কিউরিওসিটি মঙ্গল ছুঁলেই বাঙালি অনিতার স্বপ্নপূরণ
প্রাণের সন্ধানে মঙ্গলে নামবে রোভার কিউরিওসিটি। তার জন্য ঘুম নেই এক বঙ্গ তনয়ার। নাম তাঁর অনিতা সেনগুপ্ত। অসীম কৌতূহলে তাকিয়ে আছেন কিউরিওসিটির দিকে! মঙ্গলের আবহাওয়া বুঝতে এই চলমান গবেষণাগারটিকে (রোভার) মহাকাশে পাঠিয়েছে নাসা। আগামীকাল সোমবার তাঁর মঙ্গলে পা রাখার কথা।
মাকড়সার মতো দেখতে ছয় চাকার এ রোভারকে মঙ্গলের মাটিতে নামার কায়দা-কানুন শেখানোর দায়িত্বে ছিলেন যাঁরা, নাসার সেই বিজ্ঞানীদের অন্যতম অনিতা। কিউরিওসিটির অবতরণ মসৃণ হলেই সার্থক হবে তাঁদের পরিশ্রম।
গত বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনিতা বললেন, 'কিউরিওসিটি যখন মঙ্গলে পা রাখবে, সম্ভবত সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত।'
এমনই এক মুহূর্তের জন্য অনিতার অপেক্ষা শুরু হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। ছয় বছর বয়স থেকেই মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন দেখা শুরু। নেশাটা চেপে বসে স্টার ট্রেক, ডক্টর হু, স্টার ওয়ারস দেখে। আজ অনিতা নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) জ্যেষ্ঠ সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার।
বাবা শ্যামল সেনগুপ্ত বিলেতে গিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গ থেকে। অনিতার জন্ম ব্রিটেনেই। পড়াশোনা যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৪ থেকে ২০০৫, বোস্টন ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা। ২০০৫ সালে পিএইচডি করার পর কাজ শুরু করেন বোয়িং স্পেস অ্যান্ড কমিউনিকেশনসে। তার পর নাসার জেপিএলে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। কর্মজীবনে পা দেওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই (২০০৬) আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইঞ্জিনিয়ারদের সোসাইটি সেরা ইঞ্জিনিয়ারের স্বীকৃতি দেয় তাঁকে। পেয়েছেন নাসার জেপিএল মেরিনার অ্যাওয়ার্ডও (২০০৯)।
এর আগে শুক্র গ্রহে নাসার যান পাঠানোর সময়ও সেই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন অনিতা। কিন্তু 'কিউরিওসিটি' তাঁর মনের সবচেয়ে কাছাকাছি। এ যানের সাফল্য দেখার জন্যই মুখিয়ে আছেন তিনি। এবারের মঙ্গল অভিযানে জ্যেষ্ঠ ইডিএল (এন্ট্রি, ডিসেন্ট অ্যান্ড ল্যান্ডিং) ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সব থেকে কঠিন অংশ কোনটা_এ প্রশ্নের জবাব দিতে এক মুহূর্ত সময়ও নিলেন না অনিতা, 'বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক সেরে ফেলাই ছিল সবচেয়ে শক্ত। তবে মঙ্গলে আবহাওয়া কেমন থাকবে, আগাম আঁচ করে রকেটের গতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করাটাও নেহাত কম কঠিন নয়।' একে তো মঙ্গলে ঢোকার সময় রকেট ছুটবে প্রচণ্ড গতিতে, তার ওপর আগের দুই বারের চেয়ে এ বারে রোভারের ওজন অনেক বেশি। গতি সামলানো, বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে তৈরি হওয়া তাপ থেকে রোভারকে বাঁচানোটা বড় কাজ। মাথায় রাখতে হয়েছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের নিজস্ব খামখেয়ালিপনার কথাও। সেখান থেকে তথ্য এসে পেঁৗছাতেই লাগবে ১৪ মিনিট। এসব ব্যাপারে অনিতার ভষ্য, 'যোগাযোগের দুটি বিকল্প পথ রাখতে হচ্ছে আমাদের। আগে থেকে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে তবে পাঠাতে হয়েছে কিউরিওসিটিকে।'
