আবুলের বিরুদ্ধে ফের সমালোচনার ঝড় ॥ ঘোড়াশাল বিদ্যুত কেন্দ্র- নানা অনিয়মের পরও ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন by রশিদ মামুন
ঘোড়াশাল কম্বাইন্ড সাইকেল ৩০০ থেকে ৪৫০
মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে আবারও সমালোচনার ঝড় উঠেছে সাবেক মন্ত্রী
আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে নানা অনিয়ম থাকার পরও সরকারী
ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিদ্যুত প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে।
আর বিদ্যুত বিভাগ থেকে দেয়া এক চিঠিতে অতিসম্প্রতি দুটি বিষয়ে নেগোসিয়েশনের (দরকষাকষি) জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য তিন বার দরপত্র আহ্বান আর একবার ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী থাকাকালীন আবুল হোসেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানিকে কাজ দেয়নি। আর মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেলেও পিডিবি এবং বিদ্যুত বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার মাধ্যমে আবুল হোসেনের পছন্দের কোম্পানিই নানা অনিয়মের মধ্যেও কাজটি পেয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক চেষ্টার পরও আবুল হোসেনকে ঠেকাতে পারেননি তাঁরা। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে দরপত্রের অনিয়মের বিষয়গুলোকে যেন আমলে না নেয়া হয় তার ব্যবস্থা করেছেন। আর শেষ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রীর পছন্দের কোম্পানিই কাজ পেয়েছে। তারা বলছেন যেহেতু আবুল হোসেনের কোম্পানিকেই কাজ দিতে হবে তাই এত দিন সময় অপচয় করা ঠিক হয়নি।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের সময় ঘোড়াশালে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট সান্ধ্যকালীন (পিকিং) বিদ্যুত কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত ছিল। এ জন্য দুবার দরপত্র আহ্বান করেও কাউকে কাজ দেয়া যায়নি। পরবর্তীতে পিকিং থেকে ঘোড়াশাল ৩০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। আরও পেছনে ফিরলে দেখা যাবে ঘোড়াশালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বিগত জোট সরকারের সময়।
সব শেষ দরপত্র অনুযায়ী ২০১১-এর ২৬ ডিসেম্বর কম্বাইন্ড সাইকেলের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ৬টি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। সেগুলো হচ্ছে- সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এসইসি), পিআর চায়না, চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি), চায়না এ্যান্ড সিএমসি চায়না কনসোর্টিয়াম, সেপকো থ্রি ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন, চায়না, আলস্টম (সুইজারল্যান্ড) লিমিটেড এ্যান্ড আলস্টম ইন্ডিয়া লিমিটেড কনসোর্টিয়াম, মারুবেনি কর্পোরেশন এ্যান্ড হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কনসোর্টিয়াম ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন চায়না।
এবার দরদাতাদের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয় দরদাতার স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে আবুল হোসেনের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সাকো।
পিডিবির সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে (সিএনটিআইসি) কাজ দেয়ার সুপারিশ করে।
প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৩ লাখ সাত হাজার ৯৯৪ টাকা দর দেয়। মন্ত্রিসভা কমিটি এই প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়।
পিডিবি সূত্র বলছে, দরপত্রে বলা হয়েছে, নেট হিটের আউটপুট হবে ১৫০ ভাগ। দরপত্রে সিএনটিআইসি বলছে নেট হিটের আউটপুট হবে ১৪১ দশমিক ১২ ভাগ। এরফলে গ্যাসের অপচয় হবে। সূত্রমতে, সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের সময় রেশিও বা হার হওয়ার কথা ৭০ দশমিক ০৬ ভাগ। কিন্তু কাজ পাওয়া কোম্পানি ৬৫ ভাগ হারে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের কথা বলছে।
পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ৩০০ মেগাওয়াটের সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করলে সর্বোচ্চ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কিন্তু রূপান্তরের যে হার চাওয়া হয় তা কম হলে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের দুই বছর পর্যন্ত খুচরা যন্ত্রাংশ দেয়ারও নিশ্চয়তা দেয়নি কাজ পাওয়া কোম্পানি। প্রথম দুই বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। অন্য কেন্দ্রগুলোর দরপত্রে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছ বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ৩১ জানুয়াারি বিদ্যুত বিভাগের উপসচিব মোঃ ফারুকুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুদের হার ও অন্যান্য ফি আরও অনুকূল করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এবং নেগোসিয়েশনকৃত সুদের হার এবং অন্যান্য ফি অনুমোদনের জন্য হার্ড টার্ম লোন কমিটিতে প্রেরণ করতে হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পিডিবিকে ওই চিঠিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে ঘোড়াশালে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের যে দরপত্র আহ্বান করা হয় তাতে দেখা যায় প্রথম দরপত্রে এক হাজার ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘোড়াশালে ২০০-৩০০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পিকিং পাওয়ার প্লান্টের সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয় চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন লি.। একই দরপত্রে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার দরপ্রস্তাব উত্থাপন করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয় জেভিসি সেনডং ইলেট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটিং ইনস্টিটিউট কর্পোরেশন লি. এন্ড সেনডং ইলেকক্ট্রিক পাওয়ার কন্সালটিং।
প্রথমবার মন্ত্রীর পছন্দের কোম্পানি সেনডং সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বেশি দর প্রস্তাব করেছিল। তখন সর্বনিম্ন দরদাতার বিরুদ্ধে দরপত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অপর কোম্পানি জেভিসি সেনডং ইলেট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটিং ইনস্টিটিউট কর্পোরেশন লি. এন্ড সেনডং ইলেকট্রিক পাওয়ার কন্সালটিং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল কমিটির (সিপিটিইউ) রিভিউ প্যানেল বরাবর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বিরুদ্ধে আপীল করে। যদিও পরে কোম্পানি সিপিটিউ এর কাছে এমন অভিযোগ করেনি বলে জানায়। কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দরপত্রটি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয় সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
দ্বিতীয়বার দরপত্রে মন্ত্রীর পছন্দের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিএমসির সঙ্গে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানি সাংহাইয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র ১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বার ক্লারিফিকেশনের নামে মূল্যায়ন কমিটির এক্তিয়ারভুক্ত না হলেও সিএমসিকে প্রস্তাবিত দরপত্রের এমন বিষয়েও সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। দরপত্র কাটাছেঁড়া করে সিএমসি সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। বিধি বহির্ভূতভাবে সিএমসিকে সুযোগ দেয়ায় সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ মন্ত্রণালয় ও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিউ) কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করে। ওই অভিযোগে বলা হয়, ক্লারিফিকেশনের মাধ্যমে গ্যারান্টি ডেটা শীট-এ অক্সিলারি কম্পোজিশন এবং হিট রেট পরিবর্তন করে সিএমসিকে দরপত্র দলিল পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই দরপত্রটিও বাতিল হয়ে যায়। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোপূর্বে দু’বারই সাবেক মন্ত্রীর জোরালো হস্তক্ষেপ ছিল।
এরপর বিদ্যুত বিভাগ পিকিং-এর বদলে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেও আবুল হোসেনের কোম্পানির হস্তক্ষেপ নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে রবিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনও ওখানে (সাকো) যোগদান করিনি। ফলে সাকোর কোন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এসব ঝামেলা গেলে তিনি সাকোতে যোগ দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সময় বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য তিন বার দরপত্র আহ্বান আর একবার ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রী থাকাকালীন আবুল হোসেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানিকে কাজ দেয়নি। আর মন্ত্রিসভা থেকে চলে গেলেও পিডিবি এবং বিদ্যুত বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার মাধ্যমে আবুল হোসেনের পছন্দের কোম্পানিই নানা অনিয়মের মধ্যেও কাজটি পেয়েছে।
বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক চেষ্টার পরও আবুল হোসেনকে ঠেকাতে পারেননি তাঁরা। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে দরপত্রের অনিয়মের বিষয়গুলোকে যেন আমলে না নেয়া হয় তার ব্যবস্থা করেছেন। আর শেষ পর্যন্ত সাবেক মন্ত্রীর পছন্দের কোম্পানিই কাজ পেয়েছে। তারা বলছেন যেহেতু আবুল হোসেনের কোম্পানিকেই কাজ দিতে হবে তাই এত দিন সময় অপচয় করা ঠিক হয়নি।
সূত্রমতে, বর্তমান সরকারের সময় ঘোড়াশালে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট সান্ধ্যকালীন (পিকিং) বিদ্যুত কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত ছিল। এ জন্য দুবার দরপত্র আহ্বান করেও কাউকে কাজ দেয়া যায়নি। পরবর্তীতে পিকিং থেকে ঘোড়াশাল ৩০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। আরও পেছনে ফিরলে দেখা যাবে ঘোড়াশালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বিগত জোট সরকারের সময়।
সব শেষ দরপত্র অনুযায়ী ২০১১-এর ২৬ ডিসেম্বর কম্বাইন্ড সাইকেলের দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ৬টি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। সেগুলো হচ্ছে- সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এসইসি), পিআর চায়না, চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি), চায়না এ্যান্ড সিএমসি চায়না কনসোর্টিয়াম, সেপকো থ্রি ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন, চায়না, আলস্টম (সুইজারল্যান্ড) লিমিটেড এ্যান্ড আলস্টম ইন্ডিয়া লিমিটেড কনসোর্টিয়াম, মারুবেনি কর্পোরেশন এ্যান্ড হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কনসোর্টিয়াম ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন চায়না।
এবার দরদাতাদের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় উভয় দরদাতার স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে আবুল হোসেনের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান সাকো।
