এই আগস্টের ব্যতিক্রমী লেখা যে বনে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় by মুহম্মদ শফিকুর রহমান
যে বনে ‘বাঁশের চেয়ে বঞ্চি দড়’ (বড় বা শক্ত) সে বাঁশ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। কঞ্চির ভারে নুয়ে মাটিতে পড়ে যায়। কথাটা অন্যভাবেও বলা যায় ‘ঘরের ইঁদুর যখন ঘরের বাঁধ কাটে সে ঘর টেকে না।’ ভূতলে পতিত হয়। এগুলো বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রচলিত কথা।
আমি আওয়ামী লীগের কথাই বলছি। এবং কথাগুলো এখনি না বললে দেরি হয়ে যাবে। কাজেই বলতে হবে এখনি। দিনে দিনে অনেক বেলা কেটে গেছে। এখনি না বললে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আল্লাহ্ না করুন, এমনও সময় আসতে পারে যখন বলারও সময়ও পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে আজ মহীরুহের মতো দল, জাতি-জনগণ, এই বাংলার মাটি তরুলতা বন-বনানী ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। শত্রুর আক্রমণ থেকে বুকে আগলে রেখেছে। আর তাই তো আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম জনগণনন্দিত রাজনৈতিক দল। এ কোন ভুয়া ড. ভুয়া প্রকৌশলী আমলা বা পদধিকার বলে বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা আজকের পর্যায়ে আসেনি বা ৬৩ বছর পরও দেশের এক নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি বা এখনও সাফল্যের সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনা করছে না, যা কিছু সাফল্য সবই গ্রামে-গঞ্জের অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং তাদের মাথার ওপরে ছিলেন একজন নেতা। তার ত্যাগ-তিতিক্ষা, জুলুম-নির্যাতন, কারাজীবন, জীবনের আরাম-আয়েশ বঞ্চিত একজন মানুষ, যিনি পাকিস্তানের ২৪ বছরের মধ্যে প্রায় ১২ বছর পাকি কারাগারে কাটিয়েছেন।
আমি টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলছি। সেই কোন এক কৈশোরে টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভ। সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি। বেকার হোস্টেলে বাস এবং বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙ্গার বিপ্লবে নেতৃত্ব দান, ১৯৪৭ পর্যন্ত এই জীবনের মাঝে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ইসলামিয়া কলেজ) গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ, এরই মধ্যে দেশ বিভাগ, স্বদেশের টান। শেখ মুজিব চলে এলেন ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণে কারাবরণ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার। মুচলেকা দিলে হয়ত বহিষ্কার এড়াতে পারতেন এমন প্রস্তাবও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিয়েছিল। কিন্তু এর নাম শেখের বেটা, কারও কাছে মাথা নত করা জানতেন না।
এই তো গেল একদিক। আরেক দিক হলো তিনি ওই বয়সেই বুঝেছিলেন ৪৭-এ যে পাকিস্তান হয়েছে তা পাঞ্চাবি মিলিটারিদের জন্যÑবাংলা বা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, এমনকি পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাবের বাইরে সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জন্য নয়। তাঁর এই ভবিষ্যত দৃষ্টি সত্য হয়েছিল যখন পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদা আযম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ বা নাজিমুদ্দীনের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার প্রস্তাব দেয়া হলো। তারা আরও বিকৃত রুচির প্রমাণ দিলেন দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা বা বৃহৎ ভাষাভাষী অঞ্চল ঢাকায় এসে বললেনÑটজউট অঘউ টজউট ঝঐঅখখ ইঊ ঞঐঊ ঝঞঅঞঊ খঅঘএটঅএঊ ওঘ চঅকওঝঞঅঘ (অর্থাৎ উর্দু কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা)। লক্ষণীয় যে টজউট অঘউ টজউট দুইবার ব্যবহার করার অর্থ হলো জোর দিয়ে বলা এবং বাহিরে আর কোন কথা চলবে না।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। জিন্নাহ ছিলেন সিন্ধি বংশীয়। বড় হয়েছেন মুম্বাই। আদি পুরুষ গুজরাটের। তাই তার কাছে বাংলা ভাষা যেমন গুরুত্বহীন, তেমনি সিন্ধিদের সিন্ধি ভাষা, বেলাচিদের বেলুচি ভাষা বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ভাষার প্রতিও কোন টান ছিল না বলেই তৎকালীন পাকিস্তানের ঝঙ-ঈধষষবফ (তথাকথিত) ভদ্রলোকদের শহর দিল্লীর ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু চাইলেই সব হয়? বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোদ্ধারা সেদিন না-না-না বলে প্রতিবাদ করলেন। এর আগেই বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ৪ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করলেন এবং এক বছর পর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ দুই সংগঠন থেকেই মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে সংগঠন দুটিকে সার্বজনীন গণমানুষের সংগঠনে রূপ দেন। যেখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান-আদিবাসী স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে বাধাহীনভাবে। এরই ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলনও জোরদার হয়। বঙ্গবন্ধুকে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। জেলে থেকেই তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন সহকর্মীদের নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে।
