দিনাজপুর নয়, রংপুরেই দেশের প্রথম লোহার খনি by সরকার মাজহারুল মান্নান
৫৩
বছরেও উত্তোলনের উদ্যোগ নেইদেশের প্রথম লোহার খনি দিনাজপুরে নয়, রংপুরের
পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারে আবিষ্কৃত হয়েছিল ৫৩ বছর আগে। ১৯৬৫ সালে এই লোহার
খনির অস্তিত্ব নিশ্চিত করে পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগ এবং ১৯৯৯ সালে
পুনরায় খনন শুরু করেছিল জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ-জিএসবি। সুদীর্ঘ ৫৩
বছর আগে এই লোহার খনিটির প্রথম সন্ধান পাওয়া গেলেও আজ পর্যন্ত উত্তোলনের
কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। আর দিনাজপুরের হাকিমপুরের ইসবপুরে লোহার খনির
অস্তিত্বের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে চলতি মাসের ১৪ জুন। কিন্তু সম্প্রতি
সন্ধান পাওয়া লোহার খনির অস্তিত্বকে প্রথম বলে প্রচারণা পাওয়ায় ক্ষুব্ধ
প্রথম লোহারখনি পাওয়া রংপুরের মানুষ। তারা অবিলম্বে পীরগঞ্জের ভেলামারি
খনিকে প্রথম লোহার খনি স্বীকৃতি দিয়ে সেখান থেকে লোহা উত্তোলনের দাবি
জানিয়েছেন।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ-জিএসবি এবং পেট্রোবাংলা সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ও মিঠিপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি বিশাল একটি এলাকার নাম ভেলামারি পাথার। এখানেই প্রথম অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়েছে বিশ্বমানের লৌহ খনির। ওই সময়ে খনি এলাকা চিহ্নিতকরণে বর্ণিত পাথারের মাঝখানে একটি জমিতে কংক্রিটের ঢালাই করে রাখা হয় অনুসন্ধান করা চারটি কূপের মুখ। ৫৩ বছর ধরে খনিমুখে কংক্রিটের ঢালাই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে সেখানে।
জেসবি ও পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তৎকালীন পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগের একদল বিশেষজ্ঞ বিমান ও গাড়িবহর নিয়ে এই ভেলামারি পাথারে আসে। প্রায় ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পাথারে তারা লৌহ খনির অবস্থান নিশ্চিত করতে বিমানের নিচে একটি বিশাল শক্তিশালী চুম্বক ঝুলিয়ে দেন। এরপর বিমানটি নিচু দিয়ে পাথারের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে বিমানের ঝুলন্ত চুম্বকটি ছোট পাহাড়পুর গ্রামের আবুল ফজল ও আব্দুল ছাত্তার নামে দুই ব্যক্তির মালিকানাধিন জমির ওপর এসে আকর্ষিত হয়। এই আকর্ষণ বিমানটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে। পরে অন্যান্য পরীক্ষার পর পাকিস্তানের খনিজ বিজ্ঞানীরা এখানে লোহার খনির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন। পরে উৎস হিসেবে ওই জমির ওপর কংক্রিটের ঢালাই করা চিহ্ন দিয়ে চলে যান। সূত্র জানায়, পরের বছর পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগ চিহ্নিত স্থানে খনন কাজ শুরু করেন। প্রায় আট মাস ধরে তারা ভেলামারী এলাকার পাশের কেশবপুর, ছোট পাহারপুর, প্রথম ডাঙ্গা, পবনপাড়া, সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান নিশ্চিত করেন। অনুসন্ধানের সময় পাইপের ভেতর দিয়ে মাটির গভীরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বোমার বিস্ফোরণে ওই এলাকার অনেক মাটির কুয়া ভেঙে যায়। পরে আবারো দ্বিতীয় দফায় পাইপের মাধ্যমে জরিপকাজ সম্পন্ন করা হয়।
১৯৬৭ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারাসহ একদল বিদেশী খনিজ বিশেষজ্ঞ রংপুরে আসেন। তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল বহর ও পরিবার পরিজনসহ স্থানীয় পানবাজার হাইস্কুল মাঠে অস্থায়ীভাবে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। প্রাপ্ত লোহার উপাদান উত্তোলন করেন।
