গণজাগরণকে বিতর্কিত করার অপকৌশল জামায়াত-বিএনপির- নিজেদের টিভি-ব্লগে নানান কৌশলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে by বিভাষ বাড়ৈ
একাত্তরের সকল ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি,
জামায়াতসহ মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দেশব্যাপী বিস্ফোরণদাবিতে উদ্বিগ্ন
হয়ে পড়েছে বিরোধী দল বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত।
যুদ্ধাপরাধীসহ মৌলবাদী রাজনীতির প্রশ্নে জনতার হঠাৎ এ কঠোর অবস্থানে চরম
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে দল দুটির নেতারা দেশব্যাপী জনতার জাগরণকে
বিতর্কিত করার অপকৌশল চালাচ্ছে। জনতার আন্দোলনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়েই চেতনার
এই মহাজাগরণে আওয়ামী লীগ ও বাম দলের গায়ে গন্ধ লাগাতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর
অংশ হিসেবেই আন্দোলন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন
বিএনপি-জামায়াত নেতারা। কেবল তাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করতেই এ দুটি দলের
সরাসরি মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ও ব্লগে নানান কৌশলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মন্ত্রে উজ্জীবিত আন্দোলকারী লাখো মানুষ স্পষ্ট
জানিয়ে দিয়েছে, জামায়াতকে রক্ষার চেষ্টা করলে বিএনপিকেও জনতার প্রতিপক্ষ
হতে হবে। তাদের জনতার তোপের মুখে পড়তে হতে পারে।
এদিকে সঙ্কটের এই অবস্থায় বিএনপিকে আরও কাছে চায় জামায়াত। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নবপ্রজন্মের এই বিস্ময়কর জাগরণের মর্মবাণী অনুধাবনে ব্যর্থ কিংবা বুঝতেই চাইছেন না বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। হাতে গোনা কিছু নেতা জনতার স্্েরাতের মর্মবাদী বুঝলেও শীর্ষ নেত্রীসহ প্রভাবশালী অন্য নেতাদের চাপে তারাও কোণঠাসা। বিএনপি নেতারা মুখে যাই বলুন, শাহবাগের মহাগণজাগরণে তারা যে রীতিমতো ঘামছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন সেটা অবিশ্বাসের কোন কারণ নেই। এই অবস্থায় বিএনপি ভুল করলে চরম রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়তে পারে দেশের প্রধান এই বিরোধী দলটি। দুটি দলের অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এবং সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দলের সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা মনে করেন, কালবিলম্ব না করে বিএনপিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে লাভ বিএনপিরই হবে বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মনোভাবই স্পষ্ট। শুক্রবার বিকেলে আহসানুল হাই নামে বেসরকারী একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী এক ব্যক্তি বিএনপি কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের কাছে আসেন। রিজভী আহমেদকে না পেয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার অনুরোধ করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি বিএনপি সমর্থক। তিনি জানান, একই বিষয়ে কথা বলতে উত্তরায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাসায়ও গেছেন তিনি। নেতাকর্মীর ভিড় থাকায় কথা বলতে পারেননি। দলের হাইকমান্ড এখনও নিজেদের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ দাবি ও আগামী নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশের বাইরে যেতে রাজি নন। তারা এখনও মনে করছেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের বড় প্রয়োজন। কিন্তু এই সমর্থক বলেন, বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের অবস্থানকে বুঝতে ভুল করছে। সূত্রগুলো বলছে, গণজাগরণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বললেও বিএনপি কার্যত ভীত হয়ে পড়েছে। আবার আন্দোলনে যোগ দেয়ারও সহজ কোন পথ খোলা নেই বিএনপির। ভয়ের এই অবস্থান থেকেই দলটি পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার ছুতো তুলে শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজধানীতে সমাবেশ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের সমাবেশও।
এর আগে বুধবার হঠাৎ বৈঠক ডেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শুক্রবার বিকেলে শাহবাগের মহাসমাবেশের পর অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন মধ্যরাতে পর দিনের কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করে বিএনপি। ‘পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার’ কথা বলে কর্মসূচী স্থগিত করা হলেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনও। জোটের একাধিক সূত্র জানায়, তরুণ প্রজন্মের টানা অবস্থান কর্মসূচীতে রাজনৈতিকভাবে বিরাট চাপে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সারাদেশের গণজাগরণে ‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি... অবস্থা বিএনপির। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ও আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে জামায়াতকে জোটে ধরে রাখতে চায় দলটির শীর্ষ নেত্রীসহ দলটির অধিকাংশ নেতাই। তবে জনতার আন্দোলনের রীতিমত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই এখন মহাজাগরণের পেছনে তারা খুঁজছেন আওয়ামী লীগ ও বাম দলের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। এর অংশ হিসেবেই আন্দোলন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। কেবল তাই নয় আন্দোলনকে বিতর্কিত করতেই এ দুটি দলের সরাসরি মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ও ব্লগে একই রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রবিবারও এই গণজাগরণের পেছনে সরকারের দ্বৈত চরিত্র খুঁজে পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব) আসম হান্নান শাহ। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সেমিনারে তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার এখন বলছে- ট্রাইব্যুনালের রায় সুষ্ঠু হয়নি, রায় বদলে সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়া হবে। এটা আদালত অবমাননা হচ্ছে না? অথচ আমরা কোন মন্তব্য বা প্রতিবাদ করলে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়, পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ নয়, লাঠি পেটা করানো হয়। আ’লীগ শাহবাগের আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে হান্নান শাহ বলেন, দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই আন্দোলন হওয়া উচিত নয়, অথচ এই আন্দোলনের মাঝখানে আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে দেখা গেছে খাবার বিতরণ করতে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন তোলে আ’লীগ আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা চলছে- সরকার তার দায় এড়াবেন কিভাবে? বিএনপির এই নেতা জামায়াত নেতার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, পাকিস্তানীদের সহায়তা করার অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের অনুপস্থিতিতে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে জেনারেল তাজসহ ১৫৫ পাকিস্তানীর বিচার কেন হবে না? এর আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা তো আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি, গণআন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও অর্জিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জনগণের আন্দোলন চলছে। এই সংগ্রামের বিজয় হবেই। একই বিষয়ে শনিবার স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সরকার ‘দ্বৈতনীতি’ অনুসরণ করছে। ছাত্রদল বলছে, শাহবাগের আন্দোলন চলছে সমঝোতার ভিত্তিতে। বিএনপি নেতাদের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কথা বলছে কয়েকটি বেসরকারী টেলিভিশনে। এতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আন্দোলন সম্পর্কে বিষোদগার করে যাচ্ছে দৈনিক আমার দেশ, যুদ্ধাপরাধীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগে। এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের ইচ্ছানুযায়ী ট্রাইব্যুনালকে রায় দিতে বাধ্য করার জন্য ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ ও দেশের অন্যান্য স্থানে তাদের নিজেদের দলের লোকদের সমবেত করে উস্কানিমূলক অশ্লীল বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তবে জামায়াত যাই বলুক আন্দোলকারীরা রবিবারও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জামায়াতকে রক্ষার চেষ্টা করলে বিএনপিকেও জনতার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলে কোন ফায়দা লোটা যাবে না।
এদিকে সঙ্কটের এই অবস্থায় বিএনপিকে আরও কাছে চায় জামায়াত। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নবপ্রজন্মের এই বিস্ময়কর জাগরণের মর্মবাণী অনুধাবনে ব্যর্থ কিংবা বুঝতেই চাইছেন না বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতা। হাতে গোনা কিছু নেতা জনতার স্্েরাতের মর্মবাদী বুঝলেও শীর্ষ নেত্রীসহ প্রভাবশালী অন্য নেতাদের চাপে তারাও কোণঠাসা। বিএনপি নেতারা মুখে যাই বলুন, শাহবাগের মহাগণজাগরণে তারা যে রীতিমতো ঘামছেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন সেটা অবিশ্বাসের কোন কারণ নেই। এই অবস্থায় বিএনপি ভুল করলে চরম রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়তে পারে দেশের প্রধান এই বিরোধী দলটি। দুটি দলের অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিএনপির কিছু নেতাকর্মী এবং সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে শাহবাগের গণজাগরণ নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দলের সমর্থক এবং নেতাকর্মীরা মনে করেন, কালবিলম্ব না করে বিএনপিকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। পাশাপাশি এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করলে লাভ বিএনপিরই হবে বলে মনে করেন তারা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মনোভাবই স্পষ্ট। শুক্রবার বিকেলে আহসানুল হাই নামে বেসরকারী একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী এক ব্যক্তি বিএনপি কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের কাছে আসেন। রিজভী আহমেদকে না পেয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার অনুরোধ করতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি বিএনপি সমর্থক। তিনি জানান, একই বিষয়ে কথা বলতে উত্তরায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বাসায়ও গেছেন তিনি। নেতাকর্মীর ভিড় থাকায় কথা বলতে পারেননি। দলের হাইকমান্ড এখনও নিজেদের ‘তত্ত্বাবধায়ক’ দাবি ও আগামী নির্বাচনের ভোটের হিসাব-নিকাশের বাইরে যেতে রাজি নন। তারা এখনও মনে করছেন, ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের বড় প্রয়োজন। কিন্তু এই সমর্থক বলেন, বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের অবস্থানকে বুঝতে ভুল করছে। সূত্রগুলো বলছে, গণজাগরণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বললেও বিএনপি কার্যত ভীত হয়ে পড়েছে। আবার আন্দোলনে যোগ দেয়ারও সহজ কোন পথ খোলা নেই বিএনপির। ভয়ের এই অবস্থান থেকেই দলটি পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার ছুতো তুলে শনিবার জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজধানীতে সমাবেশ স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র দলের সমাবেশও।
