পবিত্র হজ by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ এই মিলনমেলায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ হাজি মিনার তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন। মিনায় রাত্রিযাপনের মধ্য দিয়ে গতকাল থেকেইশুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হাজিরা মক্কাথেকে ওমরাহ শেষে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফজরের নামাজের পরপরই তারা মিনার তাঁবুতে এসে উপস্থিত হনআজ ৯ জিলহজ, পবিত্র হজ।
মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে মক্কার আরাফাতের ময়দানে। সেখানে লাখ লাখ কণ্ঠে ধ্বনিত হবে_ 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক- লা শারিকা লাকা লাব্বাইক।' অর্থাৎ 'আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।'
আল্লাহতায়ালার দরবারে যাবতীয় কল্যাণ, রহমত ও মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করবেন উপস্থিত হাজিরা। সমবেত হাজিদের উদ্দেশে প্রদান করা হবে হজের খুতবা। এবারও সৌদি আরবের রাজকীয় মুফতি আবদুুল আজিজ আল শাইখ হজের খুতবা প্রদান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় অনুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে এবং শেষ হয় দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে।
আল্লাহ-প্রেমের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা আরাফাত ময়দান। সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র পরিধান করা লাখো হাজির স্রোত দেখে মানসপটে ভেসে ওঠে সাড়ে চৌদ্দশ' বছর আগে আরাফাতের ময়দানে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণের চিত্র। আমির-ফকির, সাদা-কালো, বর্ণ-গোত্রের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না সেখানে। আরাফাতের ময়দানে হাজিদের কেউ তাঁবু টানিয়ে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে মাথায় ছাতা ধরে দেশ-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে এক কাতারে অবস্থান করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ এই মিলনমেলায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ হাজি মিনার তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন। মিনায় রাত্রিযাপনের মধ্য দিয়ে গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হাজিরা মক্কা থেকে ওমরাহ শেষে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফজরের নামাজের পরপরই তারা মিনার তাঁবুতে এসে উপস্থিত হন।
ইতিমধ্যে হাজিরা মিনার তাঁবুতে রাত্রিযাপন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে আরাফাতে এসে পেঁৗছেছেন। এখানেই আজ হাজিরা হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। এ সময় আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেওয়া হবে। ৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম বিধান। আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং রাতে অবস্থান করবেন।
উল্লেখ্য, হজের মধ্যে অনেক আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের (১০ হিজরি) ভাষণের জন্যও আরাফাতের ময়দান বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে দাঁড়িয়েই লক্ষাধিক সাহাবিকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন তিনি। এ ভাষণ দেওয়ার পরই কোরআনুল কারিমের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণতার কথা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জানানো হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সেখানে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। সেদিনে এখনও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন সবার উদ্দেশে খুতবা দেওয়া হয়।
মক্কা শরিফ থেকে প্রায় ৯ মাইল পূর্বদিকে একটি পাহাড়ের নাম 'জাবালে রহমত' বা করুণার পাহাড়। এই পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিরাট প্রান্তরটি আরাফাত ময়দান নামে পরিচিত। পাহাড়টি মধ্যম আকৃতির এবং গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। এর উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এই পাহাড়ের পূর্বদিকে প্রস্তরের সিঁড়ি রয়েছে। এর ষষ্ঠ ধাপের উচ্চতা বরাবর আগে একটি উন্নত মঞ্চ ও একটি মিম্বর ছিল। এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ৯ জিলহজ আরাফার দিন ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করতেন। এখন আর সেই মঞ্চ ও মিম্বর নেই এবং এখান থেকে হজের খুতবাও প্রদান করা হয় না। বরং এখন খুতবা দেওয়া হয় মসজিদে নামিরা থেকে।
বর্তমানেও হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়। এ খুতবা অতীব গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আরাফার ময়দানের ভাষণটি আরবিতে হওয়ায় তা উপস্থিত অন্য ভাষাভাষী মুসলিম ভাইবোনদের বোধগম্য হয় না। তাই আরাফার ময়দানে দেওয়া খুতবাটি যদি বিভিন্ন ভাষায় আগেই অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে হজ সমাপনকারীদের মক্কা-মদীনা থেকে বিদায়কালে প্লেনে অথবা অন্য যানে ওঠার সময় দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে প্রত্যেক হাজি তা অবহিত হয়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে তা প্রয়োগ করে উপকৃত হতে পারেন। এ ব্যাপারে সৌদি সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি সৌদি সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে।
