বিএনপি নেতা মতিন চৌধুরীর ইন্তেকাল
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল মতিন চৌধুরী আর নেই। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে শনিবার সকালে রাজধানীর মনোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি...রাজেউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
আবদুল মতিনের ভাতিজা মনিরুজ্জামান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সকাল সোয়া ১০টায় মতিন চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত দুই মাস ধরে মনোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০০২ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পর সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন মতিন। এরপর থেকে তিনি অসুস্থতার মধ্যে ছিলেন।
মরহুম আবদুল মতিনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বাদ জোহর রাজধানীর সিদ্ধেশরী জামে মসজিদের সামনে। পরে মরহুমের মরদেহ নেয়া হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। প্রথমে কফিন দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। পরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। জানাজা শেষে মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ১১টায় মরহুমের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এরপর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাঞ্চন গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শনিবার সন্ধ্যার পর মরহুমের সিদ্ধেশরীর বাসভবনে যান। এ সময় তিনি আবদুল মতিন চৌধুরীর আত্মীয়-স্বজনদের সান্ত¡না দেন।
আবদুল মতিন চৌধুরী ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জের কাঞ্চন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অকৃতদার। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় ১৯৭৯ সাল থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারে প্রথমে বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মতিন। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। আবদুল মতিন ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বন পালন করেন। এর আগে তিনি দলের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন। এক সময়ে মুসলিম লীগের এই নেতা ১৯৭৮ সালে বিএনপি গঠন হলে এই দলে যোগ দেন।
আবদুল মতিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ মরহুম আবদুল মতিন চৌধুরী সমাজকল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতি করতেন। গণতন্ত্রের প্রতি তিনি ছিলেন দৃঢ়-অঙ্গীকারাবদ্ধ। শত নির্যাতনের মুখেও গণতন্ত্র ও জনগণের হারানো অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে তিনি কোনদিন পিছপা হননি। ৮০‘র দশকে স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সাতদলীয় জোটের পক্ষ্যে লিয়াজোঁ কমিটিতে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা আন্দোলনকে আপোসহীন ধারায় এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। খালেদা জিয়া বলেন, শহীদ জিয়ার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার রাজনীতির ধারাকে বিজয়ী করতে তিনি যে নিরলস পরিশ্রম করেছেন, তা বাংলাদেশের মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেব। বিএনপি চেয়াররপারসন মরহুম আবদুল মতিন চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আবদুল মতিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সামাাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন।
রূপগঞ্জ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, আবদুল মতিন চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ সর্ব সাধারণের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। শনিবার বিকেলে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় কায়েতপাড়া ইউনিয়নে পূর্বগ্রাম স্কুলমাঠে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। আবদুল মতিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ- ১ আসনের (রূপগঞ্জ) সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীক, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড তৈমুর আলম খন্দকার, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন।
No comments