জনশক্তির নতুন বাজার- হংকং আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাস ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০ হাজার বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মী নেবে পর্যায়ক্রমে
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি
ক্ষেত্রে যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, তার পাশাপাশি আরেকটি
সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে প্রাচ্যের হংকংকে ঘিরে।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, হংকং আগামী ছয় মাসে কমপক্ষে
অষ্টম শ্রেণী পাস ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮০ হাজার বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মী
নেবে পর্যায়ক্রমে। যার মধ্যে প্রথম দফায় যাবে ১০ হাজার কর্মী। সরকারের
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ মাসেই অনলাইনে তাদের
রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে। এরপর লটারীর মাধ্যমে নির্বাচিত কর্মীদের দেশে দুই
মাসের প্রশিক্ষণ দেবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তাদের মাসিক বেতন হবে ৪৯০
মার্কিন ডলারÑ বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। জানা গেছে, হংকংয়ে
যাওয়ার আগে কর্মীদের কাছ থেকে কোন খরচ নেয়া হবে না; তবে বিমান ভাড়া বাবদ
জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা তাদের বেতন থেকে পরবর্তীতে কেটে নেয়া হবে কিস্তিতে।
মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী
ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হংকং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল। চীনের দক্ষিণ
উপকূলীয় এই এলাকা বৈদেশিক সম্পর্ক এবং সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যতীত অন্য সকল
ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে থাকে এবং স্বাধীনভাবে
উন্নয়ন-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। ‘একদেশ দুই ব্যবস্থা’Ñএই নীতির আওতায়
পরিচালিত হংকংয়ের জনসংখ্যা ৭০ লাখেরও বেশি। সেখানে বাংলাদেশের নারীদের
গৃহকর্র্মী হিসেবে নিয়োগে হংকংয়ের রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন
এ্যাসোসিয়েশন অব এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিস গভীর আগ্রহ প্রকাশ করার প্রেক্ষাপটে
জনশক্তি রফতানির একটি নতুন বাজার উন্মুক্ত হলো। ফলে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি
রফতানি কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় নতুন যে সম্ভাবনা সূচিত হয়েছে, তা
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদারকরণে নতুনতর মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা
যায়। তবে হংকংয়ে নারীকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় কৃষিকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানিকারক সমিতি বা বায়রার
কোন সম্পৃক্তি ছিল না বা নেই। পুরো কার্যক্রমই মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তদারকি
ও ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু হংকংয়ে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে
বায়রা সম্পৃক্ত থাকছে। তারা সরকারের তালিকার মধ্য থেকে কর্মীদের হংকংয়ে
পাঠাবেন। এখানে উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে জনশক্তি রফতানিকে কেন্দ্র করে বায়রার
বিরুদ্ধে নানা মহল থেকে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মালয়েশিয়ায়
সরকার-টু-সরকার জনশক্তি রফতানির সিদ্ধান্ত হয় তারই ফলশ্রুতিতে। তবে এটি
সত্য যে, সর্বক্ষেত্রে সরাসরি লোক পাঠানো সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভবত
সে কারণে হংকংয়ের ক্ষেত্রে বায়রাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে
এটি সরকারের যথার্থ পদক্ষেপ হলেও এ ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোরভাবে নজরদারি বজায়
রাখতে হবে। সরকারের চূড়ান্ত তালিকার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকতার ফাঁক গলিয়ে
একজন কর্মীও যাতে বিধিবহির্ভূতভাবে যেতে না পারে, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের
মনিটরিং জরুরী। এছাড়া, বায়রার সদস্যভুক্ত যে সকল রিক্রুটিং এজেন্টের
বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে জনশক্তি রফতানিতে অনিয়মের অভিযোগ আছে তাদের এই
কার্যক্রমের বাইরে রাখাই সমীচীন হবে। হংকংয়ে নারীকর্মী রফতানির সব ক’টি
পর্যায় সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে পারলে দূরপ্রাচ্যসহ বিশ্বের
অন্যান্য দেশে জনশক্তি রফতানির নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে, এমন প্রত্যাশা
সবার।
No comments