বিএমএ নির্বাচন- নির্বাচিতদের কাছে প্রত্যাশা by শফিকুল ইসলাম
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএ দেশের অর্ধলক্ষাধিক চিকিৎসকের জাতীয় সংগঠন। আজ ২৯ নভেম্বর এ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই সারা দেশে নানামুখী তৎপরতা চলছে।
নির্বাচনে ঢাকা মহানগর ছাড়াও প্রতিটি জেলা সদরে ভোট গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এতে মোটামুটি সিংহভাগ ভোটারই তাঁদের ভোট প্রয়োগ করে থাকেন।
এই বিপুলসংখ্যক ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুবই কঠিন। দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যয়বহুল। কোনো ব্যক্তি বা ছোট গোষ্ঠীর পক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষমতার বলয়ে অবস্থানকারী গোষ্ঠী বা দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। সে কারণে বিগত দুই যুগ ধরে মূলত দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ১০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘিরে সূচনালগ্নে বিএমএর কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিএমএ আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা-শিক্ষাকে যুগোপযোগী অবস্থানে উন্নীতকরণে সব সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের অভাব বিএমএকে আন্দোলন-সংগ্রামে যেতে বাধ্য করে। এসবের ধারাবাহিকতায় এরশাদের শাসনামলে ২১ দফার আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরশাদবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি চিকিৎসকদের ২১ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের একপর্যায়ে বিএমএর নেতা শামসুল আলম মিলন শহীদ হন। মিলনের মৃত্যুতে আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ফলে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া নির্বাচিত সরকার ২১ দফা বাস্তবায়নের বদলে নতুন সমস্যা তৈরি করে চিকিৎসক সমাজকে আন্দোলন-সংগ্রামে নামতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে অকার্যকর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বোর্ড চালুর উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি চিকিৎসক সমাজের ভেতর বিভাজন করার লক্ষ্যে দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) গঠন করে। চিকিৎসক সমাজের ভেতর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিজাত বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমএর দীর্ঘদিনের লালিত পেশাগত ঐতিহ্য রক্ষার অবস্থান সংকটের মুখোমুখি হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, চিকিৎসক ফোরাম, ডক্টরস ফর হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইত্যাদি সংগঠন গড়ে ওঠে। বিএমএর স্বাধীন স্বকীয় আন্দোলনের ধারাবাহিকতা আর থাকেনি। আপাতপ্রাপ্তির লক্ষ্যে সমাজের অন্যান্য অংশের মতো চিকিৎসকেরাও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে অবস্থান নেন। এর ধারাবাহিকতায় বিএমএ একপর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পক্ষের সংগঠনে পরিণত হয়।
প্রতিবার বিএমএ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের নেতারা দেশব্যাপী প্রচারণায় বিজ্ঞানমনস্ক স্বাস্থ্যনীতি, মেধার মূল্যায়ন, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিতে সুবিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এ দেশের চিকিৎসক সমাজ নেতাদের এসব কথা শোনেন, আশায় বুক বাঁধেন, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো শিক্ষার জগতে সুপরিকল্পিত দলীয়করণের সর্বময় উপস্থিতি।
এর দরুন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক প্রধান পদে অদক্ষ জুনিয়র শিক্ষকদের বসানো হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের জন্য বিভিন্ন বিকল্প উদ্ভাবন করে দলীয় চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়। শিক্ষক নিয়োগে ‘বিশেষ যোগ্যতা’ নামক অদ্ভুত বিশেষণ যুক্ত করে মেডিকেল অফিসার বা লেকচারার পদ থেকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ-পদোন্নতির সুষুম নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে উপেক্ষা করা হয়।
