আহত ছাত্রের মৃতু্যর জের_ উত্তপ্ত ঢাবি ক্যাম্পাস
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ চলাকালে আহত
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আবু বকর ছিদ্দিক বুধবার সকালে মারা গেছেন।
দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টা মৃতু্যর সঙ্গে লড়ে বুধবার সকালে পরাজিত হন আবু বকর। তার
মৃতু্যর খবরে সহপাঠীরা বিৰুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি গাড়ি ও
প্রক্টরের কার্যালয় ভাংচুর করে। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ধাওয়া
পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে বকরের মৃতু্যর জন্য দায়ীদের বিরম্নদ্ধে তদনত্ম করে কোন রাজনৈতিক রং না দিয়ে কঠোর দৃষ্টানত্মমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ঘটনা তদনত্মে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্যকে প্রধান করে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করেছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বকরের মৃতু্যর পর ছাত্রলীগ এফ রহমান হল শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নককে।
এর আগে ক্যাম্পাসে সর্বশেষ ২০০৩ সালে ছাত্রদলের অভ্যনত্মরীণ সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা খোকনের মৃতু্য হয়। আর ছাত্রদলের দুই গ্রম্নপের বন্দুকযুদ্ধের মাঝে পড়ে প্রাণ হারান বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনি।
সোমবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে গুরম্নতর আহত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। এরপর ভোরেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে একবার তার জ্ঞান ফিরলেও রাতে অবস্থার অবনতি হয়। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তার শফিকুল আলম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাথার পেছনের অংশে বড় ধরনের আঘাতের কারণে 'সাব ডিউরাল হেমারেজে' তার মৃতু্য হয় বলে জানান ডাক্তাররা। তবে এটি কিসের আঘাত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বেলা দেড়টার দিকে তার স্বজনরা টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে বকরের লাশ নিয়ে যায়। তার গ্রামের বাড়ি মধুপুরের গোলাবাড়িতে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েনের জের ধরে সিটে ছাত্র ওঠানোকে কেন্দ্র করে হল সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোলস্নার সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
ছাত্রলীগের দুই পৰের সংঘর্ষে বকর আহত হলেও তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, যদিও ফারম্নকের সমর্থকরা দাবি করেছেন বকর তাদের কর্মী ছিল। তবে বকরের পরিবার বলেছে, সে কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। বকরের বন্ধু ও হলের ছাত্ররাও জানায়, বকর ছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন কর্মী।
বকরের রম্নমমেট আলমগীর জানান, সোমবার রাতে দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ চলাকালে নিজের কৰের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বকরসহ তারা কয়েকজন। হঠাৎ ওপর থেকে ছোড়া কিছু একটা তার মাথায় আঘাত করে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং তিনি লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যৰদর্শীরা জানান, টিয়ারশেল বা গুলির আঘাত লাগে তার মাথায়। আবার কেউ কেউ বলছেন পাঁচ তলা থেকে কেউ পাথর বা লোহার রড ছুড়েছিল যা তার মাথায় আঘাত করে। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে তার ৰত হয় বলে মঙ্গলবার প্রত্যৰদর্শীদের অনেকে বলেছিল।
তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বকর চার তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাঁচ তলা থেকে কেউ পাথর বা লোহার রড ছুড়ে মারে। এর আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশে বড় ধরনের জখম হয়। তিনি বলেন, ডাক্তার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় টিয়ার শেলের আঘাতে এত বড় ৰত হতে পারে না। এ বিষয়ে পুলিশের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বকরের মৃতু্যর খবরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রো উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারম্নন অর রশীদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, আমি এটাকে হত্যাকা-ই বলব। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি বরাবরই ছাত্র রাজনীতির পৰে। কিনত্মু ছাত্র রাজনীতির নামে মসত্মানি চলতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, তদনত্মের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাসত্মি দেয়া হবে। বকরকে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ তার পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করবে বলে জানান উপাচার্য।
নিহত মেধাবী ছাত্র বকরের বড় ভাই মুদি দোকানি আব্বাস আলী বলেন, আমি আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে কোন রাজনীতি চাই না। কোন ৰতিপূরণও চাই না।
দুপুর দেড়টার দিকে ময়নাতদনত্ম শেষে আবু বকরের বড় ভাই আব্বাস আলী, মামা আজহারম্নল ইসলাম গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ নিয়ে যান। এফ রহমান হলের দু'জন আবাসিক শিৰক ও বিভাগের দুই শিৰক তাঁদের সঙ্গে যান।
