ভিন্নমত-ওষুধের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি by হাবিবুল হুদা

বাংলাদেশের ওষুধের মান বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের সমতুল্য ও দামে কম। সম্প্রতি দু-একটি প্রচারমাধ্যমে ওষুধের মান ও মূল্য সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রচার হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এসব অপপ্রচার বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ওষুধশিল্পের অগ্রযাত্রাকেই ব্যাহত করবে। একটি মহল থেকে প্রচার হচ্ছে, ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধের মূল্য বাড়াচ্ছে, যা সঠিক নয়।


ক্ষেত্রবিশেষে ওষুধের প্যাকেট বা মোড়কের ওপর নির্ধারিত মূল্যের পরিবর্তে বাজারে উচ্চমূল্যে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। ওষুধ কম্পানিগুলোর ওভারহেড কস্ট তুলনামূলক বাড়লেও ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। বাংলাদেশ ওষুধশিল্প সমিতি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে জিএমপি নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ৮৯টি প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের অবকাঠামো বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা দুঃখজনক। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো জিএমপি অনুসরণ করে সব সময় ওষুধের মান সঠিক রাখার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। একটি ওষুধ তৈরিতে যে মূল্য নিরূপণ করা হয়, তার ৬০ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধের মান ধরে রাখার জন্য।
সূত্র জানায়, মানসম্মত ওষুধ অত্যন্ত সুলভ মূল্যে জনগণের কাছে পেঁৗছে দেওয়ার সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার বাংলাদেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। অতি প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধের মূল্য গত ২০ বছরেও বাড়ানো হয়নি, আবার এসব ওষুধের উৎপাদন খরচ বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি। হাতেগোনা কয়েকটি ওষুধের মূল্য সম্প্রতি বেড়েছে। দাম বাড়ানোর পরও এই ওষুধগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে অনেক কম। কম মূল্যের কারণে এখন কিছু কিছু ওষুধ বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাজারে বহুল প্রচলিত প্যারাসিটামল সিরাপ লোকসানে বিক্রি হচ্ছে। ২০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বাজারে আছে, যার নিরানব্বই শতাংশের দাম সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। সূত্রটি জানায়, উন্নত বিশ্বের, বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার ওষুধের দামের তুলনায় বাংলাদেশি ওষুধের দাম অনেক কম। একই মানের ওষুধের দাম পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। দেশে বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ভারতের বাজারে প্রতিটি ১.৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও বাংলাদেশে ৮৫ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতে অসড়ীরপরষষরহ ক্যাপসুল প্রতিটি ৮.৪০ টাকায় বিক্রি হলেও বাংলাদেশে ওই ওষুধের মূল্য সাড়ে তিন টাকা মাত্র।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের মানসম্মত ওষুধ আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ অচিরেই পৃথিবীর সব দেশেই মানসম্মত ওষুধ রপ্তানি করে অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৮০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। '৯০ সালের পর জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বাড়ানো হয়নি। অসড়ীরপরষষরহ, ঈবঢ়যধষরীরহ, ঈবঢ়যধৎফরহ, জবহরঃরফরহ ও ঙসরঢ়ৎধুড়ষব-এর মতো প্রচলিত ও চাহিদাসম্পন্ন ওষুধের দাম দীর্ঘ ১৬ বছরেও বাড়েনি। বরং বেশ কিছু জীবনরক্ষাকারী ও প্রয়োজনীয় ওষুধের মূল্য তুলনামূলকভাবে কমেছে।
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত বাজার বা ঐরমযষু জবমঁষধঃবফ গধৎশবঃ-এ প্রবেশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই নতুন কারখানা স্থাপনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের ১০টি স্বনামধন্য ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই নিয়ন্ত্রিত বাজারে প্রবেশের জন্য টক, গঐজঅ, ঊট, ঞঅে অঁংঃৎধষরধ এবং ঈেঈ সনদপত্র পেয়েছে এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র প্রক্রিয়াধীন। সূত্র জানায়, 'জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি কর্তৃক বাংলাদেশের সব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও জিএমপি মূল্যায়ন বিষয়ক প্রতিবেদন' শীর্ষক রিপোর্টটির প্রকাশিত তথ্য পাশ কাটিয়ে সম্প্রতি দু-একটি পত্রিকায় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প সম্পর্কে কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা তথ্যনির্ভর নয়। এ ধরনের ভুল তথ্য প্রকাশের ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের অপূরণীয় ক্ষতিসাধিত হয়েছে, অপরদিকে বিদেশে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি মারাত্মক ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ওষুধশিল্পের বর্তমান অবস্থার কারণে দেশে ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই এবং দেশের মানুষ সুলভ মূল্যে ওষুধ পাচ্ছে। শিল্পটি আজ নতুনভাবে বিদেশি বাজারে প্রবেশ করার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। এ কৃতিত্বের দাবিদার দেশের জনগণ, সরকার, গণমাধ্যম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে গণমাধ্যমের সহযোগিতা এই শিল্পের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
লেখক : ফার্মাসিস্ট

No comments

Powered by Blogger.