চারদিক- বন্ধুত্ব—ভালোবাসায় by শারমিন নাহার
সবে সন্ধ্যা নেমেছে, নিয়ন আলোয় ছেয়ে গেছে চারপাশ। এ আলোতেই গা ভাসিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে চলছেন তরুণেরা। কণ্ঠে গান, ‘তুমি আমার পাশে বন্ধু হে, একটু বসিয়া থাকো’। তরুণদের দলটি কার্জন হল হয়ে পৌঁছেছে টিএসসিতে। রমজান মাস, তাই ইফতারের পরই এখানে আড্ডাটা ভালো জমে।
তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পায়েল, আরিফ, মিতু আর তানিয়া। ওঁরা বন্ধু, বন্ধুত্বের বন্ধনই ওঁদের বেঁধে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, দুপুরের খাওয়া, আড্ডা—সবই একসঙ্গে চলে ওঁদের। ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে, সবাই বাড়ি ফিরবেন। বন্ধু দিবসের আগে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।
আজ আগস্টের প্রথম রোববার, বিশ্ব বন্ধু দিবস। বন্ধুকে নিয়ে দার্শনিক-সাহিত্যিকদের আছে নানা কথা। এবারের বন্ধু দিবসের লেখাটা দার্শনিক-সাহিত্যিকদের নানা কথা নিয়ে। প্রশ্ন ছিল তরুণদের কাছে, তাঁরা দার্শনিকদের কথার সঙ্গে আসলে কতটা একমত। লর্ড বায়রন বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।’ বায়রনের এ কথার সঙ্গে কখনো একমত, আবার কখনো একমত পোষণ করতে পারেন না সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফাতেমা মিতু। মিতু বলেন, ‘এক বছর আগেও আমার কাছে মনে হতো বন্ধুত্ব মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তবে এখন তেমনটা মনে হয় না। প্রতিটা বিষয়ের সঙ্গেই আসলে স্বার্থ জড়িত।’ অন্য বন্ধুরা ততক্ষণে চুপ মেরে গেছেন। একটু দম নেন মিতু। আবার বলেন, ‘এই যে আমি সবার সঙ্গে গল্প করছি। আমার কিন্তু ব্যক্তিগত লাভ হচ্ছে। এটা কি স্বার্থ নয়?’ মিতুকে থামিয়ে দিয়ে রাহাত পায়েল বলেন, ‘আমি এই মতের সঙ্গে একমত নই। আমার কাছে বন্ধুত্ব এক প্রগাঢ় বন্ধন। এখানে স্বার্থের কোনো বিষয় জড়িত নয়।’
ওসকার ওয়াইল্ড বলেন, ‘বন্ধুর দুর্দিনে যেকোনো মানুষই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারে, কিন্তু তার সফলতায়ও উৎসাহ দেওয়া জরুরি।’ এ কথার সঙ্গে কতটা একমত এই তরুণেরা? তানিয়া রহমান বলেন, ‘বন্ধুর দুর্দিনে তার পাশে থাকাটাই বড় কথা। সফলতায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেকেই থাকে তার কাছে। তার খারাপ সময়ে যদি পাশে থাকি, তবে ভালো সময়ে না থাকলেও চলে।’ একটু হেসে তিনি আবার বলেন, ‘ধরা যাক থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কথা। বন্ধুর সফলতায় কিন্তু অন্যরা কিছুটা হলেও আশাহত হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, তার পরও বন্ধুত্বের বন্ধন সব সময়ই অতল গভীর।’
অ্যারিস্টটলের কথাটা তো মনের মধ্যে দাগ কেটেই থাকে। ‘দুর্ভাগ্য তাদেরই তাড়া করে, যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই।’ এ কথার সঙ্গে অধিকাংশই একমত পোষণ করেছেন।
জর্জ হার্বার্ট বলেন, একজন বন্ধু সর্বোৎকৃষ্ট আয়না। যে আয়নায় কেবল নিজের বাইরের অবয়বটাই নয়, দেখা যায় ভেতরটাকে। কারণ একজন প্রকৃত বন্ধুর কাছেই তো মানুষ নিজেকে মেলে ধরে।
‘বন্ধুরাই আমার কাছে সবকিছু’—এ কথার সঙ্গে কি একমত ওরা? বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত তাশমিন রহমান বললেন, ‘একটা সময় মনে হতো বন্ধুরাই আমার সবকিছু জুড়ে আছে। এ তো গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলের কথা। তবে এখন সময় বদলেছে। এখন মনে হয় বন্ধুরা আমার অনেকটা, তবে সবটা নয়।’
তবে নানা আয়োজন আর তত্ত্বকথা নিয়ে যে বন্ধু দিবস, তার শুরুটা কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ঘটনা নয়। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সহিংসতা, সংঘর্ষের বিষয় যখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই সম্প্রীতির কথা ভেবে দিনটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন জয়েস হল, যিনি হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রথম ১৯১৯ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববার দিনটি পালন করেন। এরপর ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস আগস্ট মাসের প্রথম রোববার জাতীয় বন্ধু দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। আর এমন দিন জনপ্রিয় না হয়ে কি পারে? সারা বিশ্বের মানুষ আজ সাড়ম্বরে দিনটি পালন করে আসছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও। ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বেঁধে আর উপহার দিয়ে দিনটি উদ্যাপনে মেতে ওঠেন বন্ধুরা।
