনী বলতে গিয়ে সেসব গোত্রের আল্লাহর অবাধ্য ও পাপাচারী লোকদের চরম শাস্তি দেওয়ার অনেক ঘটনা বর্ণনার পর এর উপসংহার বিবৃত হচ্ছে। পূর্ব যুগের কাফিররা যেসব পাপাচার ও অপরাধের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, বর্তমান যুগের কাফিররাও সেসব পাপাচারেই লিপ্ত। সুতরাং এরা নিজেদের কী করে নিরাপদ মনে করে? আসলে প্রাচীন যুগের সেসব কাহিনী থেকে শিক্ষা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ঘটনা থেকে সবারই শিক্ষা নেওয়া উচিত। অতীতের অত্যাচারীদের শাস্তির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়ার এসব ঘটনার বরাত দিয়ে মক্কার কাফিরদের সতর্ক করা হচ্ছে যে অন্যায়-অত্যাচারে লিপ্ত থেকে আল্লাহর গজব ও ক্রোধ থেকে নিস্তার পাওয়ার ব্যাপারে কারোরই নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়। আসলে এটা কেবল মক্কার কাফিরদের জন্যই নয়, বরং সর্বকালে সর্বত্র যেকোনো ব্যক্তিই কোনো রকম মন্দ কাজ, গুনাহ ও অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত হতে গেলে তাদের উচিত ইতিহাসের এসব ঘটনার প্রতি নজর দেওয়া এবং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
৯৯ নম্বর আয়াতে 'মাকারুল্লাহ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এর অর্থ হচ্ছে অপরাধীকে পাকড়াও করার বা অবকাশ দেওয়ার আল্লাহর প্রাকৃতিক কৌশল। যার উদ্দেশ্যে বা যার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করা হয় সে সাধারণত এটা বুঝতে পারে না। এর তাৎপর্য হচ্ছে, আল্লাহ মানুষকে তার পাপাচার সত্ত্বেও দুনিয়ায় বাহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকেন, যার উদ্দেশ্য হয় ঢিলে দেওয়া বা অবকাশ দেওয়া। তারা যখন সেই অবকাশের ভেতর উপর্যুপরি পাপাচার করেই যেতে থাকে তখন একপর্যায়ে আকস্মিকভাবে তাদের পাকড়াও করা হয়; অর্থাৎ তাদের ওপর আল্লাহর গজব নেমে আসে। কখনো কখনো আবার সে রকম দৃশ্যমান গজব নেমে না-ও আসতে পারে। সুতরাং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়ও মানুষকে দায়িত্বনিষ্ঠ ও সজাগ থাকা উচিত। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে বরং মানুষকে বেশি আত্মসচেতন ও আত্মসংশোধনে যত্নবান থাকা চাই। সব মানুষের অন্তরেই এই সতর্কতা জাগরূক থাকা উচিত যে এই সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত ঢিলে দেওয়া বা অবকাশ প্রদান হতে পারে। সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত হলে আল্লাহ তায়ালা ইহকালে হোক বা পরকালে হোক আমাদের অবশ্যই পাকড়াও করবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments