শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, বিচার হোক by সাইদ সিদ্দিকী
দেশের বাতাসে আজ লাশের গন্ধ। ১১১টি তাজা প্রাণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর দেশের গার্মেন্ট শিল্পে এত বড় আঘাত আর আসেনি। নিশ্চিন্তপুরের এই আঘাতের সঙ্গে আরেক আঘাত হানা দিয়েছে চট্টগ্রামে। নগরীর বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
২৭ নভেম্বর সারাদেশে শোক পালিত হয়েছে। এত বড় শোক কি আর এক দিনের আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হয়? যারা আপনজনের পোড়া মাংসপিণ্ড শনাক্ত করতে পেরেছেন তাদের না হয় সান্ত্বনার একটা জায়গা আছে, কিন্তু যাদের এটুকুও জোটেনি তারা কীভাবে নিজেদের সান্ত্বনা দেবেন? স্বজনকে চিহ্নিত করতে দু'দিন সময় দেওয়ার পর কাল ৫৩ বেওয়ারিশ লাশ কবরস্থ করেছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টে আগুন লাগে নিচের দিক থেকে। তাই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর ওপর থেকে কোনো শ্রমিক নিচে নামতে পারেনি। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, আগুন লাগার পর মুুহূর্তেই প্রতিটি ফ্লোরের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল যখন আগুন নেভানোর কাজে আসা ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের গেটের তালা কেটে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। এরপর আবার ওই কারখানার বিপদের সময় বের হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় বহির্গমন সিঁড়ি ছিল না, যা রাখা একটি গার্মেন্ট কারখানার জন্য বাধ্যতামূলক। নিঃসন্দেহে অর্থ বাঁচানোর জন্য মালিকপক্ষ এমনটি করেছে। তাহলে প্রশ্ন, এ ভবনে গার্মেন্ট চালু করার অনুমতি দিল কে? এতবড় একটা অবহেলা সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর চোখে পড়ল না? এভাবেই মালিকদের আর্থিক চিন্তার কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে ওঠে একজন শ্রমিকের জীবন। সে সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি তদারকি সংস্থার লোকজন আর 'কারখানা আইন'ও বিক্রি হয়ে যায় মালিকদের কাছে।
চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনা কেড়ে নিয়েছে আরও ১৪ জনের প্রাণ। ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে গেছে শরীর। কেউ স্বজনের একটি পা ছাড়া আর কিছুই পাননি, আবার কেউ শুধুই মাথাটা পেয়েছেন। এমন মর্মন্তুদ ঘটনার পেছনেও দায় রয়েছে আমাদের রাজনীতির। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে তার এই কাজের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তার ওপর আবার রাজনৈতিক কারণেই তাড়াহুড়ো করে নির্মাণকাজ শেষ করতে চেয়েছিল। তাই এটি স্রেফ কোনো দুর্ঘটনা নয়, রীতিমতো হত্যাকাণ্ড।
সাভারের নিশ্চিন্তপুরের গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি পরিকল্পিত। তিনি একটি ভিডিও ক্লিপের কথা তুলে ধরেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পরদিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ার দেবনায়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে সুমি নামের এক মহিলা। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে সে এ-ও স্বীকার করেছে যে, এ কাজের জন্য সে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। তাই নিশ্চিন্তপুরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহ অমূলক নয়। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী নিজে একটি শক্তিশালী তদন্ত দল গঠন করে এই অগি্নকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করবেন। সে সঙ্গে দেশের পোশাক শিল্পের চলমান অগ্রগতিতে যেন এই ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, সেটিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই বিদেশি ক্রেতাদের বোঝানোর কাজটিও সরকারকেই করতে হবে। আর সত্যিই যদি এটি পরিকল্পিত ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে এর বিচার করে বিদেশিদের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের শ্রমিকরা মৃত্যুর পর স্রেফ সংবাদ আর পরবর্তী সময়ে পরিসংখ্যান হয়ে ওঠে। এই নিয়ম ভাঙতে হবে। যদি পরিকল্পিত হয় তাহলে পরিকল্পনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বা গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটে ,তাহলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পর আমরা সাধারণত ক্ষতিপূরণ নিয়ে মেতে উঠি। মালিকপক্ষও তড়িঘড়ি করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়ে নিজেরা সহানুভূতিশীল সাজার চেষ্টা করে। আমরাও হয়তো ভাবি না, ত্রুটিযুক্ত উপায়ে কারখানা চালিয়ে এমন ঘটনা ঘটানোর পর সেটি আর দুর্ঘটনা থাকে না, সেটি হয়ে যায় হত্যাকাণ্ড। তাই আমরা শুধু ক্ষতিপূরণ চাই না, সঙ্গে বিচারও চাই।
