ঢাকা-ব্যাংকক ৩১ দফা যৌথ ঘোষণা-তিন বছরে বাণিজ্য দ্বিগুণ হবে
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে দুই দেশ ৩১ দফা যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছে। এতে বিদ্যমান সুসম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, কানেকটিভিটি, সংস্কৃতি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, কারিগরি, আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুদেশ ২০১৬ সাল নাগাদ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০১১ সালে এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় দুই প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। থাইল্যান্ড তার দেশ থেকে বাংলাদেশের প্রয়োজনে বছরে ১০ লাখ টন পর্যন্ত সেদ্ধ চাল কেনার জন্য বিদ্যমান সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে দুদেশ প্রচেষ্টা চালানোর ব্যাপারেও সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য থাই পক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের যৌথ বাণিজ্য কমিটিকে প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে উভয় প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন ঘোষণার চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে উষ্ণ, আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চার দশক পূর্তির বছরে সিনাওয়াত্রার এ সফরে উভয় দেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এ সফর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পঞ্চম দফায় ২০১১ সালে থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাই সরকারের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে থাই প্রধানমন্ত্রী ওই বন্যায় বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। উভয় দেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি প্রশমন এবং বন্যা প্রতিরোধে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পরস্পর প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য পরিচিত ও জনপ্রিয় করার সুবিধার কথা স্বীকার করেছে। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে একক বাণিজ্য মেলা আয়োজনে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে থাই প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপে থাইল্যান্ডকে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী এর প্রশংসা করে তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাতের প্রশংসনীয় বিকাশের ব্যাপারে এ দেশের সরকার থাই সরকারকে জানিয়েছে। উভয় দেশ এ খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য খাত যেমন- বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বিনিয়োগ এবং থাইল্যান্ডে 'চিকিৎসা পর্যটন' (মেডিক্যাল ট্যুরিজম) বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উভয় প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাপ্য সুবিধাগুলো থাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ প্যাকেজের সুবিধা নিয়ে এ দেশে বিনিয়োগ করতে থাই ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উভয় পক্ষ স্বীকার করেছে, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারের পাশাপাশি ইউটিলিটি বিল কম। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে 'বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে' শিল্প এলাকা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট) প্রতিষ্ঠার জন্য থাই ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ডের মৎস্য খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তকে এ দেশ স্বাগত জানিয়েছে। কর্মী নিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির ওপর উভয় দেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চলমান আলোচনা দ্রুত শেষ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ পরামর্শ দিয়েছে।
বিবৃতির ষোড়শ দফায় বলা হয়, উভয় দেশ পর্যটন খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন খাতের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী সমীক্ষার জন্য থাইল্যান্ড কারিগরি সহায়তা দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাত বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব ও বৌদ্ধ ধর্মের স্মৃতিবিজড়িত এলাকাগুলো নিয়ে পর্যটন বলয় সৃষ্টিতে বিনিয়োগের বিষয়টি থাইল্যান্ড সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে যৌথ বাণিজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানেও সম্মত হয়েছে।
'কানেকটিভিটি' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সড়ক ও জাহাজ যোগাযোগের গুরুত্বের কথা উভয় দেশ স্বীকার করেছে। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য দেশ দুটি যৌথ কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডের রানং বন্দর দুই দেশের বাণিজ্য প্রসারে নতুন পথ হতে পারে।
'সংস্কৃতি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উভয় দেশ সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। 'কারিগরি সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত থাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ৪০টি বৃত্তি দেওয়া হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নিয়ে পড়ার প্রস্তাব দেওয়ায় থাই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।
'নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি এ খাতে সহযোগিতা আরো জোরদার হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও উদ্বেগ প্রশমন উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে বলে দুই দেশ মনে করে। বহুদেশীয় 'কোবরা গোল্ড এক্সারসাইজে' বাংলাদেশে অংশগ্রহণের প্রশংসা করে থাইল্যান্ড ভবিষ্যতে এ দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশ সব ধরনের সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়েছে।
'আঞ্চলিক সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক), আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (এআরএফ), এশিয়া কো-অপারেশন ডায়ালগ (এসিডি), এশিয়া ইউরোপ মিটিং (আসেম), ইস্ট ওয়েস্ট ইকোনমিক করিডোর (ইডাব্লিউইসি) ও মেকং গঙ্গা কমিশনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে।
'বহুপক্ষীয় সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে উভয় দেশ জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলে পরস্পরের প্রার্থিতাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি সতর্কভাবে বিবেচনা করবেন। ২০১৩-২০১৬ সাল মেয়াদে পোস্টাল অপারেশন ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এবং কাউন্সিল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সমর্থনের জন্য দুই প্রধানমন্ত্রী একে অন্যকে ধন্যবাদ জানান।
