মানবাধিকার- বিশ্বজিৎ হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে কি? by সালমা আলী
এবারের মানবাধিকার দিবসের সকালটা শুরু হয়েছিল পত্রিকায় রক্তাক্ত বিশ্বজিতের মর্মস্পর্শী মৃত্যুসংবাদ দিয়ে। কী অপরাধ ছিল সেদিন অবরোধের মধ্যেও রুটি-রুজির জন্য জীবন হাতে নিয়ে বের হওয়া নিরীহ বিশ্বজিতের? এ কেমন রাজনীতির রক্তের হোলি খেলার বলি হলো সে?
সেদিন বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সেই নির্মম দৃশ্যে যেভাবে আমরা মর্মাহত হয়েছি, তারপর বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়েছি পুলিশের নির্লিপ্ততা দেখে। দিনদুপুরে, চোখের সামনে মানুষ হত্যার যে ভয়ংকর আইন অমান্যকারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব সবার আগে পুলিশেরই ছিল। তবে, কার নির্দেশে তারা সেদিন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছিল?
চিকিৎসকদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। সবার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে এক দরিদ্র রিকশাওয়ালা যখন বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে আসেন, তখন চিকিৎসকদের তীব্র প্রশ্নবাণে তাঁকে জর্জরিত হতে হয়। চিকিৎসা শুরু করা হয় অনেক দেরিতে। বিশ্বজিৎ ভেসে যাচ্ছিল রক্তস্রোতে, যে রক্তে সে ভবিষ্যতে দেশ গড়বে বলে প্রস্তুত হচ্ছিল। এ কোন দেশে আমরা বাস করছি? পত্রিকায় দেখলাম, দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য অভিযুক্ত পুলিশ ও চিকিৎসকে আইনের আওতায় আনতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। আমাদেরও সেটাই দাবি।
এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মিডিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি শুনে মনে প্রশ্ন জেগেছে, তিনি কি একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি নিছক একটি দলের কণ্ঠস্বর? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আটজন আসামি ধরা পড়েছে, ডিবির প্রধান একই দিন বলেছেন তিনজন আসামি আটকের কথা। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, মোট ১০ থেকে ১২ জন আসামি ধরা পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবির প্রধানের বক্তব্যের মধ্যে কেন এ বৈপরীত্য? আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্রুত বিচারে তাদের মামলাটি চলবে।’ টিভি ফুটেজে বিশ্বজিতের করুণ আকুতি, সাপ মারার মতো কুপিয়ে-পিটিয়ে রক্তাক্ত করা, তারপর যেভাবে তার মৃত্যু হলো, এটা কি সভ্য সমাজের প্রকৃতি হতে পারে? আমরা মেনে নিতে পারছি না। এই দৃশ্য আমাদের মনে যে মর্মন্তুদ বেদনার সৃষ্টি করেছে, তাহলে তার মা-বাবার মনের ভেতর কী চলছে? সন্তান হত্যার এ বীভৎস দৃশ্য তাঁরা কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারবেন? আমরা যখন অপরাধীর সমালোচনা করি, বলে ফেলি, পরিবারের দোষেই এমনটি হয়। অথচ আমরা দেখলাম, শাকিল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বাবার সন্তান, যিনি তাঁর জীবনের সব সঞ্চিত অর্থ সন্তানের কল্যাণে ব্যয় করছিলেন তাকে ‘মানুষ’ করার আশায়। কিন্তু যখন দেখলেন, তাঁরই সন্তান অন্য বাবার বুক খালি করল, সেটা তাঁর পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি। নিজের কাছে নিজেকে এভাবে ছোট হতে দেখে তিনি হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এ দায় কার?
দেশে দুর্নীতি, শিশু নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণসহ যে অপরাধ চলছে, তা সহ্যের বাইরে। আগের সরকারের সময়ও এ অবস্থাই ছিল। বর্তমান সরকারের অনেক অঙ্গীকার ছিল, এখনো করছে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ কোথায়? কিছু ভালো পদক্ষেপ কোনো কোনো মন্ত্রী নিচ্ছেন বা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন: শিক্ষামন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই, গোড়ায় গলদ থাকলে এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকলে কিছুই করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, পুলিশের জবাবদিহি বলতে কিছুই নেই। কিন্তু সার্বিক সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রধান দায়িত্ব যাঁদের ওপর অর্পিত, তাঁদের সম্বন্ধে মানুষের অনেক দিনের আতঙ্ক ও বিদ্বেষ গড়ে উঠেছে, যার প্রমাণ অহরহ দেখা যাচ্ছে। যেমন: কুষ্টিয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে কথিত ‘আসামি’ আটকের নামে আসামিকে না পেয়ে তার মা ও কলেজপড়ুয়া বোনকে পুলিশ আটক করে থানায় এনে অমানুষিক অত্যাচার ও যৌন নিপীড়ন চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু পরাগের অপহূত হওয়া ও মুক্তিপণ প্রদানসংক্রান্ত বিতর্কিত অধ্যায় পেরিয়ে তার উদ্ধার হওয়া—সেখানেও দেখা গেল পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যা বের ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি, যা জনগণকে বিভ্রান্ত ও হতাশ করেছে। ঘটনার পর পুলিশকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করলেই কি সব ঠিক হয়ে যায়? আমাদের দেশের আইন অনেকটাই পুলিশনির্ভর, তাই পুলিশের পক্ষে সব সময় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করা সম্ভব হয় না প্রশাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য। আমরা এমন লোকের খুব অভাব দেখি, যাঁরা ক্ষমতায় থেকেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি একনিষ্ঠ ও সজাগ। আসলে আড়ালে কলকাঠিটি নাড়েন ক্ষমতাবানেরা ও তাঁদের দলের লোক। অনেক সময় পুলিশ তাঁদের হাতের পুতুল মাত্র। পুলিশের এক দল সৎ কর্মী চাইলেও সব সময় সৎ থাকতে পারেন না। ক্ষমতার পালাবদল হলেও যেন এর পরিবর্তন হয় না। শুধু দু-একজনকে শাস্তি দিয়ে এর সমাধান হবে না। প্রয়োজন সার্বিক সংশোধনের, যার শুরু হওয়ার কথা তাঁদের থেকেই, যাঁরা উঁচুতলার মানুষ এবং যাঁরা সাধারণ মানুষের পিঠে পা দিয়ে ক্ষমতার সিংহাসনে বসেন, কিন্তু তাঁদের সময় কোথায়? পুলিশকে তো তাঁরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। অতএব, এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে তাঁদেরই। দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের। জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁদের।
আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই দলতন্ত্রের অভিযোগ। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে একে অপরের বিরুদ্ধে বাক্যবাণ বর্ষণ করে যাচ্ছে। একে অপরের ওপর দোষের বোঝা চাপানোর এই রাজনীতি জনগণকে বিচলিত করে ফেলেছে। তাঁরা অসহায় বোধ করছেন। বিরোধী দলও জনগণের কথা না বলে নিজেদের স্বার্থসংক্রান্ত বক্তব্য দিচ্ছে, অহেতুক অতীত নিয়ে কথা বলছে। অন্যদিকে, সরকারি দলের মধ্যে রয়েছে অসহিষ্ণুতা। রাজনীতিতে সব রকম সমালোচনা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সেটাই সঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। একজন নয়, সবার কণ্ঠস্বর শুনতে চায় জনগণ, কিন্তু সেই সংসদীয় গণতন্ত্র কোথায়? ১৮ ডিসেম্বর দিল্লির একটি ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে ভারতের লোকসভায় যেভাবে আলোচনা হলো, সেখানে প্রতিটি দলের সাংসদেরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। স্পিকারও এটা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কথা বলেছেন। এ রকম আমাদের রাজনীতিকদের কাছ থেকেও প্রত্যাশা করি।
আমরা জানি, হত্যা নৃশংস ও জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আইনস্বীকৃত। কিন্তু বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে যাচ্ছে, সে জন্য আমরা সন্দিহানমুক্ত হতে পারছি না। বিশ্বজিতের প্রিয়জনেরা তাকে হারিয়ে আশায় বুক বেঁধে সুবিচার প্রার্থী, আমরাও।
সালমা আলী: মানবাধিকারকর্মী, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
চিকিৎসকদের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। সবার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে এক দরিদ্র রিকশাওয়ালা যখন বিশ্বজিৎকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে নিয়ে আসেন, তখন চিকিৎসকদের তীব্র প্রশ্নবাণে তাঁকে জর্জরিত হতে হয়। চিকিৎসা শুরু করা হয় অনেক দেরিতে। বিশ্বজিৎ ভেসে যাচ্ছিল রক্তস্রোতে, যে রক্তে সে ভবিষ্যতে দেশ গড়বে বলে প্রস্তুত হচ্ছিল। এ কোন দেশে আমরা বাস করছি? পত্রিকায় দেখলাম, দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য অভিযুক্ত পুলিশ ও চিকিৎসকে আইনের আওতায় আনতে বলেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। আমাদেরও সেটাই দাবি।
এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মিডিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি শুনে মনে প্রশ্ন জেগেছে, তিনি কি একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নাকি নিছক একটি দলের কণ্ঠস্বর? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আটজন আসামি ধরা পড়েছে, ডিবির প্রধান একই দিন বলেছেন তিনজন আসামি আটকের কথা। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, মোট ১০ থেকে ১২ জন আসামি ধরা পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবির প্রধানের বক্তব্যের মধ্যে কেন এ বৈপরীত্য? আইন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্রুত বিচারে তাদের মামলাটি চলবে।’ টিভি ফুটেজে বিশ্বজিতের করুণ আকুতি, সাপ মারার মতো কুপিয়ে-পিটিয়ে রক্তাক্ত করা, তারপর যেভাবে তার মৃত্যু হলো, এটা কি সভ্য সমাজের প্রকৃতি হতে পারে? আমরা মেনে নিতে পারছি না। এই দৃশ্য আমাদের মনে যে মর্মন্তুদ বেদনার সৃষ্টি করেছে, তাহলে তার মা-বাবার মনের ভেতর কী চলছে? সন্তান হত্যার এ বীভৎস দৃশ্য তাঁরা কি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলতে পারবেন? আমরা যখন অপরাধীর সমালোচনা করি, বলে ফেলি, পরিবারের দোষেই এমনটি হয়। অথচ আমরা দেখলাম, শাকিল একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বাবার সন্তান, যিনি তাঁর জীবনের সব সঞ্চিত অর্থ সন্তানের কল্যাণে ব্যয় করছিলেন তাকে ‘মানুষ’ করার আশায়। কিন্তু যখন দেখলেন, তাঁরই সন্তান অন্য বাবার বুক খালি করল, সেটা তাঁর পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হয়নি। নিজের কাছে নিজেকে এভাবে ছোট হতে দেখে তিনি হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। এ দায় কার?
