ঝুঁকিতে অর্থনীতি-সমস্যা সমাধানে পরিস্থিতি আমলে নিন
গত ৩ নভেম্বর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত 'সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশের অর্থনীতি এক জটিল সময়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাঁদের ভাষায়, আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনের তীব্র চাপ এবং এরই পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ঘনায়মান মন্দা দেশের অর্থনীতিকে অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। প্রথম দফা অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশ কাটাতে পারলেও দ্বিতীয় দফা মন্দার প্রভাব কাটানো দুরূহ হবে_এও তাঁদের আশঙ্কা।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এমনিতেই দুর্বল। এর মধ্যে উলি্লখিত কারণগুলো সেই দুর্বল পরিস্থিতিকে আরো পুষ্ট করেছে। পাশাপাশি রয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মহীনদের নানা রকম সামাজিক চাপ। নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে দূরদর্শিতার অভাব। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও বড় একটি ফ্যাক্টর। রাজনৈতিক অস্থিরতা-অস্থিতিশীলতার বিরূপ প্রভাব আমাদের জন্য আরেকটি অশনি সংকেত। বৈদেশিক সাহায্য কিংবা দান-অনুদানের সুষ্ঠু ব্যবহারের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। সব কিছু মিলিয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি হ-য-ব-র-ল। গত বছর রপ্তানি বৃদ্ধি ও রাজস্ব আদায়ের চিত্র মোটামুটি উজ্জ্বল হলেও মূল্যস্ফীতির চাপটা ছিল প্রকট। মূল্যস্ফীতি বর্তমানে আরো উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিরও গুণগত পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়। বৈদেশিক ঋণ কমছে। কমছে করবহির্ভূত আয়ও। পুঁজিবাজারে বিরাজ করছে চরম অস্থিতিশীলতা-অস্থিরতা। বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় দফা মন্দার আভাস স্পষ্ট। পর পর কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। এরই মধ্যে ভারত, চীন, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি এর বিপরীত। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনাগত নানা ত্রুটি এর মধ্যে বিষফোড়াসম। কয়েক মাস ধরে আর্থিক খাতে অন্যতম আলোচিত হচ্ছে সরকারের মাত্রাতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের বিষয়টি। একদিকে মুদ্রার অতিরিক্ত জোগানে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। এর চাপ গিয়ে পড়ছে শিল্প প্রবৃদ্ধির হার ও পুঁজিবাজারে। অন্যান্য ক্ষতি বাদ দিলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এসব মোটেও শুভ সংকেত নয়।
প্রস্তাব রয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ ব্যাংক ঋণের প্রতি সরকারের নির্ভরশীলতা কমানো ও বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারে দক্ষতা ও স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের প্রতি যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তা বিবেচনায় রাখা উচিত। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণক্রমে সরকারকে দূরদর্শী পরিকল্পনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়ে তা থেকে উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রস্তাব রয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ ব্যাংক ঋণের প্রতি সরকারের নির্ভরশীলতা কমানো ও বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারে দক্ষতা ও স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের প্রতি যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তা বিবেচনায় রাখা উচিত। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণক্রমে সরকারকে দূরদর্শী পরিকল্পনার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব শঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো আমলে নিয়ে তা থেকে উত্তরণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments