চার বছরেই খাদ্য ও বিদু্যতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা- জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

বিরোধী দলকে সংসদে ফেরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গতানুগতিক রাজনীতির ধারা থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুস্থ ও ইতিবাচক রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমাদের পথচলা। আসুন আলোকিত এই পথের সন্ধানে ঐক্যবদ্ধ হই।


সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে গড়ে তুলি সোনার বাংলাদেশ। এক বছরের সরকার পরিচালনার সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়নের ভার দেশবাসীর ওপর অর্পণ করে তিনি বলেন, বিপুল ভোট দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি যে আস্থা প্রকাশ করেছিল, এক বছরে আস্থার প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করেছি। কতটা সফল হয়েছি, তার বিচারের ভার জনগণের। দেশের বর্তমান সমস্যা খাদ্য বিদু্যত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর আমলেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। উৎপাদিত হবে প্রয়োজনীয় বিদু্যত।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কোন অপশক্তি যেন আর ৰমতায় আসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আর এ অগণতান্ত্রিক সরকারের ৰমতা গ্রহণের জন্য চারদলীয় জোট সরকারের 'ৰমতা কুৰিগত' করার চেষ্টাকে দায়ী করে তিনি বলেন, দুনর্ীতি দমনের নামে ওই সময় পরিচালিত অভিযানে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। দুনর্ীতির বিরম্নদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা দেশকে দুনর্ীতি থেকে মুক্তি দিতে চাই। দুনর্ীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ২০২১ সালে আমরা একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে দুনর্ীতি, দুঃশাসন, অশিৰার অন্ধকার, দারিদ্র্য থাকবে না। বাংলাদেশ হবে শিৰা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলবে_আমি বাঙালী, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। আসুন আমরা সবাই আলোকিত এ পথের সন্ধানে ঐক্যবদ্ধ হই।
সরকারের এক বছর পূর্তিতে বুধবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে এ আহ্বান জানান। সন্ধ্যা ৭টায় শুরম্ন হওয়া ৩৬ মিনিটের এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের এক বছরে অর্জিত সাফল্য ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। রেডিও ও টেলিভিশন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। উলেস্নখ্য, ২০০৯ সালের এদিনে ভূমিধস মহাবিজয় নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছিল মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা।
স্বল্প সময়ের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্নর ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লৰ্যে ইতোমধ্যে আইন পাস করা হয়েছে। ট্রাইবু্যনালের জন্য প্রাথমিক স্থানও নির্বাচন করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিচারের কার্যক্রম শুরম্ন করা হবে ইনশালস্নাহ্। তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন ও মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। ২০০৯-২০১২ মেয়াদের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশের সদস্য পুনর্নির্বাচিত হওয়া এরই স্বীকৃতি। এক বছরের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে যে বদনাম ছিল বাংলাদেশ তা থেকে মুক্ত হয়েছে।
সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদ দমনে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গীবাদ দমন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধকে সরকার চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে। জাতীয় চার নেতা হত্যাকা-সহ সকল হত্যাকা-, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলাসহ সকল সন্ত্রাসী কর্মকা-ের আইনানুগ বিচার আমরা নিশ্চিত করব। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যাতে কোনরকম জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য সরকার কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ করেছে।
এক বছর পূর্তিতে শেখ হাসিনা দেশের সকল ভোটার, তরম্নণ প্রজন্মের ভোটার ও নারী সমাজের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর এক বছরের ঝঞ্ঝাৰুব্ধ পথচলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং আনত্মর্জাতিকভাবে প্রশংসিত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ভোটারদের ম্যান্ডেট লাভ করে। বিপুল এ বিজয় ছিল আমাদের ওপর দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। এতে জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং অঙ্গীকারও বহুগুণে বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে আমরা চেষ্টা করেছি জনগণের এ আস্থার প্রতিদান দিতে, বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে। কতটুকু সফল হয়েছি তা বিচারের ভার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আনত্মরিকতা ও প্রচেষ্টায় কোন ত্রম্নটি ছিল না, তা জনগণ নিশ্চয় অনুধাবন করবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরম্ন হয়। এর আগে দু'টি বছর দেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার। তিনি বলেন, দুনর্ীতিবিরোধী অভিযানের নামে আতঙ্কের মাধ্যমে দেশকে স্থবির করে দেয়া হয়েছিল। মুখথুবড়ে পড়েছিল অর্থনীতি ও সামগ্রিক উন্নয়ন। তিনি দেশবাসীর সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, এ দুই বছর জনগণের ভোগানত্মির জন্য কারা দায়ী?
