ভাগ্যাহত রিফাত ও রশ্মি
টানা ১১ দিন ধরে জেলখানায় বন্দি রিফাত-রশ্মির বাবা রিপন খন্দকার। মায়ের কাছে তাই দু’ সন্তানের বায়না- বাবাকে দেখার। স্কুল বন্ধ। তাই সন্তানদের বায়না মেটাতে রত্না স্বামী রিপন খন্দকারকে দেখতে জেলখানায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ছোট ননদের স্বামী আজাদকে দিয়ে কাটিয়ে আনেন জেলখানার টিকিট। সকাল পৌনে সাতটায় খিলগাঁও ৩১৬/১ বাসা থেকে বের হন। বাসার সামনে থেকে একটি রিকশা ভাড়া করেন। জেলখানার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনজন। মা, মেয়ে ও ছেলে। বাবাকে দেখার খুশিতে রিকশায় আগাম আনন্দে মেতেছিল রশ্মি ও রিফাত। কিন্তু ভাইবোনের সেই আনন্দ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
জেলগেটে পৌঁছার আগেই রেলগেট এলাকায় স্বপ্ন শেষ। চলন্ত রেলের সঙ্গে একটি প্রাইভেটকার, সিএনজি এবং রিকশার ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তাদের মা রত্নার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ভাগ্যাহত অবুঝ শিশু দুটি তাদের চোখের সামনে দেখে মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর দৃশ্য। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শুক্রবার সকাল সাতটায় রাজধানীর খিলগাঁও রেলক্রসিং এলাকায়। চলন্ত রেলের সঙ্গে একটি প্রাইভেটকার, সিএনজি, সিএনজি রিকশা ও রিকশার চতুর্মুখী সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় রিকশা আরোহী রত্না খন্দকার ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত হয় তার শিশু কন্যা আতিকা সুলতানা রশ্মি (৭), পুত্র আসকার রিফাত (১৩), রিকশাচালক শহীদুল্লাহ (৩২) এবং আশিক (৩৫) নামের এক পথচারী, প্রাইভেট চালক সহ অজ্ঞাতনামা আরও দুইজন। আহতদের মধ্যে রশ্মি ও রিকশাচালক এর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে জানা গেছে। পুলিশ প্রাইভেটকার, সিএনজি ও রিকশা থানায় জব্দ করেছে। মা হারিয়ে এবং দুই ভাইবোন আহত হয়ে এখন হাসপাতালে নির্বাক রিফাত ও রশ্মি। তাদের স্বজনরা সান্ত্বনা দিলেও মায়ের জন্য কান্না করছিল শিশু রিফাত। পুুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বেশ ঘনকুয়াশা ছিল। রেল লাইনে সহজে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। রেল লাইনের উপর বেশকিছু যানবাহন ছিল। কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসছিল লালমনিরহাটগামী লালমনি পরিবহন। রেলগেটে বাজছিল রেল আসার ঘণ্টা। খিলগাঁও রেলক্রসিং গেটম্যান গেট ব্যারিকেড নামিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। কিছু রিকশা সহ বিভিন্ন যানবাহন রেল ক্রসিং অতিক্রম করার চেষ্টা করে। প্রতিদিনের মতো রেল লাইনের উপর ছিল সৃষ্ট যানজট। রেল লাইনের উপর যানজটে আটকা পড়ে একটি প্রাইভেটকার। লাইনের ধারে অবস্থান করছিল সিএনজি, সিএনজি অটো রিকশা ও রিকশাসহ বেশকিছু যানবাহন। আটকে পড়া যানবাহন কোনদিকে যেতে পারছিল না। রেল আসছে কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। দূর থেকে কেবল রেলের আলো দেখা যাচ্ছিল। এসময় রেল খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে এসে পৌঁছালে চলন্ত রেলের ধাক্কায় প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও রিকশার চতুর্মুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রাইভেটকার দুমড়ে মুচড়ে রিকশা আরোহী রত্না খন্দকারের রিকশাকে সজোরে আঘাত করে। রিকশা আরোহী রত্না প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মারা যায়। রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে তার দুই সন্তান রিফাত ও রশ্মি। ছুটে আসে স্থানীয় জনগণ। প্রাইভেটকারের চালকসহ অজ্ঞাত ৩ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রত্যক্ষদর্শী উদ্ধারকারী রেলগেট এলাকার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, রশ্মির পুরো পিঠের চামড়া উঠে গেছে। বাম হাতে একটি লোহার রড ঢুকে গেছে। শিশু রিফাত কথা বলতে পারছে। কিন্তু মাথা ফেটে যাওয়ায় অনেক রক্ত ঝরছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগের চিকিৎসক ডা. খালেদ আহম্মেদ জানান, রশ্মির মাথায় আড়াই ইঞ্চি পরিমাণ জায়গায় সেলাই করা হয়েছে। সে এখন আশঙ্কামুক্ত।