য়সাইদ সিদ্দিকী
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
sayd.rahman@yahoo.com
তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টে আগুন লাগে নিচের দিক থেকে। তাই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর ওপর থেকে কোনো শ্রমিক নিচে নামতে পারেনি। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, আগুন লাগার পর মুুহূর্তেই প্রতিটি ফ্লোরের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল যখন আগুন নেভানোর কাজে আসা ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীদের গেটের তালা কেটে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। এরপর আবার ওই কারখানার বিপদের সময় বের হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় বহির্গমন সিঁড়ি ছিল না, যা রাখা একটি গার্মেন্ট কারখানার জন্য বাধ্যতামূলক। নিঃসন্দেহে অর্থ বাঁচানোর জন্য মালিকপক্ষ এমনটি করেছে। তাহলে প্রশ্ন, এ ভবনে গার্মেন্ট চালু করার অনুমতি দিল কে? এতবড় একটা অবহেলা সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর চোখে পড়ল না? এভাবেই মালিকদের আর্থিক চিন্তার কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে ওঠে একজন শ্রমিকের জীবন। সে সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি তদারকি সংস্থার লোকজন আর 'কারখানা আইন'ও বিক্রি হয়ে যায় মালিকদের কাছে।
চট্টগ্রামে বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনা কেড়ে নিয়েছে আরও ১৪ জনের প্রাণ। ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে গেছে শরীর। কেউ স্বজনের একটি পা ছাড়া আর কিছুই পাননি, আবার কেউ শুধুই মাথাটা পেয়েছেন। এমন মর্মন্তুদ ঘটনার পেছনেও দায় রয়েছে আমাদের রাজনীতির। রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হয়েছে তার এই কাজের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। তার ওপর আবার রাজনৈতিক কারণেই তাড়াহুড়ো করে নির্মাণকাজ শেষ করতে চেয়েছিল। তাই এটি স্রেফ কোনো দুর্ঘটনা নয়, রীতিমতো হত্যাকাণ্ড।
সাভারের নিশ্চিন্তপুরের গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি পরিকল্পিত। তিনি একটি ভিডিও ক্লিপের কথা তুলে ধরেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পরদিন অর্থাৎ ২৫ নভেম্বর রাতে আশুলিয়ার দেবনায়ার ফ্যাশনসে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে সুমি নামের এক মহিলা। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে সে এ-ও স্বীকার করেছে যে, এ কাজের জন্য সে ২০ হাজার টাকা নিয়েছে। তাই নিশ্চিন্তপুরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহ অমূলক নয়। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী নিজে একটি শক্তিশালী তদন্ত দল গঠন করে এই অগি্নকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করবেন। সে সঙ্গে দেশের পোশাক শিল্পের চলমান অগ্রগতিতে যেন এই ঘটনা কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে, সেটিও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই বিদেশি ক্রেতাদের বোঝানোর কাজটিও সরকারকেই করতে হবে। আর সত্যিই যদি এটি পরিকল্পিত ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে এর বিচার করে বিদেশিদের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।
আমাদের শ্রমিকরা মৃত্যুর পর স্রেফ সংবাদ আর পরবর্তী সময়ে পরিসংখ্যান হয়ে ওঠে। এই নিয়ম ভাঙতে হবে। যদি পরিকল্পিত হয় তাহলে পরিকল্পনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বা গাফিলতির কারণে এমন ঘটনা ঘটে ,তাহলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পর আমরা সাধারণত ক্ষতিপূরণ নিয়ে মেতে উঠি। মালিকপক্ষও তড়িঘড়ি করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়ে নিজেরা সহানুভূতিশীল সাজার চেষ্টা করে। আমরাও হয়তো ভাবি না, ত্রুটিযুক্ত উপায়ে কারখানা চালিয়ে এমন ঘটনা ঘটানোর পর সেটি আর দুর্ঘটনা থাকে না, সেটি হয়ে যায় হত্যাকাণ্ড। তাই আমরা শুধু ক্ষতিপূরণ চাই না, সঙ্গে বিচারও চাই।
য়সাইদ সিদ্দিকী
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
sayd.rahman@yahoo.com
No comments