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের দুঃশাসন, সীমাহীন দুনর্ীতি, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও স্বজনপ্রীতির কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে বুঝতে পেরেই তারা ভোট কারচুপির মাধ্যমে যেনতেন প্রকারে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করেছিল। এ ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল তদানীনত্মন রাষ্ট্রপতি ও নির্বাচন কমিশনকে। তিনি বলেন, জোর করে ক্ষমতা দখলের এ নীলনকশার বিরম্নদ্ধে জনগণ সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আন্দোলনকারী জনতার ওপর একদিকে পুলিশ, আরেকদিকে সশস্ত্র দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা-নির্যাতন চালায় চারদলীয় জোট। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে দেশে জারি করা হয় জরম্নরী অবস্থা।
এরপর তাঁকে গ্রেফতার, নির্যাতন ও দল ভাঙ্গার চেষ্টার কথা দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরম্নরী অবস্থা জারির পর আমাকে বিদেশ থেকে ফিরতে বাধা দেয়া হয়। সরকারের রক্তচক্ষু ও বাধাকে উপেক্ষা করে আমি দেশে ফিরি। তখন আমাকে গ্রেফতার করা হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস নির্জন কারাগারে অনত্মরীণ করে রাখা হয়। আরও অনেক রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাঙ্গার চেষ্টা চালানো হয়। তিনি দলের তৃণমূল নেতা ও প্রবাসীদের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, সেই দুঃসময়ে তাঁরা দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করেছেন। তাঁদের সাহসী ভূমিকার কারণেই জাতি আজ গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছে।
দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দিনরাত পরিশ্রম করে তারা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জাতিকে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা উপহার দিয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন একটি শানত্মিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন, যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা চাই ভবিষ্যতে প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ যেন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। কোন অপশক্তি যাতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ৰমতা গ্রহণের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসের মাথায় ২৫ ফেব্রম্নয়ারি বিডিআর সদর দফতরে ঘটে যাওয়া নৃশংস হত্যাকা-ে আমরা হারিয়েছি ৫৭ সম্ভাবনাময় সেনা অফিসারকে। এ মর্মানত্মিক ঘটনাকে পুঁজি করে একটি বিশেষ গোষ্ঠী দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের অপচেষ্টাও করেছিল। তারা সফল হয়নি। তবে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। সে সম্পর্কে তিনি দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার দৃঢ়তার সঙ্গেই সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছিল, যা জাতীয় এবং আনত্মর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, এ হত্যার বিচারকাজ দ্রম্নত এগিয়ে চলছে। দায়ী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও চরম খাদ্য ঘাটতির মধ্যেই আমরা ৰমতা গ্রহণ করি। এর মধ্যেও নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য কমানো এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সৰম হয়েছি। বিগত সরকারের সময়ে যে চালের দাম ছিল ৪৫ টাকা, আমরা সেই চালের দাম ১৮/২০ টাকায় কমিয়ে আনতে পেরেছিলাম_ বর্তমানে যা ২২/২৪ টাকা। ১১৫ টাকার সয়াবিন তেল এখন ৮০ টাকা। ৪৫ টাকার আটা এখন মানুষ ১৮/২০ টাকায় কিনতে পারছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত বছরের তুলনায় বর্তমান অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ ২২.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রেমিটেন্স প্রবাহের উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, মন্দা মোকাবেলায় বাজেটে প্রণোদনার জন্য ৫,০৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যাতে ব্যবসাবাণিজ্য ভালভাবে চলতে পারে।
দারিদ্র্যবিমোচনে তাঁর সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিজিএফ, ভিজিডিসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্য বিতরণ করে যাচ্ছি। রমজান মাসে ১ কোটি ২০ লাখ দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ করেছি। এবারের রমজান মাসে কোন জিনিসের দাম বাড়েনি। কৃষকদের জন্য আমাদের সরকার ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ভতর্ুকি বরাদ্দ করেছে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে। এবারের ইরি-বোরো এবং আমন মৌসুমে কৃষকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যত সরবরাহ করা হয়েছে। সার, ডিজেল, বীজসহ কৃষি উপকরণের দাম উলেস্নখযোগ্য হারে কমানোর ফলে বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে দেশে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে। এছাড়া আমন ফসলও কৃষকের ঘরে উঠেছে।