নব্বই-পরবর্তী সময়ে সূচিত এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি। ফলে ‘আমাদের সময়ের শেষ দিকে তা করা যাবে’, ‘১৮০ ডিগ্রি টার্ন নেওয়া সম্ভব নয়’ ইত্যাদি বাক্যের ঘোর-প্যাঁচে আটকা পড়ে রইলেন হাজারো চিকিৎসক। গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে এই অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিকল্প শক্তি না থাকায় ক্ষমতাবলয়ের মিলিত দুষ্টচক্রের শিকার মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা তথা চিকিৎসা পেশা। ছাত্রজীবনে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেও পেশাগত জীবনে কোনো না কোনো পক্ষের চিকিৎসক বা শিক্ষক হিসেবে চিত্রিত হয়ে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আপন স্বার্থে দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে দলবাজির নিপুণ অভিনয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।
এ রকম দমবদ্ধকর অবস্থানে মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামাই অনিবার্য বাস্তবতা। একই অবস্থা বিরাজমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রেও।
অথচ এসব ক্ষেত্রে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ এশীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে চলছে। এসব দেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় অবদান রাখছে। উদাহরণ হিসেবে গণচীনের কথা উল্লেখ করতে চাই। সে দেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজার। এই অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে ৮২টি বিশেষজ্ঞ সমিতি রয়েছে। এ সংগঠন থেকে নিয়মিত ৭০টি জার্নাল প্রকাশিত হয়। মেডিকেল শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও জনবল বিনিময়ে চীনের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
অথচ আমরা কোথায় পড়ে রয়েছি? দলীয় বৃত্তের ভেতরে থেকে কেবল ঘুরপাক খাচ্ছি। এ দেশের বিশেষজ্ঞ সমিতিগুলো একই ছাতার নিচে নেওয়ার উদ্যোগ নেই। সমিতিগুলোতে রয়েছে দলীয় রাজনীতির অনুশীলন। পর্যায়ক্রমিক বিভাজনের শিকারে পরিণত হওয়ায় গবেষণা-প্রকাশনা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও রয়েছে দলপ্রীতির অনুশীলন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ ২৯ নভেম্বর ২০১২ চিকিৎসকদের প্রিয় সংগঠন বিএমএর নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ দুটি প্যানেল। এসব প্যানেলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাছে এ দেশের চিকিৎসক সমাজের প্রত্যাশা রয়েছে। অভিজ্ঞতায় হতাশার চিত্র থাকলেও অনেক চিকিৎসক ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত নেতৃত্ব আগামীর দিনগুলোতে তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে দায়বদ্ধ থাকবেন, এ প্রত্যাশা রইল।
ডা. শফিকুল ইসলাম: চক্ষু বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিপুলসংখ্যক ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করা খুবই কঠিন। দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া ব্যয়বহুল। কোনো ব্যক্তি বা ছোট গোষ্ঠীর পক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ক্ষমতার বলয়ে অবস্থানকারী গোষ্ঠী বা দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা। সে কারণে বিগত দুই যুগ ধরে মূলত দুটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ১০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঘিরে সূচনালগ্নে বিএমএর কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়। এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বিএমএ আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসা-শিক্ষাকে যুগোপযোগী অবস্থানে উন্নীতকরণে সব সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের অভাব বিএমএকে আন্দোলন-সংগ্রামে যেতে বাধ্য করে। এসবের ধারাবাহিকতায় এরশাদের শাসনামলে ২১ দফার আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরশাদবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি চিকিৎসকদের ২১ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের একপর্যায়ে বিএমএর নেতা শামসুল আলম মিলন শহীদ হন। মিলনের মৃত্যুতে আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ফলে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া নির্বাচিত সরকার ২১ দফা বাস্তবায়নের বদলে নতুন সমস্যা তৈরি করে চিকিৎসক সমাজকে আন্দোলন-সংগ্রামে নামতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে অকার্যকর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বোর্ড চালুর উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি চিকিৎসক সমাজের ভেতর বিভাজন করার লক্ষ্যে দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) গঠন করে। চিকিৎসক সমাজের ভেতর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিজাত বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমএর দীর্ঘদিনের লালিত পেশাগত ঐতিহ্য রক্ষার অবস্থান সংকটের মুখোমুখি হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, চিকিৎসক ফোরাম, ডক্টরস ফর হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইত্যাদি সংগঠন গড়ে ওঠে। বিএমএর স্বাধীন স্বকীয় আন্দোলনের ধারাবাহিকতা আর থাকেনি। আপাতপ্রাপ্তির লক্ষ্যে সমাজের অন্যান্য অংশের মতো চিকিৎসকেরাও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে অবস্থান নেন। এর ধারাবাহিকতায় বিএমএ একপর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পক্ষের সংগঠনে পরিণত হয়।
