গণবিস্ফোরণের আশঙ্কা এমপিদেরঃ কথা কম বলে কিছু একটা করে দেখান
বুধবার ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশের সংসদ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আলোচ্য বিষয় ছিল গ্যাস পানি ও বিদ্যুত্ সমস্যা। বৈঠকে প্রত্যেক এমপিই সঙ্কটের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেছেন।
একজন বলেছেন, এমন সঙ্কট ৫০ বছরেও হয়নি। তেজগাঁওয়ের এমপি জানিয়েছেন, তার নিজের বাসাতেই তিনদিন ধরে পানি নেই। নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাজশাহীর কানসাট এবং ঢাকার শনিরআখড়ায় যখন বিদ্যুতের দাবিতে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিল তখন তারাও অর্থাত্ আওয়ামী লীগের নেতারাও জনগণকে উস্কানি দিয়েছিলেন। সতর্ক করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, অবিলম্বে সঙ্কটের সমাধান না করতে পারলে কানসাট ও শনিরআখড়ার মতো শত শত গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এমপিরা বলেছেন, তারা যেহেতু জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সেহেতু জনগণ তাদেরকেই পাকড়াও করছে। মিরপুরের এমপি এখলাস মোল্লাও মন্দ শোনানি। বলেছেন, সমস্যার আশু সমাধান করতে না পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মতো কোনো কথাতেই চিড়া ভিজবে না।ক্ষমতাসীন দলের হলেও বাস্তবতার প্রতিধ্বনিই করেছেন এমপিরা। অন্যদিকে এমন এক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফই প্রধান শ্রোতা ছিলেন, যাকে ওই এমপিদের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয় না। তার নিজের জেলায় দশ বছরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল পর্যন্ত হয়নি। সুতরাং এত ভয়াবহতার মধ্যেও তিনি নিশ্চিন্তেই থাকতে পারছেন। তাছাড়া মন্ত্রী-মিনিস্টারদের বাসা-বাড়িতে যেহেতু জীবনেও গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সঙ্কট হয় না সেহেতু তাদের পক্ষে জনগণের কষ্টও বুঝতে পারার কথা নয়। সৈয়দ আশরাফের জবাবের মধ্যেও এর প্রমাণ রয়েছে। যেমন পানির প্রশ্নে মন্ত্রী সোজা বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে সরকার নাকি চেষ্টা করছে। সম্ভবত এই চেষ্টার অংশ হিসেবেই সরকার ১ এপ্রিল থেকে রাজধানীর পানির পাম্পগুলোতে সেনা মোতায়েন করেছে। অথচ এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বৈঠকে জ্বালানি বা বিদ্যুত্মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাউকে দেখা যায়নি। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে জনগণকে ধমক দেয়ার উদ্দেশ্যই পরিষ্কার হয়েছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাশার কথাই শুনিয়েছেন। সেদিনই এক অনুষ্ঠানে যথারীতি তিনি জোট সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন। বলেছেন, সাত বছরের জঞ্জাল এক বছরে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। প্রশ্ন উঠেছে, জঞ্জাল যে জমে আছে সে কথা মাথায় রেখেই তো তারা ক্ষমতায় এসেছেন। আসার আগে জনগণকে মুলাও তারা কম দেখাননি। তাহলে এখন কেন কেবলই অতীত সরকারের ওপর দোষ চাপানো? তাছাড়া জঞ্জালে তো তাদেরও ভাগ রয়েছে। কারণ, জোট সরকারের আগে তারাই ক্ষমতায় ছিলেন।
আমরা মনে করি, বৈঠকে কোনো একজন এমপিও সামান্য বাড়িয়ে বলেননি। আসলেও মানুষ শুধু আশ্বাসের কথা শুনতে চায় না। অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টাকেও মানুষ সমর্থন করে না। চৈত্রের প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ঘামতে ঘামতে বাসায় গিয়ে মানুষ যখন দেখে পানি নেই, বিদ্যুত্ নেই এবং গ্যাসের অভাবে রান্নাও করা যায়নি, তখন জোট সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুনে তারা শুধু ক্ষুব্ধ হন না, তাদের মাথাও গরম হয়ে ওঠে। মানুষ ধৈর্য ধরত, যদি দেখত সরকার সত্যিই আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু তেমন কোনো চেষ্টার কথাও জানা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা তো এখনও ১৫ মাস পরও শুধু জোট সরকারকে ধরেই টানাটানি করছেন! ক্ষমতাসীনদের বুঝতে হবে, নিজেরা কিছু একটা করে না দেখাতে পারলে এভাবে পার পাওয়া যাবে না। যে কোনো সময় বরং গণবিস্ফোরণ ঘটবে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে শুরুও করেছে। আর গণবিস্ফোরণ একবার শুরু হলে মানুষ সাধারণত শেষ না দেখে ছাড়ে না। সেই শেষটা ঠিক কেমন, সে কথা নিশ্চয়ই ক্ষমতাসীনদের জানা রয়েছে। সুতরাং সময় থাকতেই তাদের উচিত কিছু একটা করে দেখানো।
No comments