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে কিউরিওসিটির অভিযানের মেয়াদ দুই বছর। তার পর কী হবে ওই চলমান গবেষণাগারটির? অনিতা জানালেন, 'দুই বছর পরও যদি সেটা সক্রিয় থাকে, তবে সম্ভবত নমুনা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পৃথিবীতে তথ্য পাঠানোর কাজ, অর্থাৎ কিউরিওসিটির অভিযান চলতে থাকবে। মিরের (রুশ মহাকাশ গবেষণা স্টেশন) ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল।' কিন্তু এত কাণ্ড করা কিসের জন্য? 'প্রাণের সন্ধানে'_বললেন অনিতা। একসময় উষ্ণ ছিল মঙ্গল। পানিও ছিল। সেই পানি এখন মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে গিয়ে বরফ হয়ে রয়েছে। থাকতে পারে মঙ্গলের মাটির নিচেও। হতে পারে একসময় প্রাণের স্পন্দন ছিল মঙ্গলে। অনিতা বলেন, 'হয়তো বা ছিল অণুজীব। কিউরিওসিটির অন্যতম কাজ হবে মঙ্গলে জৈব অণুর সন্ধান করা। বাড়ি তৈরির জন্য যেমন ইট। জীবনের জন্য তেমন জৈব অণু।'
দেশের কথা, স্বজনের কথা পাড়তেই অনিতা হেসে জানালেন, আমেরিকায় স্প্যানিশের পাশাপাশি হিন্দি শিখেছেন কিছুটা। তবে বাংলাটা আয়ত্ত করে ওঠা হয়নি। তবে অন্যসবের মধ্যে যা বিশেষ করে টানে, তা হলো ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। প্রসঙ্গের মোড় ঘুরে যাওয়ায় আর প্রশ্ন করতে হয় না। নিজেই বলেন, 'আমাদের পেশায় মেয়ে খুব কম। আমি চাই ভারতের মেরো অনেক বেশি এগিয়ে আসুক এই ক্ষেত্রে। চাই মেয়েরা বেশি করে বিজ্ঞান শিখুক। শিক্ষাই সমতার জমিতে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের সুযোগ করে দেয়।'
গত বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনিতা বললেন, 'কিউরিওসিটি যখন মঙ্গলে পা রাখবে, সম্ভবত সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত।'
এমনই এক মুহূর্তের জন্য অনিতার অপেক্ষা শুরু হয়েছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। ছয় বছর বয়স থেকেই মহাকাশ অভিযানের স্বপ্ন দেখা শুরু। নেশাটা চেপে বসে স্টার ট্রেক, ডক্টর হু, স্টার ওয়ারস দেখে। আজ অনিতা নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) জ্যেষ্ঠ সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার।
বাবা শ্যামল সেনগুপ্ত বিলেতে গিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গ থেকে। অনিতার জন্ম ব্রিটেনেই। পড়াশোনা যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৯৪ থেকে ২০০৫, বোস্টন ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা। ২০০৫ সালে পিএইচডি করার পর কাজ শুরু করেন বোয়িং স্পেস অ্যান্ড কমিউনিকেশনসে। তার পর নাসার জেপিএলে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। কর্মজীবনে পা দেওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই (২০০৬) আমেরিকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইঞ্জিনিয়ারদের সোসাইটি সেরা ইঞ্জিনিয়ারের স্বীকৃতি দেয় তাঁকে। পেয়েছেন নাসার জেপিএল মেরিনার অ্যাওয়ার্ডও (২০০৯)।
