'তথাকথিত এজেন্টরাই মালদ্বীপের শ্রমবাজারে সমস্যা সৃষ্টি করেছে'

থাকথিত এজেন্টরা মালদ্বীপে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাংলাদেশি জনশক্তি পাঠিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক খোরশেদ আলম চৌধুরী। গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি দেশের শ্রমবাজারের একটি নির্দিষ্টসংখ্যক বিদেশি কর্মী ধারণক্ষমতা আছে। ওই ধারণক্ষমতার বেশি কর্মী সেখানে গেলে বেতন কমে যাওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে বাধ্য।


মালদ্বীপে বাংলাদেশি কর্মীদের সমস্যা নিয়ে আলাপকালে খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তরিক। ২০০৯ সালে বিএমইটির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সফরেই তিনি মালদ্বীপে গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের ওই সফর ফলপ্রসূ হয়েছিল উল্লেখ করে বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, ঢাকায় খবর এসেছিল যে, মালদ্বীপ সরকার ১৬ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর দ্রুত বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল মালদ্বীপে যায়।
খোরশেদ আলম বলেন, মালদ্বীপ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার দিন ভোরে তিনি রাজধানী মালের রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন। তিনি দেখতে পেয়েছেন, মালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর প্রায় ৮০ ভাগই বাংলাদেশি। অন্যদিকে পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতের ৫০ ভাগেরও বেশি কর্মী বাংলাদেশি।
বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, সে দিনের বৈঠকে তিনি তাঁর ভোরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বৈঠকে এমন ধারণা দেওয়া হয় যে, প্রায় ১৬ কোটি লোক যদি বাংলাদেশে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারে, তাহলে ওই ১৬ হাজার কর্মীও ফিরে গেলে বাঁচতে পারবে। কিন্তু মালদ্বীপের অগ্রগতিতে ওই ১৬ হাজার কর্মীর অবদান অনেক। মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কই নয়, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাসহ (সার্ক) বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ফোরামে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। শ্রমবাজারের এই দুর্দিনে মালদ্বীপ বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ তা মনে রাখবে বলেও আভাস দেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালের ওই বৈঠকে।
এরপর বৈঠকেই মালদ্বীপ সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশি কর্মীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা অনেক অর্থ খরচ করে মালদ্বীপে কাজ করতে এসেছেন। তাঁদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত 'আত্মঘাতী' হবে।
বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, ওই বৈঠক থেকেই মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরত না পাঠানো, অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে পর্যটন শিল্প আবার নতুন করে চাঙ্গা হলে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের অগ্রাধিকার প্রদান, জনশক্তি বিষয়ে ঢাকা-মালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত হয়।
মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের আর ফেরত পাঠায়নি এবং ইতিমধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
খোরশেদ আলম আরো বলেন, বর্তমানে যে কর্মীরা মালদ্বীপে সমস্যার মধ্যে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে গেছেন।
উল্লেখ্য, মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তাও গত সপ্তাহে কালের কণ্ঠকে বলেন, হাইকমিশন থেকে বারবার ঢাকাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ নিয়ে কর্মীরা মালদ্বীপে কাজের জন্য না আসতে পারে। মালদ্বীপে পর্যটন ও আতিথেয়তা খাতের জন্য কর্মী প্রয়োজন। বাংলাদেশিদের মতো স্বল্প বেতনের কর্মী অন্য কোনো দেশ থেকে মালদ্বীপ পাবে না। বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসার সংখ্যা কমলে তাদের কর্মী-সঙ্কট হবে এবং তখন কর্মীদের জন্য ভালো বেতন-ভাতার জন্য দরকষাকষি করা যাবে।
জানা যায়, বর্তমানে মালদ্বীপে কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার কর্মীর বেশির ভাগেরই নিবন্ধন নেই। অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ নিয়ে পর্যটক হিসেবে মালদ্বীপে ঢুকে তাঁরা বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই নিয়মিত বেতন-ভাতা পান না। আর কর্মী হিসেবে নিবন্ধিত না হওয়ায় এর আইনি প্রতিকার পাওয়ার সুযোগও তাঁদের কম।

No comments

Powered by Blogger.