থাই প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দুটি এমওইউ স্বাক্ষরের কথাও বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাইল্যান্ড সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন। ভবিষ্যতে দুই দেশের কূটনৈতিক চ্যানেলে ওই সফরের তারিখ ঠিক হবে।
পঞ্চম দফায় ২০১১ সালে থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাই সরকারের প্রশংসা করেন। অন্যদিকে থাই প্রধানমন্ত্রী ওই বন্যায় বাংলাদেশের আর্থিক সহযোগিতার প্রশংসা করেন। উভয় দেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকি প্রশমন এবং বন্যা প্রতিরোধে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড পরস্পর প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য পরিচিত ও জনপ্রিয় করার সুবিধার কথা স্বীকার করেছে। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে একক বাণিজ্য মেলা আয়োজনে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে থাই প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপে থাইল্যান্ডকে যোগ দিতে বাংলাদেশ সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী এর প্রশংসা করে তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প খাতের প্রশংসনীয় বিকাশের ব্যাপারে এ দেশের সরকার থাই সরকারকে জানিয়েছে। উভয় দেশ এ খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। স্বাস্থ্য এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য খাত যেমন- বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে বিনিয়োগ এবং থাইল্যান্ডে 'চিকিৎসা পর্যটন' (মেডিক্যাল ট্যুরিজম) বিষয়ে সহযোগিতা জোরদারে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উভয় প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাপ্য সুবিধাগুলো থাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ প্যাকেজের সুবিধা নিয়ে এ দেশে বিনিয়োগ করতে থাই ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উভয় পক্ষ স্বীকার করেছে, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারের পাশাপাশি ইউটিলিটি বিল কম। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে 'বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে' শিল্প এলাকা (ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট) প্রতিষ্ঠার জন্য থাই ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানান।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড কৃষি, মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া থাইল্যান্ডের মৎস্য খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্তকে এ দেশ স্বাগত জানিয়েছে। কর্মী নিয়োগ ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির ওপর উভয় দেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এ বিষয়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চলমান আলোচনা দ্রুত শেষ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ পরামর্শ দিয়েছে।
বিবৃতির ষোড়শ দফায় বলা হয়, উভয় দেশ পর্যটন খাতে সহযোগিতা জোরদারে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন খাতের উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী সমীক্ষার জন্য থাইল্যান্ড কারিগরি সহায়তা দেবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পর্যটন ও আতিথেয়তা খাত বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব ও বৌদ্ধ ধর্মের স্মৃতিবিজড়িত এলাকাগুলো নিয়ে পর্যটন বলয় সৃষ্টিতে বিনিয়োগের বিষয়টি থাইল্যান্ড সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে। উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে যৌথ বাণিজ্য কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানেও সম্মত হয়েছে।
'কানেকটিভিটি' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সড়ক ও জাহাজ যোগাযোগের গুরুত্বের কথা উভয় দেশ স্বীকার করেছে। এ ক্ষেত্রে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য দেশ দুটি যৌথ কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাইল্যান্ডের রানং বন্দর দুই দেশের বাণিজ্য প্রসারে নতুন পথ হতে পারে।
'সংস্কৃতি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উভয় দেশ সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। 'কারিগরি সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত থাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে পড়ালেখার জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ৪০টি বৃত্তি দেওয়া হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাই শিক্ষার্থীদের বৃত্তি নিয়ে পড়ার প্রস্তাব দেওয়ায় থাই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।
'নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা' অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি এ খাতে সহযোগিতা আরো জোরদার হলে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও উদ্বেগ প্রশমন উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে বলে দুই দেশ মনে করে। বহুদেশীয় 'কোবরা গোল্ড এক্সারসাইজে' বাংলাদেশে অংশগ্রহণের প্রশংসা করে থাইল্যান্ড ভবিষ্যতে এ দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরো অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশ সব ধরনের সন্ত্রাসের নিন্দা জানিয়েছে।
'আঞ্চলিক সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনোমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক), আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (এআরএফ), এশিয়া কো-অপারেশন ডায়ালগ (এসিডি), এশিয়া ইউরোপ মিটিং (আসেম), ইস্ট ওয়েস্ট ইকোনমিক করিডোর (ইডাব্লিউইসি) ও মেকং গঙ্গা কমিশনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে।
'বহুপক্ষীয় সহযোগিতা' অনুচ্ছেদে উভয় দেশ জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার কাউন্সিলে পরস্পরের প্রার্থিতাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি সতর্কভাবে বিবেচনা করবেন। ২০১৩-২০১৬ সাল মেয়াদে পোস্টাল অপারেশন ইউনিয়ন (ইউপিইউ) এবং কাউন্সিল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সমর্থনের জন্য দুই প্রধানমন্ত্রী একে অন্যকে ধন্যবাদ জানান।
থাই প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দুটি এমওইউ স্বাক্ষরের কথাও বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে। থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে থাইল্যান্ড সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেছেন। ভবিষ্যতে দুই দেশের কূটনৈতিক চ্যানেলে ওই সফরের তারিখ ঠিক হবে।
No comments