রঙ্গব্যঙ্গ-আমিনীর কাল্পনিক সাক্ষাৎকার by মোস্তফা কামাল

ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা ফজলুল হক আমিনী একের পর এক হুংকার দিচ্ছেন। তিনি সরকারকে হটিয়ে শিগগিরই ক্ষমতার মসনদে বসবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কী উপায়ে তিনি সরকারকে হটাবেন তা তাঁর কাছ থেকেই জানা যেতে পারে। আমরা তাঁর একটি কাল্পনিক সাক্ষাৎকার এখানে তুলে ধরছি।


রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি এত হুংকার কেন দিচ্ছেন?
আমিনী : হুংকারের কী দেখছেন! সবে তো শুরু। হুংকার দিয়ে সরকারকে একেবারে অস্থির করে তুলতে হবে।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি কি মনে করেন, আপনার হুংকারে সরকার ভীতসন্ত্রস্ত?
আমিনী : অবশ্যই ভীতসন্ত্রস্ত। ভীত বলেই তো আমার ওপর এত নজরদারি। আমি কী করছি না করছি, কোথায় যাচ্ছি, কার সঙ্গে মেলামেশা করছি, সব কিছুর ওপর নজর রেখেছে।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি বলেছেন, সরকার উৎখাত করে ক্ষমতার মসনদে বসবেন। এটা কী করে সম্ভব?
আমিনী : ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিয়ে এমন আন্দোলন শুরু করব, সরকার আন্দোলনের জোয়ারে ভেসে যাবে।
রঙ্গব্যঙ্গ : তাই নাকি?
আমিনী : তাই নাকি মানে! আমার ক্ষমতা এখনো সরকার টের পায়নি। পাইলে বুঝত! আপনারাও অবশ্য বুঝতে পারছেন না!
রঙ্গব্যঙ্গ : হঠাৎ আপনি খেপে গেলেন কেন?
আমিনী : আমি তো খেপেই আছি। পারলে এখনই সরকারকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতাম। আমার মেজাজটা খিটমিট করছে। শরীরের রক্ত টগবগ করছে। দেখছেন না, সরকার ক্ষমতায় এসে আমাদের সাইজ করা শুরু করেছে!
রঙ্গব্যঙ্গ : কিভাবে সাইজ করছে, একটু বুঝিয়ে বলবেন?
আমিনী : আরে আমেরিকা আর ইন্ডিয়ার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এ সরকার কাজ করছে। এরা ধর্মীয় মূল্যবোধ ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।
রঙ্গব্যঙ্গ : হঠাৎ এ কথা কেন বলছেন? সরকার ধর্মীয় মূল্যবোধ কিভাবে ধুলোয় মেশাল?
আমিনী : সেটা আপনারা টের পাচ্ছেন না। আমরা পাচ্ছি। অনেক সমস্যা আছে, বুঝলেন!
রঙ্গব্যঙ্গ : আর কী কী সমস্যা আছে বলেন তো?
আমিনী : এই যে ধরেন, সরকার একটা নারী নীতির খসড়া অনুমোদন করল। এতে বলা হয়েছে, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমানাধিকার! এটা তো পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমরা আলেম সমাজ কিছুতেই নারী নীতি বাস্তবায়ন করতে দেব না।
রঙ্গব্যঙ্গ : এ জন্যই আপনারা হরতাল ডেকেছেন?
আমিনী : জি জি। সবে তো হরতাল ডাকলাম। আরো কত কিছু দেখবেন!
রঙ্গব্যঙ্গ : আর কী কী করবেন?
আমিনী : এরপর এক দফা। সরকার উৎখাতের আন্দোলন! সরকার ঘুঘু দেখেছে, ফাঁদ দেখেনি!
রঙ্গব্যঙ্গ : তার মানে আপনি নারী নীতি বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন?
আমিনী : অবশ্যই বিরোধিতা করছি।
রঙ্গব্যঙ্গ : আপনি কি নারী নীতির খসড়া পড়েছেন?
আমিনী : জি না, পড়িনি। শুনেছি।
রঙ্গব্যঙ্গ : শুনেই আপনারা হরতাল ডেকে দিলেন?
আমিনী : দিলাম। সমস্যা কী? কথায় বলে না, যা রটে, তার কিছু না কিছু বটে! হা হা হা! কেমন বললাম! ভালো না?
রঙ্গব্যঙ্গ : এক দিনের হরতালে দেশের কত ক্ষতি হয় জানেন?
আমিনী : জানি। না না। হিসাব কষে দেখি নাই। তবে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করতে পারলে সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
রঙ্গব্যঙ্গ : হরতাল ডাকার সময় তো তা বলেননি। আপনারা বলেছেন, নারী নীতি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা হয়েছে। আমরা তো জানি, আপনাদের আমলের খসড়াটিই সরকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
আমিনী : তাই নাকি! বলেন কী! তাহলে পত্রিকায় যে লিখল!
রঙ্গব্যঙ্গ : পত্রিকায় তো এটাও লিখেছে, জোট সরকারের আমলে প্রণীত নারী নীতির খসড়া বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এটা পড়েননি?
আমিনী : আরে ভাই, আপনারা পত্রিকার লোকরা কত কিছুই তো লেখেন! সব কিছু কি পড়া যায়?
রঙ্গব্যঙ্গ : তাই বলে যে ইস্যুতে হরতাল ডাকলেন সে ইস্যুটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানবেন না?
আমিনী : আচ্ছা, আপনি এত কথা কেন বলেন? সব কিছুতে এত খুঁত ধরবেন না তো!
রঙ্গব্যঙ্গ : আচ্ছা, ঠিক আছে। আরেকটা প্রশ্নের জবাব দিন। ইসলামের নামে যারা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত তাদের কি সমর্থন করেন?
আমিনী : জঙ্গি তৎপরতা কোথায় দেখলেন? আপনাদের মিডিয়ার লোকরা এসব সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার পয়সা খেয়ে আপনারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছেন। দেশে কোনো জঙ্গি নেই। ধর্মের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের শায়েস্তা করার জন্য এসব লোকের দরকার আছে।
রঙ্গব্যঙ্গ : ধর্মের নামে বোমা হামলা, মানুষ খুনকে আপনি সমর্থন করেন?
আমিনী : শোনেন একটা কথা বলি, আমাদের মহানবী (স.) আরবে ইসলাম কায়েমের জন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করেছেন। আমরা সে তুলনায় কিছুই করিনি। আমরা মনে করি, ইসলাম কায়েমের জন্য বিপ্লবের দরকার আছে। বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম কায়েম করতে হবে। একটা কথা আপনিও জানেন, আমিও জানি। সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না। আঙুলটা একটু বাঁকা করতে হয়। তাই এ দেশের ধর্মপ্রাণ কিছু মানুষ (নেতা-কর্মী) মাঝেমধ্যে আঙুল বাঁকা করছে। আর তাতেই আপনাদের শোরগোল ওঠে! জঙ্গিরা দেশটাকে নাকি শেষ করে দিল! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাদের হেদায়েত করুন। আমার বক্তব্য শেষ। এবার আসেন।
রঙ্গব্যঙ্গ : ঠিক আছে, আপনাকে ধন্যবাদ।
আমনী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.