শিৰার্থীদের বিৰোভ এদিকে বকরের মৃতু্যর খবর দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়লে শিৰার্থীরা মেডিক্যালে জড়ো হতে থাকেন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিৰব্ধ শিৰার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল থেকে মিছিল বের করে। মিছিল থেকে রোকেয়া হলের সামনে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। একই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আরেকটি মিছিলও বের হয়। এ মিছিল উপাচার্যের বাসভবনের কাছে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং ইট ছোড়াছুড়ি হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। প্রত্যৰদর্শীরা জানায়, একদল ছাত্র সকাল ১১টার দিকে প্রক্টরের কার্যালয় ভাংচুর করে।
বকরের মৃতু্যর খবরে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ বাম সংগঠনগুলো বিৰোভ মিছিল বের করে। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়। ক্যাম্পাসে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এখনও ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য ছাত্রলীগের অভ্যনত্মরীণ সংঘর্ষে বকরের মৃতু্যর পর নিজেদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা জনকণ্ঠকে বলেন, দুঃখ প্রকাশের কোন ভাষা নেই। সাংগঠনিক ব্যবস্থ তো থাকবেই এ ঘটনা যারাই ঘটিয়েছে তদনত্ম করে তাদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
হল কমিটি বিলুপ্ত এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে আহত ছাত্র বকরের মৃতু্যর পর এফ রহমান হল শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাত আটটার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন এ কথা জানান। ফারম্নককে ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করা হয়।
সিন্ডিকেট সভা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরম্নরী সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ঘটনা তদনত্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য অধ্যাপক হারম্নন অর রশীদকে প্রধান করে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে সভা সূত্র জানিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম সভা চলছিল।
প্রভোস্ট কমিটির সভা এ ঘটনার পর বিকেলে প্রভোস্ট কমিটির জরম্নরী সভা আহ্বান করা হয়। উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একটি শক্তিশালী তদনত্ম কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। নিহত ছাত্রের পরিবারের জন্য সহায়তা প্রদান এবং প্রক্টর অফিস ভাংচুরের নিন্দা জানানো হয়।
ছাত্রদলের বিবৃতি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ছাত্রদল হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল মতিন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। তারা ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়ী করেন।
এদিকে বকরের মৃতু্যর জন্য দায়ীদের বিরম্নদ্ধে তদনত্ম করে কোন রাজনৈতিক রং না দিয়ে কঠোর দৃষ্টানত্মমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ঘটনা তদনত্মে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্যকে প্রধান করে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করেছে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে বকরের মৃতু্যর পর ছাত্রলীগ এফ রহমান হল শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নককে।
এর আগে ক্যাম্পাসে সর্বশেষ ২০০৩ সালে ছাত্রদলের অভ্যনত্মরীণ সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা খোকনের মৃতু্য হয়। আর ছাত্রদলের দুই গ্রম্নপের বন্দুকযুদ্ধের মাঝে পড়ে প্রাণ হারান বুয়েটের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনি।
সোমবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে গুরম্নতর আহত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক। এরপর ভোরেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে একবার তার জ্ঞান ফিরলেও রাতে অবস্থার অবনতি হয়। সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তার শফিকুল আলম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মাথার পেছনের অংশে বড় ধরনের আঘাতের কারণে 'সাব ডিউরাল হেমারেজে' তার মৃতু্য হয় বলে জানান ডাক্তাররা। তবে এটি কিসের আঘাত তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বেলা দেড়টার দিকে তার স্বজনরা টাঙ্গাইলের গ্রামের বাড়িতে বকরের লাশ নিয়ে যায়। তার গ্রামের বাড়ি মধুপুরের গোলাবাড়িতে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েনের জের ধরে সিটে ছাত্র ওঠানোকে কেন্দ্র করে হল সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোলস্নার সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।
ছাত্রলীগের দুই পৰের সংঘর্ষে বকর আহত হলেও তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, যদিও ফারম্নকের সমর্থকরা দাবি করেছেন বকর তাদের কর্মী ছিল। তবে বকরের পরিবার বলেছে, সে কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। বকরের বন্ধু ও হলের ছাত্ররাও জানায়, বকর ছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন কর্মী।
