চরাচর-চিনেটোলায় ঘুমিয়ে আছেন যশোরের পাঁচ সূর্যসন্তান by ফখরে আলম
যশোরের পাঁচ সূর্যসন্তান হরিহর নদের পাশে ঘুমিয়ে রয়েছেন। এখানে কোনো বসতি নেই। ফাঁকা স্থানে পাঁচজনের সমাধি। মাঝেমধ্যে এই সমাধিস্থলে কেউ কেউ আসেন। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। চোখের পানি ফেলেন। তখন মরা হরিহর জেগে ওঠে। তরঙ্গের গর্জন শোনা যায়। ভারী হয়ে ওঠে মণিরামপুরের চিনেটোলার হরিহর নদের দুই কূল।
এখানেই ঘুমিয়ে আছেন যশোরের একমাত্র ইংল্যান্ডের অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকচুয়ারিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকারী মাশফিকুর রহমান তোজো, যশোর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শান্তি, যশোর এম এম কলেজের ভিপি, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ, যশোর জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি আহাসান উদ্দীন খান মানিক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুর রহমান ফজলু। ১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর রাজাকাররা এই পাঁচ সূর্যসন্তানকে শরীরের চামড়া তুলে, নানা রকম নির্যাতন চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর এলে এই পাঁচ শহীদের স্বজনরা বুক ফাটিয়ে কাঁদেন। নতুন প্রজন্মের সন্তানরা সেই কান্না কি শুনতে পান? তাঁরা কি হরিহর নদের কিনারে একাত্তরের এ কাহিনী জানেন? ওই পাঁচ উচ্চশিক্ষিত যুবক দেশ শত্রুমুক্ত করার জন্য অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাঁরা মণিরামপুর-কেশবপুর এলাকায় হানাদার রাজাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শত্রুদের তটস্থ করে ফেলেন। ঘটনার দিন আসাদ, শান্তি, তোজো, মানিক, ফজলু ও সিরাজকে ধরে ফেলে। এরপর রাজাকার মেহের জল্লাদ, ইসাহাক, মজিদসহ অন্য রাজাকাররা তাঁদের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। তাঁদের মধ্যে সিরাজ পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। রাজাকাররা অন্যদের হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে য়ায়। গ্রামের শ্যামপদ নাথ এক টাকা দুই আনা দিয়ে অমূল্য কবিরাজের কাছ থেকে জমি কিনে ওই পাঁচজনকে এক কবরে শুইয়ে দেন। পরে শহীদের স্বজনরা উদ্যোগ নিয়ে কবর ঘিরে প্রাচীর নির্মাণ করে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেন। যশোরবাসী এই পাঁচ সূর্যসন্তানের জন্য তেমন কিছুই করেনি। এ জন্য স্বজনদের কষ্টের শেষ নেই। এখন মুক্তিযুদ্ধের নতুন প্রজন্মের সন্তানরা পাঁচ শহীদকে স্মৃতিতে অম্লান রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
ফখরে আলম
ফখরে আলম
No comments