‘সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শুনি
আগামী বছর ফিফা কনফেডারেশনস কাপ। এই টুর্নামেন্ট আপনার অগ্রাধিকার তালিকায় কততম অবস্থানে? ভিসেন্তে দেল বস্ক: আসলে আমরা স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করি। আর তাই আমাদের এখনকার লক্ষ্য হলো যত দ্রুত সম্ভব ২০১৪ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা।
এই মার্চেই আমাদের দুটো ম্যাচ আছে (ফিনল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিপক্ষে), যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর পর কনফেডারেশনস কাপ আসবে। দক্ষিণ আফ্রিকার আসরটিতে (২০০৯ সালে) আমরা তৃতীয় হয়েছিলাম। এবার তাই ভালো প্রস্তুতি নিয়ে টুর্নামেন্টটিতে যেতে চাই, যেন ভালো কিছু করতে পারি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আসরটিতে সেমিফাইনালে স্পেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছিল। আপনি কি মনে করেন এই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা এক বছর পর বিশ্বকাপে স্পেনকে ভালো করতে সাহায্য করেছিল?
দেল বস্ক: এতে কোনো সন্দেহই নেই। বিশেষ সাহায্য করেছিল পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার ব্যাপারে। যেমন আমরা কোথায় যাচ্ছি, কোন হোটেলে থাকছি। অনুশীলন মাঠ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের কাছে কী প্রত্যাশা করছেন, যে দেশের ফুটবল ঐতিহ্য সুবিশাল।
দেল বস্ক: আমরা এমন একটি দেশে যাচ্ছি, ফুটবল নিয়ে যাদের আবেগ-অনুভূতি সবচেয়ে বেশি। আমরা অনেক দায়িত্ববোধ নিয়ে সেখানে খেলতে যাব। কারণ, কনফেডারেশনস কাপকে মোটেও আমরা অগুরুত্বপূর্ণ কোনো টুর্নামেন্ট মনে করি না। এই টুর্নামেন্টে তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নরাই খেলে। আমরা এটাকে এর প্রাপ্য গুরুত্বই দেব।
স্পেনের সাম্প্রতিক অবিশ্বাস্য সাফল্যের দিকে এবার চোখ ফেরাই। আপনি কি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জয় দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টে দিয়েছিল?
দেল বস্ক: আসলে আমাদের অনেক বেশি প্রশংসা করা হচ্ছে। সাধারণত চ্যাম্পিয়নের মুকুট যে দল পরে, তাদের নিয়ে এমনটা হয়-ই। আর আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, শুধু বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্টে নয়, আমরা টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্ট জিতেছি বলে প্রশংসাটাও সে রকম হচ্ছে। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে একই সঙ্গে প্রতিদিনের জন্য এটা অন্তহীন একটা চাপও তৈরি করছে। স্প্যানিশ সমর্থকেরা আমাদের অনেক ভালোবাসে। যদি আমরা ব্যর্থ হই, ব্যর্থ হওয়াটা যদিও অনেক স্বাভাবিক, কারণ ফুটবলে আরও অনেক ভালো ভালো দল আছে, তখন আমাদের সমর্থকেরা খুব হতাশ হবে। আমাদের এটার বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে।
আপনার দল কি বাকি সব দলের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত?
দেল বস্ক: সফল হতে চাইলে আপনাকে একটা ধরন অনুসরণ করেই খেলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। হ্যাঁ, এটা সত্যি বটে আমাদের খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটাই আমাদের খেলাটার একটা ধরন গড়ে দিয়েছে। আমরাও সেই ধরনটার বাইরে গিয়ে খেলার খুব একটা চেষ্টা করিনি। ফলাফল বলেই দিচ্ছে আমাদের এই খেলার ধরনটার অনেক অনুরক্ত পাওয়া যাচ্ছে। এটা বলা হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না, কিছু কিছু দিক দিয়ে অনেকেই আমাদের অনুসরণ করছে, এটাও আমাদের জন্য বড় পাওয়া।
২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হল্যান্ডের কাছে হেরে গেলে কি লা রোজাদের এই খেলার ধরন এখনো এমন আলোচিত হতো বলে মনে করেন?
