সরকারি হাসপাতালে খাওয়ার পানি সংকট-মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে

রকারি হাসপাতালগুলোয় সুপেয় পানির অভাবে রোগী ও তাদের স্বজনদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সেখানে পানি আছে বটে, তবে সে পানি পানের উপযুক্ত নয়। ওয়াসার পাইপলাইনে বাথরুম ও গোসলখানায় সরাসরি পানি সরবরাহ করা হয়। যারা পানি কিনতে পারে না, তাদের এই অস্বচ্ছ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিই পান করতে হয়। অনিরাপদ পানির কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে।


রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র জানায়, পানির এই সংকট বহু পুরনো। তার পরও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এক বোতল পানির জন্য ক্ষেত্রবিশেষে রোগীর স্বজনদের অর্ধকিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। কয়েকটি হাসপাতালের নিজস্ব মোটর থাকলেও ট্যাঙ্ক নোংরা হয়ে পড়ায় পাইপলাইনে ময়লা পানি আসে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৮ নং ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পানির কলে পানি আছে; কিন্তু ওই পানি গন্ধ আর ময়লাযুক্ত। খাওয়ার পানি বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালেও রয়েছে খাওয়ার পানির সংকট। এমনিতে ওয়ার্ড এবং কেবিনে পানির সরবরাহ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা জানান, পাইপলাইনে প্রায় সারাক্ষণই পানি থাকে। তবে খাওয়ার পানি নেই। কেবিন ব্লকে কর্তব্যরত এক নার্স জানান, রোগীর স্বজনরা বাসাবাড়ি থেকেই ফুটানো পানি নিয়ে আসেন। আমরা নিজেরাও নিয়ে আসি। এখানে এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। শেরেবাংলা নগর এলাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, কিডনি ইনস্টিটিউট, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পানি সরবরাহের অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এসব হাসপাতালে সুপেয় পানির সংকটকে পুঁজি করে ব্যবসা খুলে বসেছে কিছু মানুষ। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের কাছে পানির ব্যবসা করেন রফিক। জারভর্তি পানি নিয়ে দোকান খুলেছেন তিনি। তিনি বলেন, এক লিটার পানি তিন টাকায় বিক্রি করি। এই পানি নিরাপদ কি-না, কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে রফিক বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সকালে কিনে রাখি। এর বেশি কিছুই জানি না। বোতলজাত পানি কিনতে লিটারপ্রতি প্রায় ২০ টাকা খরচ হয়। অথচ রোগীর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই পানির সংস্থান করার কথা। সেদিকে কারও দৃষ্টি নেই। শেরেবাংলা নগর এলাকায় কয়েকটি হাসপাতালের ওয়ার্ড ও কেবিন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বেডের পাশেই দুই থেকে পাঁচ লিটারের বোতল রয়েছে। কিডনি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগী কামরুন নাহারের এক স্বজন জানান, নাবিস্কো এলাকায় তাদের বাসা। সেখান থেকে রোজ খাওয়ার পানি বয়ে আনতে গলদঘর্ম অবস্থা তাদের। রোগীকে হাসপাতালের পানির কল থেকে পানি খাওয়াতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.