বাসন্তী রংয়ের ছড়াছড়ি, দুই ভাষাসৈনিক সংবর্ধিত- বইমেলা প্রতিদিন
বসন্তের রঙে রঙিন ছিল শনিবারের বইমেলা। যেদিকেই তাকিয়েছি, সেদিকেই দেখেছি শুধু রং আর রং। যেন এদিন এটা রঙেরই মেলা ছিল। ললনাদের পরনে বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় গাঁদা ফুল আর কাঁচের চুড়ির ঝনঝনায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
নানা রঙের পাঞ্জাবি পরে আসতে ভুল করেনি এদিন ছেলেরাও। আর ভিড়ের কথা যদি বলি তাতো প্রতিদিনেরই। তবে এদিন বইমেলায় ভিড় যেমন ছিল মানুষের, তেমনি ছিল যানেরও। শাহবাগের পর থেকেই মানুষ গায়ে গায়ে হাঁটছিল, আর যানতো আগাতেই পারছিল না। এদিন মেলা কমিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করলেও, তাতে ফাঁকফোঁকর রয়েছে বলেই মনে হয়েছে। যেমন, সবাই মেটাল ডিটেকরে ঢুকছিল ঠিকই, কিন্তু যাঁদের সঙ্গে ব্যাগ ছিল তাঁদের অনেকেরই ব্যাগ চেক না করেই ছেড়ে দিতে দেখা গেছে নিরাপত্তা কর্মীদের। এতে অনেক সচেতন আগন্তুকের মনত্মব্য শিবির ও জঙ্গীরা যেভাবে তাদের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আয়োজকদের আরও সতর্ক হওয়ারই আহ্বান জানালেন সচেতন নগরবাসী। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১২৭টি।লেখকদের কথা
এদিন মেলায় এসেছিলেন বেশ কয়েক গুণীজন। তাঁরা হলেন অধ্যাপক মুসত্মাফা নূরউল ইসলাম, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, কবি আসাদ চৌধুরী প্রমুখ। অধ্যাপক মুসত্মাফা নূরউল ইসলাম বলেন, ভাষার দাবি আদায় করার ফলেই এই বইমেলা পেয়েছি আমরা। এটা আমাদের বিশাল অর্জন। দিনে দিনে এই মেলা আরও বিশালতা লাভ করছে। বালক থেকে শুরম্ন করে সবার মনে প্রথিত হয়ে গেছে এই মেলার মাহাত্ম্য। এই মাস আমাদের অর্জনের মাস, শ্রদ্ধার মাস ও আনন্দের মাস। বাঙালী সংস্কৃতির মিলনের ৰেত্র হিসাবে এই মেলা আমাদের মসত্ম পাওয়া। আমাদের সামনের দিনগুলো উজ্জীবিত করতে এই মেলা বড় ভূমিকা রাখবে।
দুই ভাষা সংগ্রামীকে বাংলা একাডেমীর সংবর্ধনা
ফাগুনের আমেজে বাংলা একাডেমী মেলার ১৩তম দিনে সংবর্ধনা দিল দুই ভাষা সংগ্রামীকে। এরা হলেন দার্শনিক অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তাঁদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। দুই গুণীজনকে নিয়ে আরও আলোচনা করেন অধ্যাপক মুসত্মাফা নূরউল ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আবু সায়ীদ ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
মোড়ক উন্মোচন
এদিন মেলার নজরম্নল মঞ্চে প্রায় এক ডজন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। তার মধ্যে বিশিষ্ট শিৰাবিদ সরদার ফজলুল করিম মোড়ক উন্মোচন করেন সরকার আমিনের কবিতার বই আমার স্নেহের কবিতাগুলো, এই বইটি এনেছে শব্দশিল্প। পালক পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত ইমতিয়াজ হোসেনের গৌণগাথা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন। মুহম্মদ জাফর ইকবাল এদিন সাদনান মাহতাব কিবরিয়ার আত্মকথন ও ইকবাল কাদরির সুবর্ণ তুমি জানোনা বই দু'টির মোড়ক উন্মোচন করেন।
শিশুদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতা
বইমেলা উপলৰে এদিন বাংলা একাডেমী আয়োজন করেছিল শিশু-কিশোরদের সঙ্গীত প্রতিযোগিতার। প্রাথমিক বাছাইয়ে এদিন ক শাখায় দেশাত্মবোধক গানে ১৩৩ জন, আর খ শাখায় রবীন্দ্র সঙ্গীতে ১০৫ জন অংশ নেয়। প্রতি শাখা থেকে ১০ জন করে ২০ জনের প্রাথমিক বাছাইয়ের রেজাল্ট দিবে ১৬ ফেব্রম্নয়ারি, আর ফাইনাল প্রতিযোগিতা হবে ২০ তারিখে।
নতুন বই
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১২৭টি। আবার কবিতার বই শর্ীেষ উঠে এসেছে, সংখ্যা ২৭টি। উপন্যাস ২৩টি, গল্প ১৯টি ও প্রবন্ধ ৫টি। এদিনের উলেস্নখযোগ্য নতুন বই হলো ফাদার মারিনো রিগনের অনুবাদ গ্রন্থ আমার প্রিয় লালন গীতি ও কাঠের মানুষ পিনোকিও, এনেছে একাডেমিক প্রেস এ্যান্ড পালিকেশন। অনিন্দ্র এনেছে শুচি সৈয়দের ভালবাসা এই আলোটুকু ছাড়া সমসত্মই অন্ধকার, সূচিপত্র এনেছে মোহাম্মদ সা'দাত আলীর গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান অভিধান, বাতিঘরে পাওয়া যাচ্ছে শাহজাহান সাজুর ৬টি বই, সেগুলো_ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বে, বঙ্গবন্ধু ডাকি তোমায়, তোমাকে মনে থাকবে, নাম নেই রঙ্গে ঘোড়ার পিঠে চড়ে চড়ে ও সিআইডি পুলিশ। আলেয়া বুক ডিপো এনেছে ড. নিশীথ কুমার পালের গল্পে গল্পে গাছপালার কথা ও গল্পে গল্পে প্রাণীদের কথা এবং ড. সুভাস চন্দ্র পালের এসো গল্প করি পানিকে জানি। অয়ন প্রকাশনে আসছে ইকবাল আজিজের কবিতার বই কীভাবে শরীর বৃৰ হয়ে যায়। সময় এনেছে মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের কখনো সখনো কবিতা রাজনীতির কথা কয়। সুমন কুমার দাসের সম্পাদনায় অন্বেষা এনেছে সাৰাৎকার শাহ আব্দুল করিম। গতিধারা এনেছে আহমেদ মুসার উপন্যাস প্রানত্ম প্রাচীর। জিনিয়াস এনেছে হাসান হাফিজের দোল দুলুনি মন ভুলুনি। নালন্দা এনেছে সত্যজিৎ রায়ের রচনাবলী ৩। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এনেছে কবি কাজী নজরম্নল অনূদিত রম্নবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, আর ঝিঙেফুল এনেছে জাদু বাসত্মবতার গল্প।
No comments