এসইসির ক্ষমতা বৃদ্ধি-পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরে আসুক
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধান রেখে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সংশোধন) বিল পাস হয়েছে। একই দিনে পাস হওয়া আরেকটি বিলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (এসইসি) তদন্ত কাজের প্রয়োজনে যে কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথি তলবের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
নতুন ক্ষমতা অনুযায়ী সরকার সেশন জজ কিংবা অতিরিক্ত সেশন জজের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। কোনো ব্যক্তি কিংবা কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করলে কিংবা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার আদেশ অমান্য করলে এতদিন তার প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপের ক্ষমতা ছিল না। নতুন বিলে সে ক্ষমতাও মিলেছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে গোপন তথ্য ফাঁস করাও দণ্ডনীয়। এর ফলে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের লাগাম টানা সম্ভব। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অ্যাক্টের সংশোধন এ প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়ানো এবং অন্যান্য প্রয়োজনে উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতাও অর্পণ করেছে। নতুন এ প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতা ও স্বাধীনতা যথেষ্ট বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। দৈনন্দিন বাজারে শেয়ারমূল্য ওঠানামা তদারকি নয়, বরং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও কর্মকৌশল প্রণয়ন এবং ক্ষুদ্র ও বৃহৎ সব ধরনের বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে তাদের একটি বড় বাধা ছিল দক্ষ জনবলের অভাব। সংশোধিত আইনে প্রাপ্ত ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব কাজে লাগিয়ে কমিশন তা দূর করায় সক্ষম হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তবে আইন থাকলেই হয় না, তার সঠিক প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ স্বার্থ নেই_ বাংলাদেশে এমন দক্ষ কর্মীর অভাব হওয়ার কথা নয়। কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল গঠন কাদের নিয়ে হবে এবং তারা সরকারের ওপর কোনো ধরনের নির্ভরতা ব্যতিরেকেই নিজেদের কাজ করতে পারবেন কি-না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শেয়ারবাজারে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি ঘটে যাওয়ার পরও এর মূল হোতা হিসেবে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটিই যাদের চিহ্নিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারা কেবল আইনি দুর্বলতার কারণে_ সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। বাজারে অনিয়ম ঘটেছে, এটাই চরম সত্য এবং এর হোতা হাতেগোনা কিছু লোক। তাদের কারণে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। সবচেয়ে বড় কথা_ বাজারের ওপর আস্থার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। গত প্রায় দুই বছরে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নানা মহল এর পুনরুদ্ধারে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পরিস্থিতির লক্ষণীয় কোনো উন্নতি ঘটছে না। ১৯৯৬-৯৭ সালের দুষ্টচক্রও রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীদের হতাশা কাটছে না এবং তারা এর দায়দায়িত্ব চাপাচ্ছে সরকারের ওপর। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ক্ষমতা বাড়িয়ে সংসদে অনুমোদিত দুটি বিল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা থাকবে। সবাই চাইছে বাজারের ওপর আস্থা ফিরে আসুক। এখন এর দায় মূলত এসইসিরই।
No comments