ভালবাসি ভালবাসি এই সুরে আজ- বিশ্ব ভালবাসা দিবস
সূর্য আজ প্রভাতেও আলোর নাচন তুলে চোখ মেলবে প্রতিদিনের মতোই। তবে দৰিণ হাওয়া আজ হৃদয়ে বুনে দেবে ভ্রমর গুঞ্জন। অমরাবতীর তীর ছুঁয়ে স্বর্ণরেণু পালকে মেখে ভেসে আসবে বর্ণিল প্রজাপতি ও ভ্রমরের ঝাঁক।
কারণ আজ দিবস রজনী ভালবাসার। বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা 'সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে'। কবিগুরম্নর ভাষায় 'আমার জীবনে তুমি বাঁচো ওগো বাঁচো/তোমার কামনা আমার চিত্র দিয়ে যাঁচো...' অথবা 'তোমরা যে বল ভালবাসা ভালবাসা/সখী ভালবাসা কারে কয়...'। কবির বাঁচা মরার এবং চিত্র দিয়ে ভালবাসা বোঝাবুঝির চিরনত্মন বোধ আজ হয়ত একটু বেশিই অনুভূত হবে গোলাপ বিনিময়ে ও শরীরী ভাষায়। বসনত্ম বাতাসে হৃদয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সারাবিশ্বের প্রেমপিয়াসী যুগলরা বছরের এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছে মনের গহিনের কথকতার কলি ফোটাতে। চন্ডিদাসের অনাদিকালের সেই সুর_'দুহঁ কোরে, দুহঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ অাঁধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখী কেমনে বাঁধিব হিয়া...' এই আবেদনও বাজবে কারও কারও হৃদয়ে।এই দিনেই প্রেমদেব কিউপিড প্রেমশর বাগিয়ে হৃদয় কন্দরে ঘুরে বেড়াবেন। সে অনুরাগেই প্রেমপাগল প্রেমিক প্রেমিকারা পরাণতাড়িত হয়ে বিদ্ধ হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। তাঁদের মনে লাগবে দোলা ভালবাসার রঙে রাঙাবে হৃদয়। ভালবাসা উৎসবে মুখর হবে জনপদ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও আজ পালিত হবে দিবসটি। ডিজিটালের এই জগতে তরম্নণ-তরম্নণীরাই বেশি ক্রেজি হয়ে উঠবে দিবসটি পালনে। প্রযুক্তির কল্যাণে হাইটেক ডিজিটালের যুগে মুঠোফোনের ৰুদে বার্তা, ই-মেইল অথবা অনলাইন চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় পলস্নবিত হয়ে উঠবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে রবীন্দ্র সরোবরসহ রাজধানী ঢাকার আনাচে কানাচে এমনকি সারাদেশেরই পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রগুলো সরব হবে প্রেমিক প্রেমিকাদের গুঞ্জরিতে। হয়ত একে অন্যকে বলবে_ 'তোমাকে ভালবাসি আমি। ভালবেসে সখী নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে...।'
পশ্চিমা দুনিয়ায় ১৪ ফেব্রম্নয়ারির এই প্রেম উৎসব তারম্নণ্যের ভেতর এক অদেখা ভুবনের উত্তেজনা ছড়ায়। এই দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রেটিংস কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলের এসএমএসে প্রেমবার্তা, হিরার আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা মার্জার, বইয়ের ভেতরে রাখা গোলাপের ইশারা বিনিময় আর জড়াজড়ি করা হয়ে উঠবে তরম্নণ-তরম্নণীদের প্রথম অনুষঙ্গ। হয়ত আরও থাকবে নীল খামে হাল্কা লিপস্টিকের দাগ, একটি গোলাপ ফুল, ছোট্ট কোন উপহার আর ছোট্ট একটি চিরকুট। তাতে দু'ছত্র গদ্য বা পদ্যে প্রেমের উর্মি 'ইউ স্টেপ ইনটু মাই হার্ট, টার্নিং ইট ফ্রম স্টোন...' অথবা 'তুমি আমার সবটুকু গান/ঝড়ের পর একটু চুমু/তাতে আছে সবটুকু প্রাণ...।'
আমাদের দেশে ১৯৯৪ সাল থেকে দিবসটি বেশ ঘটা করে পালিত হচ্ছে। এদিন শুধু প্রেম বিনিময় নয়, প্রেমিক প্রেমিকাদের গোপনে বিয়ের হিড়িকও পড়ে। রাজধানীর উদ্যান, বইমেলা, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একানত্ম নিভৃতে কাটান প্রেমকাতর তরম্নণ-তরম্নণীরা। এই দিন যে শুধু তরম্নণ-তরম্নণীদের তা নয়, পিতামাতা-সনত্মানদের ভালবাসায় বড়মাত্রায় উদ্ভাসিত করে। যাঁরা একটু বিজ্ঞ তাঁরা বলেন, প্রেমের দিন থাকে না, ভালবাসলেই ভ্যালেন্টাইন, সেলিব্রেট করলেই ভ্যালেন্টাইন ডে।
ভালবাসার এই দিনটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে অনেক ধরনের কাহিনীর কথা জানা গেছে। প্রধান যে কাহিনী প্রচলিত আছে তা এক রোমান ক্যাথলিক পাদ্রি বা সনত্মের কাহিনী। তাঁর নাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক ও পাদ্রি। তখন রোমানদের দেবদেবী পুজোর বিষয়টি ছিল মুখ্য। বিশ্বাসী ছিল না খ্রিস্টান র্ধেম। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের অপরাধে ২০৭ খ্রিস্টাব্দে সাধু ভ্যালেন্টাইনের মৃতু্যদ- কার্যকর করা হয় রোমের সম্রাট দ্বিতীয় কডিয়াসের আদেশে। তবে তিনি যখন জেলে বন্দী, তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভালবাসার কথা জানিয়ে তাঁকে জেলের জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিত। বন্দী অবস্থাতেই তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে জেলারের অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। অনুমান করা হয় মেয়েটির সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মৃতু্যর আগে মেয়েকে একটি চিঠি লেখেন। সেখানে তিনি উলেস্নখ করেছিলেন, ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন বলে। অনেকের মতে এই সাধু ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রম্নয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে ঘোষণা দেন। আরও এক ভ্যালেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ছেলেদের বিয়ে করতে নিষিদ্ধ করেন রোমান সম্রাট কডিয়াস। কিন্তু যুবক ভ্যালেন্টাইন সেই নিষেধ অমান্য করে বিয়ে করেন। ফলে তাঁকে মৃতু্যদ- দেয়া হয়। তাঁর নামানুসারেও এই দিবস চালু হতে পারে এমন ধারণাও রয়েছে। অন্য আরেক গল্পে আছে এই দিনে উদযাপিত হতো জুনো উৎসব। এই উৎসবের দিনে তরম্নণরা একটি বাক্স থেকে তরম্নণীদের নাম লেখা একটি কাগজ উঠাত। যার নাম উঠত সেই তরম্নণীই হতো সেই তরম্নণের নাচের সঙ্গী। এমনই আরও নানা কাহিনী আছে ভ্যালেন্টাইন ডে নিয়ে।
No comments