মাটির ৯০০ ফুট নিচ থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ খনন করে তারা লোহার উন্নতমানের স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক খনি অনুসন্ধান কাজ শেষ করে ভেলামারিতে স্থাপনকৃত চারটি মূল পাইপের উৎসমুখে কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে খনি কর্মকর্তারা তাদের ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যান। এ সময় তারা বলে যান লৌহ অপরিপক্ব আছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই এটি উত্তোলন সম্ভব। সে হিসাবে আরো ৩৭ বছর আগে লোহা খনিটি পূর্ণতা পেয়েছে।
বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভেলামারি পাথারে লোহার খনির অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন। কিন্তু তারা পূর্বে আবিষ্কৃৃত লৌহ খনির উৎসমুখ ভেলামারি হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পাহারপুর গ্রামের পূর্বপ্রান্তে পরীক্ষামূলক খনন করে কোনো রিপোর্ট না দিয়েই চলে যান। ওই রিপোর্ট পরে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশও করা হয়নি।
তবে জিএসবি সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে উন্নতমানের আয়রন কোর (লোহা আকরিক) পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে আয়রন কোরের রিজার্ভ কম হওয়ায় লৌহ উত্তোলনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিএসবি।
কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, রিজার্ভের পরিমাণ ইকোনমিক্যালি ভায়াবোল না হওয়ায় সেখানে লৌহ উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ খরচ হবে তা রিজার্ভ দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে জিএসবি। এরপর লৌহখনির অবস্থান ও উত্তোলনে আরো ব্যাপকভাবে কোনো অনুসন্ধান কিংবা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি জিএসবি। লৌহ খনিটি এখন প্রায় ৫৩ বছর পার করতে চলেছে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারের এই লোহার খনিটি এখন পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা অনুসন্ধান চালিয়ে চলে যাওয়ার পর আর কোনো আওয়াজ উঠছে না।
পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মণ্ডল নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারেই লোহার খনি আবিষ্কার হয়েছে ৫৩ বছর আগে। সেটাই প্রথম লোহার খনি। দিনাজপুরের হাকিমপুরে লোহার খনির সন্ধান পাওয়া গেল এই মাসে। তাহলে প্রথম লোহার খনি কোনটা পীরগঞ্জ নাকি হাকিমপুরে। সেটা জেএসবিকে নিশ্চিত করে মিডিয়ায় বলতে হবে। তা না হলে মিডিয়ায় বিকৃত তথ্য যাচ্ছে। এই জনপ্রতিনিধি আরো জানান, আমাদের এই খনি থেকেই লোহা উত্তোলন প্রথমে শুরু করতে হবে। তারপর দিনাজপুরে। আমাদের খনি থেকে প্রথম লোহা উত্তোলন শুরুর ঘোষণা না দেয়া হলে আমরা পীরগঞ্জের সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।
ভূতত্ত্ববিদ পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান পুলক নয়া দিগন্তকে জানান, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ-জিএসবি রংপুরের পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারে জরিপ চালিয়ে প্রথম আয়রন কোরের (লৌহ আকরিকের) অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আয়রন কোরের রিজার্ভ কম হওয়ায় সেখানে লৌহ উত্তোলনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিএসবি। দিনাজপুরে জিএসবির জরিপ প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এখানে আয়রন কোরের পুরুত্বটা অনেক বেশি। এখানে রিজার্ভ অনেক থাকতে পারে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ও পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী দেশে প্রথম লোহার খনির সন্ধান পাওয়া যায় রংপুরের পীরগঞ্জের ভেলামারির পাথারে। সেখানে পাকিস্তান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার কূপ খনন করে অনুসন্ধান চালিয়ে উৎস মুখ চিহ্নিতও করেছেন। কিন্তু দিনাজপুরে সন্ধান পাওয়া লোহার খনির অস্তিত্বকে প্রথম হিসেবে প্রচারণা পাওয়ায় প্রকৃত ইতিহাস ধামাচাপা পড়ে যাবে। জরিপ অনুযায়ী ভেলামারি পাথারের লোহার খনিটিই প্রথম।