বহুমাত্রিক লেখক ছিলেন হুমায়ূনÑ প্রকাশকদের স্মরণসভা- সংস্কৃতি সংবাদ
নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের মাধ্যমেই সমৃদ্ধ হয়েছে দেশের প্রকাশনাশিল্প। আর সে কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই সদ্যপ্রয়াত দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সমাদৃত এই কথাসাহিত্যিককে স্মরণ করলেন প্রকাশকরা। শনিবার সকালে আজিজ সুপার মার্কেটের বিএফসি মিলনায়তনে কথামালায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে বই
প্রকাশক ও বিপণন সমবায় সমিতি। হুমায়ূন আহমেদের বর্ণাঢ্য লেখক ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি স্মরণসভায় তাঁর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি বইয়ের মার্কেট স্থাপনের দাবি জানানো হয়। আলোচনায় উঠে আসে হুমায়ূনের প্রিয় স্থান নুহাশ পল্লীতে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ার দাবিও। এছাড়াও দেশের প্রথিতযশা প্রয়াত বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিক ও লেখকের নামে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরে সৃজনশীল বইয়ের মার্কেট স্থাপনের দাবি জানানো হয়।
স্মরণসভায় দেশের সৃজনশীল প্রকাশনার সুহৃদ কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বৈচিত্র্যময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন কবি বেলাল চৌধুরী, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, অন্যপ্রকাশের অংশীদার ও প্রচ্ছদশিল্পী মাসুম রহমান, লেখক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, কবি হারিসুল হক, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন করেন জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির আহ্বায়ক রবীন আহসান।
শুরুতেই প্রকাশকদের পক্ষে রবীন আহসান হুমায়ূন আহমেদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি বইয়ের মার্কেট নির্মাণের দাবি জানান। এছাড়া নুহাশ পল্লীতে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তোলার কথাও বলেন এই নবীন প্রকাশক।
বেলাল চৌধুরী বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন প্রকৃত পেশাদার লেখক। কারণ, লেখালেখি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই তিনি সমৃদ্ধ জীবনযাপন করেছেন। আর হুমায়ূনের লেখায় ছিল দারুণ পরিমিতবোধ। তাঁর কোন লেখায় অশ্লীলতা ছিল না। এর বাইরে তিনি যে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ছিলেন, এটা তাঁর লেখায়ও নানাভাবে উঠে আসত। লেখার মাধ্যমেই অগণন মানুষের ভালবাসা আদায় করে নিয়েছেন। সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক। ব্যক্তি হুমায়ূন সম্পর্কে তিনি বলেন, দারুণ আড্ডাবাজ ও আমুদে মানুষ ছিলেন হুমায়ূন। দলবেঁধে চলাফেরা করতে খুব পছন্দ করতেন। এই সদানন্দ পুরুষটি সব সময় সবাইকে চমকে দিকে বা চমক দেখাতে পছন্দ করতেন।
নাসির আলী মামুন বলেন, মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে মানুষের ব্যাকুলতা আরও তীব্র হয়েছে। ১৯৮৩ সালে ছবি তুলতে গিয়ে প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন তিনি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় ছিলেন। রসিকতা করে বললেন, এভাবেই ছবি তুলে ফেল। রসিকতাটা তাঁর স্বভাবেই ছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছরের নবেম্বরে তিনি যখন নিউইয়র্কে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, সেসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তিনি ইউনূসের সঙ্গেও মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করেন। মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত নামী ও জনপ্রিয় লেখক হওয়া সত্ত্বেও হুমায়ূন আহমেদ স্বাধীনতা পদক পাননি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর।
হারিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছেন। তাঁর শিল্প-সাহিত্যের দিকে নজর দিলে সেটা সহজেই বোঝা যায়।