রশ্মির ফুফা আজাদ রহমান মানবজমিনকে বলেন, নিহত রত্নার স্বামী খন্দকার রিপনকে গত ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে পুলিশ আটক করে। এরপর থেকে রিপন খন্দকার কারাগারে। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার ডিপটিবাড়ি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম জানান, দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করার চেয়ে মোবাইলফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিল অনেক পথচারী। আমার একটি জরুরি কাজ শেষে ১৫ মিনিট পর রেলগেট ফিরে আসি। তখন দেখতে পাই আহত রিকশাচালক কাতরাচ্ছে। কেউ তাকে হাসপাতালে নিচ্ছে না। দুই সহৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতায় সে রিকশাচালক শহীদুল্লাহকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় বসে বাবার জন্য কাঁদছিল রিকশাচালক শহীদুল্লাহর বড় মেয়ে শাহানা (১২)। স্বামীর সুস্থতার জন্য হাসপাতালে গুমরে কাঁদছিল স্ত্রী হাজেরা বেগম। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীর আয়ে চলতো তার সংসার। দুই মেয়ে ও দুই পুত্র নিয়ে কিভাবে চলবে তার সংসার। অসহায় হয়ে পড়েছে রিকশাচালক পরিবার।
ঢামেক-এ উপস্থিত রিপনের ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফ জানান, আজ সকালে স্বামীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করার জন্য ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গোড়ান এলাকার বাসা থেকে কারাগারে যাচ্ছিলেন রত্না। পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হন। রিপন বনানীর একটি রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপক। রিপনের স্বজনদের দাবি, গত ৯ই ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা অবরোধের পরদিন ১০ই ডিসেম্বর রিপনকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করা হয়। পল্টন থানায় তার নামে দেয়া হয় মামলা। এরপর থেকে কারাগারে বন্দি রিপন। তবে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রিপন দোষী। তিনি বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। অবরোধ চলাকালে ফকিরাপুল এলাকায় মির্জা আব্বাসের মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়েছিলো রিপন।’
রশ্মির ফুফা আজাদ রহমান মানবজমিনকে বলেন, নিহত রত্নার স্বামী খন্দকার রিপনকে গত ১০ই ডিসেম্বর বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে পুলিশ আটক করে। এরপর থেকে রিপন খন্দকার কারাগারে। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার ডিপটিবাড়ি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম জানান, দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করার চেয়ে মোবাইলফোনে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিল অনেক পথচারী। আমার একটি জরুরি কাজ শেষে ১৫ মিনিট পর রেলগেট ফিরে আসি। তখন দেখতে পাই আহত রিকশাচালক কাতরাচ্ছে। কেউ তাকে হাসপাতালে নিচ্ছে না। দুই সহৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতায় সে রিকশাচালক শহীদুল্লাহকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় বসে বাবার জন্য কাঁদছিল রিকশাচালক শহীদুল্লাহর বড় মেয়ে শাহানা (১২)। স্বামীর সুস্থতার জন্য হাসপাতালে গুমরে কাঁদছিল স্ত্রী হাজেরা বেগম। সংসারের একমাত্র উপার্জনকারীর আয়ে চলতো তার সংসার। দুই মেয়ে ও দুই পুত্র নিয়ে কিভাবে চলবে তার সংসার। অসহায় হয়ে পড়েছে রিকশাচালক পরিবার।
ঢামেক-এ উপস্থিত রিপনের ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফ জানান, আজ সকালে স্বামীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করার জন্য ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গোড়ান এলাকার বাসা থেকে কারাগারে যাচ্ছিলেন রত্না। পথে এই দুর্ঘটনার শিকার হন। রিপন বনানীর একটি রেস্তরাঁর ব্যবস্থাপক। রিপনের স্বজনদের দাবি, গত ৯ই ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা অবরোধের পরদিন ১০ই ডিসেম্বর রিপনকে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে আটক করা হয়। পল্টন থানায় তার নামে দেয়া হয় মামলা। এরপর থেকে কারাগারে বন্দি রিপন। তবে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ারের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রিপন দোষী। তিনি বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী। অবরোধ চলাকালে ফকিরাপুল এলাকায় মির্জা আব্বাসের মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়েছিলো রিপন।’
No comments