আরেকটি কথা, এদিন যারা হজ পালন করছেন না তারা নফল রোজা রাখবেন। এই রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আরাফাহ দিবসের রোজা দু'বছরের (বিগত ও অনাগত) গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আরাফার দিন আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের এত অধিকসংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এদিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের গর্ব করে বলেন, আমার এসব বান্দার দিকে চেয়ে দেখ! তারা এলোমেলো কেশ ও ধুলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।'_মুসলিম শরিফ
হজ দ্বারা মুমিন মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা বিকশিত হয়, শক্তিশালী হয়। বিপুল বিত্তবৈভব আর প্রিয়জনের মায়া ত্যাগ করে, কাফনের কাপড় পরে অবলীলায় কাবাপানে ছুটে যাওয়া তার সুদৃঢ় ইমানের পরিচায়ক। দৃঢ় ইমানের বহিঃপ্রকাশ পরকালের কামিয়াবির হাতিয়ার। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত হজ পালনের মধ্য দিয়েই তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর এই সন্তুষ্টির মাধ্যমে একদিকে অর্জিত হয় পারলৌকিক মুক্তি, অন্যদিকে ঘটে চেতনার উন্মেষ এবং উপলব্ধির ক্ষমতা। হজের অঙ্গীভূত কার্যাবলির এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে হজরত ইবরাহীম (আ.), তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা (আ.) এবং পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিচারণা। হজ পালনকালে হাজিদের মানসপটে জেগে ওঠে তাঁদের সেই দুঃখ-কষ্ট, কোরবানি ও আত্মত্যাগের অবিস্মরণীয় চিত্র। এ ছাড়া হজের মাধ্যমে মানুষ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), তাঁর প্রিয়জন ও সাহাবিদের কবর জিয়ারত এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত (বদর, খন্দক, হেরা-পর্বত, জাবালে রহমত) ইত্যাদি স্থান প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে তার হৃদয়ে হজরত রাসূলল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের (রা.) ভালোবাসার মধ্য দিয়েই অর্জিত হয় জান্নাত। কেননা, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসবে, সে আমাকে ভালোবাসবে। আর আমাকে যে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে আমার সাথী হবে।'
বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত হজব্রত পালনকারীরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই হাদিসের সুসংবাদ বহন করে হজ পালন করার তওফিক অর্জন করুন_ এই কামনা রইল।
সঁভঃরধহধবঃ@মসধরষ.পড়স
আল্লাহতায়ালার দরবারে যাবতীয় কল্যাণ, রহমত ও মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনা করবেন উপস্থিত হাজিরা। সমবেত হাজিদের উদ্দেশে প্রদান করা হবে হজের খুতবা। এবারও সৌদি আরবের রাজকীয় মুফতি আবদুুল আজিজ আল শাইখ হজের খুতবা প্রদান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় অনুসারে সাধারণত খুতবা শুরু হয় দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে এবং শেষ হয় দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে।
আল্লাহ-প্রেমের এক অভূতপূর্ব মিলনমেলা আরাফাত ময়দান। সেলাইবিহীন সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র পরিধান করা লাখো হাজির স্রোত দেখে মানসপটে ভেসে ওঠে সাড়ে চৌদ্দশ' বছর আগে আরাফাতের ময়দানে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণের চিত্র। আমির-ফকির, সাদা-কালো, বর্ণ-গোত্রের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না সেখানে। আরাফাতের ময়দানে হাজিদের কেউ তাঁবু টানিয়ে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে মাথায় ছাতা ধরে দেশ-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে এক কাতারে অবস্থান করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ এই মিলনমেলায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ হাজি মিনার তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন। মিনায় রাত্রিযাপনের মধ্য দিয়ে গতকাল থেকেই শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হাজিরা মক্কা থেকে ওমরাহ শেষে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফজরের নামাজের পরপরই তারা মিনার তাঁবুতে এসে উপস্থিত হন।
ইতিমধ্যে হাজিরা মিনার তাঁবুতে রাত্রিযাপন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে আরাফাতে এসে পেঁৗছেছেন। এখানেই আজ হাজিরা হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন। এ সময় আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দেওয়া হবে। ৯ জিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম বিধান। আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং রাতে অবস্থান করবেন।