দেল বস্ক: আমি খুব ভালো করেই জানি যে আমরা অনেকবারই ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছি। ইউরোর (২০১২) সেমিফাইনালে পর্তুগালের সঙ্গে আমাদের পেনাল্টি শ্যুট-আউটের কথাটাই ধরুন। ব্রুনো আলভেজের শট বারে লেগে বাইরে চলে গেল। অথচ সেস ফ্যাব্রিগাসের শট বারে লেগে ভেতরেই ঢুকল। আমরা জানি, ফুটবল আসলে কী। কিন্তু নিজে যা করছেন, সেটার ওপর আস্থা না হারানোটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যখন সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে গেলাম, আমরা নিজেদের প্রতি সংশয়গ্রস্ত হয়ে পড়তে পারতাম। কিন্তু আমরা তা হতে দিইনি। বরং হন্ডুরাসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আমরা প্রায় একই দলটাই খেলিয়েছি।
এত সাফল্য এনে দেওয়ার পরও যখন সমালোচনা সইতে হয়, কেমন লাগে? ২০১২ ইউরোতে স্ট্রাইকার না খেলানো নিয়ে যেমন অনেক সমালোচনা হচ্ছিল।
দেল বস্ক: আমি সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শুনি, সেটার মূল্যায়ন করি। লোকে কী বলছে, সেটা না শোনার জন্য কানে তালা দিয়ে রাখলে হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো সমালোচনা যৌক্তিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আমরা যা করি, সেটা বিশ্বাস নিয়েই করি। এ কারণেই প্রতিপক্ষের অতিরক্ষণাত্মক কৌশলেও খেলোয়াড়েরা ধৈর্য হারায় না। প্রতিটি ম্যাচই প্রথম ১০ মিনিটেই জিতে নেব—এমনটা ভাবলে তো হবে না।
আগে বলেছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর ক্লাব কোচিংয়ে ফিরবেন না।
দেল বস্ক: সেটা বলেছিলাম বয়সের কারণে। এখন ৬১ চলছে, জাতীয় দলের হয়ে আর এক বছরের সামান্য বেশি কিছুদিন আছি। ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়াটা খুব কঠিন হবে। সত্যি বলতে কি, ৭০ বছর বয়সেও কোচিং করাচ্ছি—এটা ভাবতে পারি না। তাই এর পরই সম্ভবত বিদায় বলে দেব।
ক্লাব আর জাতীয় দলের কোচিং করানোর মধ্যে কতটা পার্থক্য? কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো দুটোকে একেবারে আলাদা পেশা বলে মনে হয়।
দেল বস্ক: বছরে আমরা ১৬টার মতো ম্যাচ খেলি। ক্লাবের হয়ে ৫০টার মতো ম্যাচ খেলতে হয়। এখান থেকেই তো ব্যবধানটা বোঝা সম্ভব। ক্লাবে প্রতিদিনই খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে হয়। এটা আপনাকে ধীরে ধীরে দলকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। জাতীয় দলে সেদিক দিয়ে সময় খুব কম পাবেন। জাতীয় দলে খেলোয়াড়ের সঙ্গে বেশি কাজ করতে হয় বলে সেখানে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। জাতীয় দলে যেটা কম। এক-দুজন হয়তো মুখ ভার করে থাকে তাদের না খেলানো হলে কিংবা কোনো কারণে মেজাজ হারিয়ে ফেললে। কিন্তু এখানে সেটা আপনাকে প্রতিদিন সহ্য করতে হয় না, যা জীবনটাকে কঠিন করে তোলে।
ফিফাডটকম থেকে ভাষান্তর
দক্ষিণ আফ্রিকার ওই আসরটিতে সেমিফাইনালে স্পেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরেছিল। আপনি কি মনে করেন এই দুঃখজনক অভিজ্ঞতা এক বছর পর বিশ্বকাপে স্পেনকে ভালো করতে সাহায্য করেছিল?
দেল বস্ক: এতে কোনো সন্দেহই নেই। বিশেষ সাহায্য করেছিল পারিপার্শ্বিক অবস্থা জানার ব্যাপারে। যেমন আমরা কোথায় যাচ্ছি, কোন হোটেলে থাকছি। অনুশীলন মাঠ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
স্বাগতিক দেশ হিসেবে ব্রাজিলের কাছে কী প্রত্যাশা করছেন, যে দেশের ফুটবল ঐতিহ্য সুবিশাল।
দেল বস্ক: আমরা এমন একটি দেশে যাচ্ছি, ফুটবল নিয়ে যাদের আবেগ-অনুভূতি সবচেয়ে বেশি। আমরা অনেক দায়িত্ববোধ নিয়ে সেখানে খেলতে যাব। কারণ, কনফেডারেশনস কাপকে মোটেও আমরা অগুরুত্বপূর্ণ কোনো টুর্নামেন্ট মনে করি না। এই টুর্নামেন্টে তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়নরাই খেলে। আমরা এটাকে এর প্রাপ্য গুরুত্বই দেব।
স্পেনের সাম্প্রতিক অবিশ্বাস্য সাফল্যের দিকে এবার চোখ ফেরাই। আপনি কি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জয় দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টে দিয়েছিল?
দেল বস্ক: আসলে আমাদের অনেক বেশি প্রশংসা করা হচ্ছে। সাধারণত চ্যাম্পিয়নের মুকুট যে দল পরে, তাদের নিয়ে এমনটা হয়-ই। আর আমাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, শুধু বিশ্বকাপের মতো একটা টুর্নামেন্টে নয়, আমরা টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্ট জিতেছি বলে প্রশংসাটাও সে রকম হচ্ছে। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে একই সঙ্গে প্রতিদিনের জন্য এটা অন্তহীন একটা চাপও তৈরি করছে। স্প্যানিশ সমর্থকেরা আমাদের অনেক ভালোবাসে। যদি আমরা ব্যর্থ হই, ব্যর্থ হওয়াটা যদিও অনেক স্বাভাবিক, কারণ ফুটবলে আরও অনেক ভালো ভালো দল আছে, তখন আমাদের সমর্থকেরা খুব হতাশ হবে। আমাদের এটার বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে।
আপনার দল কি বাকি সব দলের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত?
