বড় পরিবর্তনের ছোট্ট সূচনা by শেখ রোকন

চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রথম পদক্ষেপটিকে নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং ব্যাখ্যা করেছিলেন মানবতার জন্য জাতির বৃহৎ উল্লম্ফন হিসেবে_ ওয়ান স্মল স্টেপ ফর আ ম্যান, আ জায়ান্ট লিপ ফর ম্যানকাইন্ড। এরপর চার দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ বা উপগ্রহে মানুষের আর পা রাখার সুযোগ হয়নি।
মঙ্গল নিয়ে এত আয়োজন সত্ত্বেও সশরীর ভ্রমণ এখনও দূর অস্ত। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনেও ছোটখাটো কিছু কাজ; ভালোবাসা, শান্তি, আনন্দ, ঐক্য, সংহতি, শুভেচ্ছা, ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা, সহিষ্ণুতা, মৈত্রীর পথে সামান্য পা বাড়ানো মানবতার জন্য এখনও বড় বড় উল্লম্ফন তৈরি করতে পারে। আমাদের দেশেও এমন উদাহরণ বিরল নয়। চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের যে সামান্য সূচনা করেছিলেন; কালের বিবর্তনে তা কেবল বিশ্বব্যাপীই প্রসারিত হয়নি, তাকেও নিয়ে গেছে অসামান্য উচ্চতায়। কারও ছোট্ট একটি উপদেশ বা সহযোগিতা আরেকজনের অন্ধকার জীবনে আলো ফুটিয়েছে_ এমন নজির তো আমাদের চারপাশেই রয়েছে ভূরি ভূরি।
মানবতার এমন ছোট ছোট আলোকবর্তিকা জ্বালানোর ব্যাপারেই নিরলস কাজ করে চলছে লাতিন আমেরিকার একটি স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী। প্রতি বছর ২১ ডিসেম্বর তারা এই লক্ষ্যে 'আস্ক ডে' বা দাবি দিবস পালন করে থাকে। এই দাবি হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। ওই দিন তারা কোনো একটি ভালো কাজ করুক মানবতার জন্য। দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে কোনো মানুষের জন্য একটি মঙ্গল কাজ। তারা বিশ্বাস করে, ওই একটি ছোট্ট কল্যাণ কাজের মধ্য দিয়ে মানবতার জন্য নতুন সকালের সূচনা হতে পারে। দিনের শুরুতে বা শেষে একটি ছোট্ট পরিবর্তন কারও জীবনেরই মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ডিসেম্বরের একুশ তারিখটির ডিজিটগুলো সামান্য পরিবর্তন করে তারা প্রতীকী অর্থে দেখিয়েছে, সামান্য পরিবর্তন কীভাবে বিশ্বব্যাপী ভালোবাসার জন্ম দিতে পারে।
মায়া সভ্যতার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এই ডিসেম্বরে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া না হওয়া নিয়ে যখন গোটা বিশ্ব তোলপাড়, সেই দিনই লাতিন আমেরিকান ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি, বলিভিয়ার মতো কিছু দেশে তখন নতুন পৃথিবী সৃষ্টির অঙ্গীকার নিয়ে নিভৃতে পালিত হয়েছে আস্ক ডে। জাতিসংঘ নয়, রাষ্ট্র নয়, রাজনীতিক নয়, সমাজপতি নয়_ সাধারণ মানুষের কাছেই আবেদন জানানো হয়েছে তারা যেন ব্যক্তিগতভাবে, যার যতটুকু সাধ্য ওই দিন মানবতার জন্য 'কিছু একটা' করেন।
এশিয়ায় এবার প্রথমবারের মতো জাপানে দিবসটি পালিত হয়েছে। অস্বীকার করা যায় না, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের নামে যখন ঢাকঢোল পেটানো কিংবা পরিবেশ রক্ষার নামে যখন ফটোসেশনই লক্ষ্য; তখনও আমাদের দেশে কিছু মানুষ নিভৃতে কাজ করেন। অস্বীকার করা যাবে না, আরও অনেকের ভেতর মানবকল্যাণের মঙ্গলপ্রদীপ জ্বলে। সেটাকে উস্কে দিতে আগামী বছর 'দাবি দিবস' পালিত হলে ক্ষতি কী?
skrokon@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.