মাসুম রহমান বলেন, তাঁর বইয়ের মাধ্যমেই আমি প্রচ্ছদশিল্পী হয়েছি। গত ১৪ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের প্রচ্ছদ গ্রহণ করতেন না হুমায়ূন আহমেদ। এ কারণে এমন হয়েছে, অনেকবার আঁকার পর তবেই তিনি প্রচ্ছদটিকে পছন্দ করেছেন। তিনি আরও বলেন, একুশের বইমেলা বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। তাঁর বই পড়ার মাধ্যমেই এদেশে পাঠকশ্রেণী তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রকাশনাশিল্পের ব্যাপ্তিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অসীম।
মেসবাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, আশা করেছিলাম আরও কিছু বছর তিনি লিখতে পারবেন। তিনি নিজেও আরও কিছুদিন বাঁচতে চেয়েছিলেন। তাহলে এদেশের সাহিত্য সমৃদ্ধির পাশাপাশি পাঠকরা অনেক আনন্দ পেত।
এছাড়াও স্মরণসভায় বক্তাদের আলোচনায় সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ কর্মজীবনের নানান প্রসঙ্গ উঠে আসে। একাধারে গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাটক আর চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের কথা অনেকে তুলে ধরেন। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন রং ও তুলি। রংয়ের ওপর রং চাপিয়ে হুমায়ূনের ছবি আঁকার বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। মানুষের সহজাত প্রতিভাকে হুমায়ূন সহজেই চিনতে পারতেন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তাঁর হাত ধরে অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছে। তিনি ছিলেন শিল্পী তৈরির কারিগর। সভায় দেশবরেণ্য এই কথাশিল্পীর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে অসংলগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
রবীন্দ্র স্মরণ ॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন করে স্রোত আবৃত্তি সংসদ। বাকশিল্পীদের কণ্ঠে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে স্মরণ করা হয় কবিগুরুকে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আবৃত্তি প্রযোজনার শিরোনাম ছিল নব নব রূপে এসো নব নব প্রাণে। প্রযোজনাটি সাজানো হয় রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান ও কবিতা দিয়ে। প্রযোজনাটির পরিকল্পনায় ছিলেন মাহফুজ রিজভী।
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ ও নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষের শুভক্ষণে কবিগুরুর প্রতি স্রোত আবৃত্তি সংসদ এ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জাসহ শিল্পীদের পোশাক-পরিচ্ছদেও ছিল রাবীন্দ্রিক আবহ। বাণী ও সুরের মূর্ছনায় কবিগুরুকে সন্ধান করা হয় বিচিত্রতায়, প্রকৃতির মুগ্ধতায়, প্রেম-ভালবাসার স্নিগ্ধতায় এবং স্বদেশপ্রেম ও মানবতায়।
কাসিদার আসর ॥ ঢাকাবাসী সংগঠন ও ঢাকা রাইটার্স ফোরামের উদ্যোগে শনিবার পুরনো ঢাকার হাজারীবাগ পার্ক প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাসী কাসিদা আসরের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনের সঙ্গে ছিল হামদ-নাত ও আজান প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাবাসী সংগঠনের সভাপতি মোঃ শুকুর সালেক, ঢাকা রাইটার্স ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ, হাজারীবাগ সমাজ উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক শওকত রায়হান প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানে শুকুর সালেক বলেন, কাসিদা পুরনো ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। হারিয়ে যাওয়া এই কাসিদাকে পুনরায় নগরবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এই আসরের আয়োজন। অন্য বক্তারা ঢাকার জনপ্রিয় কাসিদা গায়ক মরহুম জুম্মন মিয়ার পরিবার এবং অসুস্থ কাসিদা গায়ক সামাদ মিয়াকে জরুরীভাবে সহযোগিতার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতার প্রদর্শনী ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ৭শ’ ছড়া ও কবিতা রচনা করেছেন কবি মামুন খন্দকার। চুয়াডাঙ্গা জেলার এই কবি গত দুই বছরে এসব ছড়া ও কবিতা রচনা করেছেন। ইতোপূর্বে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় এসব ছড়া ও কবিতার ৬টি প্রদর্শনী হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস চত্বরে এই প্রদর্শনী হয়। পুরো চত্বরটিতে কালো কাপড়ের ওপর সাজানো হয় কাগজে লেখা ছড়া ও কবিতা। ‘এই না বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি কবিতার লাইনগুলো ছিল এ রকমÑ তারা রা সব আলো ছড়ায়/সবুজ গাঁয়ের দেশে/বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছে/এই না বাংলাদেশে। এছাড়াও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট, দাঁড়াও বাঙালী, ফিরে আসি, বিশ্ববাসীর মুখে, আমার যত সাহস, এই তো মুজিব, মুজিব সেনার ইত্যাদি শিরোনামের মোট সাত শ’টি কবিতা লিখেছেন মামুন খন্দকার। মামুন খন্দকার জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা থেকেই তিনি এই কবিতা ও ছড়া লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব কবিতা ও ছড়ার পা-ুলিপি তুলে দেয়ার কথাও জানান এই কবি।