বিদু্যত ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাত বছরে বিদু্যতের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু উৎপাদন বাড়েনি। চারদলীয় জোট বিদু্যত খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। পাঁচ বছরে এক মেগাওয়াট বিদু্যত দিতে পারেনি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় বিদু্যত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩,৮০৮ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে বেড়ে ৪,২৯৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বিদু্যতের চাহিদা প্রায় ৫৫০০ মেগাওয়াট। এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছরে ৭২৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদু্যত কেন্দ্র চালু হয়েছে। এ বছরের মধ্যে আরও ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদু্যত কেন্দ্র চালু হবে।
তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিগত সাত বছরে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত গ্যাস ও তেল মজুদ হালনাগাদ করা হচ্ছে। জাতীয় জ্বালানিনীতি ও কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বাপেঙ্কে শক্তিশালী করা হচ্ছে। সরকার দেশের শিল্পোন্নয়নে শিল্পনীতি প্রণয়ন, বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণ, নারী উদ্যোগ বিকাশ এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনে উৎসাহ ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও এক বছরে বিদেশে সাড়ে ৪ লাখ কমর্ীর কর্মসংস্থান হয়েছে।
এক বছরের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে রেশনের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কর্মচারী, আনসার, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার ও দফাদারদের রেশন প্রদানের বিষয়টিও সরকার বিবেচনা করছে। উত্তরবঙ্গে বছরের পর বছর চলতে থাকা মঙ্গাকে আমরা বিদায় দিয়েছি। কৃষকের উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করেছি। তিনি বলেন, আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর শিৰাকে দারিদ্র্যবিমোচন ও উন্নয়নের প্রধান কৌশল হিসেবে নিয়েছি। সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি, এবতেদায়ী ও দাখিল সত্মরের শিক্ষাথর্ীদের বিনামূল্যে ১৯ কোটি বই বিতরণ করছে। এবারই প্রথম মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হচ্ছে। অতীতে কখনোই এটা দেয়া হয়নি। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে নতুন শিক্ষানীতির খসড়া প্রণয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আমরা বেশকিছু গুরম্নত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরম্ন হয়েছে। ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় আগামী ২০১৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ এ সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করব ইনশালস্নাহ্। রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পরই সরকার নৌপথ ও নদীকে গুরম্নত্ব দিয়ে নদনদীর নাব্য বৃদ্ধি এবং গতিপ্রবাহ অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় আমরা নিজস্ব তহবিল থেকে ৭০০ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ড গঠন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার মুক্ত চিনত্মা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে চায়। তাই মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ সংশোধনের প্রসত্মাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে। তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরম্ন করেছে। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সুশাসন, আর্থিক শৃঙ্খলা, পরিবেশ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত এক বছরে মোট ৬৬টি আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনা সদস্যরা জাতিসংঘ মিশনে অংশ নিয়ে দেশের জন্য বয়ে এনেছে অনন্য সম্মান। সরকার জাতিসংঘ মিশনে আরও বেশি সেনা সদস্য পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সেনা সদস্যদের রেশন বৃদ্ধি, জাতিসংঘ শানত্মি মিশনে কর্মরত সেনা সদস্যদের ছুটি বৃদ্ধি ও ভিওআইপি টেলিফোন সুবিধাসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রেশনের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসী বর্তমান সরকারের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন, তার মর্যাদা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চাই ২০১২ সালের মধ্যে একটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের মধ্যে ডিগ্রী পর্যায় পর্যনত্ম শিক্ষাকে অবৈতনিক, ২০১৫ সালের মধ্যে সকল গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, ২০১৩ সাল নাগাদ ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত উৎপাদন নিশ্চিত এবং ২০১৩ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। যাতে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে। ইনশালস্নাহ্ বর্তমান সরকারের সম্মিলিত পরিশ্রম, আনত্মরিকতা ও দেশবাসীর সমর্থনে আমরা এ কাজে সফলতা অর্জন করতে পারব। তিনি বলেন, আজ থেকে ৩৮ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যাঁরা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিলেন, তাঁদের রক্তঋণ শোধ করতে হবে। সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশের দুঃখী-দরিদ্র মানুষ দু'বেলা খাবার পাবে, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে, চিকিৎসার সুযোগ পাবে। আমরা সব মানুষের জন্য উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.