কেন্দ্রের কাছে সুবিধা নিতে তিস্তাকে হাতিয়ার বানাতে চান মমতা- রুদ্র কমিশনের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন
চুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বছর এক সদস্যের এই কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো জানায়, পানি বিশেষজ্ঞ কল্যাণ
রুদ্র গত বছর ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে
‘প্রাথমিক’ প্রতিবেদন জমা দেন।
মমতা এ বিষয়ে কোন কথা তো
বলছেন না, প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়ার কথাই স্বীকার করছেন না; প্রতিবেদনের
বিষয়বস্তু নিয়ে গণমাধ্যম বা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা দূরের কথা।
খবর বিডি নিউজের।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে মমতার অনিচ্ছা প্রকাশ পেলেও কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি সই করতে আগ্রহী। এদিকে কল্যাণ রুদ্রও গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি ‘একটি কথাও উচ্চারণ করবেন না’। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা নিয়ে রুদ্রর পর্যবেক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হননি। কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের কাছ থেকে তিস্তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় একটি ‘পূর্ণ প্রতিবেদন’ দাখিল করতে না পারলেও পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেছেন রুদ্র। রুদ্রর উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হচ্ছে, ‘তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীর স্বভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে হবে।’
রুদ্র কমিটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে, গজলডোবায় তিস্তার ওপর বাঁধ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটারের মধ্যে নদী তীরে আছে জলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়ির মতো শহর। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস সেখানে।
বাংলাদেশকে পানি না দিয়ে গজলডোবা ব্যারাজ থেকেই যদি সেচের জন্য পানি সরিয়ে ফেলা হয়, তা হলে এ রাজ্যের ১৫ লাখ বাসিন্দার জীবনেও প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। তবে মনে হচ্ছে রুদ্রর প্রস্তাব মমতার ভাল লাগেনি। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তিনি রুদ্রকে এ বিষয়ে চুপ থাকতে বলেছেন। এদিকে সূত্রগুলো বলছে, পূর্ণ প্রতিবেদন না পাওয়ায় মমতা অখুশি। পানি কমিশনের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চেয়েও তা না পাওয়ায় রুদ্রর পক্ষে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোন তথ্যও চায়নি।
তবে, অন্য পানি বিশেষজ্ঞদের মতো রুদ্রও তিস্তায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করায় তা মমতার অবস্থানের সঙ্গে মেলেনি।
চুক্তির খসড়া তৈরির কাজে থাকা ভারত সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও কল্যাণ রুদ্রর মতোই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার পক্ষে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া তার রাজ্যের জন্য একটা আর্থিক প্যাকেজ আদায় করতে চান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। সেজন্যই তিস্তা চুক্তিকে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের দুদিনের প্রস্তাবিত সফরে ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে তাঁর বৈঠক এখনও হয়নি। তবে ভারত সরকার সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে স্থল সীমানা চুক্তি পাস করানোর বিষয়ে মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী। এজন্য সরকার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও বামদের সমর্থন পেতে চাইছে।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের কাছ থেকে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান না পাওয়ায় রাজ্য সরকারকে দেয়া রিপোর্টে তিস্তার জল-বণ্টন নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সুপারিশই করতে পারেনি কল্যাণ রুদ্র কমিটি। বদলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অসম্পূর্ণ রিপোর্ট ও নিজের কিছু মতামত জানিয়েছেন নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। সব শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলেছেন, ‘আপনাকে আর কিছু করতে হবে না।’ সরকারী সূত্রের খবর, এ ঘটনার পরে মাস চারেক কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে কল্যাণের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করা হয়নি। তিস্তা নিয়ে তিনি আদৌ কোন চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন কি না, তা-ও জানা নেই রাজ্য সরকারের।
কল্যাণ রুদ্র কমিটির অসম্পূর্ণ রিপোর্টে বলা হয়েেেছ, বাংলাদেশকে কতটা জল দেয়া যায় তা নির্ধারণ করার আগে নদীর প্রবহমানতা, তিস্তার জলের সঠিক পরিমাণ ও এ দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের বিষয়গুলো জানাটা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু কেন্দ্রীয় জল কমিশন থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হয়নি। ফলে কমিটি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। সুতরাং রুদ্র কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট যেমন সরকারের হাতে জমা পড়েনি, তেমনই রাজ্য সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, এমনটাই মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে।
তিস্তার কতটা জল বাংলাদেশকে দেয়া যাবে বা আদৌ দেয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই এক সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। মমতা কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, তিস্তার জলের পরিমাণ এবং তা বণ্টনের পরে রাজ্যে সেচের ওপর প্রভাব খতিয়ে দেখবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এই কমিটির রিপোর্ট হাতে এলে তবেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবে রাজ্য। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি কমিটির মত সরকারের পছন্দ না হওয়াতেই তিস্তার জল সংক্রান্ত বিষয়ে কল্যাণ রুদ্রকে মাথা ঘামাতে বারণ করা হল? কল্যাণকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি একটি কথাও বলব না।’
মমতাকে কী জানিয়েছিলেন তিনি?
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, মূলত বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়েই গবেষণা শুরু করেছিল কমিটি। সারা বছর নদীর জলপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করার বাসনা থাকলেও সময় ও পরিকাঠামোর অভাবে তা করা যায়নি। ফলে কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং রাজ্য সেচ দফতরের দেয়া তথ্যের ওপরই ভরসা করতে হয়েছে রুদ্র কমিটিকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনটি পূর্ণাঙ্গ ও সাম্প্রতিক তথ্য দেয়নি। অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে কোন সুপারিশ কমিটি করতে চায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর গবেষণা-প্রাপ্ত মতামত জানিয়েছেন অধ্যাপক রুদ্র।
কী সেই মতামত?
সরকারী সূত্রের খবর, রুদ্র কমিটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে, তিস্তার সেতু রয়েছে গজলডোবায়। এখান থেকে ভাটিতে আরও ৭২ কিলোমিটার এগিয়ে বুড়িগ্রামে বাংলাদেশে ঢুকেছে নদীটি। তিস্তার ভাটিতেই জলপাইগুড়ি, হলদিবাড়ির মতো শহর রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস সেখানে। ফলে বাংলাদেশকে জল না দিয়ে গজলডোবা ব্যারাজ থেকেই যদি সব জল সেচের কাজে তুলে নেয়া হয়, তা হলে এ রাজ্যেরও ১৫ লাখ বাসিন্দার জীবন-জীবিকা নষ্ট হবে। তা ছাড়া বাস্তুতন্ত্রের নিয়মে নদীর জীবনই তার প্রবহমানতা। নদীর জল আটকে সেচের জন্য তুলে নিলে তিস্তাই শুকিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, এ পারে তিস্তার গতি অব্যাহত রাখতেই বাংলাদেশকে জল দেয়া ছাড়া গতি নেই। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক আইনও বলছে, একাধিক দেশের মধ্যে বয়ে চলা একটি নদীর জল সকলে মিলেই ভাগ করে নিতে হবে।
কমিটি অবশ্য সতর্কবাণী শুনিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী অত বেশি জল তাদের দিতে চাইলেও সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে টান পড়বে গজলডোবার উচ্চ অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ জলে।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে মমতার অনিচ্ছা প্রকাশ পেলেও কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি সই করতে আগ্রহী। এদিকে কল্যাণ রুদ্রও গণমাধ্যমের সামনে আসছেন না। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি ‘একটি কথাও উচ্চারণ করবেন না’। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা নিয়ে রুদ্রর পর্যবেক্ষণে মুখ্যমন্ত্রী খুশি হননি। কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের কাছ থেকে তিস্তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য না পাওয়ায় একটি ‘পূর্ণ প্রতিবেদন’ দাখিল করতে না পারলেও পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেছেন রুদ্র। রুদ্রর উদ্ধৃতি দিয়ে খবরে বলা হচ্ছে, ‘তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীর স্বভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে হবে।’
রুদ্র কমিটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে, গজলডোবায় তিস্তার ওপর বাঁধ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটারের মধ্যে নদী তীরে আছে জলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়ির মতো শহর। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস সেখানে।
বাংলাদেশকে পানি না দিয়ে গজলডোবা ব্যারাজ থেকেই যদি সেচের জন্য পানি সরিয়ে ফেলা হয়, তা হলে এ রাজ্যের ১৫ লাখ বাসিন্দার জীবনেও প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। তবে মনে হচ্ছে রুদ্রর প্রস্তাব মমতার ভাল লাগেনি। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, তিনি রুদ্রকে এ বিষয়ে চুপ থাকতে বলেছেন। এদিকে সূত্রগুলো বলছে, পূর্ণ প্রতিবেদন না পাওয়ায় মমতা অখুশি। পানি কমিশনের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য চেয়েও তা না পাওয়ায় রুদ্রর পক্ষে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন দেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোন তথ্যও চায়নি।
তবে, অন্য পানি বিশেষজ্ঞদের মতো রুদ্রও তিস্তায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করায় তা মমতার অবস্থানের সঙ্গে মেলেনি।
চুক্তির খসড়া তৈরির কাজে থাকা ভারত সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও কল্যাণ রুদ্রর মতোই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার পক্ষে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া তার রাজ্যের জন্য একটা আর্থিক প্যাকেজ আদায় করতে চান কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। সেজন্যই তিস্তা চুক্তিকে দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের দুদিনের প্রস্তাবিত সফরে ঢাকায় আসার কথা থাকলেও তিস্তা নিয়ে মমতার সঙ্গে তাঁর বৈঠক এখনও হয়নি। তবে ভারত সরকার সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে স্থল সীমানা চুক্তি পাস করানোর বিষয়ে মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী। এজন্য সরকার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও বামদের সমর্থন পেতে চাইছে।
এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের কাছ থেকে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান না পাওয়ায় রাজ্য সরকারকে দেয়া রিপোর্টে তিস্তার জল-বণ্টন নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট সুপারিশই করতে পারেনি কল্যাণ রুদ্র কমিটি। বদলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অসম্পূর্ণ রিপোর্ট ও নিজের কিছু মতামত জানিয়েছেন নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। সব শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলেছেন, ‘আপনাকে আর কিছু করতে হবে না।’ সরকারী সূত্রের খবর, এ ঘটনার পরে মাস চারেক কেটে গেলেও রাজ্যের তরফে কল্যাণের সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করা হয়নি। তিস্তা নিয়ে তিনি আদৌ কোন চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবেন কি না, তা-ও জানা নেই রাজ্য সরকারের।
কল্যাণ রুদ্র কমিটির অসম্পূর্ণ রিপোর্টে বলা হয়েেেছ, বাংলাদেশকে কতটা জল দেয়া যায় তা নির্ধারণ করার আগে নদীর প্রবহমানতা, তিস্তার জলের সঠিক পরিমাণ ও এ দেশের অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের বিষয়গুলো জানাটা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু কেন্দ্রীয় জল কমিশন থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হয়নি। ফলে কমিটি কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। সুতরাং রুদ্র কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট যেমন সরকারের হাতে জমা পড়েনি, তেমনই রাজ্য সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, এমনটাই মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে।
তিস্তার কতটা জল বাংলাদেশকে দেয়া যাবে বা আদৌ দেয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই এক সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। মমতা কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন, তিস্তার জলের পরিমাণ এবং তা বণ্টনের পরে রাজ্যে সেচের ওপর প্রভাব খতিয়ে দেখবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এই কমিটির রিপোর্ট হাতে এলে তবেই তিস্তা চুক্তি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবে রাজ্য। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি কমিটির মত সরকারের পছন্দ না হওয়াতেই তিস্তার জল সংক্রান্ত বিষয়ে কল্যাণ রুদ্রকে মাথা ঘামাতে বারণ করা হল? কল্যাণকে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি একটি কথাও বলব না।’
মমতাকে কী জানিয়েছিলেন তিনি?
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, মূলত বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়েই গবেষণা শুরু করেছিল কমিটি। সারা বছর নদীর জলপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করার বাসনা থাকলেও সময় ও পরিকাঠামোর অভাবে তা করা যায়নি। ফলে কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং রাজ্য সেচ দফতরের দেয়া তথ্যের ওপরই ভরসা করতে হয়েছে রুদ্র কমিটিকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনটি পূর্ণাঙ্গ ও সাম্প্রতিক তথ্য দেয়নি। অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে কোন সুপারিশ কমিটি করতে চায়নি। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর গবেষণা-প্রাপ্ত মতামত জানিয়েছেন অধ্যাপক রুদ্র।
কী সেই মতামত?
সরকারী সূত্রের খবর, রুদ্র কমিটি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছে, তিস্তার সেতু রয়েছে গজলডোবায়। এখান থেকে ভাটিতে আরও ৭২ কিলোমিটার এগিয়ে বুড়িগ্রামে বাংলাদেশে ঢুকেছে নদীটি। তিস্তার ভাটিতেই জলপাইগুড়ি, হলদিবাড়ির মতো শহর রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাস সেখানে। ফলে বাংলাদেশকে জল না দিয়ে গজলডোবা ব্যারাজ থেকেই যদি সব জল সেচের কাজে তুলে নেয়া হয়, তা হলে এ রাজ্যেরও ১৫ লাখ বাসিন্দার জীবন-জীবিকা নষ্ট হবে। তা ছাড়া বাস্তুতন্ত্রের নিয়মে নদীর জীবনই তার প্রবহমানতা। নদীর জল আটকে সেচের জন্য তুলে নিলে তিস্তাই শুকিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, এ পারে তিস্তার গতি অব্যাহত রাখতেই বাংলাদেশকে জল দেয়া ছাড়া গতি নেই। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক আইনও বলছে, একাধিক দেশের মধ্যে বয়ে চলা একটি নদীর জল সকলে মিলেই ভাগ করে নিতে হবে।
কমিটি অবশ্য সতর্কবাণী শুনিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী অত বেশি জল তাদের দিতে চাইলেও সমস্যা হবে। সে ক্ষেত্রে টান পড়বে গজলডোবার উচ্চ অববাহিকায় ভূগর্ভস্থ জলে।
No comments