পিডিবির সাত সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে (সিএনটিআইসি) কাজ দেয়ার সুপারিশ করে।
প্রতিষ্ঠানটি এক হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৩ লাখ সাত হাজার ৯৯৪ টাকা দর দেয়। মন্ত্রিসভা কমিটি এই প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়।
পিডিবি সূত্র বলছে, দরপত্রে বলা হয়েছে, নেট হিটের আউটপুট হবে ১৫০ ভাগ। দরপত্রে সিএনটিআইসি বলছে নেট হিটের আউটপুট হবে ১৪১ দশমিক ১২ ভাগ। এরফলে গ্যাসের অপচয় হবে। সূত্রমতে, সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের সময় রেশিও বা হার হওয়ার কথা ৭০ দশমিক ০৬ ভাগ। কিন্তু কাজ পাওয়া কোম্পানি ৬৫ ভাগ হারে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরের কথা বলছে।
পিডিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ৩০০ মেগাওয়াটের সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করলে সর্বোচ্চ ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কিন্তু রূপান্তরের যে হার চাওয়া হয় তা কম হলে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের দুই বছর পর্যন্ত খুচরা যন্ত্রাংশ দেয়ারও নিশ্চয়তা দেয়নি কাজ পাওয়া কোম্পানি। প্রথম দুই বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন হয়। অন্য কেন্দ্রগুলোর দরপত্রে এ ধরনের বাধ্যবাধকতা রয়েছ বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ৩১ জানুয়াারি বিদ্যুত বিভাগের উপসচিব মোঃ ফারুকুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুদের হার ও অন্যান্য ফি আরও অনুকূল করার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এবং নেগোসিয়েশনকৃত সুদের হার এবং অন্যান্য ফি অনুমোদনের জন্য হার্ড টার্ম লোন কমিটিতে প্রেরণ করতে হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পিডিবিকে ওই চিঠিতে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে ঘোড়াশালে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের যে দরপত্র আহ্বান করা হয় তাতে দেখা যায় প্রথম দরপত্রে এক হাজার ২৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঘোড়াশালে ২০০-৩০০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পিকিং পাওয়ার প্লান্টের সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয় চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন লি.। একই দরপত্রে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার দরপ্রস্তাব উত্থাপন করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয় জেভিসি সেনডং ইলেট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটিং ইনস্টিটিউট কর্পোরেশন লি. এন্ড সেনডং ইলেকক্ট্রিক পাওয়ার কন্সালটিং।
প্রথমবার মন্ত্রীর পছন্দের কোম্পানি সেনডং সর্বনিম্ন দরদাতার চেয়ে প্রায় ১১১ কোটি টাকা বেশি দর প্রস্তাব করেছিল। তখন সর্বনিম্ন দরদাতার বিরুদ্ধে দরপত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অপর কোম্পানি জেভিসি সেনডং ইলেট্রিক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সালটিং ইনস্টিটিউট কর্পোরেশন লি. এন্ড সেনডং ইলেকট্রিক পাওয়ার কন্সালটিং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল কমিটির (সিপিটিইউ) রিভিউ প্যানেল বরাবর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বিরুদ্ধে আপীল করে। যদিও পরে কোম্পানি সিপিটিউ এর কাছে এমন অভিযোগ করেনি বলে জানায়। কিন্তু বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় দরপত্রটি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয় সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
দ্বিতীয়বার দরপত্রে মন্ত্রীর পছন্দের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিএমসির সঙ্গে প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানি সাংহাইয়ের মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র ১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বার ক্লারিফিকেশনের নামে মূল্যায়ন কমিটির এক্তিয়ারভুক্ত না হলেও সিএমসিকে প্রস্তাবিত দরপত্রের এমন বিষয়েও সংশোধনের সুযোগ দেয়া হয়। দরপত্র কাটাছেঁড়া করে সিএমসি সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। বিধি বহির্ভূতভাবে সিএমসিকে সুযোগ দেয়ায় সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ মন্ত্রণালয় ও সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিউ) কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করে। ওই অভিযোগে বলা হয়, ক্লারিফিকেশনের মাধ্যমে গ্যারান্টি ডেটা শীট-এ অক্সিলারি কম্পোজিশন এবং হিট রেট পরিবর্তন করে সিএমসিকে দরপত্র দলিল পরিবর্তনের সুযোগ দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই দরপত্রটিও বাতিল হয়ে যায়। বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোপূর্বে দু’বারই সাবেক মন্ত্রীর জোরালো হস্তক্ষেপ ছিল।
এরপর বিদ্যুত বিভাগ পিকিং-এর বদলে কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেও আবুল হোসেনের কোম্পানির হস্তক্ষেপ নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে রবিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখনও ওখানে (সাকো) যোগদান করিনি। ফলে সাকোর কোন বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এসব ঝামেলা গেলে তিনি সাকোতে যোগ দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
No comments