বিএনপি সাড়া দিলে আলোচনার প্রস্তাব দেবে আ. লীগ

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দিলে এই ব্যবস্থার রূপরেখা ঠিক করতে আনুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব দেবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এ অবস্থানের কথা জানান দলের ভারপ্রাপ্ত


সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
হানিফ বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক সাড়া দিলে আমরা আলোচনার প্রস্তাব দিতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই এ সমস্যার সমাধান হবে।' তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না- এমন মানসিকতা বিএনপি দেখালে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'বিএনপি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় আমি হতাশ নই। আমরা রাজনীতিবিদরা অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত নিই, আবার বাস্তবতা বুঝে নিজেরাই ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি।' বিএনপি বাস্তবতা বুঝে তাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আগামী নির্বাচনের রূপরেখা-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, 'আগামী নির্বাচনের রূপরেখা কী হবে- তা নির্ধারণের জন্যই তো বিরোধী দলকে সংসদে এসে প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমরা চাই তারা সংসদে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে- তা নিয়ে প্রস্তাব দিক। এরপর দুই দলের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ বের হয়ে আসবে।' তিনি আরো বলেন, বিএনপি আগে প্রস্তাব দিলে এবং প্রস্তাব যৌক্তিক হলে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে তা প্রত্যাখ্যান না করে ওই প্রস্তাব মেনে নেবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সমালোচনা করে মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, 'নোবেল পেয়েছেন বলে তিনি আইনের উর্ধ্বে নন। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস করার জন্য নয়, জনগণকে ব্যাংকটির অবস্থান জানানোর জন্যই এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে। ব্যাংকের সম্পদের হিসাব জানার অধিকার সবার আছে। যে যত বড় সন্মানী ব্যক্তিই হোক আইন সবার কাছে সমান।'
হানিফ বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছে, কেউ রিকশা চালাচ্ছে। তাহলে তিনি (ইউনূস) দেশের কাজ করলেন কিভাবে। ড. ইউনূস বিশ্বের কাছে বাঙালিকে ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে পরিচিত করছেন।'
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হানিফ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, 'বর্তমান সরকার শতভাগ সফল না হলেও এই সময়ে নির্বাচনী ইশতেহারের বেশির ভাগ পূরণ হয়েছে। সরকারের সাফল্যের জন্য দেশে স্থিতিশীলতা ও জাতীয় ঐক্য দরকার। কিন্তু আমাদের বিরোধী দল নন-ইস্যুকে ইস্যু করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।'
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের' বিচারে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের নেই। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার খুবই জটিল কাজ। ৪০ বছর আগের ঘটনা সাক্ষীসহ নানা জটিলতা রয়েছে। এর পরও বিচারকাজ এগিয়ে চলছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। ধারাবাহিকভাবে এ বিচারকাজ চলতে থাকবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টাররা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.