সেই লাতিনিনা এই লাতিনিনা
ব্যালে নাচিয়ে হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লারিসা লাতিনিনা হয়ে যান জিমন্যাস্ট। কিংবদন্তি এই জিমন্যাস্টকে নিয়ে লিখেছেন রাজীব হাসান মেয়ে বলল, ‘মা, চলো সাঁতার দেখতে যাই। আজকে ফেল্পেসর সাঁতার আছে।’ তানিয়া তাতিয়ানার কথায় তিনি দ্বিধায় পড়ে যান।
জিমন্যাস্টিকস দেখবেন বলে ঠিক করেছিলেন। জিমন্যাস্টিকস দেখতেই লন্ডনে উড়ে আসা। এটা তাঁর প্রাণের খেলা। তাঁর হূৎস্পন্দন। কিন্তু এই কদিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বলে মাইকেল ফেল্প্স নিয়েও আগ্রহ জন্মেছে। ফেল্প্স নাকি ভাঙতে চলেছেন তাঁর ১৮টি পদক জয়ের রেকর্ড। কিন্তু জিমন্যাস্ট যে দেখবেনই।
সমস্যার সমাধান করে দিল মেয়েই। জিমন্যাস্টিকস ছয়টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর সাঁতারের রেকর্ডটা ফেল্প্স যদি ভাঙেনও, ততক্ষণে বেজে যাবে নয়টা-দশটা। মেয়ের বুদ্ধির তারিফ করে মা-মেয়ে দুজনই দাঁড়াল সাঁতারের টিকিট কাটার লাইনে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেই মাইকেল ফেল্পেসর রেকর্ড ভাঙা পদক জয় দেখলেন লারিসা লাতিনিনা!
এ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক এই কিংবদন্তির কোনো ক্ষোভ নেই। ৪৮ বছর ধরে রেকর্ডটা তাঁর ছিল, অলিম্পিকের সর্বোচ্চ পদকজয়ী ছিলেন। এর জন্য বাড়তি সম্মান দাবি তিনি করতেই পারতেন। কিন্তু কোনো অনুযোগ নেই। শুধু একটা চাওয়া ছিল অলিম্পিকে ১৮টি পদকজয়ী এই সাবেক জিমন্যাস্টের। ফেল্পেসর গলায় ওর ১৯ নম্বর অলিম্পিক মেডেলটা তিনিই পরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই ভালো হতো। রেকর্ডটা হস্তান্তরের প্রতীকী একটা ছবিও হয়ে যেত। কিন্তু লাতিনিনার এই চাওয়া পূরণ হয়নি। পদক পরিয়ে দেওয়ার সম্মানটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। এক দিনের জন্য নিয়মটা কি পাল্টানো যেত না? না, এসব নিয়ে খেদ নেই এই ৭৭ বছর বয়সীর।
জীবনটাই তাঁকে শিখিয়েছে কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ না করতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনগ্রাদে হারিয়েছেন বাবাকে। খুব কাছে থেকে দেখেছেন দুর্ভিক্ষ। সামান্য একটা বাসি পাউরুটি নিয়ে মানুষে-কুকুরে মারামারি। ‘আমরা খেতেই পেতাম না, পরনের কাপড়ও ছিল শতচ্ছিন্ন’—নিরাবেগ কণ্ঠেই লন্ডন অলিম্পিকের এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন এই তথ্য। ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ব্যালে নাচিয়ে। হতে পারেননি। কেন? যাঁর কাছে মুফতে ব্যালে শিখতেন, সেই শিক্ষক শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বলে। ব্যালে যখন হবেই না, তাহলে জিমন্যাস্টই সই। হুট করেই এই খেলায় এসেছেন। ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব অনেকের হয়। হারিয়েও যায়। ধ্রুবতারা হতে পারে না সবাই।
