সোনালি টিপ by জসীম আল ফাহিম
ঝুমুর একটি টিপ আছে। আশ্চর্য সুন্দর টিপ! টিপটির রঙ সোনালি। দেখতে কপালে পরার টিপের মতোই গোল। নিজ থেকে ওটি আলো ছড়ায়। সে আলোতে আলোকিত হয় আশপাশ। তাই রাতে পড়তে বসলে ঝুমুর কোনো বাতি লাগে না। টিপটি কপালে পরে পড়ার টেবিলে বসলেই হয়। সব স্পষ্ট দেখা যায়।তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছো, এমন টিপ সে পেলো কোথায়, তাই না? রীতিমতো এটা একটা গল্প। সে গল্পটাই বলছি, শোনো।
একদিন খুব ভোরে ঝুমুর ঘুম ভাঙলো। ঘর থেকে বেরিয়ে একাকী সে পুকুর ঘাটে গেলো। ঘন কুয়াশা বাইরে। তখনও সুয্যিমামার ঘুম ভাঙেনি। সান বাঁধানো পুকুর ঘাট। ঘাটের সিঁড়িতে বসে ঝুমু সুয্যিমামার অপেক্ষা করছিলো।
পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ। গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে। শিরশির বাতাসে ফুলের মিষ্টি সুবাস ভাসছে। ফুলের সুবাস ঝুমুর নাকে এসে লাগলো।
এমন সময় ঝুমু লক্ষ্য করলো, পুকুরের পূর্বকোণে সাদা মতোন কিছু একটা কচুরিপানার ফাঁকে ধবধব করছে। কী ওটা? বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। তারপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে সেদিকে এগিয়ে গেলো। কাছাকাছি গিয়ে দেখলো, ওটা আসলে ছোটখাটো একটা ডিম।
কীসের ডিম ওটা? ডিমটি হাতে নিয়ে আপন মনে ভাবতে লাগলো ঝুমু।
ডিমের ভেতর কিছু একটা নড়ছিলো। কানের কাছে নিয়ে ঝুমু স্পষ্ট নড়াচড়ার শব্দ শুনলো। তারপর বাড়ি গিয়ে অত্যন্ত যত্ন করে পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে ডিমটি রেখে দিলো।
এভাবে কেটে গেলো এক সপ্তাহ। এ কয়দিন ডিমটির কথা তার মনেই পড়লো না। কারণ, পড়াশোনার ভীষণ চাপ ছিলো। সপ্তাহ খানেক পর একদিন ড্রয়ার খুলে ঝুমু থ হয়ে গেলো। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছো, টিপটিকেই সে ড্রয়ারে খুঁজে পেয়েছে, তাই না? কিন্তু না। ড্রয়ারে সে ছোট্ট একটি কচ্ছপের ছানা দেখতে পেলো।
কচ্ছপের ছানাটিকে পেয়ে ঝুমু তো মহাখুশি! ছানাটিকে নিয়ে সে খেলতে শুরু করলো। তারপর স্থির করলো, এটাকে সে পুষবে।
কিছুদিন পর একদিন ছানাটি অবিকল মানবশিশুর মতো কথা বলে ওঠলো! বললো, 'ছোট্ট খুকি! আমাকে তুমি মিছেমিছি পুষতে চেষ্টা করছো। তুমি আমাকে পুষতে পারবে না। কারণ, কচ্ছপ পোষা সহজ কাজ নয়। তার চেয়ে বরং এক কাজ করো। আমাকে নিয়ে তোমাদের পুকুরে ছেড়ে দাও। বিনিময়ে আমি তোমাকে সবুজ রঙের একটি পাথর উপহার দেবো। যে পাথর পেলে একদিন ফুলপরির সঙ্গে দেখা হবে তোমার।'
কচ্ছপ ছানার কথায় ঝুমু রাজি হয়ে গেলো। ওকে নিয়ে পুকুরের জলে ছেড়ে দিলো। কচ্ছপ ছানাও তার কথা রাখলো। সবুজ পাথরটি উপহার দিলো।
তারপর এক চাঁদনি রাতে সত্যি সত্যি এক ফুলপরির সাথে ঝুমুর দেখা হলো। ফুলপরির সৌন্দর্যের কথা তোমাদের কী আর বলবো! অপরূপ সুন্দর ফুলপরি! ঝলমলে জরির জামা গায়। মাথায় মুক্তোখচিত মুকুট। গলায় হীরের হার। পিঠে ধবধবে সাদা একজোড়া পাখা।
ফুলপরি বললো, 'খুকুমণি! তুমি খুবই ভালো। শান্তশিষ্ট। মিষ্টি চেহারা। তোমাকেই আমার দরকার। কারণ, তোমার কাছে সবুজ রঙের একটি পাথর আছে। যে পাথরটি পেলে আমি আমার এক অসুস্থ বন্ধুকে প্রাণে বাঁচাতে পারবো। পাথরটি নিয়ে ওর কপালে চেপে ধরলেই সে সুস্থ হয়ে যাবে। তাই তোমার সবুজ পাথরটি আমাকে দিয়ে দাও। বিনিময়ে আমি তোমাকে একটি অচিন ফুল উপহার দেবো। ফুলটি জলে ডুবিয়ে রাখলে সারারাতই সুবাস ছড়াবে। তোমাকে আনন্দ দেবে।'