দেশে দুর্নীতি, শিশু নির্যাতন, অপহরণ, ধর্ষণসহ যে অপরাধ চলছে, তা সহ্যের বাইরে। আগের সরকারের সময়ও এ অবস্থাই ছিল। বর্তমান সরকারের অনেক অঙ্গীকার ছিল, এখনো করছে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ কোথায়? কিছু ভালো পদক্ষেপ কোনো কোনো মন্ত্রী নিচ্ছেন বা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন: শিক্ষামন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই, গোড়ায় গলদ থাকলে এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকলে কিছুই করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, পুলিশের জবাবদিহি বলতে কিছুই নেই। কিন্তু সার্বিক সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রধান দায়িত্ব যাঁদের ওপর অর্পিত, তাঁদের সম্বন্ধে মানুষের অনেক দিনের আতঙ্ক ও বিদ্বেষ গড়ে উঠেছে, যার প্রমাণ অহরহ দেখা যাচ্ছে। যেমন: কুষ্টিয়ায় গত সেপ্টেম্বর মাসে কথিত ‘আসামি’ আটকের নামে আসামিকে না পেয়ে তার মা ও কলেজপড়ুয়া বোনকে পুলিশ আটক করে থানায় এনে অমানুষিক অত্যাচার ও যৌন নিপীড়ন চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে শিশু পরাগের অপহূত হওয়া ও মুক্তিপণ প্রদানসংক্রান্ত বিতর্কিত অধ্যায় পেরিয়ে তার উদ্ধার হওয়া—সেখানেও দেখা গেল পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যা বের ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি, যা জনগণকে বিভ্রান্ত ও হতাশ করেছে। ঘটনার পর পুলিশকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করলেই কি সব ঠিক হয়ে যায়? আমাদের দেশের আইন অনেকটাই পুলিশনির্ভর, তাই পুলিশের পক্ষে সব সময় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করা সম্ভব হয় না প্রশাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য। আমরা এমন লোকের খুব অভাব দেখি, যাঁরা ক্ষমতায় থেকেও নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি একনিষ্ঠ ও সজাগ। আসলে আড়ালে কলকাঠিটি নাড়েন ক্ষমতাবানেরা ও তাঁদের দলের লোক। অনেক সময় পুলিশ তাঁদের হাতের পুতুল মাত্র। পুলিশের এক দল সৎ কর্মী চাইলেও সব সময় সৎ থাকতে পারেন না। ক্ষমতার পালাবদল হলেও যেন এর পরিবর্তন হয় না। শুধু দু-একজনকে শাস্তি দিয়ে এর সমাধান হবে না। প্রয়োজন সার্বিক সংশোধনের, যার শুরু হওয়ার কথা তাঁদের থেকেই, যাঁরা উঁচুতলার মানুষ এবং যাঁরা সাধারণ মানুষের পিঠে পা দিয়ে ক্ষমতার সিংহাসনে বসেন, কিন্তু তাঁদের সময় কোথায়? পুলিশকে তো তাঁরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। অতএব, এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে তাঁদেরই। দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদের। জনগণের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁদের।
আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই দলতন্ত্রের অভিযোগ। আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে একে অপরের বিরুদ্ধে বাক্যবাণ বর্ষণ করে যাচ্ছে। একে অপরের ওপর দোষের বোঝা চাপানোর এই রাজনীতি জনগণকে বিচলিত করে ফেলেছে। তাঁরা অসহায় বোধ করছেন। বিরোধী দলও জনগণের কথা না বলে নিজেদের স্বার্থসংক্রান্ত বক্তব্য দিচ্ছে, অহেতুক অতীত নিয়ে কথা বলছে। অন্যদিকে, সরকারি দলের মধ্যে রয়েছে অসহিষ্ণুতা। রাজনীতিতে সব রকম সমালোচনা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। সেটাই সঠিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। একজন নয়, সবার কণ্ঠস্বর শুনতে চায় জনগণ, কিন্তু সেই সংসদীয় গণতন্ত্র কোথায়? ১৮ ডিসেম্বর দিল্লির একটি ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে ভারতের লোকসভায় যেভাবে আলোচনা হলো, সেখানে প্রতিটি দলের সাংসদেরা প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। স্পিকারও এটা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন, কথা বলেছেন। এ রকম আমাদের রাজনীতিকদের কাছ থেকেও প্রত্যাশা করি।
আমরা জানি, হত্যা নৃশংস ও জঘন্য অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আইনস্বীকৃত। কিন্তু বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে যাচ্ছে, সে জন্য আমরা সন্দিহানমুক্ত হতে পারছি না। বিশ্বজিতের প্রিয়জনেরা তাকে হারিয়ে আশায় বুক বেঁধে সুবিচার প্রার্থী, আমরাও।
সালমা আলী: মানবাধিকারকর্মী, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
No comments