জিমন্যাস্টিকসে রাশিয়ার বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্যের সূচনা তাঁর হাতেই। কিন্তু নাদিয়া কোমানেচি, ম্যারি লৌ রেটন, ওলগা করবুটদের মানুষ যেভাবে মনে রেখেছে; লাতিনিনা সেভাবে আলোচিত হননি। সত্যি বলতে কি, তিনিই যে অলিম্পিকের রেকর্ড সর্বোচ্চ পদকের মালিক, এই তথ্য নিজেই জেনেছেন অনেক পরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মার্কিন এক সাংবাদিক রাশিয়ায় এসেছিলেন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। তাঁর কাছেই প্রথম শুনেছেন এই তথ্য। সেই গল্পটা বললেন মেয়ে তাতিয়ানা, ‘এটা সম্ভবত ১৫ বছর আগের ঘটনা। এভাবেই মা জেনেছেন তিনি কতটা বিখ্যাত, তাও সেটি রাশিয়ার কোনো সাংবাদিকের কাছে নয়, আমেরিকার একটি সাময়িকীর কাছ থেকে।’
কিন্তু ওই যে বলা হলো, জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগই তাঁর নেই। এই রেকর্ড নিয়ে হামবড়া ভাব দেখানোরও কোনো মানে খুঁজে পাননি, ‘এটাকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব কখনোই দিইনি। খুবই স্বাভাবিক একটা জীবন যাপন করেছি। পদকগুলো একটা ব্যাপার; আমি, আমার জীবন, আমার পরিবার, ছেলেমেয়েরা আরেকটা ব্যাপার। খুবই ভালো লাগছে এই ভেবে পৃথিবীতে এমন কেউ আছে যে আমার রেকর্ডটা ভাঙতে পারে। যে রেকর্ড আমি ৪৮ বছর ধরে নিজের কাছে রেখেছিলাম।’
লাতিনিনার অবিস্মরণীয় কীর্তির সাক্ষী হয়ে আছে ১৯৫৮ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপও। শুধু পদকসংখ্যার কারণে নয়, অন্য আরেকটি কারণেও। তাঁর গর্ভে যে তখন চার মাস বয়সী তাতিয়ানা! খেলাটার প্রতি ভালোবাসা এতটাই ছিল, গর্ভের সন্তানকে নিয়ে জিমন্যাস্টিকস করার ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন চিকিৎসকের এক কথাতেই, ‘চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন, “কাউকে বলো না। এটা গোপন রাখো। বলে দিলে তোমাকে ওরা আর পারফর্ম করতে দেবে না। আমি জানি, তুমি খুবই শক্ত একটা মেয়ে। সবই ঠিকঠাক থাকবে, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”’
সেবার কয়টি পদক জিতেছিলেন লাতিনিনা? পাঁচটি সোনা! ‘তানিয়া এখনো ওই পদকগুলোর দিকে আঙুল তুলে বলে, এগুলো আমিও আমার মায়ের সঙ্গে জিতেছি’—বলেছেন লাতিনিনা।
ফেল্প্সকে তাঁর খুবই পছন্দ। এর আগে নিজের রেকর্ডটা নিয়ে পুরুষদের একটা খোঁচা দিয়েছিলেন এই বলে, ‘মেয়েরা যেটা আগেই করে দেখিয়েছে সেটি করতে ছেলেদের ৫০ বছর লেগে গেল।’ তবে ফেল্প্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজে মাস কয় আগে নিউইয়র্ক সফরে গিয়ে আগাম শুভকামনাও জানিয়ে এসেছিলেন মার্কিন সাঁতারুকে। ওই সফরে ফেল্প্সকে নিজের একটা পদকও উপহার দেন। রুশ-মার্কিন এক প্রতিযোগিতায় পাওয়া এই পদক উপহার দেওয়ার মাহাত্ম্য হলো, এই পদকের গায়ে আঁকা আছে এই দুই দেশের পতাকা। বন্ধুত্বের প্রতীক!
একটা ব্যাপারেই শুধু তিনি ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ নন। নাদিয়া কোমানেচি! ‘কেউ কেউ বলে নাদিয়া কোমানেচি শতাব্দীরই সেরা অ্যাথলেট ছিল। সত্যি বলতে কি, এটা আমাকে দুঃখ দেয়। নাদিয়ার একটা খুব ভালো পিআর (জনসংযোগ) কোম্পানি ছিল। জিমন্যাস্টিকসের পুরো শতাব্দীতে আর কোনো জিমন্যাস্টই তিনটি অলিম্পিকে পদক জেতেনি। আমি সেটা করেছি। শুধু তা-ই নয়, তিন অলিম্পিকে ছয়টি করে পদকও জিতেছি। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন।’
আরেকটা যুক্তি লাতিনিনা দিতেই পারতেন। ত্রিশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও অলিম্পিকে খেলেছেন। ওই বয়সে জিমন্যাস্ট করা আর ৫০ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা সমান ব্যাপার!
