যে ব্যাঙ নিখুঁতভাবে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করতে পারে
ব্যাঙ দিয়ে প্রেগনেন্সি টেস্টের একটি পুস্তিকা |
আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমির আশেপাশের
দেশগুলোতে, যা সাব-সাহারান এলাকা হিসেবে পরিচিত, সেখানে ছিল বিশেষ এক জাতের
নখওয়ালা ব্যাঙ। এর নাম জেনোপস।
ওই এলাকার পানিতে লাখ লাখ বছর ধরে
শান্তিতেই বাস করছিল ব্যাঙটি। কিন্তু হঠাৎ করেই, ১৯৩০ এর দশকে, ব্রিটিশ এক
বিজ্ঞানী তার জীবনে বড়ো ধরনের এক পরিবর্তন ঘটিয়ে দিলেন। কিন্তু কীভাবে?
জেনোপস নামের এই ব্যাঙটির শরীরে তিনি ইনজেকশন দিয়ে মানুষের মূত্র ঢুকিয়ে দিলেন।
ল্যান্সলট
হগবেন নামের এই প্রাণীবিজ্ঞানীর কাজই যেন ছিল বিভিন্ন প্রাণীর শরীরের নানা
রকমের জিনিস, বিশেষ করে হরমোন ঢুকিয়ে দেওয়া। তার উদ্দেশ্য ছিল এর ফলে ওই
প্রাণীর শরীরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটে সেটা লক্ষ্য করা।
প্রেগনেন্সি পরীক্ষায় এই জেনোপস ব্যাঙ ব্যবহার করা হতো ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত। |
ঠিক এই
একই ধরনের আরেকটি পরীক্ষার পর, অনেকটা দুর্ঘটনাবশতই, তিনি আবিষ্কার করে
ফেললেন যে এই ব্যাঙের ভেতরে প্রেগনেন্সি হরমোন ঢুকিয়ে দিলে সেটি ডিম
পাড়তে শুরু করে দেয়।
শুধু তাই নয়, আজকের দিনে ভাবলে খুব অবাক হতে হয় যে ওই জেনোপস ব্যাঙ নির্ভুলভাবে ফলাফল বলে দিতে পারতো।
পরীক্ষাটি
ছিল এরকম: নারী জেনোপস ব্যাঙের চামড়ার নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে নারীর
মূত্র ঢকিয়ে দেওয়া হতো। ৫-১২ ঘন্টা পর দেখা হতো ব্যাঙটি ডিম পেড়েছে
কিনা।
ডিম পাড়লে নিশ্চিত হওয়া যেত যে ওই নারী গর্ভবতী।
প্রেগনেন্সি টেস্ট এখন খুব সহজ ও সাধারণ একটি বিষয়। একজন নারী ঘরে বসে
একটি স্টিক দিয়েই জেনে নিতে পারেন তিনি গর্ভধারণ করেছেন কিনা।
নিখুঁতভাবেই বলে দিতে পারতো ব্যাঙটি। পরীক্ষাগারে করা হতো এই টেস্ট। |
কিন্তু কয়েক দশক আগেও এই কাজটা এতোটা সহজ ছিল না।
মরেন
সাইমন্স নামের এক নারী বলছিলেন, ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝি এই ব্যাঙ-এর
সাহায্যে কীভাবে তার প্রেগনেন্সি টেস্ট করা হয়েছিল। তার এখনও মনে আছে এরকম
এক পরীক্ষার কথা।
বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমার মাথায় এই দৃশ্যটা এখনও
পরিষ্কার গেঁথে আছে, অন্তত দুবার, একজন ডাক্তার আমার কাছে এসে বললেন, আপনি
গর্ভবতী হয়েছেন - ব্যাঙটা ডিম পেড়েছে।"
সাধারণ লোকজনের জন্যে এই জেনোপস টেস্ট ব্যবহার করা হতো না। শুধুমাত্র
জরুরী চিকিৎসাতেই এই এই পরীক্ষাটা করা হতো। যেমন আসলেই ভ্রুণের মতো কোন
কিছুর জন্ম হচ্ছে নাকি তৈরি হচ্ছে টিউমার - সেটা নির্ণয় করতে জেনোপস টেস্ট
করা হতো।
ব্রিটেনের অল্প কিছু হাসপাতালের ল্যাবে এই জেনোপস পরীক্ষা করা হতো।
মরেনের দুবার মিসক্যারেজ অর্থাৎ সন্তান জন্ম হওয়ার আগেই গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিল। এবং এই জেনোপস ব্যাঙ-ই সেই সত্যটা বলতে পেরেছিল।
অল্প কিছু ল্যাবে এই পরীক্ষা করা হতো। |
তিনি বলেন, "আমি এখন বুঝতে পারি যে ওরকম একটা টেস্ট করিয়ে আমাকে কতোটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।"
চিকিৎসা-ইতিহাসবিদ জেসে ওলসজিঙ্কো-গ্রিন বলেন, আধুনিক কালে এই টেস্টটিকে
খুব অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু ১৯৩০-এর দশকে এটা ছিল খুব বড় ধরনের
ঘটনা। আজকে যেমন বাড়িতে পরীক্ষা করেই বোঝা যায় কেউ সন্তানসম্ভবা কিনা,
তখনও এই টেস্ট অনেকটা সেরকমই ছিল।
গর্ভধারণ ও তার পরীক্ষার ব্যাপারে এটা ছিল একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
"আপনি
নিজেকে ১৯৩০ এর দশকে নিয়ে যান, তখন বুঝতে পারবেন, কারণ সেসময় কেউ
গর্ভধারণ করেছেন কিনা সেটা বোঝার উপায় ছিল না। এ নিয়ে কথাও বলা যেত না।
সংবাদপত্রে প্রেগনেন্সি শব্দটাই লেখা যেত না। এটা এতোটাই জীববিজ্ঞানের
বিষয় ছিল। ছিল অভদ্রতাও," বলেন তিনি।
তিনি বলছেন, এই টেস্টের মাধ্যমেই প্রেগনেন্সি বিষয়টি দৃশ্যমান হলো। আর সেটা করেছিল জেনোপস নামের এই ব্যাঙটি।
"প্রেগনেন্সি
পরীক্ষা হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর আবিষ্কার। কিন্তু ওই জেনোপস টেস্টের
মাধ্যমেই গর্ভধারণ, শিশু জন্মদান এবং প্রজননের মতো বিষয়গুলো সাধারণ
মানুষের কাছে সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে," বলেন তিনি।
১৯৭০ এর দশকেই বাড়িতে বসে প্রেগনেন্সি টেস্টের উপায় বের হলো। এর পর থেকেই জেনোপস ব্যাঙ ফিরে গেল তার শান্তিপূর্ণ জীবনে।
পরীক্ষাটি ছিল এরকম: নারী জেনোপস ব্যাঙের চামড়ার নিচে মূত্র ঢকিয়ে দেওয়া হতো। ৫-১২ ঘন্টা পর দেখা হতো ব্যাঙটি ডিম পেড়েছে কিনা। |
No comments