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ-জিএসবি এবং পেট্রোবাংলা সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শানেরহাট ও মিঠিপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি বিশাল একটি এলাকার নাম ভেলামারি পাথার। এখানেই প্রথম অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়েছে বিশ্বমানের লৌহ খনির। ওই সময়ে খনি এলাকা চিহ্নিতকরণে বর্ণিত পাথারের মাঝখানে একটি জমিতে কংক্রিটের ঢালাই করে রাখা হয় অনুসন্ধান করা চারটি কূপের মুখ। ৫৩ বছর ধরে খনিমুখে কংক্রিটের ঢালাই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে সেখানে।
জেসবি ও পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের পর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তৎকালীন পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগের একদল বিশেষজ্ঞ বিমান ও গাড়িবহর নিয়ে এই ভেলামারি পাথারে আসে। প্রায় ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পাথারে তারা লৌহ খনির অবস্থান নিশ্চিত করতে বিমানের নিচে একটি বিশাল শক্তিশালী চুম্বক ঝুলিয়ে দেন। এরপর বিমানটি নিচু দিয়ে পাথারের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে বিমানের ঝুলন্ত চুম্বকটি ছোট পাহাড়পুর গ্রামের আবুল ফজল ও আব্দুল ছাত্তার নামে দুই ব্যক্তির মালিকানাধিন জমির ওপর এসে আকর্ষিত হয়। এই আকর্ষণ বিমানটিকে বারবার মাটির দিকে টেনে নিচে নামাতে চেষ্টা করে। পরে অন্যান্য পরীক্ষার পর পাকিস্তানের খনিজ বিজ্ঞানীরা এখানে লোহার খনির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন। পরে উৎস হিসেবে ওই জমির ওপর কংক্রিটের ঢালাই করা চিহ্ন দিয়ে চলে যান। সূত্র জানায়, পরের বছর পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগ চিহ্নিত স্থানে খনন কাজ শুরু করেন। প্রায় আট মাস ধরে তারা ভেলামারী এলাকার পাশের কেশবপুর, ছোট পাহারপুর, প্রথম ডাঙ্গা, পবনপাড়া, সদরা কুতুবপুর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় অসংখ্য স্থানে পাইপ বসিয়ে লোহার খনির সন্ধান নিশ্চিত করেন। অনুসন্ধানের সময় পাইপের ভেতর দিয়ে মাটির গভীরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বোমার বিস্ফোরণে ওই এলাকার অনেক মাটির কুয়া ভেঙে যায়। পরে আবারো দ্বিতীয় দফায় পাইপের মাধ্যমে জরিপকাজ সম্পন্ন করা হয়।
১৯৬৭ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান খনিজসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারাসহ একদল বিদেশী খনিজ বিশেষজ্ঞ রংপুরে আসেন। তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির বিশাল বহর ও পরিবার পরিজনসহ স্থানীয় পানবাজার হাইস্কুল মাঠে অস্থায়ীভাবে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করে। প্রাপ্ত লোহার উপাদান উত্তোলন করেন।
মাটির ৯০০ ফুট নিচ থেকে ২২ হাজার ফুট পর্যন্ত পাইপ খনন করে তারা লোহার উন্নতমানের স্তরের সন্ধান পেয়েছেন। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপক খনি অনুসন্ধান কাজ শেষ করে ভেলামারিতে স্থাপনকৃত চারটি মূল পাইপের উৎসমুখে কংক্রিটের ঢালাইয়ের মাধ্যমে বন্ধ করে খনি কর্মকর্তারা তাদের ক্যাম্প গুটিয়ে চলে যান। এ সময় তারা বলে যান লৌহ অপরিপক্ব আছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যেই এটি উত্তোলন সম্ভব। সে হিসাবে আরো ৩৭ বছর আগে লোহা খনিটি পূর্ণতা পেয়েছে।
বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভেলামারি পাথারে লোহার খনির অনুসন্ধান কাজ শুরু করেন। কিন্তু তারা পূর্বে আবিষ্কৃৃত লৌহ খনির উৎসমুখ ভেলামারি হতে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পাহারপুর গ্রামের পূর্বপ্রান্তে পরীক্ষামূলক খনন করে কোনো রিপোর্ট না দিয়েই চলে যান। ওই রিপোর্ট পরে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশও করা হয়নি।
তবে জিএসবি সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে উন্নতমানের আয়রন কোর (লোহা আকরিক) পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে আয়রন কোরের রিজার্ভ কম হওয়ায় লৌহ উত্তোলনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিএসবি।
কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, রিজার্ভের পরিমাণ ইকোনমিক্যালি ভায়াবোল না হওয়ায় সেখানে লৌহ উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ খরচ হবে তা রিজার্ভ দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে জিএসবি। এরপর লৌহখনির অবস্থান ও উত্তোলনে আরো ব্যাপকভাবে কোনো অনুসন্ধান কিংবা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি জিএসবি। লৌহ খনিটি এখন প্রায় ৫৩ বছর পার করতে চলেছে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারের এই লোহার খনিটি এখন পরিপক্ব হয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা অনুসন্ধান চালিয়ে চলে যাওয়ার পর আর কোনো আওয়াজ উঠছে না।
পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মণ্ডল নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারেই লোহার খনি আবিষ্কার হয়েছে ৫৩ বছর আগে। সেটাই প্রথম লোহার খনি। দিনাজপুরের হাকিমপুরে লোহার খনির সন্ধান পাওয়া গেল এই মাসে। তাহলে প্রথম লোহার খনি কোনটা পীরগঞ্জ নাকি হাকিমপুরে। সেটা জেএসবিকে নিশ্চিত করে মিডিয়ায় বলতে হবে। তা না হলে মিডিয়ায় বিকৃত তথ্য যাচ্ছে। এই জনপ্রতিনিধি আরো জানান, আমাদের এই খনি থেকেই লোহা উত্তোলন প্রথমে শুরু করতে হবে। তারপর দিনাজপুরে। আমাদের খনি থেকে প্রথম লোহা উত্তোলন শুরুর ঘোষণা না দেয়া হলে আমরা পীরগঞ্জের সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।
ভূতত্ত্ববিদ পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান পুলক নয়া দিগন্তকে জানান, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ-জিএসবি রংপুরের পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারে জরিপ চালিয়ে প্রথম আয়রন কোরের (লৌহ আকরিকের) অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। কিন্তু আয়রন কোরের রিজার্ভ কম হওয়ায় সেখানে লৌহ উত্তোলনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জিএসবি। দিনাজপুরে জিএসবির জরিপ প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এখানে আয়রন কোরের পুরুত্বটা অনেক বেশি। এখানে রিজার্ভ অনেক থাকতে পারে।
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ও পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী দেশে প্রথম লোহার খনির সন্ধান পাওয়া যায় রংপুরের পীরগঞ্জের ভেলামারির পাথারে। সেখানে পাকিস্তান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার কূপ খনন করে অনুসন্ধান চালিয়ে উৎস মুখ চিহ্নিতও করেছেন। কিন্তু দিনাজপুরে সন্ধান পাওয়া লোহার খনির অস্তিত্বকে প্রথম হিসেবে প্রচারণা পাওয়ায় প্রকৃত ইতিহাস ধামাচাপা পড়ে যাবে। জরিপ অনুযায়ী ভেলামারি পাথারের লোহার খনিটিই প্রথম।
রংপুরের পীরগঞ্জের ভেলামারি পাথারে লোহার খনির উৎসমূল নিশ্চিত হয়ে ৫৩ বছর আগে দেয়া কংক্রিটের ঢালাই - ছবি : নয়া দিগন্ত |
No comments