এখানে বলা দরকার, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বর্তমান সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের মুখে তাকে ১৫ মার্চ মুক্তি দেয়া হয়। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই সভায় পুলিশি হামলা হয় এবং এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। আবার গ্রেফতার হন ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮। এভাবে আয়ুবের মার্শাল ল জারি, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা দেয়ার পর বার বার গ্রেফতার হন। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কখনও জেল গেট থেকে কখনও বাসায় এসে ওয়াশ-রুম থেকে বেরোবার পথে গ্রেফতার হয়েছেন। যে কারণে শেখ হাসিনা পরবর্তী জেল যাবার জন্য যাবতীয় কাপড়-চোপড় ভরে স্যুটকেস তৈরি রাখতেন। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে জেল খেটেছেন দু’বারÑ একবার তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গ্রেফতার হলে পাকিস্তানী কারাগারে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, বলতেনÑ আমি বাঙালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ। যে কারণে ’৭১-এ পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয় এবং কবরও খোদা হয়। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে হত্যা করবে জানি, এর বাইরে তোমাদের আর কোন পথ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ আমার লাশটি আমার স্বাধীন বাংলার মাটিতে কবর দিও।’
কিন্তু বিশ্ব বিবেক, বিশেষ করে মহাভারতের মহান নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপ এবং বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে পাকি-জল্লাদ ইয়াহিয়া-ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস পায়নি। বরং অন্তরাত্মা কেুঁপে উঠেছিল একদিকে মিসেস গান্ধীসহ বিশ্ব বিবেকের কড়া নজর আর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, এম মনসুর তথা মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের পাশাপাশি শেখ মজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বাধীন বিএলএফ বা কর্নেল এমএজি ওসমানী, এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারের নেতৃত্বে ইখঋ বা মুজিব বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এফএফ তখন গোটা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছে (মুষ্টিমেয় শহর কেন্দ্রীয় গোলাম ছাড়া) এবং গেরিলা এবং সাঁড়াশি আক্রমণে পাকি বাহিনী দিশেহারাÑছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। তারা আত্মসর্ম্পণ করলেন। বঙ্গবন্ধুও পাকিস্তানের কারাগার থেকে তার স্বদেশের মাটিতে ফিরে এলেন বিজয়ী বীরের বেশে। ফিরে এসেই মিত্রশক্তি ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত পাঠিয়ে দেন, যা ছিল এক অভাবনীয় ঘটনা। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের পর সঙ্গে সঙ্গে মিত্রবাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে এমন নজির আর কোথায় আছে জানা নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একদিকে মার্কিন বাহিনী, অপরদিকে রাশিয়ান বাহিনী আজও সেখানে আছে। বাংলাদেশে এটা সম্ভব হয়েছে শেখ মুজিবের মতো মহান বিপ্লবী নেতার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে।
এখানে সংক্ষেপ করতে হচ্ছে, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মাত্র ৩ মাসে চলাচলের উপযোগী করে বিশ্বব্যাপী তেল ও খাদ্যের ক্রাইসিস মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনি মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশী-বিদেশী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সপরিবারে। আল্লাহর রহমতে অলৌকিকভাবে বিদেশে থাকার কারণে দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। তারপর মোশতাক-জিয়া গং হেন চক্রান্ত করেনি আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য।
শেখ হাসিনার আগমন ও নেতৃত্ব