স্মরণসভায় দেশের সৃজনশীল প্রকাশনার সুহৃদ কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের বৈচিত্র্যময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন কবি বেলাল চৌধুরী, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, অন্যপ্রকাশের অংশীদার ও প্রচ্ছদশিল্পী মাসুম রহমান, লেখক মেসবাহউদ্দীন আহমেদ, কবি হারিসুল হক, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন করেন জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমিতির আহ্বায়ক রবীন আহসান।
শুরুতেই প্রকাশকদের পক্ষে রবীন আহসান হুমায়ূন আহমেদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি বইয়ের মার্কেট নির্মাণের দাবি জানান। এছাড়া নুহাশ পল্লীতে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে তোলার কথাও বলেন এই নবীন প্রকাশক।
বেলাল চৌধুরী বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন প্রকৃত পেশাদার লেখক। কারণ, লেখালেখি থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়েই তিনি সমৃদ্ধ জীবনযাপন করেছেন। আর হুমায়ূনের লেখায় ছিল দারুণ পরিমিতবোধ। তাঁর কোন লেখায় অশ্লীলতা ছিল না। এর বাইরে তিনি যে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ছিলেন, এটা তাঁর লেখায়ও নানাভাবে উঠে আসত। লেখার মাধ্যমেই অগণন মানুষের ভালবাসা আদায় করে নিয়েছেন। সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক। ব্যক্তি হুমায়ূন সম্পর্কে তিনি বলেন, দারুণ আড্ডাবাজ ও আমুদে মানুষ ছিলেন হুমায়ূন। দলবেঁধে চলাফেরা করতে খুব পছন্দ করতেন। এই সদানন্দ পুরুষটি সব সময় সবাইকে চমকে দিকে বা চমক দেখাতে পছন্দ করতেন।
নাসির আলী মামুন বলেন, মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে মানুষের ব্যাকুলতা আরও তীব্র হয়েছে। ১৯৮৩ সালে ছবি তুলতে গিয়ে প্রথম তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তখন তিনি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় ছিলেন। রসিকতা করে বললেন, এভাবেই ছবি তুলে ফেল। রসিকতাটা তাঁর স্বভাবেই ছিল। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছরের নবেম্বরে তিনি যখন নিউইয়র্কে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, সেসময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তিনি ইউনূসের সঙ্গেও মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করেন। মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত নামী ও জনপ্রিয় লেখক হওয়া সত্ত্বেও হুমায়ূন আহমেদ স্বাধীনতা পদক পাননি। এটা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর।
হারিসুল হক বলেন, হুমায়ূন আহমেদ সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছেন। তাঁর শিল্প-সাহিত্যের দিকে নজর দিলে সেটা সহজেই বোঝা যায়।
মাসুম রহমান বলেন, তাঁর বইয়ের মাধ্যমেই আমি প্রচ্ছদশিল্পী হয়েছি। গত ১৪ বছর ধরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত বইয়ের প্রচ্ছদ গ্রহণ করতেন না হুমায়ূন আহমেদ। এ কারণে এমন হয়েছে, অনেকবার আঁকার পর তবেই তিনি প্রচ্ছদটিকে পছন্দ করেছেন। তিনি আরও বলেন, একুশের বইমেলা বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনন্য। তাঁর বই পড়ার মাধ্যমেই এদেশে পাঠকশ্রেণী তৈরি হয়েছে। এ কারণে প্রকাশনাশিল্পের ব্যাপ্তিতে তাঁর ভূমিকা ছিল অসীম।
মেসবাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, আশা করেছিলাম আরও কিছু বছর তিনি লিখতে পারবেন। তিনি নিজেও আরও কিছুদিন বাঁচতে চেয়েছিলেন। তাহলে এদেশের সাহিত্য সমৃদ্ধির পাশাপাশি পাঠকরা অনেক আনন্দ পেত।