দেল বস্ক: সফল হতে চাইলে আপনাকে একটা ধরন অনুসরণ করেই খেলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। হ্যাঁ, এটা সত্যি বটে আমাদের খেলোয়াড়দের নির্দিষ্ট একটা বৈশিষ্ট্য আছে। সেটাই আমাদের খেলাটার একটা ধরন গড়ে দিয়েছে। আমরাও সেই ধরনটার বাইরে গিয়ে খেলার খুব একটা চেষ্টা করিনি। ফলাফল বলেই দিচ্ছে আমাদের এই খেলার ধরনটার অনেক অনুরক্ত পাওয়া যাচ্ছে। এটা বলা হয়তো বাড়াবাড়ি হবে না, কিছু কিছু দিক দিয়ে অনেকেই আমাদের অনুসরণ করছে, এটাও আমাদের জন্য বড় পাওয়া।
২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে হল্যান্ডের কাছে হেরে গেলে কি লা রোজাদের এই খেলার ধরন এখনো এমন আলোচিত হতো বলে মনে করেন?
দেল বস্ক: আমি খুব ভালো করেই জানি যে আমরা অনেকবারই ভাগ্যের সাহায্য পেয়েছি। ইউরোর (২০১২) সেমিফাইনালে পর্তুগালের সঙ্গে আমাদের পেনাল্টি শ্যুট-আউটের কথাটাই ধরুন। ব্রুনো আলভেজের শট বারে লেগে বাইরে চলে গেল। অথচ সেস ফ্যাব্রিগাসের শট বারে লেগে ভেতরেই ঢুকল। আমরা জানি, ফুটবল আসলে কী। কিন্তু নিজে যা করছেন, সেটার ওপর আস্থা না হারানোটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই যখন সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে গেলাম, আমরা নিজেদের প্রতি সংশয়গ্রস্ত হয়ে পড়তে পারতাম। কিন্তু আমরা তা হতে দিইনি। বরং হন্ডুরাসের বিপক্ষে পরের ম্যাচে আমরা প্রায় একই দলটাই খেলিয়েছি।
এত সাফল্য এনে দেওয়ার পরও যখন সমালোচনা সইতে হয়, কেমন লাগে? ২০১২ ইউরোতে স্ট্রাইকার না খেলানো নিয়ে যেমন অনেক সমালোচনা হচ্ছিল।
দেল বস্ক: আমি সমালোচনা মনোযোগ দিয়ে শুনি, সেটার মূল্যায়ন করি। লোকে কী বলছে, সেটা না শোনার জন্য কানে তালা দিয়ে রাখলে হবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো সমালোচনা যৌক্তিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আমরা যা করি, সেটা বিশ্বাস নিয়েই করি। এ কারণেই প্রতিপক্ষের অতিরক্ষণাত্মক কৌশলেও খেলোয়াড়েরা ধৈর্য হারায় না। প্রতিটি ম্যাচই প্রথম ১০ মিনিটেই জিতে নেব—এমনটা ভাবলে তো হবে না।
আগে বলেছিলেন জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর ক্লাব কোচিংয়ে ফিরবেন না।
দেল বস্ক: সেটা বলেছিলাম বয়সের কারণে। এখন ৬১ চলছে, জাতীয় দলের হয়ে আর এক বছরের সামান্য বেশি কিছুদিন আছি। ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়াটা খুব কঠিন হবে। সত্যি বলতে কি, ৭০ বছর বয়সেও কোচিং করাচ্ছি—এটা ভাবতে পারি না। তাই এর পরই সম্ভবত বিদায় বলে দেব।
ক্লাব আর জাতীয় দলের কোচিং করানোর মধ্যে কতটা পার্থক্য? কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো দুটোকে একেবারে আলাদা পেশা বলে মনে হয়।
দেল বস্ক: বছরে আমরা ১৬টার মতো ম্যাচ খেলি। ক্লাবের হয়ে ৫০টার মতো ম্যাচ খেলতে হয়। এখান থেকেই তো ব্যবধানটা বোঝা সম্ভব। ক্লাবে প্রতিদিনই খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে হয়। এটা আপনাকে ধীরে ধীরে দলকে আরও উন্নত করার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। জাতীয় দলে সেদিক দিয়ে সময় খুব কম পাবেন। জাতীয় দলে খেলোয়াড়ের সঙ্গে বেশি কাজ করতে হয় বলে সেখানে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। জাতীয় দলে যেটা কম। এক-দুজন হয়তো মুখ ভার করে থাকে তাদের না খেলানো হলে কিংবা কোনো কারণে মেজাজ হারিয়ে ফেললে। কিন্তু এখানে সেটা আপনাকে প্রতিদিন সহ্য করতে হয় না, যা জীবনটাকে কঠিন করে তোলে।
ফিফাডটকম থেকে ভাষান্তর
No comments