টেন্ডুলকার যখন শিল্পী

২ গজের সেরা শিল্পী তিনি। একেকটা শট দেখে মনে হয় সবুজ ক্যানভাসে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির তুলির টান। মাঠের শিল্পী শচীন টেন্ডুলকার আবার অবসরে শিল্পের সমঝদার_বিশ্বের যে প্রান্তেই যান না কেন, কিনে ফেলেন ভালো ছবি দেখলেই। বাড়ির বেডরুমে টাঙানো আছে মকবুল ফিদা হোসেনের উপহার দেওয়া হর্স সিরিজের একটা ছবি। পাশেই আছে কলকাতার শিল্পী সনাতন দিন্দার শিল্পকর্ম।


তবে ভালোবাসলেও টেন্ডুলকার কখনো ছবি এঁকেছেন_শোনা যায়নি আগে। তবে এবার কলকাতায় এসে ব্যাট ছেড়ে হাতে তুলি তুলে নিয়েছেন তিনি। ইডেন টেস্ট শেষে মুম্বাই যাওয়ার পথে প্রিয় শিল্পী সনাতন দিন্দার স্টুডিওতে তৈরি হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। টেন্ডুলকারের তুলির আঁকিবুকিতে বর্ণিল হয়ে উঠেছে অচেনা ক্যানভাস।
টেন্ডুলকার একটা আঁচড় দেন তো সনাতন আরেকটা। নীল-সবুজ রঙে ছবি আঁকার এই যুগলবন্দির পর টেন্ডুলকার বললেন, 'আমার মেয়ে সারা ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসে। আমিও ভালোবাসি, তবে আঁকতে পারি না। এই প্রথম এত বড় ক্যানভাসে ছবি আঁকছি। তবে যেখানেই যাই, ভালো ছবি পেলে কিন্তু কিনে নিই আমি।' প্রায় ১৫ মিনিট পরম যতনে টেন্ডুলকারের বাঁ হাত খেলা করেছে ক্যানভাসে। তুলির শেষ টান দেওয়ার পর, সনাতন অনুরোধ জানান ছবিতে অটোগ্রাফ দিতে। কিন্তু ভক্তদের 'টেন্ডুলকার' লিখে যে অটোগ্রাফটা দেন সেটা না দিয়ে কেবল 'শচীন' লিখে জানালেন, 'এত সুন্দর ছবিটা আমি আঁকিনি, শুধু তোমাকে সাহায্য করেছি। তাই টেন্ডুলকার লিখে অটোগ্রাফ দিতে পারছি না, শুধু শচীন লিখে দিলাম।' ছবি আঁকা শেষে সনাতন টেন্ডুলকারকে উপহার দেন ফাইবার গ্লাসের তৈরি একটা জ্যাকেট, যার বুকে লেখা, 'প্রিয় শচীন, ১০০ সেঞ্চুরির জন্য শুভেচ্ছা রইল।' এটা এক দিনে বানিয়েছেন শুনে টেন্ডুলকারের রসিকতা, 'সনাতন দেখছি টোয়েন্টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাটিংটা ভালোবাসে!'
টেন্ডুলকারের সঙ্গে ইডেনের মাঠে মজা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ইডেনে টেন্ডুলকারের শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির প্রত্যাশায় ছিল পুরো কলকাতা। সেটা না হওয়ায় পরশু ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মমতা মজা করে বলেন, 'মুম্বাই আপনার জন্মভূমি, তাই সেঞ্চুরিটা কলকাতায় করলেন না সেখানে করতে চান বলে!' এমন রসিকতায় হেসে ওঠেন টেন্ডুলকার, ধোনিসহ দলের অন্যরাও। ইডেনে সেঞ্চুরি না হলেও টেন্ডুলকার কথা দেন, শততম সেঞ্চুরির ব্যাটটা তিনি উপহার হিসেবে পাঠাবেন সিএবির জাদুঘরে।
মুম্বাইয়ে পেঁৗছে 'মিড-ডে'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবার জানিয়েছেন শততম সেঞ্চুরিটা তাঁর কাছে কেবলই একটা সংখ্যা, 'এটা শুধুই একটা সংখ্যা। শততম সেঞ্চুরি নয়, আমি ভাবছি ভালো ক্রিকেট খেলা নিয়ে। আর উপভোগ করছি খেলাটাও।' শততম সেঞ্চুরি নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়িটাও পছন্দ হচ্ছে না টেন্ডুলকারের, '৯০তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পর কিন্তু কেউ কিছু বলেনি আমাকে। কিছু বলেনি ৯৯তম সেঞ্চুরির আগেও। তাহলে এখন কেন, বুঝতে পারছি না। জানি, সবাই কথা বলছে আমার শততম সেঞ্চুরিটা নিয়ে; কিন্তু আমি নিরুদ্বেগ থাকতে চাই।' শততম সেঞ্চুরির চেয়ে তিনি বরং বেশি খুশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বছর কাটানোয়, 'অসাধারণ অনুভূতি। এত দীর্ঘ সময় দেশের হয়ে খেলতে পারাটা গর্বের উপলক্ষ আমার জন্য।' মিড-ডে, পিটিআই

No comments

Powered by Blogger.