প্রবাস জীবনের কথা by সাইদ শিশির

বাংলাদেশ আমার মা। আমি এই দেশের সন্তান। আমি দেশকে অনেক ভালবাসি। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আমি ব্যথিত। বিশেষ করে যে ব্যাপারগুলো কাছ থেকে দেখেছি। বাংলাদেশী পাসপোর্ট ভিনদেশীরা অবমূল্যায়ন করে যখন তখন প্রচণ্ড রকম ব্যথিত হই।


এমনকি আমার রক্তের ভাইয়েরা যখন হীন মনোদৃষ্টি পোষণ করে। এর অবশ্য কারণও রয়েছে। বাঙালী ভাইদের কর্মকাণ্ড এবং সরকারী মান নিয়ন্ত্রণের অভাবই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আমি এখানে বেশির ভাগ বাঙালী ভাইদের নিয়ে কথা বলছি, যারা জীবিকার তাগিদে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন, সবার কথা নয়। প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশী জনশক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় কাজ করার উদ্দেশ্যে নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে। আমাদের দেশের জনশক্তি ব্যবহার করে পৃথিবীর অনেক দেশ তাদের নিজেদের অবস্থান অন্যদের কাছে সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশী শ্রমিকের ঘামের বিনিময়ে রচিত হচ্ছে অন্যদের উন্নয়নের উপাখ্যান। আমরা তাদের জীবনযাত্রার মানকে বাড়িয়ে দিচ্ছি অনেকগুণ। বছরের পর বছর আত্মীয়স্বজন পরিবারপরিজন ছেড়ে দূর দেশে প্রবাস জীবন কাটাই। আমি ব্যথিত কারণ আমরা যাদের উন্নতির জন্য বা যাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সাদৃশ্যময় করার জন্য আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করেদিলাম, অমানুষিক পরিশ্রম করলাম তারা বাংলাদেশীদের ভিন্ন চোখে দেখে। আমাদের ছোট ছোট ভুল অবশ্য এর প্রধান কারণ। স্বীকার করতে খারাপ লাগলেও এটা সত্যি বেশির ভাগ প্রবাসী বাঙালী কোন কালচার বা ম্যানার জানেন না। পারসোনালিটি নেই বললেই চলে। বাঙালীদের অনেকেই অপরের জন্য হেলপফুল না। নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করে। ময়লা পরিষ্কার থেকে শুরু করে যত প্রকার নিচু শ্রেণীর কাজ আছে সকল ক্ষেত্রেই আমাদের জনগণ নিয়োজিত। এছাড়া চুরি, ছেছড়ামির অপবাদ তো রয়েছেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পার্শ্ববতর্ী দেশের জনগণের রাজনীতির স্বীকার হওয়া। আমাদের নিজেদের মধ্যে কৌশলে ঝামেলা সৃষ্টি করে দেয়। অনভিজ্ঞ বাংলাদেশী জনগণ এ ধরনের ফাঁদে পা দিচ্ছে প্রতিনিয়তই। একে অপরের দোষারোপ করে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনে। আমি মূলত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যারা কাজের উদ্দেশ্যে প্রবাস যাপন করছেন তাদের কথাই বলছি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে সবাই যদি একটু সচেতন হই তাহলে এ বদনাম মুছে ফেলা সম্ভব। যেমন যে ব্যক্তি যে দেশে যাবে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিটি ব্যক্তির ট্রেনিং নিশ্চিত করুন। প্রতিটি ব্যক্তিই যেন উপলব্ধি করে তার ওপর বাংলাদেশের মানসম্মান নির্ভর করছে। এম্বাসীগুলোতে সাহায্য সেলের কার্যক্রম আরও বেগবান করা প্রয়োজন, সাহায্যকারী জনশক্তি বৃদ্ধি করা দরকার। নিশ্চিত করুন একজন ব্যক্তিও যেন সাহায্যের আওতামুক্ত না থাকে। প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশী সোসাইটি গড়ে তোলা দরকার। নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করা উচিত। পাশর্্ববতর্ী দেশের কূটচালের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখুন। ভাল পরামর্শ দিন। কেউ যেন নিজেকে একা এবং অসহায় বোধ না করেন। নিজেদের মধ্যে ব্যবধান না বাড়িয়ে অপরকে সাহায্য করুন। মাসে একবার হলেও সকলকে সুস্থ বিনোদনের আওতায় আনুন। যারা প্রবাস জীবনে নতুন প্রবেশ করছেন তাদের প্রতি পুরনোদের সাহায্যে হাত প্রসারিত করুন। কারণ আমরা একই পরিবারের ভাই।
কুয়ালারামপুর, মালয়েশিয়া।

No comments

Powered by Blogger.