চট্টগ্রামে ঘাঁটি গাড়ছে সপ্তম নৌবহর!

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটা ছিল এই পরাশক্তির সবচেয়ে বড় হুমকি। দীর্ঘ ৪১ বছর পর সেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের কৌশলগত স্বার্থে ওই সপ্তম নৌবহরেরই ঘাঁটি গাড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মে মাসে বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কথাও হয়েছে। আর ওই সফরের পরপরই সপ্তম নৌবহর চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস নাউ টিভিতে গত বৃহস্পতিবার প্রচারিত এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করা হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা সামরিক উপস্থিতি বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটি গাড়তে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
টাইমস নাউ মুম্বাইভিত্তিক ২৪ ঘণ্টা ইংরেজি সংবাদের চ্যানেল। ভারত, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে এই চ্যানেল দেখা যায়। তারা সপ্তম নৌবহর বিষয়ক প্রতিবেদনটির শিরোনাম দিয়েছে 'বাংলাদেশের ওপর আমেরিকার নজর (আমেরিকা আইজ বাংলাদেশ)'। এতে বলা হয়, গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় উভয় পক্ষ এ বিষয়ে কৌশলগত কথাবার্তা সারে। চট্টগ্রামে ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এক ঢিলে দুই পাখি মারবে- চীনের হুমকি মোকাবিলার পাশাপাশি আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পর এটিকে তাদের কৌশলগত ঘাঁটি বানাবে।
টাইমস নাউ বলেছে, হিলারির সফরের সময়টাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে কোনো আলোচনার কথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে আলোচনার কথা নিশ্চিত করেছে। আর বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে বলেছে, 'মন্তব্য নেই।'
হিলারির সফরকালে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সপ্তম নৌবহরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল কি না? সেখানে সপ্তম নৌঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো অবস্থান আছে কি না? এ দুটি প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, 'মনে হচ্ছে, প্রশ্নটা মূলত পেন্টাগনের জন্য। বিষয়টি তাঁর (হিলারির) আলোচনায় এসেছিল কি না, সে বিষয়ে খোঁজ নেব। তবে আমার মনে হয় না এমন বিষয় এসেছে।'
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো বলেছে, চট্টগ্রামে সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একাধিক কৌশলগত বৈঠক হয়েছে। হিলারির সাম্প্রতিক সফরেও এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কথা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দপ্তর পেন্টাগনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা সামরিক উপস্থিতির বিষয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ খুব স্পষ্টভাবেই প্রকাশিত হয়েছে। তারা মনে করছে, চীনের নৌবাহিনী এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর তাহলে আমেরিকা পেছনে পড়ে যাবে।
টাইমস নাউয়ের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক এ বিষয়গুলো সম্পর্কে মুখে শক্ত কুলুপ এঁটেছে। দেশের অভ্যন্তরে কট্টরপন্থীদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ার ভয়ে তারা বিষয়টি অস্বীকারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সরকারের ভেতরে থাকা সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, আশির দশক থেকেই পেন্টাগন সেন্ট মার্টিনসে সামরিক ঘাঁটি গাড়তে চাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা একটি নৌঘাঁটি বানাতে চায়। এরপর তারা পূর্ণ ঘাঁটি করবে যাতে মিয়ানমারের ওপর নজরদারি করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্র চট্টগ্রাম বন্দরকে তাদের নৌঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে কি না এবং চাইলে অনুমতি দেবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম বলেন, 'এ রকম কোনো অনুরোধের (যুক্তরাষ্ট্রের) বিষয়ে আমি অবগত নই।'
বাংলাদেশ সরকার এমনকি দেশটির কোনো রাজনৈতিক দলও এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি বলে টাইমস নাউয়ের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের শেষ অংশে সপ্তম নৌবহরের ব্যাপারে ভারতকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশে এলে ভারত পেছনে পড়ে যাবে। ভারতের যাবতীয় নিরাপত্তা স্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির আওতায় চলে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.