সমস্যার সমাধান করে দিল মেয়েই। জিমন্যাস্টিকস ছয়টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর সাঁতারের রেকর্ডটা ফেল্প্স যদি ভাঙেনও, ততক্ষণে বেজে যাবে নয়টা-দশটা। মেয়ের বুদ্ধির তারিফ করে মা-মেয়ে দুজনই দাঁড়াল সাঁতারের টিকিট কাটার লাইনে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেই মাইকেল ফেল্পেসর রেকর্ড ভাঙা পদক জয় দেখলেন লারিসা লাতিনিনা!
এ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক এই কিংবদন্তির কোনো ক্ষোভ নেই। ৪৮ বছর ধরে রেকর্ডটা তাঁর ছিল, অলিম্পিকের সর্বোচ্চ পদকজয়ী ছিলেন। এর জন্য বাড়তি সম্মান দাবি তিনি করতেই পারতেন। কিন্তু কোনো অনুযোগ নেই। শুধু একটা চাওয়া ছিল অলিম্পিকে ১৮টি পদকজয়ী এই সাবেক জিমন্যাস্টের। ফেল্পেসর গলায় ওর ১৯ নম্বর অলিম্পিক মেডেলটা তিনিই পরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেটাই ভালো হতো। রেকর্ডটা হস্তান্তরের প্রতীকী একটা ছবিও হয়ে যেত। কিন্তু লাতিনিনার এই চাওয়া পূরণ হয়নি। পদক পরিয়ে দেওয়ার সম্মানটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত। এক দিনের জন্য নিয়মটা কি পাল্টানো যেত না? না, এসব নিয়ে খেদ নেই এই ৭৭ বছর বয়সীর।
জীবনটাই তাঁকে শিখিয়েছে কোনো কিছু নিয়ে অভিযোগ না করতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনগ্রাদে হারিয়েছেন বাবাকে। খুব কাছে থেকে দেখেছেন দুর্ভিক্ষ। সামান্য একটা বাসি পাউরুটি নিয়ে মানুষে-কুকুরে মারামারি। ‘আমরা খেতেই পেতাম না, পরনের কাপড়ও ছিল শতচ্ছিন্ন’—নিরাবেগ কণ্ঠেই লন্ডন অলিম্পিকের এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন এই তথ্য। ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন ব্যালে নাচিয়ে। হতে পারেননি। কেন? যাঁর কাছে মুফতে ব্যালে শিখতেন, সেই শিক্ষক শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বলে। ব্যালে যখন হবেই না, তাহলে জিমন্যাস্টই সই। হুট করেই এই খেলায় এসেছেন। ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব অনেকের হয়। হারিয়েও যায়। ধ্রুবতারা হতে পারে না সবাই।
জিমন্যাস্টিকসে রাশিয়ার বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আধিপত্যের সূচনা তাঁর হাতেই। কিন্তু নাদিয়া কোমানেচি, ম্যারি লৌ রেটন, ওলগা করবুটদের মানুষ যেভাবে মনে রেখেছে; লাতিনিনা সেভাবে আলোচিত হননি। সত্যি বলতে কি, তিনিই যে অলিম্পিকের রেকর্ড সর্বোচ্চ পদকের মালিক, এই তথ্য নিজেই জেনেছেন অনেক পরে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মার্কিন এক সাংবাদিক রাশিয়ায় এসেছিলেন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। তাঁর কাছেই প্রথম শুনেছেন এই তথ্য। সেই গল্পটা বললেন মেয়ে তাতিয়ানা, ‘এটা সম্ভবত ১৫ বছর আগের ঘটনা। এভাবেই মা জেনেছেন তিনি কতটা বিখ্যাত, তাও সেটি রাশিয়ার কোনো সাংবাদিকের কাছে নয়, আমেরিকার একটি সাময়িকীর কাছ থেকে।’