এর আগে বুধবার হঠাৎ বৈঠক ডেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শুক্রবার বিকেলে শাহবাগের মহাসমাবেশের পর অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন মধ্যরাতে পর দিনের কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণা করে বিএনপি। ‘পুলিশের অনুমতি না পাওয়ার’ কথা বলে কর্মসূচী স্থগিত করা হলেও তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেনও। জোটের একাধিক সূত্র জানায়, তরুণ প্রজন্মের টানা অবস্থান কর্মসূচীতে রাজনৈতিকভাবে বিরাট চাপে পড়েছে বিএনপি ও জামায়াত। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সারাদেশের গণজাগরণে ‘শ্যাম রাখি, না কুল রাখি... অবস্থা বিএনপির। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ও আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে জামায়াতকে জোটে ধরে রাখতে চায় দলটির শীর্ষ নেত্রীসহ দলটির অধিকাংশ নেতাই। তবে জনতার আন্দোলনের রীতিমত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই এখন মহাজাগরণের পেছনে তারা খুঁজছেন আওয়ামী লীগ ও বাম দলের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। এর অংশ হিসেবেই আন্দোলন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করছেন বিএনপি-জামায়াত নেতারা। কেবল তাই নয় আন্দোলনকে বিতর্কিত করতেই এ দুটি দলের সরাসরি মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ও ব্লগে একই রকম অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে রবিবারও এই গণজাগরণের পেছনে সরকারের দ্বৈত চরিত্র খুঁজে পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব) আসম হান্নান শাহ। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সেমিনারে তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার এখন বলছে- ট্রাইব্যুনালের রায় সুষ্ঠু হয়নি, রায় বদলে সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেয়া হবে। এটা আদালত অবমাননা হচ্ছে না? অথচ আমরা কোন মন্তব্য বা প্রতিবাদ করলে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়, পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ নয়, লাঠি পেটা করানো হয়। আ’লীগ শাহবাগের আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে হান্নান শাহ বলেন, দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই আন্দোলন হওয়া উচিত নয়, অথচ এই আন্দোলনের মাঝখানে আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে দেখা গেছে খাবার বিতরণ করতে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন তোলে আ’লীগ আন্দোলনকে দলীয়করণ করার চেষ্টা চলছে- সরকার তার দায় এড়াবেন কিভাবে? বিএনপির এই নেতা জামায়াত নেতার কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, পাকিস্তানীদের সহায়তা করার অপরাধে বাচ্চু রাজাকারের অনুপস্থিতিতে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। তাহলে জেনারেল তাজসহ ১৫৫ পাকিস্তানীর বিচার কেন হবে না? এর আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা তো আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি, গণআন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। গণতন্ত্র ও অর্জিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে জনগণের আন্দোলন চলছে। এই সংগ্রামের বিজয় হবেই। একই বিষয়ে শনিবার স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে সরকার ‘দ্বৈতনীতি’ অনুসরণ করছে। ছাত্রদল বলছে, শাহবাগের আন্দোলন চলছে সমঝোতার ভিত্তিতে। বিএনপি নেতাদের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কথা বলছে কয়েকটি বেসরকারী টেলিভিশনে। এতে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। আন্দোলন সম্পর্কে বিষোদগার করে যাচ্ছে দৈনিক আমার দেশ, যুদ্ধাপরাধীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশনের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লগে। এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ছত্রছায়ায় দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টার আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের ইচ্ছানুযায়ী ট্রাইব্যুনালকে রায় দিতে বাধ্য করার জন্য ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ ও দেশের অন্যান্য স্থানে তাদের নিজেদের দলের লোকদের সমবেত করে উস্কানিমূলক অশ্লীল বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তবে জামায়াত যাই বলুক আন্দোলকারীরা রবিবারও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জামায়াতকে রক্ষার চেষ্টা করলে বিএনপিকেও জনতার প্রতিপক্ষ হতে হবে। আন্দোলন নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলে কোন ফায়দা লোটা যাবে না।
No comments