এছাড়াও স্মরণসভায় বক্তাদের আলোচনায় সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ কর্মজীবনের নানান প্রসঙ্গ উঠে আসে। একাধারে গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাটক আর চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের কথা অনেকে তুলে ধরেন। জীবনের শেষ প্রান্তে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন রং ও তুলি। রংয়ের ওপর রং চাপিয়ে হুমায়ূনের ছবি আঁকার বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। মানুষের সহজাত প্রতিভাকে হুমায়ূন সহজেই চিনতে পারতেন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, তাঁর হাত ধরে অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছে। তিনি ছিলেন শিল্পী তৈরির কারিগর। সভায় দেশবরেণ্য এই কথাশিল্পীর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন নিয়ে অসংলগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ ও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
রবীন্দ্র স্মরণ ॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭২তম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় আবৃত্তিসন্ধ্যার আয়োজন করে স্রোত আবৃত্তি সংসদ। বাকশিল্পীদের কণ্ঠে কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে স্মরণ করা হয় কবিগুরুকে। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আবৃত্তি প্রযোজনার শিরোনাম ছিল নব নব রূপে এসো নব নব প্রাণে। প্রযোজনাটি সাজানো হয় রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান ও কবিতা দিয়ে। প্রযোজনাটির পরিকল্পনায় ছিলেন মাহফুজ রিজভী।
গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ ও নোবেল প্রাপ্তির শতবর্ষের শুভক্ষণে কবিগুরুর প্রতি স্রোত আবৃত্তি সংসদ এ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জাসহ শিল্পীদের পোশাক-পরিচ্ছদেও ছিল রাবীন্দ্রিক আবহ। বাণী ও সুরের মূর্ছনায় কবিগুরুকে সন্ধান করা হয় বিচিত্রতায়, প্রকৃতির মুগ্ধতায়, প্রেম-ভালবাসার স্নিগ্ধতায় এবং স্বদেশপ্রেম ও মানবতায়।
কাসিদার আসর ॥ ঢাকাবাসী সংগঠন ও ঢাকা রাইটার্স ফোরামের উদ্যোগে শনিবার পুরনো ঢাকার হাজারীবাগ পার্ক প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাসী কাসিদা আসরের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনের সঙ্গে ছিল হামদ-নাত ও আজান প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকাবাসী সংগঠনের সভাপতি মোঃ শুকুর সালেক, ঢাকা রাইটার্স ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ, হাজারীবাগ সমাজ উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক শওকত রায়হান প্রমুখ। এ অনুষ্ঠানে শুকুর সালেক বলেন, কাসিদা পুরনো ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। হারিয়ে যাওয়া এই কাসিদাকে পুনরায় নগরবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এই আসরের আয়োজন। অন্য বক্তারা ঢাকার জনপ্রিয় কাসিদা গায়ক মরহুম জুম্মন মিয়ার পরিবার এবং অসুস্থ কাসিদা গায়ক সামাদ মিয়াকে জরুরীভাবে সহযোগিতার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতার প্রদর্শনী ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ৭শ’ ছড়া ও কবিতা রচনা করেছেন কবি মামুন খন্দকার। চুয়াডাঙ্গা জেলার এই কবি গত দুই বছরে এসব ছড়া ও কবিতা রচনা করেছেন। ইতোপূর্বে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় এসব ছড়া ও কবিতার ৬টি প্রদর্শনী হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাস চত্বরে এই প্রদর্শনী হয়। পুরো চত্বরটিতে কালো কাপড়ের ওপর সাজানো হয় কাগজে লেখা ছড়া ও কবিতা। ‘এই না বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি কবিতার লাইনগুলো ছিল এ রকমÑ তারা রা সব আলো ছড়ায়/সবুজ গাঁয়ের দেশে/বঙ্গবন্ধু ঘুমিয়ে আছে/এই না বাংলাদেশে। এছাড়াও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট, দাঁড়াও বাঙালী, ফিরে আসি, বিশ্ববাসীর মুখে, আমার যত সাহস, এই তো মুজিব, মুজিব সেনার ইত্যাদি শিরোনামের মোট সাত শ’টি কবিতা লিখেছেন মামুন খন্দকার। মামুন খন্দকার জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালবাসা থেকেই তিনি এই কবিতা ও ছড়া লিখেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব কবিতা ও ছড়ার পা-ুলিপি তুলে দেয়ার কথাও জানান এই কবি।
No comments