দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা-অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত
চারদিকে হাজারো বাধা। তবু বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। নানা রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক হতাশার মধ্যেও এ অগ্রগতি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্ন উঠলে উত্তর মিলবে সাধারণ মানুষের শক্তির ওপর ভর করে চলেছে বাংলাদেশ।
মানুষের কর্মোদ্যোগ ও তীব্র কল্যাণ-আকাঙ্ক্ষাই প্রতিনিয়ত আমাদের পথ দেখিয়ে চলেছে। দেশজুড়ে এমন অসংখ্য মানুষ তৈরি হয়েছেন, যারা আত্মশক্তির ওপর ভর করে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে ছুটে চলেছেন। আত্মকর্মসংস্থান শুধু নয়, অন্যের কর্মসংস্থানের পথও খুলে দিচ্ছেন। অপরের কল্যাণ, শিক্ষা ও আনন্দের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এমনই এক ব্যক্তি নেত্রকোনার হাবিবুর রহমান। তিনি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সীমিত সামর্থ্য নিয়ে পাস করেছেন এইচএসসি। সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য 'পল্লী দৃষ্টিহীন উন্নয়ন সংস্থা' নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এ সংগঠনের লক্ষ্য দৃষ্টিহীন শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়ানো। কাজটি সহজ নয়। কেননা, বঞ্চিত সাধারণ শিশুদের শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের উপকরণ সহজলভ্য নয়। সীমিত সামর্থ্য নিয়েও দরিদ্র সাধারণ শিশুদের শিক্ষাদানের কাজ শুরু করা যায়। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য দরকার বিশেষায়িত শিক্ষা ব্যবস্থা। বিশেষ উপকরণ ছাড়া তাদের শিক্ষাদান কঠিন। এ কঠিন কাজের ব্রত নিয়ে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিহীন শিশুকে শিক্ষা দিচ্ছেন হাবিবুর রহমান। এমন কাজে সহায়তা মেলা ভার। তাই একলা পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে সঙ্গী জুটেছে। নিজের পরিবারের সমর্থনের পাশাপাশি কল্যাণকামী কিছু মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন। কিন্তু এটুকু যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন। সরকারের তরফে হাবিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়তা দেওয়া দরকার। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে কোনোভাবে অবজ্ঞার শিকার না হয়, সেজন্য এমন উদ্যোগকে উৎসাহিত করাও দরকার। প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পেঁৗছানো কঠিন। কিন্তু গ্রামে গড়ে ওঠা কোনো উদ্যোগে সমর্থন জানানো এবং সেগুলোকে এগিয়ে নেওয়া ততটা কঠিন নয়। হাবিবুর রহমান সীমিত সামর্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার আলো নিতে আসা শিশুদের স্বস্তিকর পরিবেশ দিতে পারছেন না। তাদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে না। বেশিদিন এমন অবস্থা চললে হয়তো একদিন হতাশাই নেমে আসবে। তেমন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সামাজিক সংগঠন ও সরকারি দফতরগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিবন্ধীদের বোঝা ভাবলে, কোনো কারণে তারা উন্নয়নের স্রোতধারার বাইরে রয়ে গেলে সেটি শুভ ফলদায়ক হবে না। এ জন্য প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। সামর্থ্য অনুসারে তাদের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হওয়া দরকার। প্রতিবন্ধীদের সৃজনশীলতা ও কর্মোদ্যোগকে উৎসাহিত করতে পারলে এসবই আমাদের ভবিষ্যতের সাফল্যের পথে মূল্যবান সম্পদ হয়ে দেখা দেবে।
No comments