ব্যর্থতায় সবার ওপরে ইমরুল

রিকি পন্টিংয়ের সঙ্গে তুলনা চলে না গৌতম গম্ভীরের। একজন কিংবদন্তি, আরেকজনের ক্যারিয়ারে উজ্জ্বলতা ছড়ানো সবে শুরু। প্রায় ৫৩ গড়ে পন্টিংয়ের টেস্ট রান যেখানে ১২ হাজারেরও বেশি, সেখানে গৌতম গম্ভীরের ৩৫০০ রানই হয়নি এখনো। এর পরও মিল আছে এক জায়গায়। ব্যাটে বসন্ত চলছিল দুজনেরই। এরই ফাঁকে জেঁকে বসেছে শীত। গত ২২ মাসে টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পাননি কেউই।


এ সময়ে দুজনই খেলেছেন ২৫টি করে ইনিংস, আর দুজনেরই গড় ৩০-এর কম! পন্টিং, গম্ভীরের সঙ্গে চলে আসছে বাংলাদেশি ওপেনার ইমরুল কায়েসের নামও, কেননা গত ২২ মাসে টেস্টে সবচেয়ে কম গড় এই ওপেনারেরই!
শুরু করা যাক গৌতম গম্ভীরকে দিয়ে। ৪৩ টেস্টে গড় ৪৮.১১ হলেও ২০০৮ সালের জুলাই থেকে ২০১০-এর জানুয়ারি পর্যন্ত এই ভারতীয় ওপেনার ছিলেন স্বর্ণালি ফর্মে। সে সময় খেলা ১৫ টেস্টে ২০৬৮ রান করেছেন ৭৬.৫৯ গড়ে। ৯ টেস্ট সেঞ্চুরির আটটিই করেছিলেন তখন। মোহালিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০৬, ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১৬৭, কানপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৬৭ রানের চমৎকার সব ইনিংস খেলেছেন তখনই। এমনি এমনি তো আর আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার হননি গম্ভীর! তবে গত বছরের জানুয়ারির পর থেকেই শুরু ছন্দপতন। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ইডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট পর্যন্ত ১৪ ম্যাচের ২৫ ইনিংসে করেছেন ৭০৪ রান। গড় মাত্র ২৯.৩৩, ফিফটি পেয়েছেন ছয়টি। সর্বোচ্চ ৯৩ রানের ইনিংসটা খেলেছিলেন কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। চোটের কারণে দুঃস্বপ্নের ইংল্যান্ড সফরে খেলতে পারেননি দুই টেস্ট। তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে তাঁর স্কোর ছিল ১৫, ২২, ৩৮, ১৪, ১০ ও ৩। ভারতের হোয়াইটওয়াশ হওয়া ও র‌্যাংকিংয়ে এক নম্বরের মুকুট হারানোর অন্যতম কারণও ছিল অন্য ব্যাটসম্যানদের মতো গম্ভীরেরও ফর্মে না থাকাটা।
টেস্টের ব্যর্থতা অবশ্য সেভাবে নজরে আসেনি ওয়ানডের সফলতায়। ২০১০-এর জুন থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত খেলা ২৩ ওয়ানডেতে ৫৬.৯০ গড়ে ১১৩৮ রান করেছেন গম্ভীর। সেঞ্চুরি দুটি, ফিফটি আছে আটটি। সবচেয়ে স্মরণীয় অবশ্যই বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৭ রানের ইনিংসটি। অথচ তাঁর ক্যারিয়ার গড় ৪১.২১। তবে ওয়ানডে নয় ব্যাটসম্যানের আসল জাতটা তো চেনা যায় টেস্টে, সেটা ভালোই জানা আছে গম্ভীরের। তাই সর্বশেষ খেলা ইডেন টেস্টে ৬৫ করার পর টেস্টে আরো ভালো করারই প্রত্যয় জানিয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
