জাবি বন্ধ ঘোষণা

ছাত্র বিক্ষোভের বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল নয়টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।


জানা গেছে, বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের এক ছাত্রকে গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিবর্ষণে ৫ শিক্ষার্থী আহত হলে রাতেই ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশকিছু শিক্ষাঙ্গনে নানা ধরনের সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা সেখানকার উচ্চশিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। সংঘাতের পাশাপাশি শিক্ষকদের দলাদলির কারণেও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়। সেশনজটের কারণে শিক্ষর্থীদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোর্স সমাপ্ত করা সম্ভব হয় না। সেশনজটের সমস্যার বাইরে এমন সংঘাত বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষা জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
প্রশ্ন জেগেছে, কতকাল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এমন সংঘাতপূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থা বিরাজ করবে? ক্যাম্পাসে যদি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে না আসে, তবে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি সেখানে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সেখানে যে নতুন করে সহিংস সংঘাতের সূচনা হবে নাÑএই নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ ছাত্রদের বেশিরভাগ সংগঠন এখন কোন রকম নিয়মনীতি মানতে চায় না। এছাড়া ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক রাজনীতি একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেবেন এবং শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেনÑএটাই প্রত্যাশা। কিন্তু গত তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দলাদলি যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের এই রাজনৈতিক দলাদলি ক্যাম্পাসের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলে।
ইতোপূর্বে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার কারণে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্নবিশ্ববিদ্যালয় একের পর এক অনিশ্চিত অবস্থায় সৃষ্টি হয়। জনগণের কষ্টের টাকায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় নির্বাহ হয়। রাজনীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে শিক্ষকদের যতদিন মুক্ত করা না যাবে, ততদিন সেখানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে না। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিষয়ে তদন্তের জন্য ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবারই প্রত্যাশা, তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত চালাবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সঠিক পরামর্শ দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.