বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ
ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টায় রাজধানীর জনাকীর্ণ আদালতে যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মামলার রায় ঘোষণা করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারপতি। ৩৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত রায়টি সংক্ষেপে পাঠ করা হয়। ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মোট আটটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এর মধ্যে সাতটিতেই সে দোষী সাব্যস্ত হয়। ফরিদপুরের কুখ্যাত বাচ্চু রাজাকার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বৃহত্তর ফরিদপুরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তার বিরুদ্ধে এ সময় ১৪ জনকে হত্যা, তিন নারীকে ধর্ষণ, নয়জনকে অপহরণ, দশজনকে আটক রাখা, পাঁচ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ১৫টি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।সোমবার বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে মানুষের মধ্যে সন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে। রায় ঘোষণার খবর শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল বের হয়। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগীরা ভেবেছিল এই ভয়াবহ অপরাধের বিচার কখনই হবে না। এর কারণ, ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হওয়ার পর এসব যুদ্ধাপরাধী সমাজে নানাভাবে পুনর্বাসিত হয়েছিল। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের সঙ্গে এদের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত ছিল।
বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতি দায়মুক্ত হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। ২০১৩ সালেই অন্যসব যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা ও তা কার্যকর করা হবে বলে আশা করা যায়। পলাতক থাকায় বাচ্চু রাজাকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগেই সে পালিয়ে পাকিস্তানে চলে যায়। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকালে লাখ লাখ বাঙালীকে হত্যা করেছে, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছে, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে একে একে তাদের সবাইকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বাচ্চু রাজাকারের মতো আরও অনেক কুখ্যাত রাজাকার এখন গা-ঢাকা দিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয়ভাবে এদের অপকর্মের কথা সবাই জানে, এদের সবাই চেনে। তাই এসব কুখ্যাত রাজাকারের বিচারও অপরিহার্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক পরেও অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের খুঁজে বের করা হয়েছে ও তাদের বিচার হয়েছে। বাংলাদেশও সেই একই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলেছে। বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শহীদদের রক্ত ঋণ শোধ করার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল।
No comments