গত ২২ মাসে ১৪ টেস্টের মধ্যে ১৩ ম্যাচের ২২ ইনিংসে গম্ভীর খেলেছেন ওপেনার হিসেবে। এই ২২ ইনিংসে ৬৬৯ রান করেছেন ৩১.৮৫ গড়ে। গড়ের হিসাবে এটা এ সময়ের তৃতীয় সর্বনিম্ন। তাঁর সামনে আছেন বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস ও অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজ। ইমরুল গত ২২ মাসে খেলা আট টেস্টের ১৬ ইনিংসে একটি ফিফটিসহ ৩৫৯ রান করেছেন ২২.৪৩ গড়ে। এর চেয়ে কম গড় এই সময়ে নেই আর কোনো ওপেনারের। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টন টেস্টের দুই ইনিংসে ইমরুল করেছিলেন ২৮ ও ২৯। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ ও ২৩-এর পর মিরপুরের দুই ইনিংসে করেন ১২ ও ৪। মে মাসে লর্ডসে একটু হলেও কাটিয়েছিলেন রান খরাটা। সেখানে দুই ইনিংসে করেন ৪৩ ও ৭৫। এর পরই মরিচা পড়ে যায় ব্যাটে। সর্বশেষ আট ইনিংসে ইমরুলের রান ৩৬, ৯, ৪, ৩১, ১০, ১৩, ২৯ ও ৯। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ১০ ও ১৩ করার পর বেশ সমালোচনা হয়েছিল ইমরুলের দলে থাকা নিয়ে। তবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম মনোবল জোগাতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, 'মিরপুর টেস্টেই ইমরুল রানে ফিরবে।' অথচ সেখানেও ব্যর্থ। ২৯ ও ৯ রানের দুটো ইনিংস খেলায় গত ২২ মাসে তাঁর টেস্ট গড় মাত্র ২২.৪৩। এ সময়ে এর চেয়ে খারাপ গড় নেই আর কোনো ওপেনারেরই। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজ ইমরুলের সমান ৮ টেস্টে ৪২৩ রান করেছিলেন ৩০.২১ গড়ে।
রিকি পন্টিংয়ে আসা যাক এবার। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১২৪৯৫ রান এই অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির। ১৫৬ টেস্টে ৫২.৭২ গড়টাও যেকোনো বিচারেই খুব ভালো। ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ৬৫.৪৩ গড়ে করেছিলেন ৮১১৪ রান, সে সময়ে এর চেয়ে বেশি রান করতে পারেননি আর কেউই। সেই পন্টিংয়ের ব্যাটে তেমন রান নেই গত ২২ মাস ধরে। এ সময়ে ১৩ টেস্টের ২৫ ইনিংসে পাঁচটি ফিফটিসহ ৬৩৬ রান করেছেন মাত্র ২৬.৫০ গড়ে (কেপটাউন টেস্ট বাদ দিয়ে করা হয়েছে এ হিসাব, কেপটাউনে প্রথম ইনিংসে পন্টিং আউট হয়েছেন ০ রানে)। ১৩ টেস্টের ১২টিই খেলেছেন আবার তিন নম্বরে। এই ১২ টেস্টের ২২ ইনিংসে ৫৫২ রান করেছেন ২৬.২৮ গড়ে, যা তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে গত ২২ মাসে সবচেয়ে কম গড়ের নজির। এই সময়ে অন্তত ২০ ইনিংস খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় স্থানে থাকা পাকিস্তানের আজহার আলি ১৪ টেস্টের ২৭ ইনিংসে ১০২৪ রান করেছেন ৪২.৬৬ গড়ে। তাঁর সেঞ্চুরি এক আর ফিফটি ১০টি। টেস্টে ৪০ গড়টাই যথেষ্ট শ্রদ্ধা করার মতো। তাই আজহারের ৪২.৬৬ গড়টাকে খারাপ বলা যাবে না কোনোভাবেই। ব্যর্থতার এই তালিকায় ৪৪.৪৬ গড় নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড় আর ৬৪.৫৫ গড় নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ইংল্যান্ডের জোনাথন ট্রট। ক্রিকইনফো
কম গড়ে রান করা ওপেনার (ফেব্রুয়ারি ২০১০ থেকে)

No comments

Powered by Blogger.