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার হোটেল ইডেনে কাউন্সিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হলেন। সেদিন দেখেছি কর্মীদের মধ্যে কি উত্তেজনা। তারপর তিনি সাড়ে ৬ বছর প্রবাস জীবন থেকে (জিয়া তাঁকে দেশে আসতে দেননি। কিন্তু জনতার জোয়ারে জিয়ার সব চক্রান্ত ভেস্তে যায়) দেশে ফিরলেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। সেদিন প্রচ- বৃষ্টি ছিল। এর মধ্যেও বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত অর্ধ কোটি মানুষ বৃষ্টির জলের সঙ্গে চোখের জল মিশিয়ে প্রিয় নেত্রী প্রিয় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অভ্যর্থনা জানাল। মানিক মিয়া এভিনিউতে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেছিলেনÑ ‘আজ আমি রিক্ত-নিঃস্ব। বাবা-মা, ভাই-ভাবিহারা আপনারাই আমার বাবা-মা। কিন্তু আমি হিংসার বদলে হিংসা চাই না, প্রতিহিংসা চাই না। হ্যাঁ, আমিও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই, তবে তা হবে বাংলার গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমে।’
সেই থেকে ২০১২Ñ৩২ বছর দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এই সময়ে হত্যার জন্য ১৯ বার হামলা হয়েছে কিন্তু আল্লাহ পাকের রহমতে ও মানুষের দোয়ায় তিনি বেঁচে আছেন জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এ অঞ্চলে শেখ হাসিনা এখন সফল সাহসী প্রধানমন্ত্রী। মিলিটারি জিয়া, এরশাদের দোর্দ- প্রতাপশালী আর্মি-পুলিশ মোকাবেলা করে একদিকে যেমন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি আলোচনার মাধ্যমে গঙ্গার পানির হিস্যা আদায় কিংবা পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন। ভারতে অবস্থান নেয়া ৪০ হাজার পার্বত্য উদ্বাস্তুকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করেন। এই ৩২ বছরে দুই দুইবার দলকে ক্ষমতায় আনেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করে চলেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঋণ না দিলে আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই করব। এটা জাতির জনকের কন্যার পক্ষেই সম্ভব। তার সেই আহ্বান আজ সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আজ যারা দ্রব্যমূল্যের কথা বলে তারা পেছনের দিকেও তাকায় না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার দিকেও তাকায় না। মাত্র ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রেখে গিয়েছিল এবং খাম্বা বিক্রি করে পুত্র বিশ্বখ্যাত দুর্নীতিপরায়ণ তারেককে হাজার কোটি টাকা বানানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাব্য সব পথ অবলম্বন করে আজ নতুন ৩২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করে মোট ৬২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ও সঞ্চালন করে বিদ্যুত সংকটের সমাধান করেছেন।
কিন্তু দল ঠিক মতো চলছে না
আমি এখানে একটি কেসস্টাডির সামান্য কিছু অংশ তুলে ধবর এই জন্য যে, আমি ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা দেখেছি। এবার তো আরও খারাপ পরিস্থিতি। কারণ জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম-নিজামী, মুজাহিদী-সাঈদী, সাকা-মীর কাশেম, (মীরজাফর হলে ঠিক হতো), কামারুজ্জামান-মোল্লা-আলীমের দল কাঠগড়ায়। একাত্তরের গণহত্যা, নারী ধর্ষণের বিচার হচ্ছে। তারা নাকি তাদের পক্ষে ১৫ হাজার সাক্ষীর নাম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছেন, এগুলো সব রাজাকার-আলবদর। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার। জামায়াতিরা তাদের অর্থভা-ার দেশে-বিদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনাকেই এর মোকাবেলা করতে হয়েছে। সাথে রয়েছেন কিছু আমলা আর রাজনীতি-অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা। তবু তিনি জাতীয় পর্যায়টা সামলাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায় কি হচ্ছে সেটাই বিষয়।
একটি কেস স্টাডি
২০০৫ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার কাউন্সিল হয়। নির্বাচনে কারচুপি হয়, টাকার ছড়াছড়ি হয় জানি। কিন্তু কাউন্সিলেও যে ভোট কারচুপি হয় তা জানা ছিল না। নির্বাচনের দিন ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিদ্যুত চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর বিদ্যুত এলে দেখা যায় জনপ্রিয় লোকটি (সাবেক এমপির পুত্র) তিন ভোটে হেরে যান। পাস করেন জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য যোগ দেয়া কালু পাটোয়ারী নামে এক লোক। যার নাম নেয়ার সময় মানুষ এমন কিছু শব্দ যোগ করে যা পুলিশের খাতার শব্দ। তবু এলাকার কাউন্সিলরা মেনে নেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় দেখা যায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী-বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের নাম নেই। আছে জাতীয় পার্টির নীতিহীন, চরিত্রহীন কিছু লোকের নাম।
এ ঘটনায় কাউন্সিলরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন এবং তারা ৩৫১ কাউন্সিলরের ৩০১টি দস্তখত করেন এবং সেই সাথে ১৬ ইউনিয়নের ৩২ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ২৫ জন স্বাক্ষর করে মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবরে পাঠান।
(১) এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল দুই পক্ষকে নিয়ে ধানম-ি ৩নং সড়কের নেত্রীর অফিসে বসেন এবং বিস্তারিত আলোচনার পর চলতি কাউন্সিলরদের দিয়ে পুনরায় কাউন্সিল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেন।
(২) তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এক চিঠিতে পূর্বাপর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ০৭/১০/২০০৬ তারিখে জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি দেন যেÑ ‘এ অবস্থায় পুনঃকাউন্সিলের কোন বিকল্প নেই। তাই আগামী ৩০ অক্টোবর ২০০৬ তারিখের মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পুনঃকাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।’
এসব নিউজ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
(৩) তাং ১৮/১১/২০০৬ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে এক চিঠিতে আবদুল জলিল (কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক) ‘বিগত ৭ অক্টোবর ২০০৬ প্রেরিত চিঠিতে আপনাদের জেলাধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে করার যে নির্দেশ দেয়া হয় তা এখনও পর্যন্ত আপনারা কাউন্সিল সম্পন্ন করেননি, যা অনভিপ্রেত। অবিলম্বে কাউন্সির সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
(৪) এরই প্রেক্ষিতে জেলা সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রে চিঠি দেন কাউন্সিল আগামী ৮/১২/০৬ তাং চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হবেÑএই চিঠির কপি কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ সবাইকে দেয়া হয়। চিঠির তাং ৯/১১/২০০৬।
(৫) এরই প্রেক্ষিতে সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জেলাকে চিঠি দেন (৪/১২/২০০৬) যে, ১১ ডিসেম্বর ২০০৬ কাউন্সিল হবে এবং উক্ত কাউন্সিলে
ক) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
খ) সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, ও
গ) আসাদুজ্জামান নূর অতিথি থাকবেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এর একটি নির্দেশও পালিত হয়নি। বরং মনে হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (যিনি নির্বাচিত সভাপতি নন, বরং উপর থেকে তাকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। তারপরও চাঁদপুরবাসী মেনে নেয়। জনাব শামসুর হক ভুঞা, যিনি কখনও লেখেন প্রকৌশলী কখনও ড. কিন্তু তার লেখাপড়ার দৌড় চাঁদপুরবাসী ভাল করেই জানে।
কমিটি তিনি করলেনই না। বরং ভুঞা এক সভাপতির নাম ঘোষণা করে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোথাও দাঁড়াতে পারলেন না। যেমন ফরিদগঞ্জ থানার ১নং ইউনিয়নে কমিটি করার তারিখ দিয়ে ১নং এর প্রাণকেন্দ্র চান্দা বাজারে ঢুকতে পারেননিÑসহস্রাধিক লোক প্রতিবাদের জন্য চান্দ্রা হাইস্কুল মাঠে জড়ো হয়। এ অবস্থায় শামসুল হকের মনোনীত আবুল খায়ের চাঁদপুর হয়ে পশ্চিম দিকের সুপারিবাগানে বসে একটা হাস্যকর কমিটি, মানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে চলে যান। সে যেখানেই এটেম্পট নিয়েছে সবখান থেকেই ফেরত এসেছে।
মাননীয় সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী আমিরে আজম সভাপতি
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সভার মধ্যেই চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে নির্দেশ দেন যে, সাবেক এমপি রাজা মিয়া পাটোয়ারীর পুত্র আমির আজম রেজাকে সভাপতি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। জনাব আহমদ হোসেন কথাটা আমাকে জানালে আমি আমির আজম রেজাকে নিয়ে তার সাথে দেখা করি। কিন্তু কোন ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আহমদ হোসেনের স্থলে বীর বাহাদুর এমপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সাথেও একাধিকবার দেখা করলে তিনি আমির আজম রেজাকে সভাপতি করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তার কাছে জমা দিতে বলেন।
এরই মধ্যে শামসুল হক গং বলতে শুরু করে এটি বানানো গল্পÑনেত্রী এ কথা বলতেই পারেন না। তখন আমি (শফিকুর রহমান) নেত্রীর সাথে দেখা করলে নেত্রী বরং অবাক হন কেন এখনও কমিটি হলো না। সেই সঙ্গে তিনি আজম রেজাকে সভাপতি করে কমিটি করার নির্দেশ দেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত পয়লা রমজান আমরা ফরিদগঞ্জের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ইফতার পার্টি ও জাতির জনক ও তার পরিবারের জন্য দোয়ার আয়োজন করি। আড়াই হাজারের মতো নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। সেখানে আলাদাভাবে আমি স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনকে দাওয়াত করি।
একই সঙ্গে আমি আমির আজমকে সভাপতি করার মাননীয় নেত্রীর নির্দেশ সবাইকে জানিয়ে দিলে সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু শুনতে পেলাম জেলায় নাকি এর কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কিছুই হয়নি। তবে বাজারে একটা কথা প্রচলিত শামসুর হক নাকি বলেছে, ‘শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় সভাপতি, আমি চাঁদপুরের সভাপতি, এখানে যা হবে আমার নির্দেশেই হবে।’ তাই বলছিলামÑ ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়।’
ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০১২
লেখক : ফিল্যান্স সাংবাদিক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে আজ মহীরুহের মতো দল, জাতি-জনগণ, এই বাংলার মাটি তরুলতা বন-বনানী ছায়া দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। শত্রুর আক্রমণ থেকে বুকে আগলে রেখেছে। আর তাই তো আওয়ামী লীগ দেশের বৃহত্তম জনগণনন্দিত রাজনৈতিক দল। এ কোন ভুয়া ড. ভুয়া প্রকৌশলী আমলা বা পদধিকার বলে বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা আজকের পর্যায়ে আসেনি বা ৬৩ বছর পরও দেশের এক নম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি বা এখনও সাফল্যের সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনা করছে না, যা কিছু সাফল্য সবই গ্রামে-গঞ্জের অগণিত নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং তাদের মাথার ওপরে ছিলেন একজন নেতা। তার ত্যাগ-তিতিক্ষা, জুলুম-নির্যাতন, কারাজীবন, জীবনের আরাম-আয়েশ বঞ্চিত একজন মানুষ, যিনি পাকিস্তানের ২৪ বছরের মধ্যে প্রায় ১২ বছর পাকি কারাগারে কাটিয়েছেন।
আমি টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলছি। সেই কোন এক কৈশোরে টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুলে ভর্তি এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্য লাভ। সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি। বেকার হোস্টেলে বাস এবং বেকার হোস্টেলের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে হলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙ্গার বিপ্লবে নেতৃত্ব দান, ১৯৪৭ পর্যন্ত এই জীবনের মাঝে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ইসলামিয়া কলেজ) গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ, এরই মধ্যে দেশ বিভাগ, স্বদেশের টান। শেখ মুজিব চলে এলেন ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অন্দোলনে নেতৃত্ব দানের কারণে কারাবরণ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার। মুচলেকা দিলে হয়ত বহিষ্কার এড়াতে পারতেন এমন প্রস্তাবও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দিয়েছিল। কিন্তু এর নাম শেখের বেটা, কারও কাছে মাথা নত করা জানতেন না।
এই তো গেল একদিক। আরেক দিক হলো তিনি ওই বয়সেই বুঝেছিলেন ৪৭-এ যে পাকিস্তান হয়েছে তা পাঞ্চাবি মিলিটারিদের জন্যÑবাংলা বা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, এমনকি পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাবের বাইরে সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের জন্য নয়। তাঁর এই ভবিষ্যত দৃষ্টি সত্য হয়েছিল যখন পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদা আযম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ বা নাজিমুদ্দীনের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার প্রস্তাব দেয়া হলো। তারা আরও বিকৃত রুচির প্রমাণ দিলেন দেশের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাষা বা বৃহৎ ভাষাভাষী অঞ্চল ঢাকায় এসে বললেনÑটজউট অঘউ টজউট ঝঐঅখখ ইঊ ঞঐঊ ঝঞঅঞঊ খঅঘএটঅএঊ ওঘ চঅকওঝঞঅঘ (অর্থাৎ উর্দু কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা)। লক্ষণীয় যে টজউট অঘউ টজউট দুইবার ব্যবহার করার অর্থ হলো জোর দিয়ে বলা এবং বাহিরে আর কোন কথা চলবে না।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয়। জিন্নাহ ছিলেন সিন্ধি বংশীয়। বড় হয়েছেন মুম্বাই। আদি পুরুষ গুজরাটের। তাই তার কাছে বাংলা ভাষা যেমন গুরুত্বহীন, তেমনি সিন্ধিদের সিন্ধি ভাষা, বেলাচিদের বেলুচি ভাষা বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের ভাষার প্রতিও কোন টান ছিল না বলেই তৎকালীন পাকিস্তানের ঝঙ-ঈধষষবফ (তথাকথিত) ভদ্রলোকদের শহর দিল্লীর ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু চাইলেই সব হয়? বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোদ্ধারা সেদিন না-না-না বলে প্রতিবাদ করলেন। এর আগেই বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ৪ আগস্ট পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করলেন এবং এক বছর পর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ দুই সংগঠন থেকেই মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে সংগঠন দুটিকে সার্বজনীন গণমানুষের সংগঠনে রূপ দেন। যেখানে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান-আদিবাসী স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে বাধাহীনভাবে। এরই ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলনও জোরদার হয়। বঙ্গবন্ধুকে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। জেলে থেকেই তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন সহকর্মীদের নির্দেশনা দেয়ার মাধ্যমে।
এখানে বলা দরকার, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বর্তমান সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন। ছাত্র সমাজের আন্দোলনের মুখে তাকে ১৫ মার্চ মুক্তি দেয়া হয়। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই সভায় পুলিশি হামলা হয় এবং এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। আবার গ্রেফতার হন ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮। এভাবে আয়ুবের মার্শাল ল জারি, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬ দফা দেয়ার পর বার বার গ্রেফতার হন। জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কখনও জেল গেট থেকে কখনও বাসায় এসে ওয়াশ-রুম থেকে বেরোবার পথে গ্রেফতার হয়েছেন। যে কারণে শেখ হাসিনা পরবর্তী জেল যাবার জন্য যাবতীয় কাপড়-চোপড় ভরে স্যুটকেস তৈরি রাখতেন। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে জেল খেটেছেন দু’বারÑ একবার তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গ্রেফতার হলে পাকিস্তানী কারাগারে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, বলতেনÑ আমি বাঙালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ। যে কারণে ’৭১-এ পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র হয় এবং কবরও খোদা হয়। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে হত্যা করবে জানি, এর বাইরে তোমাদের আর কোন পথ নেই। কিন্তু তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ আমার লাশটি আমার স্বাধীন বাংলার মাটিতে কবর দিও।’
কিন্তু বিশ্ব বিবেক, বিশেষ করে মহাভারতের মহান নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর হস্তক্ষেপ এবং বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে পাকি-জল্লাদ ইয়াহিয়া-ভুট্টো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাহস পায়নি। বরং অন্তরাত্মা কেুঁপে উঠেছিল একদিকে মিসেস গান্ধীসহ বিশ্ব বিবেকের কড়া নজর আর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, এম মনসুর তথা মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের পাশাপাশি শেখ মজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের নেতৃত্বাধীন বিএলএফ বা কর্নেল এমএজি ওসমানী, এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারের নেতৃত্বে ইখঋ বা মুজিব বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এফএফ তখন গোটা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছে (মুষ্টিমেয় শহর কেন্দ্রীয় গোলাম ছাড়া) এবং গেরিলা এবং সাঁড়াশি আক্রমণে পাকি বাহিনী দিশেহারাÑছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। তারা আত্মসর্ম্পণ করলেন। বঙ্গবন্ধুও পাকিস্তানের কারাগার থেকে তার স্বদেশের মাটিতে ফিরে এলেন বিজয়ী বীরের বেশে। ফিরে এসেই মিত্রশক্তি ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত পাঠিয়ে দেন, যা ছিল এক অভাবনীয় ঘটনা। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের পর সঙ্গে সঙ্গে মিত্রবাহিনী তাদের দেশে ফিরে গেছে এমন নজির আর কোথায় আছে জানা নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একদিকে মার্কিন বাহিনী, অপরদিকে রাশিয়ান বাহিনী আজও সেখানে আছে। বাংলাদেশে এটা সম্ভব হয়েছে শেখ মুজিবের মতো মহান বিপ্লবী নেতার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে।
এখানে সংক্ষেপ করতে হচ্ছে, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মাত্র ৩ মাসে চলাচলের উপযোগী করে বিশ্বব্যাপী তেল ও খাদ্যের ক্রাইসিস মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনি মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত দেশী-বিদেশী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সপরিবারে। আল্লাহর রহমতে অলৌকিকভাবে বিদেশে থাকার কারণে দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। তারপর মোশতাক-জিয়া গং হেন চক্রান্ত করেনি আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য।
শেখ হাসিনার আগমন ও নেতৃত্ব
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার হোটেল ইডেনে কাউন্সিলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হলেন। সেদিন দেখেছি কর্মীদের মধ্যে কি উত্তেজনা। তারপর তিনি সাড়ে ৬ বছর প্রবাস জীবন থেকে (জিয়া তাঁকে দেশে আসতে দেননি। কিন্তু জনতার জোয়ারে জিয়ার সব চক্রান্ত ভেস্তে যায়) দেশে ফিরলেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। সেদিন প্রচ- বৃষ্টি ছিল। এর মধ্যেও বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত অর্ধ কোটি মানুষ বৃষ্টির জলের সঙ্গে চোখের জল মিশিয়ে প্রিয় নেত্রী প্রিয় বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অভ্যর্থনা জানাল। মানিক মিয়া এভিনিউতে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেছিলেনÑ ‘আজ আমি রিক্ত-নিঃস্ব। বাবা-মা, ভাই-ভাবিহারা আপনারাই আমার বাবা-মা। কিন্তু আমি হিংসার বদলে হিংসা চাই না, প্রতিহিংসা চাই না। হ্যাঁ, আমিও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই, তবে তা হবে বাংলার গরিব-দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমে।’
সেই থেকে ২০১২Ñ৩২ বছর দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এই সময়ে হত্যার জন্য ১৯ বার হামলা হয়েছে কিন্তু আল্লাহ পাকের রহমতে ও মানুষের দোয়ায় তিনি বেঁচে আছেন জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এ অঞ্চলে শেখ হাসিনা এখন সফল সাহসী প্রধানমন্ত্রী। মিলিটারি জিয়া, এরশাদের দোর্দ- প্রতাপশালী আর্মি-পুলিশ মোকাবেলা করে একদিকে যেমন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তেমনি আলোচনার মাধ্যমে গঙ্গার পানির হিস্যা আদায় কিংবা পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য সশস্ত্র বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন। ভারতে অবস্থান নেয়া ৪০ হাজার পার্বত্য উদ্বাস্তুকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। খাদ্য নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করেন। এই ৩২ বছরে দুই দুইবার দলকে ক্ষমতায় আনেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করে চলেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বব্যাংক ঋণ না দিলে আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই করব। এটা জাতির জনকের কন্যার পক্ষেই সম্ভব। তার সেই আহ্বান আজ সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আজ যারা দ্রব্যমূল্যের কথা বলে তারা পেছনের দিকেও তাকায় না। জনগণের ক্রয়ক্ষমতার দিকেও তাকায় না। মাত্র ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রেখে গিয়েছিল এবং খাম্বা বিক্রি করে পুত্র বিশ্বখ্যাত দুর্নীতিপরায়ণ তারেককে হাজার কোটি টাকা বানানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাব্য সব পথ অবলম্বন করে আজ নতুন ৩২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করে মোট ৬২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ও সঞ্চালন করে বিদ্যুত সংকটের সমাধান করেছেন।
কিন্তু দল ঠিক মতো চলছে না
আমি এখানে একটি কেসস্টাডির সামান্য কিছু অংশ তুলে ধবর এই জন্য যে, আমি ২০০১-এর নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা দেখেছি। এবার তো আরও খারাপ পরিস্থিতি। কারণ জামায়াতের শীর্ষ নেতা গোলাম-নিজামী, মুজাহিদী-সাঈদী, সাকা-মীর কাশেম, (মীরজাফর হলে ঠিক হতো), কামারুজ্জামান-মোল্লা-আলীমের দল কাঠগড়ায়। একাত্তরের গণহত্যা, নারী ধর্ষণের বিচার হচ্ছে। তারা নাকি তাদের পক্ষে ১৫ হাজার সাক্ষীর নাম দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছেন, এগুলো সব রাজাকার-আলবদর। এদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার। জামায়াতিরা তাদের অর্থভা-ার দেশে-বিদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনাকেই এর মোকাবেলা করতে হয়েছে। সাথে রয়েছেন কিছু আমলা আর রাজনীতি-অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা। তবু তিনি জাতীয় পর্যায়টা সামলাচ্ছেন। তৃণমূল পর্যায় কি হচ্ছে সেটাই বিষয়।
একটি কেস স্টাডি
২০০৫ সালে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার কাউন্সিল হয়। নির্বাচনে কারচুপি হয়, টাকার ছড়াছড়ি হয় জানি। কিন্তু কাউন্সিলেও যে ভোট কারচুপি হয় তা জানা ছিল না। নির্বাচনের দিন ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিদ্যুত চলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর বিদ্যুত এলে দেখা যায় জনপ্রিয় লোকটি (সাবেক এমপির পুত্র) তিন ভোটে হেরে যান। পাস করেন জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য যোগ দেয়া কালু পাটোয়ারী নামে এক লোক। যার নাম নেয়ার সময় মানুষ এমন কিছু শব্দ যোগ করে যা পুলিশের খাতার শব্দ। তবু এলাকার কাউন্সিলরা মেনে নেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার সময় দেখা যায় দীর্ঘদিনের ত্যাগী-বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের নাম নেই। আছে জাতীয় পার্টির নীতিহীন, চরিত্রহীন কিছু লোকের নাম।
এ ঘটনায় কাউন্সিলরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হন এবং তারা ৩৫১ কাউন্সিলরের ৩০১টি দস্তখত করেন এবং সেই সাথে ১৬ ইউনিয়নের ৩২ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ২৫ জন স্বাক্ষর করে মাননীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবরে পাঠান।
(১) এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল দুই পক্ষকে নিয়ে ধানম-ি ৩নং সড়কের নেত্রীর অফিসে বসেন এবং বিস্তারিত আলোচনার পর চলতি কাউন্সিলরদের দিয়ে পুনরায় কাউন্সিল করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশ দেন।
(২) তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল এক চিঠিতে পূর্বাপর পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ০৭/১০/২০০৬ তারিখে জেলা আওয়ামী লীগকে চিঠি দেন যেÑ ‘এ অবস্থায় পুনঃকাউন্সিলের কোন বিকল্প নেই। তাই আগামী ৩০ অক্টোবর ২০০৬ তারিখের মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পুনঃকাউন্সিল অনুষ্ঠিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।’
এসব নিউজ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
(৩) তাং ১৮/১১/২০০৬ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে এক চিঠিতে আবদুল জলিল (কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক) ‘বিগত ৭ অক্টোবর ২০০৬ প্রেরিত চিঠিতে আপনাদের জেলাধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল ৩০ অক্টোবরের মধ্যে করার যে নির্দেশ দেয়া হয় তা এখনও পর্যন্ত আপনারা কাউন্সিল সম্পন্ন করেননি, যা অনভিপ্রেত। অবিলম্বে কাউন্সির সম্পন্ন করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
(৪) এরই প্রেক্ষিতে জেলা সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রে চিঠি দেন কাউন্সিল আগামী ৮/১২/০৬ তাং চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত হবেÑএই চিঠির কপি কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকসহ সবাইকে দেয়া হয়। চিঠির তাং ৯/১১/২০০৬।
(৫) এরই প্রেক্ষিতে সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জেলাকে চিঠি দেন (৪/১২/২০০৬) যে, ১১ ডিসেম্বর ২০০৬ কাউন্সিল হবে এবং উক্ত কাউন্সিলে
ক) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
খ) সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর, ও
গ) আসাদুজ্জামান নূর অতিথি থাকবেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এর একটি নির্দেশও পালিত হয়নি। বরং মনে হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (যিনি নির্বাচিত সভাপতি নন, বরং উপর থেকে তাকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। তারপরও চাঁদপুরবাসী মেনে নেয়। জনাব শামসুর হক ভুঞা, যিনি কখনও লেখেন প্রকৌশলী কখনও ড. কিন্তু তার লেখাপড়ার দৌড় চাঁদপুরবাসী ভাল করেই জানে।
কমিটি তিনি করলেনই না। বরং ভুঞা এক সভাপতির নাম ঘোষণা করে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোথাও দাঁড়াতে পারলেন না। যেমন ফরিদগঞ্জ থানার ১নং ইউনিয়নে কমিটি করার তারিখ দিয়ে ১নং এর প্রাণকেন্দ্র চান্দা বাজারে ঢুকতে পারেননিÑসহস্রাধিক লোক প্রতিবাদের জন্য চান্দ্রা হাইস্কুল মাঠে জড়ো হয়। এ অবস্থায় শামসুল হকের মনোনীত আবুল খায়ের চাঁদপুর হয়ে পশ্চিম দিকের সুপারিবাগানে বসে একটা হাস্যকর কমিটি, মানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে চলে যান। সে যেখানেই এটেম্পট নিয়েছে সবখান থেকেই ফেরত এসেছে।
মাননীয় সভাপতির ঘোষণা অনুযায়ী আমিরে আজম সভাপতি
সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সভার মধ্যেই চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনকে নির্দেশ দেন যে, সাবেক এমপি রাজা মিয়া পাটোয়ারীর পুত্র আমির আজম রেজাকে সভাপতি করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। জনাব আহমদ হোসেন কথাটা আমাকে জানালে আমি আমির আজম রেজাকে নিয়ে তার সাথে দেখা করি। কিন্তু কোন ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি।
এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আহমদ হোসেনের স্থলে বীর বাহাদুর এমপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তার সাথেও একাধিকবার দেখা করলে তিনি আমির আজম রেজাকে সভাপতি করে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তার কাছে জমা দিতে বলেন।
এরই মধ্যে শামসুল হক গং বলতে শুরু করে এটি বানানো গল্পÑনেত্রী এ কথা বলতেই পারেন না। তখন আমি (শফিকুর রহমান) নেত্রীর সাথে দেখা করলে নেত্রী বরং অবাক হন কেন এখনও কমিটি হলো না। সেই সঙ্গে তিনি আজম রেজাকে সভাপতি করে কমিটি করার নির্দেশ দেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত পয়লা রমজান আমরা ফরিদগঞ্জের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে ইফতার পার্টি ও জাতির জনক ও তার পরিবারের জন্য দোয়ার আয়োজন করি। আড়াই হাজারের মতো নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। সেখানে আলাদাভাবে আমি স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনকে দাওয়াত করি।
একই সঙ্গে আমি আমির আজমকে সভাপতি করার মাননীয় নেত্রীর নির্দেশ সবাইকে জানিয়ে দিলে সেখানে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
কিন্তু শুনতে পেলাম জেলায় নাকি এর কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কিছুই হয়নি। তবে বাজারে একটা কথা প্রচলিত শামসুর হক নাকি বলেছে, ‘শেখ হাসিনা, কেন্দ্রীয় সভাপতি, আমি চাঁদপুরের সভাপতি, এখানে যা হবে আমার নির্দেশেই হবে।’ তাই বলছিলামÑ ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়।’
ঢাকা, ৩ আগস্ট ২০১২
লেখক : ফিল্যান্স সাংবাদিক
No comments