উল্লেখ্য, হজের মধ্যে অনেক আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। ৯ জিলহজ হাজিদের আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিদায় হজের (১০ হিজরি) ভাষণের জন্যও আরাফাতের ময়দান বিশেষভাবে পরিচিত। এখানে দাঁড়িয়েই লক্ষাধিক সাহাবিকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেন তিনি। এ ভাষণ দেওয়ার পরই কোরআনুল কারিমের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণতার কথা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)কে জানানো হয়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সেখানে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। সেদিনে এখনও আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন সবার উদ্দেশে খুতবা দেওয়া হয়।
মক্কা শরিফ থেকে প্রায় ৯ মাইল পূর্বদিকে একটি পাহাড়ের নাম 'জাবালে রহমত' বা করুণার পাহাড়। এই পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিরাট প্রান্তরটি আরাফাত ময়দান নামে পরিচিত। পাহাড়টি মধ্যম আকৃতির এবং গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। এর উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এই পাহাড়ের পূর্বদিকে প্রস্তরের সিঁড়ি রয়েছে। এর ষষ্ঠ ধাপের উচ্চতা বরাবর আগে একটি উন্নত মঞ্চ ও একটি মিম্বর ছিল। এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ৯ জিলহজ আরাফার দিন ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করতেন। এখন আর সেই মঞ্চ ও মিম্বর নেই এবং এখান থেকে হজের খুতবাও প্রদান করা হয় না। বরং এখন খুতবা দেওয়া হয় মসজিদে নামিরা থেকে।
বর্তমানেও হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়। এ খুতবা অতীব গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আরাফার ময়দানের ভাষণটি আরবিতে হওয়ায় তা উপস্থিত অন্য ভাষাভাষী মুসলিম ভাইবোনদের বোধগম্য হয় না। তাই আরাফার ময়দানে দেওয়া খুতবাটি যদি বিভিন্ন ভাষায় আগেই অনুবাদ করে পুস্তিকা আকারে হজ সমাপনকারীদের মক্কা-মদীনা থেকে বিদায়কালে প্লেনে অথবা অন্য যানে ওঠার সময় দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে প্রত্যেক হাজি তা অবহিত হয়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে তা প্রয়োগ করে উপকৃত হতে পারেন। এ ব্যাপারে সৌদি সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি সৌদি সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে।
আরেকটি কথা, এদিন যারা হজ পালন করছেন না তারা নফল রোজা রাখবেন। এই রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আরাফাহ দিবসের রোজা দু'বছরের (বিগত ও অনাগত) গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আরাফার দিন আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের এত অধিকসংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এদিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের গর্ব করে বলেন, আমার এসব বান্দার দিকে চেয়ে দেখ! তারা এলোমেলো কেশ ও ধুলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।'_মুসলিম শরিফ
হজ দ্বারা মুমিন মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি ও চেতনা বিকশিত হয়, শক্তিশালী হয়। বিপুল বিত্তবৈভব আর প্রিয়জনের মায়া ত্যাগ করে, কাফনের কাপড় পরে অবলীলায় কাবাপানে ছুটে যাওয়া তার সুদৃঢ় ইমানের পরিচায়ক। দৃঢ় ইমানের বহিঃপ্রকাশ পরকালের কামিয়াবির হাতিয়ার। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত হজ পালনের মধ্য দিয়েই তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর এই সন্তুষ্টির মাধ্যমে একদিকে অর্জিত হয় পারলৌকিক মুক্তি, অন্যদিকে ঘটে চেতনার উন্মেষ এবং উপলব্ধির ক্ষমতা। হজের অঙ্গীভূত কার্যাবলির এক বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে হজরত ইবরাহীম (আ.), তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা (আ.) এবং পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিচারণা। হজ পালনকালে হাজিদের মানসপটে জেগে ওঠে তাঁদের সেই দুঃখ-কষ্ট, কোরবানি ও আত্মত্যাগের অবিস্মরণীয় চিত্র। এ ছাড়া হজের মাধ্যমে মানুষ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), তাঁর প্রিয়জন ও সাহাবিদের কবর জিয়ারত এবং ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত (বদর, খন্দক, হেরা-পর্বত, জাবালে রহমত) ইত্যাদি স্থান প্রত্যক্ষ করতে গিয়ে তার হৃদয়ে হজরত রাসূলল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের (রা.) ভালোবাসার মধ্য দিয়েই অর্জিত হয় জান্নাত। কেননা, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসবে, সে আমাকে ভালোবাসবে। আর আমাকে যে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে আমার সাথী হবে।'
বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আগত হজব্রত পালনকারীরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এই হাদিসের সুসংবাদ বহন করে হজ পালন করার তওফিক অর্জন করুন_ এই কামনা রইল।
সঁভঃরধহধবঃ@মসধরষ.পড়স
No comments