ফুলপরির কথায় ঝুমু রাজি হয়ে গেলো। অচিন ফুলটি রেখে সে ফুলপরিকে তার সবুজ পাথরটি দিয়ে দিলো।
এদিকে রাতের বেলা ঝুমু এখন অচিন ফুলটি জলে ডুবিয়ে রাখে। অচিন ফুল সারারাতই সুবাস ছড়ায়। বাড়ির প্রত্যেকেই অচিন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পায়। ফুলের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে তারা হন্যে হয়ে উৎস খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু পায় না।
বড়দের এমন খোঁজাখুঁজি দেখে ঝুমু খুবই মজা পায়। তবুও সে কাউকে কিছু বলে না। মুখ টিপে শুধু হাসে।
একরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়লো, হঠাৎ ঘুম ভাঙলো ঝুমুর। সে শুনতে পেলো অদ্ভুত ফসফসানি আওয়াজ। চেয়ে দেখলো, নীল রঙের একটি সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সাপটির শরীর থেকে নীল রঙের আলো বেরোচ্ছে। ওর লাল চোখ দুটো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সাপটির কপালে সোনালি রঙের একটি টিপ।
এমন একটি সাপ দেখলে যে কারও ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু কেন জানি ঝুমু একটুও ভয় পেলো না। বরং অবাক হয়ে সে সাপটির দিকে তাকিয়ে রইলো। সাপটিকে নিয়ে সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, ঘটনাটা কি আসলে স্বপ্ন, না সত্যি?
আচমকা সাপটি অবিকল মানুষের ভাষায় কথা বলে উঠলো। বিড়বিড় করে বললো, 'খুকি, আমি জানি তুমি বড় ভালো। তোমার কাছে একটি অচিন ফুল আছে। দশ কোটি বছর ধরে আমি অচিন ফুলটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। সারা পৃথিবী চষে বেড়িয়েছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আজ তোমার কাছে পেলাম। ফুলটি আমাকে দিয়ে দাও। ওটা পেলে আমি সর্পপুরির রাজা হবো। বিনিময়ে আমার কপালে যে টিপটি দেখছো, ওটা তুমি পাবে। এ টিপ অন্ধকারে নিজ থেকে আলো বিলায়। টিপের আলোয় তুমি যা খুশি করতে পারবে।'
সাপের কথা শুনে ঝুমু খুবই অবাক হলো। নীল সাপকে সে জলে ভেজা অচিন ফুলটি দিয়ে দিলো। সাপও তার কথা রাখলো। কপালের সোনালি টিপটি খুলে ঝুমুর হাতে তুলে দিলো।
সেই থেকে টিপটির মালিক হলো ঝুমু। ঝুমু এখন রাতের বেলা টিপের আলোয় বই পড়ে। আর দিনের বেলা ওটা কপালে পরে রাখে।
পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন জাতের ফুলগাছ। গাছগুলোতে ফুল ফুটেছে। শিরশির বাতাসে ফুলের মিষ্টি সুবাস ভাসছে। ফুলের সুবাস ঝুমুর নাকে এসে লাগলো।
এমন সময় ঝুমু লক্ষ্য করলো, পুকুরের পূর্বকোণে সাদা মতোন কিছু একটা কচুরিপানার ফাঁকে ধবধব করছে। কী ওটা? বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। তারপর হাঁটিহাঁটি পা পা করে সেদিকে এগিয়ে গেলো। কাছাকাছি গিয়ে দেখলো, ওটা আসলে ছোটখাটো একটা ডিম।
কীসের ডিম ওটা? ডিমটি হাতে নিয়ে আপন মনে ভাবতে লাগলো ঝুমু।
ডিমের ভেতর কিছু একটা নড়ছিলো। কানের কাছে নিয়ে ঝুমু স্পষ্ট নড়াচড়ার শব্দ শুনলো। তারপর বাড়ি গিয়ে অত্যন্ত যত্ন করে পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে ডিমটি রেখে দিলো।
এভাবে কেটে গেলো এক সপ্তাহ। এ কয়দিন ডিমটির কথা তার মনেই পড়লো না। কারণ, পড়াশোনার ভীষণ চাপ ছিলো। সপ্তাহ খানেক পর একদিন ড্রয়ার খুলে ঝুমু থ হয়ে গেলো। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছো, টিপটিকেই সে ড্রয়ারে খুঁজে পেয়েছে, তাই না? কিন্তু না। ড্রয়ারে সে ছোট্ট একটি কচ্ছপের ছানা দেখতে পেলো।
কচ্ছপের ছানাটিকে পেয়ে ঝুমু তো মহাখুশি! ছানাটিকে নিয়ে সে খেলতে শুরু করলো। তারপর স্থির করলো, এটাকে সে পুষবে।
