সিতেশ বাবুর অভয়াশ্রম
সিতেশরঞ্জন দেব প্রাণীদের ভালোবেসে তার বাগানবাড়িতে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারকৃত ও আহত বন্যপ্রাণীদের সেবা-শুশ্রূষা করে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করে আসছে'শামীম আক্তার হোসেনসিতেশরঞ্জন দেব। শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার তথা সিলেট বিভাগের এক অতিপরিচিত বন্যপ্রাণীবান্ধব। প্রাণীরাই তার ধ্যান-জ্ঞান। দিনরাত প্রাণীদের নিয়ে তার বসবাস।
প্রাণী সেবা করতে গিয়ে পেয়েছেন সিলেট বিভাগীয় সম্মাননা, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার।
সিতেশরঞ্জন দেব প্রাণীদের ভালোবেসে তার বাগানবাড়িতে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারকৃত ও আহত বন্যপ্রাণীদের সেবা-শুশ্রূষা করে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের মানুষ এটিকে সিতেশরঞ্জন দেবের মিনি চিড়িয়াখানা হিসেবে চেনে।
কীভাবে বন্যপ্রাণীদের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জন্ম নিল এ প্রসঙ্গে সিতেশরঞ্জন দেব জানান, তার বাবা প্রয়াত শিরিসরঞ্জন দেব এক সময় দুর্ধর্ষ শিকারি ছিলেন। শিকারের নেশায় তিনি মাসের পর মাস কাটিয়ে দিয়েছেন বনে-জঙ্গলে। তিনি সব ধরনের পশু ও পাখি চিনতেন এবং তাদের অনেকের ভাষাই তিনি বুঝতেন। প্রকৃতিপাগল শিরিসরঞ্জন দেব শখের বশে প্রকৃতিকে ভালোবেসে স্বাধীনতার পূর্বে তার শহরতলির ইছবপুরের বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। প্রয়াত বাবার সঙ্গে সিতেশরঞ্জন দেবও পশু-পাখিদের লালন-পালন শুরু করেন। বাবার সঙ্গে শিকারেও যেতেন। ১৯৮৬ সালে শিরিসরঞ্জন দেবের মৃত্যুর পর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিতেশরঞ্জন দেবও শিকারে মত্ত হয়ে ওঠেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর পিও নং ২৩-এর শর্ত মেনে সিতেশরঞ্জন দেব সংসারত্যাগী এক শিকারিতে পরিণত হন। তিনি তার শহরের মিশন রোডের বাসভবনের আঙিনায় গড়ে তোলেন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। এ চিড়িয়াখানা দেখতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক আসতে থাকেন তার বাসায়। পরবর্তী সময়ে তার ভাড়াউড়া এলাকায় অবস্থিত বাগানবাড়িতে এটিকে স্থানান্তর করেন। সরকারের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী এটিকে রূপান্তর করেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশরঞ্জন দেব জানান, শখের বশে এক সময় শিকার করলেও এখন প্রাণী সংরক্ষণে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। তার শিকারজীবনের স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে সিতেশরঞ্জন দেব জানান, ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে বন্য শূকরের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এলাকাবাসী বন্য শূকরের হাত থেকে তাদের রক্ষায় সিতেশরঞ্জন দেবের সহায়তা কামনা করে। ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি ভোর রাতে সিতেশরঞ্জন দেব বন্য শূকরের খোঁজে পাত্রখোলা চা বাগানের গভীর ছন বাগানে প্রবেশ করেন। ওই সময় ছন বাগানে শুয়ে ছিল একটি মানুষখেকো প্রায় ৮ ফুট লম্বা বিশাল আকৃতির ভাল্লুক। গভীর ছন বাগানে ভাল্লুকের উপস্থিতি বুঝতে পারেননি সিতেশ দেব। অলক্ষ্যে তার পা পড়ে ভাল্লুকের গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙা ভাল্লুক সিতেশ দেবকে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল সিতেশ দেব হাত দিয়ে প্রথমে ভাল্লুকের আক্রমণ প্রতিহত করেন। সঙ্গে সঙ্গেই ভাল্লুুকটি সিতেশ দেবের চোখে-মুখে থাবা বসিয়ে দেয়। থাবায় সিতেশ দেবের মুখের ডান পাশের চোখসহ পুরো অংশ চোয়ালসহ ঝুলে পড়ে। এর পরও ভাল্লুকটি গুরুতর আহত সিতেশ দেবের ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। রক্তাক্ত ও মারাত্মক আহত অবস্থায়ও সিতেশ দেব জ্ঞান হারানোর পূর্বেই ভাল্লুকের গায়ে গুলি করেন। গুলিতে ভাল্লুকটি প্রাণ হারায়। পরে বাগান কর্তৃপক্ষ গুরুতর আহত সিতেশরঞ্জন দেবকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসা গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় তার মুখে ৭ বার অপারেশন করা হয় এবং মোট ২৯ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হয়। এ স্মৃতি মনে হলে এখনও সিতেশ দেব মনের অজান্তে আঁৎকে ওঠেন।
বর্তমানে সিতেশরঞ্জন দেবের বাগানবাড়িতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি জানান, ড. আতিউর রহমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রথমে ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করে এ কর্মকে সামনে এগিয়ে দেন। তিনি দেশের আগামী প্রজন্মের স্বার্থে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রাণীদের সেবা দিয়ে বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যেতে চান আমৃত্যু।
সিতেশরঞ্জন দেব প্রাণীদের ভালোবেসে তার বাগানবাড়িতে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধারকৃত ও আহত বন্যপ্রাণীদের সেবা-শুশ্রূষা করে বনে ফিরিয়ে দেওয়ার মহান দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশের মানুষ এটিকে সিতেশরঞ্জন দেবের মিনি চিড়িয়াখানা হিসেবে চেনে।
কীভাবে বন্যপ্রাণীদের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জন্ম নিল এ প্রসঙ্গে সিতেশরঞ্জন দেব জানান, তার বাবা প্রয়াত শিরিসরঞ্জন দেব এক সময় দুর্ধর্ষ শিকারি ছিলেন। শিকারের নেশায় তিনি মাসের পর মাস কাটিয়ে দিয়েছেন বনে-জঙ্গলে। তিনি সব ধরনের পশু ও পাখি চিনতেন এবং তাদের অনেকের ভাষাই তিনি বুঝতেন। প্রকৃতিপাগল শিরিসরঞ্জন দেব শখের বশে প্রকৃতিকে ভালোবেসে স্বাধীনতার পূর্বে তার শহরতলির ইছবপুরের বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। প্রয়াত বাবার সঙ্গে সিতেশরঞ্জন দেবও পশু-পাখিদের লালন-পালন শুরু করেন। বাবার সঙ্গে শিকারেও যেতেন। ১৯৮৬ সালে শিরিসরঞ্জন দেবের মৃত্যুর পর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিতেশরঞ্জন দেবও শিকারে মত্ত হয়ে ওঠেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর পিও নং ২৩-এর শর্ত মেনে সিতেশরঞ্জন দেব সংসারত্যাগী এক শিকারিতে পরিণত হন। তিনি তার শহরের মিশন রোডের বাসভবনের আঙিনায় গড়ে তোলেন একটি মিনি চিড়িয়াখানা। এ চিড়িয়াখানা দেখতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক আসতে থাকেন তার বাসায়। পরবর্তী সময়ে তার ভাড়াউড়া এলাকায় অবস্থিত বাগানবাড়িতে এটিকে স্থানান্তর করেন। সরকারের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী এটিকে রূপান্তর করেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশরঞ্জন দেব জানান, শখের বশে এক সময় শিকার করলেও এখন প্রাণী সংরক্ষণে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যপ্রাণী রক্ষা করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। তার শিকারজীবনের স্মরণীয় ঘটনা সম্পর্কে সিতেশরঞ্জন দেব জানান, ১৯৯১ সালের জানুয়ারি মাসে জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে বন্য শূকরের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এলাকাবাসী বন্য শূকরের হাত থেকে তাদের রক্ষায় সিতেশরঞ্জন দেবের সহায়তা কামনা করে। ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি ভোর রাতে সিতেশরঞ্জন দেব বন্য শূকরের খোঁজে পাত্রখোলা চা বাগানের গভীর ছন বাগানে প্রবেশ করেন। ওই সময় ছন বাগানে শুয়ে ছিল একটি মানুষখেকো প্রায় ৮ ফুট লম্বা বিশাল আকৃতির ভাল্লুক। গভীর ছন বাগানে ভাল্লুকের উপস্থিতি বুঝতে পারেননি সিতেশ দেব। অলক্ষ্যে তার পা পড়ে ভাল্লুকের গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙা ভাল্লুক সিতেশ দেবকে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল সিতেশ দেব হাত দিয়ে প্রথমে ভাল্লুকের আক্রমণ প্রতিহত করেন। সঙ্গে সঙ্গেই ভাল্লুুকটি সিতেশ দেবের চোখে-মুখে থাবা বসিয়ে দেয়। থাবায় সিতেশ দেবের মুখের ডান পাশের চোখসহ পুরো অংশ চোয়ালসহ ঝুলে পড়ে। এর পরও ভাল্লুকটি গুরুতর আহত সিতেশ দেবের ওপর আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করে। রক্তাক্ত ও মারাত্মক আহত অবস্থায়ও সিতেশ দেব জ্ঞান হারানোর পূর্বেই ভাল্লুকের গায়ে গুলি করেন। গুলিতে ভাল্লুকটি প্রাণ হারায়। পরে বাগান কর্তৃপক্ষ গুরুতর আহত সিতেশরঞ্জন দেবকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রায় এক মাস চিকিৎসা গ্রহণ করেন তিনি। এ সময় তার মুখে ৭ বার অপারেশন করা হয় এবং মোট ২৯ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো হয়। এ স্মৃতি মনে হলে এখনও সিতেশ দেব মনের অজান্তে আঁৎকে ওঠেন।
বর্তমানে সিতেশরঞ্জন দেবের বাগানবাড়িতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি জানান, ড. আতিউর রহমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রথমে ১ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করে এ কর্মকে সামনে এগিয়ে দেন। তিনি দেশের আগামী প্রজন্মের স্বার্থে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রাণীদের সেবা দিয়ে বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যেতে চান আমৃত্যু।
No comments