অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি মাছ

পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর কয়েকটি স্থানে জাল পেতে মাছের ডিম ও রেণুপোনা সংগ্রহের মহোৎসব চলছে। এগুলো সংগ্রহকালে রেণুপোনা শিকারিদের অবহেলা ও অসচেতনতায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য দেশি মাছ। এ ছাড়া যমুনাসহ উপজেলার অন্যান্য নদী থেকে ডিমওয়ালা মাছও ধরা হচ্ছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে নদ-নদীগুলোয় মা মাছ সাধারণত ডিম ছেড়ে থাকে। এই ডিম এবং ডিম থেকে সদ্য ফোটা রেণুপোনা সংগ্রহের জন্য সংগ্রহকারীরা মশারির চেয়েও সূক্ষ বিশেষ ধরনের জাল নদীর বিভিন্ন স্থানে পেতে রাখে।
পেতে রাখা জালে বিভিন্ন প্রজাতির ডিম ও রেণুপোনা ধরা পড়লেও যত্ন করে রেখে দেওয়া হয় রুই, কাতলা, মৃগেলসহ পুকুরে চাষ করা যায় এমন সব মাছের ডিম ও রেণুপোনা। বেলে, টেংরা, পুঁটি, বোয়াল, বাউশ, পাবদা, খসল্লা, বাটকাসহ ধরা পড়া চাষের অযোগ্য অন্যান্য প্রজাতির ডিম ও রেণুপোনা অযত্নে ডাঙায় বা অন্যত্র ফেলে দেওয়া হয়।
রেণুপোনা সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাষের উপযোগী প্রজাতির সঙ্গে এর পাঁচ গুণেরও বেশি চাষের অনুপযোগী প্রজাতির ডিম ও রেণুপোনা পাওয়া যায়। শুধু অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে এগুলোর প্রায় সবই নষ্ট হয়ে যায়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীর ঢালারচর থেকে মোহনগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশের অসংখ্য স্থানে জাল পেতে রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহ চলছে। এ ছাড়া, নদীর অনেক স্থানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে চলছে ডিমওয়ালা মাছ শিকার।
এলাকায় যমুনা নদীতে জাল পেতে রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরা এভাবে রেণুপোনা ও ডিম সংগ্রহ করে মাছচাষিদের কাছে তা বিক্রি করছেন। এভাবে সংগ্রহের সময় বিভিন্ন প্রজাতির রেণুপোনা ও ডিম জালে ধরা পড়লেও তাঁরা রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কয়েকটি প্রজাতির রেণুপোনা ও ডিম রেখে বাকিগুলো ফেলে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সংগ্রহকারী বলেন, ডিম ও রেণুপোনা সংগ্রহের ব্যাপারে মৎস্য কার্যালয় থেকে তাঁদের নিষেধ করা হয়নি বা কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে রেণুপোনা সংগ্রহের সময় চাষের অনুপযোগী অন্যান্য প্রজাতির রেণুপোনা অবহেলা-অযত্নে নষ্ট হয় বলে তাঁরা স্বীকার করেন।
বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা মৎস্য কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে ডিম ও রেণুপোনা সংগ্রহের নিয়ম রয়েছে। বেড়ায় যারা ডিম ও রেণুপোনা সংগ্রহ করছে তারা কেউ লাইসেন্স নিয়েছে কি না, সে ব্যাপারে তাঁদের কার্যালয়ে কোনো তথ্য নেই। লোকবল না থাকায় আমরা রেণুপোনা সংগ্রহকারীদের ব্যাপারে তদারক করতে এবং তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে পারছি না।’

No comments

Powered by Blogger.