কিছুদিন পর একদিন ছানাটি অবিকল মানবশিশুর মতো কথা বলে ওঠলো! বললো, 'ছোট্ট খুকি! আমাকে তুমি মিছেমিছি পুষতে চেষ্টা করছো। তুমি আমাকে পুষতে পারবে না। কারণ, কচ্ছপ পোষা সহজ কাজ নয়। তার চেয়ে বরং এক কাজ করো। আমাকে নিয়ে তোমাদের পুকুরে ছেড়ে দাও। বিনিময়ে আমি তোমাকে সবুজ রঙের একটি পাথর উপহার দেবো। যে পাথর পেলে একদিন ফুলপরির সঙ্গে দেখা হবে তোমার।'
কচ্ছপ ছানার কথায় ঝুমু রাজি হয়ে গেলো। ওকে নিয়ে পুকুরের জলে ছেড়ে দিলো। কচ্ছপ ছানাও তার কথা রাখলো। সবুজ পাথরটি উপহার দিলো।
তারপর এক চাঁদনি রাতে সত্যি সত্যি এক ফুলপরির সাথে ঝুমুর দেখা হলো। ফুলপরির সৌন্দর্যের কথা তোমাদের কী আর বলবো! অপরূপ সুন্দর ফুলপরি! ঝলমলে জরির জামা গায়। মাথায় মুক্তোখচিত মুকুট। গলায় হীরের হার। পিঠে ধবধবে সাদা একজোড়া পাখা।
ফুলপরি বললো, 'খুকুমণি! তুমি খুবই ভালো। শান্তশিষ্ট। মিষ্টি চেহারা। তোমাকেই আমার দরকার। কারণ, তোমার কাছে সবুজ রঙের একটি পাথর আছে। যে পাথরটি পেলে আমি আমার এক অসুস্থ বন্ধুকে প্রাণে বাঁচাতে পারবো। পাথরটি নিয়ে ওর কপালে চেপে ধরলেই সে সুস্থ হয়ে যাবে। তাই তোমার সবুজ পাথরটি আমাকে দিয়ে দাও। বিনিময়ে আমি তোমাকে একটি অচিন ফুল উপহার দেবো। ফুলটি জলে ডুবিয়ে রাখলে সারারাতই সুবাস ছড়াবে। তোমাকে আনন্দ দেবে।'
ফুলপরির কথায় ঝুমু রাজি হয়ে গেলো। অচিন ফুলটি রেখে সে ফুলপরিকে তার সবুজ পাথরটি দিয়ে দিলো।
এদিকে রাতের বেলা ঝুমু এখন অচিন ফুলটি জলে ডুবিয়ে রাখে। অচিন ফুল সারারাতই সুবাস ছড়ায়। বাড়ির প্রত্যেকেই অচিন ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পায়। ফুলের ঘ্রাণে বিভোর হয়ে তারা হন্যে হয়ে উৎস খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু পায় না।
বড়দের এমন খোঁজাখুঁজি দেখে ঝুমু খুবই মজা পায়। তবুও সে কাউকে কিছু বলে না। মুখ টিপে শুধু হাসে।
একরাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়লো, হঠাৎ ঘুম ভাঙলো ঝুমুর। সে শুনতে পেলো অদ্ভুত ফসফসানি আওয়াজ। চেয়ে দেখলো, নীল রঙের একটি সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সাপটির শরীর থেকে নীল রঙের আলো বেরোচ্ছে। ওর লাল চোখ দুটো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। সাপটির কপালে সোনালি রঙের একটি টিপ।
এমন একটি সাপ দেখলে যে কারও ভয় পাওয়ার কথা। কিন্তু কেন জানি ঝুমু একটুও ভয় পেলো না। বরং অবাক হয়ে সে সাপটির দিকে তাকিয়ে রইলো। সাপটিকে নিয়ে সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, ঘটনাটা কি আসলে স্বপ্ন, না সত্যি?
আচমকা সাপটি অবিকল মানুষের ভাষায় কথা বলে উঠলো। বিড়বিড় করে বললো, 'খুকি, আমি জানি তুমি বড় ভালো। তোমার কাছে একটি অচিন ফুল আছে। দশ কোটি বছর ধরে আমি অচিন ফুলটি খুঁজে বেড়াচ্ছি। সারা পৃথিবী চষে বেড়িয়েছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। আজ তোমার কাছে পেলাম। ফুলটি আমাকে দিয়ে দাও। ওটা পেলে আমি সর্পপুরির রাজা হবো। বিনিময়ে আমার কপালে যে টিপটি দেখছো, ওটা তুমি পাবে। এ টিপ অন্ধকারে নিজ থেকে আলো বিলায়। টিপের আলোয় তুমি যা খুশি করতে পারবে।'
সাপের কথা শুনে ঝুমু খুবই অবাক হলো। নীল সাপকে সে জলে ভেজা অচিন ফুলটি দিয়ে দিলো। সাপও তার কথা রাখলো। কপালের সোনালি টিপটি খুলে ঝুমুর হাতে তুলে দিলো।
সেই থেকে টিপটির মালিক হলো ঝুমু। ঝুমু এখন রাতের বেলা টিপের আলোয় বই পড়ে। আর দিনের বেলা ওটা কপালে পরে রাখে।
No comments