জাদুর পৃথিবী... by আশিক মুস্তাফা
পৃথিবীর ইতিহাস আর জাদুবিদ্যার ইতিহাস একই সমান্তরালে চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। জাদু ছাড়া কল্পনা করা যায় না বিশ্ব। একা আনমনে রাত জেগে বসে বসে জাদু পাহারা দেয় তার সহচর পৃথিবীটাকে। যার প্রমাণ মেলে হাজার বছর আগে লেখা 'দ্য ওয়েস্টকার প্যাপিরাস' নামক গ্রন্থে। বইটায় কত নিখুঁতভাবেই না লেখা হয়েছে জাদুর কথা। তারও এক শতক আগে রাজা ফারাহর অট্টালিকায় প্রদর্শিত হতো জাদু।
প্রাচীন গ্রিস ও রোমে জাদুকররা বাজার ও রাস্তায় জনসমক্ষে জাদু প্রদর্শন করতেন। সে সময় জাদু দেখিয়ে বেশ নামও কুড়িয়েছেন জাদুকররা।প্রাচীনকালে প্রায় সব জাতিগোষ্ঠীরই ছিল নিজস্ব কিছু জাদুবিদ্যা, যার ডানায় ভর করে এবং সংস্কৃতির বিকাশে একাত্মতা পোষণ করে জাদু আজ হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন। জাদু খুব সহজে এক সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতিতে প্রবেশ করে বলেও ইতিহাসবিদরা মনে করেন। ১৯৫০ সালের আগে জাদু প্রদর্শিত হতো ঘরের বাইরে হাট-বাজার, মেলা বা রাস্তার কোনায়। জাদুকরদের নিজস্ব কোনো ঠিকানা ছিল না। মানে জাদু প্রদর্শনের জন্য তখন নির্দিষ্ট কোনো মঞ্চ ছিল না। প্রায় ৫০০ বছর আগে জাদুকররা রাজপ্রাসাদে জাদু প্রদর্শন শুরু করেন। পিরামিডের দেশ মিসরের রাজদরবারে রাজা চিওপসের সামনে জাদুকর দেদি সিংহ ও ষাঁড়ের মাথা আলাদা করে আবার জোড়া দিয়ে রাজার চোখের তারা বের করে দিয়েছিলেন। দেদি সেদিন বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন রাজমহলে।
সভ্যতার হাত ধরে এক সময় জাদু প্রবেশ করে ভারতে। প্রায় ৬০০ বছর আগে লেখা 'ইন্ডিয়ান রূপ ট্রিকস' বইতে এই অঞ্চলের জাদুবিদ্যার নানা কৌশল সম্পর্কে জানা যায়। ছোট ছেলেমেয়েরা দড়ির ওপর খেলা করে দর্শকদের মুগ্ধ করত। তলোয়ার দিয়ে শরীরকে কয়েক খণ্ড করে আবার জোড়া লাগিয়ে দর্শকদের মন জয় করত।
১৭৫০-এর পর যখন ইউরোপজুড়ে বাজার ও মেলার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে, তখন জাদুকররা ছড়িয়ে পড়েন শহরগুলোয়। এরপর জাদু প্রদর্শন শুরু হয় বিভিন্ন সরাইখানা, ভাড়া করা বাড়ি এবং ব্যক্তিগত বাড়িতে। আর তখন জাদু মন কাড়ে সমাজের ওপরতলার মানুষের। সেই থেকেই জাদুকররা জাদু প্রদর্শনের সুযোগ পান বড় বড় থিয়েটারে।
কিন্তু একই জাদু বার বার দেখার ফলে মানুষের কাছে জাদু পানসে হয়ে ওঠে। মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখার জন্য জাদুকররা অনেক ভেবেচিন্তে তখন পুরনো জাদুর সঙ্গে বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটান এবং সঙ্গে যোগ করেন বক্তৃতা। ১৭০০ সালে ইংল্যান্ডের জাদুকর ক্যাটার ফিল্টো জাদু প্রদর্শনের আগে আধাঘণ্টা বিজ্ঞানভিত্তিক লেকচার দিয়ে এক ফোঁটা পানি, মদ ও দুধের মধ্যে ছোট ছোট হাজারো বস্তুর অস্তিত্ব বড় করে দেখিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৮১২ সালে "ইংল্যান্ড'স হোপ অব মিস্টেরি" নির্মাণ করা হয়। আর সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের জাদুকররা পান তাদের জাদু প্রদর্শনের জন্য স্থায়ী ঠিকানা। ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত এ জাদুঘরে জাদু প্রদর্শিত হতো।