শরৎ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যেও বন্ধুত্ব নিয়ে আছে নানা উদাহরণ। যেখানে এক বন্ধু অন্য বন্ধুর জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হন না। সব ক্ষেত্রেই বন্ধুত্ব এক অকৃত্রিম সম্পর্কের নাম। আর তাই এই দিনে বন্ধুর জন্য রইল হূদয়ের গহিনের ভালোবাসা।
শারমিন নাহার
আজ আগস্টের প্রথম রোববার, বিশ্ব বন্ধু দিবস। বন্ধুকে নিয়ে দার্শনিক-সাহিত্যিকদের আছে নানা কথা। এবারের বন্ধু দিবসের লেখাটা দার্শনিক-সাহিত্যিকদের নানা কথা নিয়ে। প্রশ্ন ছিল তরুণদের কাছে, তাঁরা দার্শনিকদের কথার সঙ্গে আসলে কতটা একমত। লর্ড বায়রন বলেছেন, ‘বন্ধুত্ব হলো নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।’ বায়রনের এ কথার সঙ্গে কখনো একমত, আবার কখনো একমত পোষণ করতে পারেন না সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফাতেমা মিতু। মিতু বলেন, ‘এক বছর আগেও আমার কাছে মনে হতো বন্ধুত্ব মানে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তবে এখন তেমনটা মনে হয় না। প্রতিটা বিষয়ের সঙ্গেই আসলে স্বার্থ জড়িত।’ অন্য বন্ধুরা ততক্ষণে চুপ মেরে গেছেন। একটু দম নেন মিতু। আবার বলেন, ‘এই যে আমি সবার সঙ্গে গল্প করছি। আমার কিন্তু ব্যক্তিগত লাভ হচ্ছে। এটা কি স্বার্থ নয়?’ মিতুকে থামিয়ে দিয়ে রাহাত পায়েল বলেন, ‘আমি এই মতের সঙ্গে একমত নই। আমার কাছে বন্ধুত্ব এক প্রগাঢ় বন্ধন। এখানে স্বার্থের কোনো বিষয় জড়িত নয়।’
ওসকার ওয়াইল্ড বলেন, ‘বন্ধুর দুর্দিনে যেকোনো মানুষই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারে, কিন্তু তার সফলতায়ও উৎসাহ দেওয়া জরুরি।’ এ কথার সঙ্গে কতটা একমত এই তরুণেরা? তানিয়া রহমান বলেন, ‘বন্ধুর দুর্দিনে তার পাশে থাকাটাই বড় কথা। সফলতায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য অনেকেই থাকে তার কাছে। তার খারাপ সময়ে যদি পাশে থাকি, তবে ভালো সময়ে না থাকলেও চলে।’ একটু হেসে তিনি আবার বলেন, ‘ধরা যাক থ্রি ইডিয়টস সিনেমার কথা। বন্ধুর সফলতায় কিন্তু অন্যরা কিছুটা হলেও আশাহত হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, তার পরও বন্ধুত্বের বন্ধন সব সময়ই অতল গভীর।’
অ্যারিস্টটলের কথাটা তো মনের মধ্যে দাগ কেটেই থাকে। ‘দুর্ভাগ্য তাদেরই তাড়া করে, যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই।’ এ কথার সঙ্গে অধিকাংশই একমত পোষণ করেছেন।
জর্জ হার্বার্ট বলেন, একজন বন্ধু সর্বোৎকৃষ্ট আয়না। যে আয়নায় কেবল নিজের বাইরের অবয়বটাই নয়, দেখা যায় ভেতরটাকে। কারণ একজন প্রকৃত বন্ধুর কাছেই তো মানুষ নিজেকে মেলে ধরে।
‘বন্ধুরাই আমার কাছে সবকিছু’—এ কথার সঙ্গে কি একমত ওরা? বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত তাশমিন রহমান বললেন, ‘একটা সময় মনে হতো বন্ধুরাই আমার সবকিছু জুড়ে আছে। এ তো গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডলের কথা। তবে এখন সময় বদলেছে। এখন মনে হয় বন্ধুরা আমার অনেকটা, তবে সবটা নয়।’
তবে নানা আয়োজন আর তত্ত্বকথা নিয়ে যে বন্ধু দিবস, তার শুরুটা কিন্তু সাম্প্রতিক কালের ঘটনা নয়। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সহিংসতা, সংঘর্ষের বিষয় যখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনই সম্প্রীতির কথা ভেবে দিনটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি পালনের উদ্যোগ নেন জয়েস হল, যিনি হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি প্রথম ১৯১৯ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববার দিনটি পালন করেন। এরপর ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস আগস্ট মাসের প্রথম রোববার জাতীয় বন্ধু দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। আর এমন দিন জনপ্রিয় না হয়ে কি পারে? সারা বিশ্বের মানুষ আজ সাড়ম্বরে দিনটি পালন করে আসছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশও। ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বেঁধে আর উপহার দিয়ে দিনটি উদ্যাপনে মেতে ওঠেন বন্ধুরা।
শরৎ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যেও বন্ধুত্ব নিয়ে আছে নানা উদাহরণ। যেখানে এক বন্ধু অন্য বন্ধুর জন্য সব ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে পিছপা হন না। সব ক্ষেত্রেই বন্ধুত্ব এক অকৃত্রিম সম্পর্কের নাম। আর তাই এই দিনে বন্ধুর জন্য রইল হূদয়ের গহিনের ভালোবাসা।
শারমিন নাহার
No comments