কিন্তু ওই যে বলা হলো, জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগই তাঁর নেই। এই রেকর্ড নিয়ে হামবড়া ভাব দেখানোরও কোনো মানে খুঁজে পাননি, ‘এটাকে আমি খুব বেশি গুরুত্ব কখনোই দিইনি। খুবই স্বাভাবিক একটা জীবন যাপন করেছি। পদকগুলো একটা ব্যাপার; আমি, আমার জীবন, আমার পরিবার, ছেলেমেয়েরা আরেকটা ব্যাপার। খুবই ভালো লাগছে এই ভেবে পৃথিবীতে এমন কেউ আছে যে আমার রেকর্ডটা ভাঙতে পারে। যে রেকর্ড আমি ৪৮ বছর ধরে নিজের কাছে রেখেছিলাম।’
লাতিনিনার অবিস্মরণীয় কীর্তির সাক্ষী হয়ে আছে ১৯৫৮ বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপও। শুধু পদকসংখ্যার কারণে নয়, অন্য আরেকটি কারণেও। তাঁর গর্ভে যে তখন চার মাস বয়সী তাতিয়ানা! খেলাটার প্রতি ভালোবাসা এতটাই ছিল, গর্ভের সন্তানকে নিয়ে জিমন্যাস্টিকস করার ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন চিকিৎসকের এক কথাতেই, ‘চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন, “কাউকে বলো না। এটা গোপন রাখো। বলে দিলে তোমাকে ওরা আর পারফর্ম করতে দেবে না। আমি জানি, তুমি খুবই শক্ত একটা মেয়ে। সবই ঠিকঠাক থাকবে, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”’
সেবার কয়টি পদক জিতেছিলেন লাতিনিনা? পাঁচটি সোনা! ‘তানিয়া এখনো ওই পদকগুলোর দিকে আঙুল তুলে বলে, এগুলো আমিও আমার মায়ের সঙ্গে জিতেছি’—বলেছেন লাতিনিনা।
ফেল্প্সকে তাঁর খুবই পছন্দ। এর আগে নিজের রেকর্ডটা নিয়ে পুরুষদের একটা খোঁচা দিয়েছিলেন এই বলে, ‘মেয়েরা যেটা আগেই করে দেখিয়েছে সেটি করতে ছেলেদের ৫০ বছর লেগে গেল।’ তবে ফেল্প্সকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, নিজে মাস কয় আগে নিউইয়র্ক সফরে গিয়ে আগাম শুভকামনাও জানিয়ে এসেছিলেন মার্কিন সাঁতারুকে। ওই সফরে ফেল্প্সকে নিজের একটা পদকও উপহার দেন। রুশ-মার্কিন এক প্রতিযোগিতায় পাওয়া এই পদক উপহার দেওয়ার মাহাত্ম্য হলো, এই পদকের গায়ে আঁকা আছে এই দুই দেশের পতাকা। বন্ধুত্বের প্রতীক!
একটা ব্যাপারেই শুধু তিনি ‘বন্ধুভাবাপন্ন’ নন। নাদিয়া কোমানেচি! ‘কেউ কেউ বলে নাদিয়া কোমানেচি শতাব্দীরই সেরা অ্যাথলেট ছিল। সত্যি বলতে কি, এটা আমাকে দুঃখ দেয়। নাদিয়ার একটা খুব ভালো পিআর (জনসংযোগ) কোম্পানি ছিল। জিমন্যাস্টিকসের পুরো শতাব্দীতে আর কোনো জিমন্যাস্টই তিনটি অলিম্পিকে পদক জেতেনি। আমি সেটা করেছি। শুধু তা-ই নয়, তিন অলিম্পিকে ছয়টি করে পদকও জিতেছি। এখন আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন।’
আরেকটা যুক্তি লাতিনিনা দিতেই পারতেন। ত্রিশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও অলিম্পিকে খেলেছেন। ওই বয়সে জিমন্যাস্ট করা আর ৫০ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা সমান ব্যাপার!
No comments