প্রচণ্ড খরার আশঙ্কায় ভারত

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় ভারতে প্রচণ্ড খরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে এ বছর স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হবে বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা। এর ফলে দেশজুড়ে লাখ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
ভারতের আবহাওয়া দপ্তর গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, এল নিনোর (প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে


অস্বাভাবিক উষ্ণতা) প্রভাবে দেশে গত জুন থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ১৯ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে এর পরিমাণ ৭০ শতাংশের কম। চলতি বর্ষা মৌসুমে অবশিষ্ট রয়েছে কেবল এ মাসই। কিন্তু এই সময়ে আরও কম বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, দেশটিতে এমনিতেই বিদ্যুতের ঘাটতি চলছে। তার ওপর বৃষ্টিপাতের এই স্বল্পতায় বিদ্যুতের চাহিদা বহু গুণ বেড়ে যেতে পারে। এদিকে সেচের জন্য কৃষকেরা পাম্প ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এ অবস্থায় সারা দেশের ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। গত সপ্তাহে তিনটি আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সরবরাহ গ্রিড অচল হয়ে দেশের বৃহৎ অংশে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দেয়। এর শিকার হন ৬০ কোটির বেশি মানুষ।
কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে কয়েকটি রাজ্যে খরাপ্রায় অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব রাজ্যের সরকার কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ কিংবা জেনারেটরের জ্বালানি কিনতে কৃষকদের সহায়তায় বিশাল অঙ্কের ভর্তুকির দাবি জানাচ্ছে।
সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশের কর্মকর্তারা রাজ্যটিতে খরা কড়া নাড়ছে বলে জানিয়েছেন। রাজ্যের কৃষকেরা বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি না এলে তাঁরা এ বছর ধানের উৎপাদন ছাড়তে বাধ্য হবেন।
পূর্বাঞ্চলীয় বিহারের কৃষি দপ্তরের উপপরিচালক অনিল কুমার ঝা বলেন, রাজ্যের ৩৮টি জেলার কমপক্ষে আটটিতে ৭০ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। এখানকার কৃষকেরা যাতে সেচের জন্য জেনারেটর ব্যবহার করতে পারেন, সে লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ১১ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়েছে।
উত্তরের হরিয়ানা ও পাঞ্জাব, পশ্চিমের মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণের কর্ণাটক রাজ্যও রেকর্ড পরিমাণ স্বল্প বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন বলে জানা গেছে। ভারতের ধান, গম, তৈলবিজ ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের এক বড় অংশই উৎপাদিত হয় এই রাজ্যগুলোতে। সরকার এখনো দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো খরা ঘোষণা না করলেও লাখ লাখ কৃষককে ভর্তুকি বাবদ ৩৪ কোটি ডলার নগদ অর্থ ও অন্য ধরনের সহায়তার কথা ঘোষণা করেছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাটের কৃষক ভারাতের কথায়, ‘পরিস্থিতি এতই খারাপ যে সরকার যদি সাহায্য না করে তবে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। কেননা, আমাদের কাছে এ মুহূর্তে নেই কোনো খাওয়ার পানি কিংবা একমুঠো খাবার।’ আলজাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.