আমেরিকার জাদুকর হ্যারি ফেলার ছিলেন প্রথম জাদুকর, যিনি একজন জাদুকর হিসেবেই জন্মেছিলেন। দেশে দেশে ঘুরে জাদু প্রদর্শন করতেন তিনি। ১৮৮৪ সালের পর জাদু প্রদর্শনের জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। হ্যারি ফেলার বিশ্বাস করতেন, আমেরিকা শুধু একজন জাদুকরকেই সেরা মনে করা হয়। আর সেই সেরা জাদুকর হচ্ছেন তিনি।
১৯৫০ সালে জাদুকর চ্যানিং পোলক বাতাস থেকে কবুতর বানিয়ে দর্শকদের মন জয় করেন। জাদু প্রদর্শনের জন্য তিনি অন্য রকম পোশাক পরিধান করতেন। জাদুকরী এই পোশাক, হাসি এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে চ্যানিং পোলক দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বর্তমান সময়ের জাদুকররা জাদু প্রদর্শনকালে যে অঙ্গভঙ্গি করেন, তা এই চ্যানিং পোলক থেকেই ধার করা। বিশ্বখ্যাত জাদুকরদের মধ্যে জ্যাক গুয়েনি, দাই ভারনন, টনি স্লিডিনি, ডন অ্যালান, ইডি সুলিভান, মার্ক উইলসন এবং নানি ডারনেল উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান সময়ে ডেভিড কপারফিল্ড এক জীবন্ত নাম। আমাদের জুয়েল আইচও কম কিসে?
ডেভিড কপারফিল্ডের মতো জুয়েল আইচও জাদুকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বেশ ভাবও এই দু'জনের। জুয়েল আইচ জাদু প্রদর্শনের সময় যে হাসি আর সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেন দর্শকদের, তা সত্যিই অতুলনীয়। সে মেসেজে ফুটে ওঠে নানা অসঙ্গতির কথা। জুয়েল আইচ তার ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার জন্য সারা পৃথিবীতেই নাম কুড়িয়েছেন। তবে পথজাদুকররা এখনও বেঁচে আছেন খেয়ে- না খেয়ে। অনেক নামি জাদুকর তাদের সত্যিকার জাদুকর মনে করেন না। তাদের যুক্তি, যদি তারা সত্যিকার জাদুকে ভালোবাসত। তাহলে সব রোগের উদ্ভট ওষুধ বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত না।
শেষ করব এক অন্যরকম জাদুর গল্প দিয়ে। বেনজামিন রুকার, যিনি ব্ল্যাক হারম্যান নামে পরিচিত; তিনি জীবন্ত অবস্থায় কবরে থাকতে পারতেন। দর্শকরা তাকে মৃত অবস্থায় কফিনে ঢুকিয়ে কবরে সমাহিত করত তার একদিন পর তিনি কবর থেকে বেরিয়ে আসতেন।
১৯৩৪ সালে এক রাতে জাদুর মঞ্চে এই জাদুটি আবার দেখাচ্ছিলেন বেনজামিন রুকার। যথারীতি তিনি মৃতের মতো শুয়ে পড়লেন। দর্শকরা সবাই তাকিয়ে আছে হারম্যানের পরবর্তী চালাকি দেখার জন্য, তখন তার সহযোগী বলে উঠলেন_ ্তুখবঃ্থং পযধৎমব ধফসরংংরড়হ. ঞযধঃ্থং যিধঃ যব ড়িঁষফ যধাব ফড়হব্থ
সভ্যতার হাত ধরে এক সময় জাদু প্রবেশ করে ভারতে। প্রায় ৬০০ বছর আগে লেখা 'ইন্ডিয়ান রূপ ট্রিকস' বইতে এই অঞ্চলের জাদুবিদ্যার নানা কৌশল সম্পর্কে জানা যায়। ছোট ছেলেমেয়েরা দড়ির ওপর খেলা করে দর্শকদের মুগ্ধ করত। তলোয়ার দিয়ে শরীরকে কয়েক খণ্ড করে আবার জোড়া লাগিয়ে দর্শকদের মন জয় করত।
১৭৫০-এর পর যখন ইউরোপজুড়ে বাজার ও মেলার জনপ্রিয়তা কমতে থাকে, তখন জাদুকররা ছড়িয়ে পড়েন শহরগুলোয়। এরপর জাদু প্রদর্শন শুরু হয় বিভিন্ন সরাইখানা, ভাড়া করা বাড়ি এবং ব্যক্তিগত বাড়িতে। আর তখন জাদু মন কাড়ে সমাজের ওপরতলার মানুষের। সেই থেকেই জাদুকররা জাদু প্রদর্শনের সুযোগ পান বড় বড় থিয়েটারে।
কিন্তু একই জাদু বার বার দেখার ফলে মানুষের কাছে জাদু পানসে হয়ে ওঠে। মানুষের আকর্ষণ ধরে রাখার জন্য জাদুকররা অনেক ভেবেচিন্তে তখন পুরনো জাদুর সঙ্গে বিজ্ঞানের সংমিশ্রণ ঘটান এবং সঙ্গে যোগ করেন বক্তৃতা। ১৭০০ সালে ইংল্যান্ডের জাদুকর ক্যাটার ফিল্টো জাদু প্রদর্শনের আগে আধাঘণ্টা বিজ্ঞানভিত্তিক লেকচার দিয়ে এক ফোঁটা পানি, মদ ও দুধের মধ্যে ছোট ছোট হাজারো বস্তুর অস্তিত্ব বড় করে দেখিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন।
১৮১২ সালে "ইংল্যান্ড'স হোপ অব মিস্টেরি" নির্মাণ করা হয়। আর সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের জাদুকররা পান তাদের জাদু প্রদর্শনের জন্য স্থায়ী ঠিকানা। ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত এ জাদুঘরে জাদু প্রদর্শিত হতো।
আমেরিকার জাদুকর হ্যারি ফেলার ছিলেন প্রথম জাদুকর, যিনি একজন জাদুকর হিসেবেই জন্মেছিলেন। দেশে দেশে ঘুরে জাদু প্রদর্শন করতেন তিনি। ১৮৮৪ সালের পর জাদু প্রদর্শনের জন্য তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন। হ্যারি ফেলার বিশ্বাস করতেন, আমেরিকা শুধু একজন জাদুকরকেই সেরা মনে করা হয়। আর সেই সেরা জাদুকর হচ্ছেন তিনি।
১৯৫০ সালে জাদুকর চ্যানিং পোলক বাতাস থেকে কবুতর বানিয়ে দর্শকদের মন জয় করেন। জাদু প্রদর্শনের জন্য তিনি অন্য রকম পোশাক পরিধান করতেন। জাদুকরী এই পোশাক, হাসি এবং অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে চ্যানিং পোলক দর্শকদের মনোযোগ ধরে রাখতেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বর্তমান সময়ের জাদুকররা জাদু প্রদর্শনকালে যে অঙ্গভঙ্গি করেন, তা এই চ্যানিং পোলক থেকেই ধার করা। বিশ্বখ্যাত জাদুকরদের মধ্যে জ্যাক গুয়েনি, দাই ভারনন, টনি স্লিডিনি, ডন অ্যালান, ইডি সুলিভান, মার্ক উইলসন এবং নানি ডারনেল উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান সময়ে ডেভিড কপারফিল্ড এক জীবন্ত নাম। আমাদের জুয়েল আইচও কম কিসে?
ডেভিড কপারফিল্ডের মতো জুয়েল আইচও জাদুকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বেশ ভাবও এই দু'জনের। জুয়েল আইচ জাদু প্রদর্শনের সময় যে হাসি আর সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেন দর্শকদের, তা সত্যিই অতুলনীয়। সে মেসেজে ফুটে ওঠে নানা অসঙ্গতির কথা। জুয়েল আইচ তার ব্যতিক্রমী উপস্থাপনার জন্য সারা পৃথিবীতেই নাম কুড়িয়েছেন। তবে পথজাদুকররা এখনও বেঁচে আছেন খেয়ে- না খেয়ে। অনেক নামি জাদুকর তাদের সত্যিকার জাদুকর মনে করেন না। তাদের যুক্তি, যদি তারা সত্যিকার জাদুকে ভালোবাসত। তাহলে সব রোগের উদ্ভট ওষুধ বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত না।
শেষ করব এক অন্যরকম জাদুর গল্প দিয়ে। বেনজামিন রুকার, যিনি ব্ল্যাক হারম্যান নামে পরিচিত; তিনি জীবন্ত অবস্থায় কবরে থাকতে পারতেন। দর্শকরা তাকে মৃত অবস্থায় কফিনে ঢুকিয়ে কবরে সমাহিত করত তার একদিন পর তিনি কবর থেকে বেরিয়ে আসতেন।
১৯৩৪ সালে এক রাতে জাদুর মঞ্চে এই জাদুটি আবার দেখাচ্ছিলেন বেনজামিন রুকার। যথারীতি তিনি মৃতের মতো শুয়ে পড়লেন। দর্শকরা সবাই তাকিয়ে আছে হারম্যানের পরবর্তী চালাকি দেখার জন্য, তখন তার সহযোগী বলে উঠলেন_ ্তুখবঃ্থং পযধৎমব ধফসরংংরড়হ. ঞযধঃ্থং যিধঃ যব ড়িঁষফ যধাব ফড়হব্থ
No comments