বকরের রম্নমমেট আলমগীর জানান, সোমবার রাতে দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ চলাকালে নিজের কৰের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বকরসহ তারা কয়েকজন। হঠাৎ ওপর থেকে ছোড়া কিছু একটা তার মাথায় আঘাত করে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং তিনি লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যৰদর্শীরা জানান, টিয়ারশেল বা গুলির আঘাত লাগে তার মাথায়। আবার কেউ কেউ বলছেন পাঁচ তলা থেকে কেউ পাথর বা লোহার রড ছুড়েছিল যা তার মাথায় আঘাত করে। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে তার ৰত হয় বলে মঙ্গলবার প্রত্যৰদর্শীদের অনেকে বলেছিল।
তবে তা নাকচ করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, বকর চার তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাঁচ তলা থেকে কেউ পাথর বা লোহার রড ছুড়ে মারে। এর আঘাতে তাঁর মাথার পেছনের অংশে বড় ধরনের জখম হয়। তিনি বলেন, ডাক্তার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় টিয়ার শেলের আঘাতে এত বড় ৰত হতে পারে না। এ বিষয়ে পুলিশের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বকরের মৃতু্যর খবরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রো উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারম্নন অর রশীদ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, আমি এটাকে হত্যাকা-ই বলব। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি বরাবরই ছাত্র রাজনীতির পৰে। কিনত্মু ছাত্র রাজনীতির নামে মসত্মানি চলতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, তদনত্মের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাসত্মি দেয়া হবে। বকরকে আমরা ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ তার পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করবে বলে জানান উপাচার্য।
নিহত মেধাবী ছাত্র বকরের বড় ভাই মুদি দোকানি আব্বাস আলী বলেন, আমি আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে কোন রাজনীতি চাই না। কোন ৰতিপূরণও চাই না।
দুপুর দেড়টার দিকে ময়নাতদনত্ম শেষে আবু বকরের বড় ভাই আব্বাস আলী, মামা আজহারম্নল ইসলাম গ্রামের বাড়িতে তাঁর লাশ নিয়ে যান। এফ রহমান হলের দু'জন আবাসিক শিৰক ও বিভাগের দুই শিৰক তাঁদের সঙ্গে যান।
শিৰার্থীদের বিৰোভ এদিকে বকরের মৃতু্যর খবর দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়লে শিৰার্থীরা মেডিক্যালে জড়ো হতে থাকেন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিৰব্ধ শিৰার্থীরা ঢাকা মেডিক্যাল থেকে মিছিল বের করে। মিছিল থেকে রোকেয়া হলের সামনে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। একই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আরেকটি মিছিলও বের হয়। এ মিছিল উপাচার্যের বাসভবনের কাছে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং ইট ছোড়াছুড়ি হয়। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। প্রত্যৰদর্শীরা জানায়, একদল ছাত্র সকাল ১১টার দিকে প্রক্টরের কার্যালয় ভাংচুর করে।
বকরের মৃতু্যর খবরে ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্রজোটসহ বাম সংগঠনগুলো বিৰোভ মিছিল বের করে। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ক্যাম্পাসে যান চলাচল সীমিত করে দেয়া হয়। ক্যাম্পাসে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। এখনও ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতাদের বক্তব্য ছাত্রলীগের অভ্যনত্মরীণ সংঘর্ষে বকরের মৃতু্যর পর নিজেদের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা জনকণ্ঠকে বলেন, দুঃখ প্রকাশের কোন ভাষা নেই। সাংগঠনিক ব্যবস্থ তো থাকবেই এ ঘটনা যারাই ঘটিয়েছে তদনত্ম করে তাদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
হল কমিটি বিলুপ্ত এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে আহত ছাত্র বকরের মৃতু্যর পর এফ রহমান হল শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারম্নককে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাত আটটার দিকে ছাত্রলীগ সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন এ কথা জানান। ফারম্নককে ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করা হয়।
সিন্ডিকেট সভা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরম্নরী সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ঘটনা তদনত্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য অধ্যাপক হারম্নন অর রশীদকে প্রধান করে একটি তদনত্ম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে সভা সূত্র জানিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম সভা চলছিল।
প্রভোস্ট কমিটির সভা এ ঘটনার পর বিকেলে প্রভোস্ট কমিটির জরম্নরী সভা আহ্বান করা হয়। উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় একটি শক্তিশালী তদনত্ম কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। নিহত ছাত্রের পরিবারের জন্য সহায়তা প্রদান এবং প্রক্টর অফিস ভাংচুরের নিন্দা জানানো হয়।
ছাত্রদলের বিবৃতি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ছাত্রদল হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মির দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আব্দুল মতিন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। তারা ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়ী করেন।
No comments