প্রতিবার বিএমএ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের নেতারা দেশব্যাপী প্রচারণায় বিজ্ঞানমনস্ক স্বাস্থ্যনীতি, মেধার মূল্যায়ন, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিতে সুবিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এ দেশের চিকিৎসক সমাজ নেতাদের এসব কথা শোনেন, আশায় বুক বাঁধেন, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো শিক্ষার জগতে সুপরিকল্পিত দলীয়করণের সর্বময় উপস্থিতি।
এর দরুন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক প্রধান পদে অদক্ষ জুনিয়র শিক্ষকদের বসানো হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদানের জন্য বিভিন্ন বিকল্প উদ্ভাবন করে দলীয় চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়। শিক্ষক নিয়োগে ‘বিশেষ যোগ্যতা’ নামক অদ্ভুত বিশেষণ যুক্ত করে মেডিকেল অফিসার বা লেকচারার পদ থেকে অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ-পদোন্নতির সুষুম নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে উপেক্ষা করা হয়।
নব্বই-পরবর্তী সময়ে সূচিত এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি। ফলে ‘আমাদের সময়ের শেষ দিকে তা করা যাবে’, ‘১৮০ ডিগ্রি টার্ন নেওয়া সম্ভব নয়’ ইত্যাদি বাক্যের ঘোর-প্যাঁচে আটকা পড়ে রইলেন হাজারো চিকিৎসক। গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে এই অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিকল্প শক্তি না থাকায় ক্ষমতাবলয়ের মিলিত দুষ্টচক্রের শিকার মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা তথা চিকিৎসা পেশা। ছাত্রজীবনে রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখলেও পেশাগত জীবনে কোনো না কোনো পক্ষের চিকিৎসক বা শিক্ষক হিসেবে চিত্রিত হয়ে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আপন স্বার্থে দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে দলবাজির নিপুণ অভিনয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন।
এ রকম দমবদ্ধকর অবস্থানে মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নামাই অনিবার্য বাস্তবতা। একই অবস্থা বিরাজমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রেও।
অথচ এসব ক্ষেত্রে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীনসহ এশীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে চলছে। এসব দেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন শিক্ষা, গবেষণা, প্রকাশনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় অবদান রাখছে। উদাহরণ হিসেবে গণচীনের কথা উল্লেখ করতে চাই। সে দেশের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসংখ্যা চার লাখ ৩০ হাজার। এই অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে ৮২টি বিশেষজ্ঞ সমিতি রয়েছে। এ সংগঠন থেকে নিয়মিত ৭০টি জার্নাল প্রকাশিত হয়। মেডিকেল শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও জনবল বিনিময়ে চীনের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
অথচ আমরা কোথায় পড়ে রয়েছি? দলীয় বৃত্তের ভেতরে থেকে কেবল ঘুরপাক খাচ্ছি। এ দেশের বিশেষজ্ঞ সমিতিগুলো একই ছাতার নিচে নেওয়ার উদ্যোগ নেই। সমিতিগুলোতে রয়েছে দলীয় রাজনীতির অনুশীলন। পর্যায়ক্রমিক বিভাজনের শিকারে পরিণত হওয়ায় গবেষণা-প্রকাশনা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও রয়েছে দলপ্রীতির অনুশীলন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ ২৯ নভেম্বর ২০১২ চিকিৎসকদের প্রিয় সংগঠন বিএমএর নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ দুটি প্যানেল। এসব প্যানেলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাছে এ দেশের চিকিৎসক সমাজের প্রত্যাশা রয়েছে। অভিজ্ঞতায় হতাশার চিত্র থাকলেও অনেক চিকিৎসক ভোটকেন্দ্রে যাবেন। ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত নেতৃত্ব আগামীর দিনগুলোতে তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে দায়বদ্ধ থাকবেন, এ প্রত্যাশা রইল।
ডা. শফিকুল ইসলাম: চক্ষু বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments