বিএনপির ভবিষ্যত কোন্ দিকে? by স্বদেশ রায়
ষোলো বছর পর কাউন্সিল করে বিএনপি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে মিডিয়াতে। বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেছেন, দলটি এখন রাজপথে ভাল ভূমিকা রাখবে। তালুকদার মনিরুজ্জামানের কথার প্রতিধ্বনি ঘটেছে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়ার কাজের ভিতর দিয়ে।
তিনি কাউন্সিল শেষে প্রথম জনসভায় (বলা হয়েছিল ছাত্রসভা কিন্তু সেখানে পঞ্চাশোর্ধরা বেশি ছিলেন। তাই জনসভা বলাই শ্রেয়) দেয়া ভাষণে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তিনি সরকারের পথে কাঁটা বিছিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তাঁর রাজনীতিও এখন তিনি পরিষ্কার করছেন। তিনি রাজপথে কাঁটা বিছানোর রাজনীতি করবেন। এর থেকে এটা স্পষ্ট হচ্ছে, বিএনপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং বিএনপি নেত্রী এখন তাদের ভবিষ্যত রাজনীতি হিসেবে রাজপথকে বেছে নিয়েছেন। সে রাজপথে বিএনপি শান্তিপূর্ণ পথে কোন কিছু করবে না। রাজপথে কাঁটা বিছানোর অর্থ চরম সহিংসতার পথে যাবেন। রাজপথের এই সহিংসতার চরিত্র কেমন হতে পারে?
বিএনপির সহিংসতার চরিত্র কেমন হবে এটা বিচার করতে হলে তাদের প্রতিপক্ষের চরিত্র দেখতে হবে। বিএনপি রাজপথে সহিংস আন্দোলন করতে যাচ্ছে বর্তমান মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমান মহাজোট সরকার কোন অনির্বাচিত সরকার নয়। স্বৈরসরকারও নয়। শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি জনসমর্থনপুষ্ট একটি সরকার। এর ভিতর প্রধান দল আওয়ামী লীগ প্রায় ৫০ ভাগ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। এবং ষাট বছরের পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। শুধু ষাট বছরের পুরনো দল নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা কোন বিশ্লেষককে বিচার করতে গেলে এটাও বিচার করতে হবে, দলটি ক্ষমতা থেকে নিচে নামেনি। দলটি তৃণমূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এবং এই দলটিকে বিচার করতে হলে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এই দলটি নিজেকে ছাপিয়ে বার বার জাতীয় চরিত্র নেবার ক্ষমতা রাখে। এই জাতীয় চরিত্র নেবার ক্ষমতা থাকার কারণে এই দল সৃষ্টি হবার পরে ২২ বছরের ভিতর এ দেশ থেকে বিদেশী শাসনের অবসান ঘটে। এর সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে, এই দলটি প্রয়োজনে দেশের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে আত্তীকরণ করার ক্ষমতা রাখে। যেমন ভারতীয় কংগ্রেস সৃষ্টি হবার ষাট বছরের ভিতর উপমহাদেশ থেকে ঔপনিবেশিক শাসন পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়। এরও মূল শক্তি কিন্তু ওইখানে। ভারতের কংগ্রেস প্রয়োজনে দেশের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে আত্মীকরণ করতে পারে। শুধু প্রগতিশীল বললে বিষয়টি অর্ধেক বলা হয়। প্রয়োজনে তারা ডানের বা রক্ষণশীলদের ভাল অংশ এবং বাম প্রগতিশীলকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করে বা আত্তীকরণ করে দেশের শত্রু বা দেশের ক্ষতিকারক প্রতিপক্ষর সঙ্গে লড়তে পারে। যেমন ভারতের হিন্দু মৌলবাদী সহিংস শক্তি বিজেপিকে রুখতে বা ধ্বংস করতে সে দেশে রক্ষণশীলের ভাল অংশ বা মধ্যডান অংশ এবং বামের হরকিষণ সিং থেকে জ্যোতি বসুর মতো সর্বোচ্চ প্রগতিশীলদের কংগ্রেস ধারণ করে। তাদের মিলিত শক্তি নিয়ে বিজেপির মূলোৎপাটন তারা যথেষ্ট অংশে করতে পেরেছে। ভারত থেকে ঔপনিবেশিক শাসন তাড়ানোর পরে ভারতের রাষ্ট্রের ও জনগণের জন্যে সব থেকে বিভীষিকা হিসেবে উপস্থিত হয়েছিল হিন্দু মহাসভার সন্তান বিজেপির বিশাল আকারে বেড়ে ওঠা। কংগ্রেস দলীয় চরিত্রের বাইরে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করে ওই বিশাল স্তম্ভ উপড়ে ফেলেছে। বিজেপি এখন ভারতীয় রাজনীতিতে আবার আগাছায় পরিণত হয়েছে। একটু গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঘটনা প্রবাহ এর সঙ্গে মিলে যায়। বাংলাদেশেও পাকিস্তানী শাসক বিতাড়নের পরে দেশের রাজনীতিতে সব থেকে ভয়াবহ সময় আসে ২০০১ থেকে ২০০৬। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে যে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী জঙ্গী শক্তির সংগঠিত হওয়া শুরু হয় তার চূড়ান্ত রূপ ঘটে ২০০১ থেকে ২০০৬-এ। এ সময়ে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বে রাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে একটি জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অর্থাৎ পনেরো আগস্ট যে মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক ছত্রছায়ায় আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায় ২০০১-এ তারা বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। এর মূলোৎপাটন ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার কোন সঠিক পথ ছিল না। তাই দেখা যায় ২০০৬-এর আগেই আওয়ামী লীগ তার দলীয় চরিত্র থেকে বের হয়ে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করে। দেশের ডানের তুলনামূলক ভাল অংশ ও সমগ্র বাম প্রগতিশীল অংশকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ধারণ করে। আওয়ামী লীগের এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ধারণ ওই সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক বন্ধু বা সুহৃদরা বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল এটা মনে হয় আওয়ামী লীগ এক ধরনের আপোস করছে। কিন্তু ২০০৮-এর নির্বাচনের পরে নিশ্চয়ই আর কারও কোন সন্দেহ নেই বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের অবসানের জন্যে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় চরিত্রের বাইরে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করেছিল। এবং তার ফল জাতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ এখন নিমূর্লের পথে। এর থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, জাতীয় প্রয়োজনের একটি প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তাদের পিছনে রয়েছে দেশের সত্তর ভাগের বেশি মানুষের সমর্থন। এ অবস্থায় বিএনপি ষোলো বছর পরে একটি কাউন্সিল করে বলছে তারা রাজপথে নামবে। এবং রাজপথে কাঁটা বিছাবে। তাদের সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলছেন, দলটি এখন রাজপথে ভাল করবে। রাজপথ সব সময়ের জন্যে রাজনৈতিক দলের ঠিকানা। রাজপথে গঠনমূলক সব কাজ করা যায়। বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা সংগ্রাম তাও চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছেছিল রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভিতর দিয়ে। কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি যে দল গড়েছে এই দল কি রাজপথে শান্তিপূর্ণ কোন আন্দোলনের উপযোগী? বিএনপির এবারের কাউন্সিলের নেতা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিএনপি দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। এক. জঙ্গীবাদ বা খুনের অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সবখানে। বিশেষ করে যুব ও ছাত্র সংগঠন সাজিয়েছে এদের দিয়ে। অন্যদিকে বিএনপি সব সময়ে মুখে যে ১/১১-এর গালি পাড়ছে ওই ১/১১-এর সমর্থকদের প্রায় সকলকে দলে স্থান দিয়েছে। বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবার আগেই এ কলামে লিখেছিলাম_ বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন, ১/১১-এর কোন সমর্থককে তারা দলের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে পারবে না। বাস্তবেও তারা সেটা পারেনি। কারণ সত্যিকার রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কোন ক্ষমতা নেই। তাদেরকে টিকে থাকতে হলে এখন দুটি পথ নিতে হবে। এক জঙ্গীবাদের মাধ্যমে তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার পথ পরিষ্কার করতে হবে, না হয় সামরিক গোয়েন্দা শক্তি এর আগে বার বার তাদেরকে যেভাবে ক্ষমতায় বসিয়েছে সে পথে যেতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল গঠন করে বিএনপি এই দুই পথ যাতে খোলা থাকে সেটাই করেছে। তারা তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ নেতা বানিয়ে ছাত্র ও যুব সংগঠন জঙ্গী-সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সাজিয়েছে। অন্যদিকে ১/১১-এ যারা সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর শাসনকে সমর্থন করেছিল তাদেরকে বিএনপির নেতৃত্বে স্থান দিয়েছে। তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ নেতা বানিয়ে জঙ্গী-সংশ্লিষ্টদের ছাত্র ও যুব সংগঠনে বসিয়ে বিএনপি আশা করছে এদের দ্বারা তারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। কারণ তারা জানে একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লোক নামানো সম্ভব হবে না। কোন গণআন্দোলন বা গণঅভু্যত্থান যেমন তাদের রাজনৈতিক আচরণ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়, তেমনি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে এটা অলীক কল্পনা। এটা যে বিএনপি বোঝে না তাও নয়। বিএনপির যে সব থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কথা বলছেন তাঁরাও ভাল মতো বোঝেন। তাই বেগম জিয়ার মুখ দিয়ে বের হয়েছে তারা পথে কাঁটা বিছাবে। অর্থাৎ আবার ২১ আগস্টের হোতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ শক্তি দিয়ে দেশে তারা বোমাবাজি থেকে শুরু করে বিচারক হত্যার আত্মঘাতী পর্যায়ে আবার চলে যাবার চেষ্টা করবে। আর এটাই হবে তাদের রাজপথের আন্দোলন। অর্থাৎ এভাবে তারা বোমা ও হত্যার ভিতর দিয়ে গণতন্ত্রের পথে কাঁটা বিছাতে চায়। চায় ওই কাঁটার খোঁচায় দেশের গণতন্ত্র মারা যাক। আর যেহেতু নিহত গণতন্ত্রের ভিতর দিয়ে বিএনপির জন্ম তাই গণতন্ত্র মারা গেলে বিএনপি লাভবান হবে। এটা বিএনপি নেত্রী থেকে বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সকলে ভাল করে বোঝেন। আর গণতন্ত্র নিহত হলেই শক্তিশালী হয়ে উঠবে ওই বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। এ কারণে ১/১১-এর পরে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থক সকলে বিএনপি নেতৃত্বে স্থান পেয়েছে। কারণ গণতন্ত্র নিহত হলে অন্ধকারে এরা সকলেই অনেক বড় নেতা। তবে শুধু ১/১১-এর প্রকাশ্য সমর্থক ওই কয়েক নেতা নয়, নীতিগত ভাবে বিএনপি সামরিক শাসনের পক্ষের শক্তি। তারা শুধু সামরিক শাসক-সৃষ্ট দল নয়। তারা যে সামরিক শাসকের পক্ষের শক্তি সে প্রমাণ তারা এখনও রেখে যাচ্ছে। তাদের দলের মহাসচিব ৫ম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করার ভিতর দিয়ে এটা কাগজে-কলমে আরেকবার প্রমাণ করে দিল। তাদের পক্ষের সহস্র বুদ্ধিজীবীও যদিও এখন গলা ফাটিয়ে বলেন, বিএনপি ১/১১-এর সমর্থক ছিল না, তাও কিন্ত কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ যেখানে গোটা বাংলাদেশ চাচ্ছে দেশে যেন আর কখনও সামরিক শাসন না আসে। তার একটা রক্ষাকবজ তৈরি হোক। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল হবার ভিতর দিয়ে সেই রক্ষাকবজের সৃষ্টি হয়েছে। এই রায় বহাল থাকলে ভবিষ্যতে দেশে সামরিক শাসন আসার পথ বন্ধ হবে। হাইকোর্ট ওই রায় দেবার পরেই বিএনপি সরকার সেটার বিরুদ্ধে আপীল করে স্থগিত করেছিল। এখন একদিকে তারা ১/১১-এর সামরিক গোযেন্দা সংস্থার শাসনের বিরুদ্ধে বলছে, অন্যদিকে তাদের দলের মহাসচিব ৫ম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপীল করছেন। বিএনপির মহাসচিব ও জামায়াতে ইসলামীর এই আপীলের ভিতর দিয়ে এটা এখন দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়ে গেল, এই দুটি দল দেশে সামরিক শাসন আসার পথ খুলে রাখতে চায়। বিএনপি কাউন্সিলের পরে যে কমিটি করেছে সে কমিটির নেতৃত্বও তাই তারা সামরিক শাসকের সহায়ক লোক দিয়ে সাজিয়েছে।
তাই বিএনপির এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি হয়েছে, অঙ্গ সংগঠনগুলো যেভাবে গঠিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি জঙ্গীবাদ ও সামরিক শাসনের দিকে দেশকে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে কাজ করতে দল সাজিয়েছে। বাস্তবে বিএনপির এছাড়া কিছু করারও নেই। কারণ বানর বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পারে কিন্তু বানরের গর্ভে মানুষ হয় না। সামরিক শাসকের দল কখনও প্রকৃত রাজনৈতিক দল হয় না। বিবর্তিত হয়ে আরও উদার রাজনৈতিক দল হয় না। লেবার পরিবর্তিত হয়ে নিউ লেবার হতে পারে। কিন্তু মার্কোসের দল কখন রাজনৈতিক দল হয় না। অর্থাৎ একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল পরিবর্তিত হয়ে বা বির্বতনের ভিতর দিয়ে আর ভাল রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারে। কিন্তু সামরিক শাসনকে জায়েজ করতে, জঙ্গীবাদকে জায়েজ করতে যে রাজনৈতিক মুখোশের সৃষ্টি এরা কখনও রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তাই হাজারো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি একটি প্রকৃত মধ্যডান রাজনৈতিক দলের চরিত্র নিয়ে দাঁড়াতে পারল না। এমনকি ১/১১-এর পরেও তারা পারল না। বরং কাউন্সিল করে, নেতা তৈরি করে তারা আরও বেশি সামরিক শাসন ও জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে গেল। কিন্তু বিএনপি যখন আরও বেশি জঙ্গীবাদ ও সামরিক শাসনের দিকে গেল এ সময়ে বাংলাদেশ ৩৯ বছরে পা দিয়েছে। শুধু ৩৯ বছরে পা দেয়নি, এই ৩৯ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীর অর্থাৎ আজকের জঙ্গী স্রষ্ট্রাদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সমর্থ হয়েছে যারা খুনের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে সামরিক শাসন এনেছিল অন্তত তাদের কয়েক খুনীকে বিচার করে চূড়ান্ত শাস্তির পর্যায়ে নিয়ে আসতে। তাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ যেখানে পিছিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে ২০১০-এ বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে এসেছে। অনেক আলোর পথে এসেছে। আলোর পথে এসেছে বাংলাদেশ দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পার হয়ে। তাই এখান থেকে বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিএনপি যতই জঙ্গী, খুনী ও সামরিক শাসকের সহযোগীদের একত্র করে বাংলাদেশকে পিছনে টানার চেষ্টা করুক না কেন, আর সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে আর টেনে পিছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। গণতন্ত্রের পথে কাঁটা বিছানোর সময় বা সুযোগ বিএনপি পাবে না। তাদের সঙ্গে পথে কাঁটা বিছাতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নামবে না। যতই দিন যাবে ততই বিএনপি নিঃসঙ্গ হবে। কারণ ভবিষ্যতের পথে পা রাখার ক্ষমতা যার নেই তার সঙ্গে ভবিষ্যতের আশায় কেউ পা ফেলবে না। তাই দল হিসেবে বিএনপি এখন ভবিষ্যতহীন-নিঃসঙ্গ। অর্থাৎ আয়ু শেষে ভবিষ্যতহীন-নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ যেমন কালের গর্ভে হারিয়ে যাবার জন্যে অপেক্ষা করে, তাছাড়া তার আর কোন ভবিষ্যত থাকে না। বিএনপির অবস্থাও তেমনি। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন ভবিষ্যত নেই।
্রষটঢণ্রদরমহআথবটধফ.ডমব
বিএনপির সহিংসতার চরিত্র কেমন হবে এটা বিচার করতে হলে তাদের প্রতিপক্ষের চরিত্র দেখতে হবে। বিএনপি রাজপথে সহিংস আন্দোলন করতে যাচ্ছে বর্তমান মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমান মহাজোট সরকার কোন অনির্বাচিত সরকার নয়। স্বৈরসরকারও নয়। শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি জনসমর্থনপুষ্ট একটি সরকার। এর ভিতর প্রধান দল আওয়ামী লীগ প্রায় ৫০ ভাগ মানুষের সমর্থন পেয়েছে। এবং ষাট বছরের পুরনো একটি রাজনৈতিক দল। শুধু ষাট বছরের পুরনো দল নয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা কোন বিশ্লেষককে বিচার করতে গেলে এটাও বিচার করতে হবে, দলটি ক্ষমতা থেকে নিচে নামেনি। দলটি তৃণমূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এবং এই দলটিকে বিচার করতে হলে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এই দলটি নিজেকে ছাপিয়ে বার বার জাতীয় চরিত্র নেবার ক্ষমতা রাখে। এই জাতীয় চরিত্র নেবার ক্ষমতা থাকার কারণে এই দল সৃষ্টি হবার পরে ২২ বছরের ভিতর এ দেশ থেকে বিদেশী শাসনের অবসান ঘটে। এর সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে, এই দলটি প্রয়োজনে দেশের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে আত্তীকরণ করার ক্ষমতা রাখে। যেমন ভারতীয় কংগ্রেস সৃষ্টি হবার ষাট বছরের ভিতর উপমহাদেশ থেকে ঔপনিবেশিক শাসন পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হয়। এরও মূল শক্তি কিন্তু ওইখানে। ভারতের কংগ্রেস প্রয়োজনে দেশের সকল প্রগতিশীল শক্তিকে আত্মীকরণ করতে পারে। শুধু প্রগতিশীল বললে বিষয়টি অর্ধেক বলা হয়। প্রয়োজনে তারা ডানের বা রক্ষণশীলদের ভাল অংশ এবং বাম প্রগতিশীলকে সম্পূর্ণ গ্রহণ করে বা আত্তীকরণ করে দেশের শত্রু বা দেশের ক্ষতিকারক প্রতিপক্ষর সঙ্গে লড়তে পারে। যেমন ভারতের হিন্দু মৌলবাদী সহিংস শক্তি বিজেপিকে রুখতে বা ধ্বংস করতে সে দেশে রক্ষণশীলের ভাল অংশ বা মধ্যডান অংশ এবং বামের হরকিষণ সিং থেকে জ্যোতি বসুর মতো সর্বোচ্চ প্রগতিশীলদের কংগ্রেস ধারণ করে। তাদের মিলিত শক্তি নিয়ে বিজেপির মূলোৎপাটন তারা যথেষ্ট অংশে করতে পেরেছে। ভারত থেকে ঔপনিবেশিক শাসন তাড়ানোর পরে ভারতের রাষ্ট্রের ও জনগণের জন্যে সব থেকে বিভীষিকা হিসেবে উপস্থিত হয়েছিল হিন্দু মহাসভার সন্তান বিজেপির বিশাল আকারে বেড়ে ওঠা। কংগ্রেস দলীয় চরিত্রের বাইরে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করে ওই বিশাল স্তম্ভ উপড়ে ফেলেছে। বিজেপি এখন ভারতীয় রাজনীতিতে আবার আগাছায় পরিণত হয়েছে। একটু গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঘটনা প্রবাহ এর সঙ্গে মিলে যায়। বাংলাদেশেও পাকিস্তানী শাসক বিতাড়নের পরে দেশের রাজনীতিতে সব থেকে ভয়াবহ সময় আসে ২০০১ থেকে ২০০৬। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে যে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী জঙ্গী শক্তির সংগঠিত হওয়া শুরু হয় তার চূড়ান্ত রূপ ঘটে ২০০১ থেকে ২০০৬-এ। এ সময়ে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বে রাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে একটি জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অর্থাৎ পনেরো আগস্ট যে মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সামরিক ছত্রছায়ায় আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায় ২০০১-এ তারা বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। এর মূলোৎপাটন ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার কোন সঠিক পথ ছিল না। তাই দেখা যায় ২০০৬-এর আগেই আওয়ামী লীগ তার দলীয় চরিত্র থেকে বের হয়ে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করে। দেশের ডানের তুলনামূলক ভাল অংশ ও সমগ্র বাম প্রগতিশীল অংশকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ধারণ করে। আওয়ামী লীগের এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ধারণ ওই সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক বন্ধু বা সুহৃদরা বুঝতে পারেনি। তারা মনে করেছিল এটা মনে হয় আওয়ামী লীগ এক ধরনের আপোস করছে। কিন্তু ২০০৮-এর নির্বাচনের পরে নিশ্চয়ই আর কারও কোন সন্দেহ নেই বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের অবসানের জন্যে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় চরিত্রের বাইরে এসে জাতীয় চরিত্র ধারণ করেছিল। এবং তার ফল জাতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসবাদ এখন নিমূর্লের পথে। এর থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, জাতীয় প্রয়োজনের একটি প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। তাদের পিছনে রয়েছে দেশের সত্তর ভাগের বেশি মানুষের সমর্থন। এ অবস্থায় বিএনপি ষোলো বছর পরে একটি কাউন্সিল করে বলছে তারা রাজপথে নামবে। এবং রাজপথে কাঁটা বিছাবে। তাদের সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলছেন, দলটি এখন রাজপথে ভাল করবে। রাজপথ সব সময়ের জন্যে রাজনৈতিক দলের ঠিকানা। রাজপথে গঠনমূলক সব কাজ করা যায়। বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা সংগ্রাম তাও চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছেছিল রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভিতর দিয়ে। কিন্তু কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি যে দল গড়েছে এই দল কি রাজপথে শান্তিপূর্ণ কোন আন্দোলনের উপযোগী? বিএনপির এবারের কাউন্সিলের নেতা নির্বাচনের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিএনপি দুটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। এক. জঙ্গীবাদ বা খুনের অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সবখানে। বিশেষ করে যুব ও ছাত্র সংগঠন সাজিয়েছে এদের দিয়ে। অন্যদিকে বিএনপি সব সময়ে মুখে যে ১/১১-এর গালি পাড়ছে ওই ১/১১-এর সমর্থকদের প্রায় সকলকে দলে স্থান দিয়েছে। বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবার আগেই এ কলামে লিখেছিলাম_ বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন, ১/১১-এর কোন সমর্থককে তারা দলের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতে পারবে না। বাস্তবেও তারা সেটা পারেনি। কারণ সত্যিকার রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কোন ক্ষমতা নেই। তাদেরকে টিকে থাকতে হলে এখন দুটি পথ নিতে হবে। এক জঙ্গীবাদের মাধ্যমে তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার পথ পরিষ্কার করতে হবে, না হয় সামরিক গোয়েন্দা শক্তি এর আগে বার বার তাদেরকে যেভাবে ক্ষমতায় বসিয়েছে সে পথে যেতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দল গঠন করে বিএনপি এই দুই পথ যাতে খোলা থাকে সেটাই করেছে। তারা তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ নেতা বানিয়ে ছাত্র ও যুব সংগঠন জঙ্গী-সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সাজিয়েছে। অন্যদিকে ১/১১-এ যারা সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর শাসনকে সমর্থন করেছিল তাদেরকে বিএনপির নেতৃত্বে স্থান দিয়েছে। তারেক রহমানকে সর্বোচ্চ নেতা বানিয়ে জঙ্গী-সংশ্লিষ্টদের ছাত্র ও যুব সংগঠনে বসিয়ে বিএনপি আশা করছে এদের দ্বারা তারা দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। কারণ তারা জানে একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লোক নামানো সম্ভব হবে না। কোন গণআন্দোলন বা গণঅভু্যত্থান যেমন তাদের রাজনৈতিক আচরণ দিয়ে তৈরি করা সম্ভব নয়, তেমনি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে এটা অলীক কল্পনা। এটা যে বিএনপি বোঝে না তাও নয়। বিএনপির যে সব থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কথা বলছেন তাঁরাও ভাল মতো বোঝেন। তাই বেগম জিয়ার মুখ দিয়ে বের হয়েছে তারা পথে কাঁটা বিছাবে। অর্থাৎ আবার ২১ আগস্টের হোতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ শক্তি দিয়ে দেশে তারা বোমাবাজি থেকে শুরু করে বিচারক হত্যার আত্মঘাতী পর্যায়ে আবার চলে যাবার চেষ্টা করবে। আর এটাই হবে তাদের রাজপথের আন্দোলন। অর্থাৎ এভাবে তারা বোমা ও হত্যার ভিতর দিয়ে গণতন্ত্রের পথে কাঁটা বিছাতে চায়। চায় ওই কাঁটার খোঁচায় দেশের গণতন্ত্র মারা যাক। আর যেহেতু নিহত গণতন্ত্রের ভিতর দিয়ে বিএনপির জন্ম তাই গণতন্ত্র মারা গেলে বিএনপি লাভবান হবে। এটা বিএনপি নেত্রী থেকে বিএনপি সমর্থক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সকলে ভাল করে বোঝেন। আর গণতন্ত্র নিহত হলেই শক্তিশালী হয়ে উঠবে ওই বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। এ কারণে ১/১১-এর পরে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থক সকলে বিএনপি নেতৃত্বে স্থান পেয়েছে। কারণ গণতন্ত্র নিহত হলে অন্ধকারে এরা সকলেই অনেক বড় নেতা। তবে শুধু ১/১১-এর প্রকাশ্য সমর্থক ওই কয়েক নেতা নয়, নীতিগত ভাবে বিএনপি সামরিক শাসনের পক্ষের শক্তি। তারা শুধু সামরিক শাসক-সৃষ্ট দল নয়। তারা যে সামরিক শাসকের পক্ষের শক্তি সে প্রমাণ তারা এখনও রেখে যাচ্ছে। তাদের দলের মহাসচিব ৫ম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করার ভিতর দিয়ে এটা কাগজে-কলমে আরেকবার প্রমাণ করে দিল। তাদের পক্ষের সহস্র বুদ্ধিজীবীও যদিও এখন গলা ফাটিয়ে বলেন, বিএনপি ১/১১-এর সমর্থক ছিল না, তাও কিন্ত কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ যেখানে গোটা বাংলাদেশ চাচ্ছে দেশে যেন আর কখনও সামরিক শাসন না আসে। তার একটা রক্ষাকবজ তৈরি হোক। হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল হবার ভিতর দিয়ে সেই রক্ষাকবজের সৃষ্টি হয়েছে। এই রায় বহাল থাকলে ভবিষ্যতে দেশে সামরিক শাসন আসার পথ বন্ধ হবে। হাইকোর্ট ওই রায় দেবার পরেই বিএনপি সরকার সেটার বিরুদ্ধে আপীল করে স্থগিত করেছিল। এখন একদিকে তারা ১/১১-এর সামরিক গোযেন্দা সংস্থার শাসনের বিরুদ্ধে বলছে, অন্যদিকে তাদের দলের মহাসচিব ৫ম সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপীল করছেন। বিএনপির মহাসচিব ও জামায়াতে ইসলামীর এই আপীলের ভিতর দিয়ে এটা এখন দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়ে গেল, এই দুটি দল দেশে সামরিক শাসন আসার পথ খুলে রাখতে চায়। বিএনপি কাউন্সিলের পরে যে কমিটি করেছে সে কমিটির নেতৃত্বও তাই তারা সামরিক শাসকের সহায়ক লোক দিয়ে সাজিয়েছে।
তাই বিএনপির এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যে কমিটি হয়েছে, অঙ্গ সংগঠনগুলো যেভাবে গঠিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি জঙ্গীবাদ ও সামরিক শাসনের দিকে দেশকে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে কাজ করতে দল সাজিয়েছে। বাস্তবে বিএনপির এছাড়া কিছু করারও নেই। কারণ বানর বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পারে কিন্তু বানরের গর্ভে মানুষ হয় না। সামরিক শাসকের দল কখনও প্রকৃত রাজনৈতিক দল হয় না। বিবর্তিত হয়ে আরও উদার রাজনৈতিক দল হয় না। লেবার পরিবর্তিত হয়ে নিউ লেবার হতে পারে। কিন্তু মার্কোসের দল কখন রাজনৈতিক দল হয় না। অর্থাৎ একটি প্রকৃত রাজনৈতিক দল পরিবর্তিত হয়ে বা বির্বতনের ভিতর দিয়ে আর ভাল রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারে। কিন্তু সামরিক শাসনকে জায়েজ করতে, জঙ্গীবাদকে জায়েজ করতে যে রাজনৈতিক মুখোশের সৃষ্টি এরা কখনও রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তাই হাজারো সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি একটি প্রকৃত মধ্যডান রাজনৈতিক দলের চরিত্র নিয়ে দাঁড়াতে পারল না। এমনকি ১/১১-এর পরেও তারা পারল না। বরং কাউন্সিল করে, নেতা তৈরি করে তারা আরও বেশি সামরিক শাসন ও জঙ্গীবাদের দিকে ঝুঁকে গেল। কিন্তু বিএনপি যখন আরও বেশি জঙ্গীবাদ ও সামরিক শাসনের দিকে গেল এ সময়ে বাংলাদেশ ৩৯ বছরে পা দিয়েছে। শুধু ৩৯ বছরে পা দেয়নি, এই ৩৯ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীর অর্থাৎ আজকের জঙ্গী স্রষ্ট্রাদের বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। অন্যদিকে বাংলাদেশ সমর্থ হয়েছে যারা খুনের রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশে সামরিক শাসন এনেছিল অন্তত তাদের কয়েক খুনীকে বিচার করে চূড়ান্ত শাস্তির পর্যায়ে নিয়ে আসতে। তাই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাংলাদেশ যেখানে পিছিয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে ২০১০-এ বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে এসেছে। অনেক আলোর পথে এসেছে। আলোর পথে এসেছে বাংলাদেশ দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পার হয়ে। তাই এখান থেকে বাংলাদেশকে পিছনে নিয়ে যাওয়া যাবে না। বিএনপি যতই জঙ্গী, খুনী ও সামরিক শাসকের সহযোগীদের একত্র করে বাংলাদেশকে পিছনে টানার চেষ্টা করুক না কেন, আর সম্ভব নয়। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে আর টেনে পিছনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। গণতন্ত্রের পথে কাঁটা বিছানোর সময় বা সুযোগ বিএনপি পাবে না। তাদের সঙ্গে পথে কাঁটা বিছাতে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম নামবে না। যতই দিন যাবে ততই বিএনপি নিঃসঙ্গ হবে। কারণ ভবিষ্যতের পথে পা রাখার ক্ষমতা যার নেই তার সঙ্গে ভবিষ্যতের আশায় কেউ পা ফেলবে না। তাই দল হিসেবে বিএনপি এখন ভবিষ্যতহীন-নিঃসঙ্গ। অর্থাৎ আয়ু শেষে ভবিষ্যতহীন-নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ যেমন কালের গর্ভে হারিয়ে যাবার জন্যে অপেক্ষা করে, তাছাড়া তার আর কোন ভবিষ্যত থাকে না। বিএনপির অবস্থাও তেমনি। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া তার আর কোন ভবিষ্যত নেই।
্রষটঢণ্রদরমহআথবটধফ.ডমব
No comments