এর আগে শুক্র গ্রহে নাসার যান পাঠানোর সময়ও সেই প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন অনিতা। কিন্তু 'কিউরিওসিটি' তাঁর মনের সবচেয়ে কাছাকাছি। এ যানের সাফল্য দেখার জন্যই মুখিয়ে আছেন তিনি। এবারের মঙ্গল অভিযানে জ্যেষ্ঠ ইডিএল (এন্ট্রি, ডিসেন্ট অ্যান্ড ল্যান্ডিং) ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজের সব থেকে কঠিন অংশ কোনটা_এ প্রশ্নের জবাব দিতে এক মুহূর্ত সময়ও নিলেন না অনিতা, 'বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সব কিছু ঠিকঠাক সেরে ফেলাই ছিল সবচেয়ে শক্ত। তবে মঙ্গলে আবহাওয়া কেমন থাকবে, আগাম আঁচ করে রকেটের গতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করাটাও নেহাত কম কঠিন নয়।' একে তো মঙ্গলে ঢোকার সময় রকেট ছুটবে প্রচণ্ড গতিতে, তার ওপর আগের দুই বারের চেয়ে এ বারে রোভারের ওজন অনেক বেশি। গতি সামলানো, বাতাসের সঙ্গে সংঘর্ষে তৈরি হওয়া তাপ থেকে রোভারকে বাঁচানোটা বড় কাজ। মাথায় রাখতে হয়েছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের নিজস্ব খামখেয়ালিপনার কথাও। সেখান থেকে তথ্য এসে পেঁৗছাতেই লাগবে ১৪ মিনিট। এসব ব্যাপারে অনিতার ভষ্য, 'যোগাযোগের দুটি বিকল্প পথ রাখতে হচ্ছে আমাদের। আগে থেকে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে তবে পাঠাতে হয়েছে কিউরিওসিটিকে।'
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলে কিউরিওসিটির অভিযানের মেয়াদ দুই বছর। তার পর কী হবে ওই চলমান গবেষণাগারটির? অনিতা জানালেন, 'দুই বছর পরও যদি সেটা সক্রিয় থাকে, তবে সম্ভবত নমুনা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও পৃথিবীতে তথ্য পাঠানোর কাজ, অর্থাৎ কিউরিওসিটির অভিযান চলতে থাকবে। মিরের (রুশ মহাকাশ গবেষণা স্টেশন) ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল।' কিন্তু এত কাণ্ড করা কিসের জন্য? 'প্রাণের সন্ধানে'_বললেন অনিতা। একসময় উষ্ণ ছিল মঙ্গল। পানিও ছিল। সেই পানি এখন মঙ্গলের মেরু অঞ্চলে গিয়ে বরফ হয়ে রয়েছে। থাকতে পারে মঙ্গলের মাটির নিচেও। হতে পারে একসময় প্রাণের স্পন্দন ছিল মঙ্গলে। অনিতা বলেন, 'হয়তো বা ছিল অণুজীব। কিউরিওসিটির অন্যতম কাজ হবে মঙ্গলে জৈব অণুর সন্ধান করা। বাড়ি তৈরির জন্য যেমন ইট। জীবনের জন্য তেমন জৈব অণু।'
দেশের কথা, স্বজনের কথা পাড়তেই অনিতা হেসে জানালেন, আমেরিকায় স্প্যানিশের পাশাপাশি হিন্দি শিখেছেন কিছুটা। তবে বাংলাটা আয়ত্ত করে ওঠা হয়নি। তবে অন্যসবের মধ্যে যা বিশেষ করে টানে, তা হলো ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। প্রসঙ্গের মোড় ঘুরে যাওয়ায় আর প্রশ্ন করতে হয় না। নিজেই বলেন, 'আমাদের পেশায় মেয়ে খুব কম। আমি চাই ভারতের মেরো অনেক বেশি এগিয়ে আসুক এই ক্ষেত্রে। চাই মেয়েরা বেশি করে বিজ্ঞান শিখুক। শিক্ষাই সমতার জমিতে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের সুযোগ করে দেয়।'
No comments